যাদুকাটা নদীপাড়ের মানুষ বালুখেকোদের কাছে জিম্মি

যাদুকাটা নদী। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নে এর অবস্থান। এর চারদিকে শুধু বালু আর বালু। বালুখেকোদের তান্ডবে আশপাশের মানুষও শান্তিতে নেই। তবুও যাদুকাটা নদীপাড়ের মানুষকেও যেন কেউ যাদু করে রেখেছে। এমনটিই প্রমাণিত হলো গত বুধবার। তারা বালুখেকোদের কাছে জিম্মি। এর দু’দিন আগেই সেখানে স্থানীয় সাংবাদিক কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন করে বালুখেকোরা। অথচ ঘটনাস্থলের লোকজন বলছেন কারা এটা করেছে তা কেউ দেখেনি। প্রশ্ন হলো কার ইশারায়, কার ভয়ে তারা মুখ খুলছে না? তবে ঘটনাটি যে শ্রমিকরা ঘটায়নি তা বেরিয়ে এসেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে। কারণ, খেটেখাওয়া সাধারণ শ্রমিক কখনও এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন না। সাংবাদিক কামালকে পরিকল্পিতভাবে অপরিচিত একটি মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে বালুখেকোচক্র। তাকে নির্যাতনের আগে মাহমুদ আলী নামক এক বালুখেকো কয়েকবার কোন একজনকে ফোন করছিল। সেখান থেকে নির্দেশ আসার পরই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। কে সেই নির্দেশদাতা, কে সেই গডফাদার, সে ব্যাপারে ঘটনাস্থলের কেউ মুখ না খুললেও পাশেই বাদাঘাট বাজারে বার বার শোনা যায় একটি নাম। মোশাররফ তালুকদার নামের এই প্রভাবশালী ব্যক্তি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি অনেক সময় অদৃশ্য থাকলেও তার ছোট ভাই মুশাহিদ তালুকদারের দাপটে ভয়ে তটস্থ যাদুকাটা এলাকার মানুষ। এই মুশাহিদের নেতৃত্বেই সাংবাদিক কামালের ওপর নির্যাতন হয়। কামাল হোসেন বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মাথা ও কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কথা হয় আহত সাংবাদিক কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত প্রতিশোধ নিতে গিয়েই বালুখেকোরা তাকে নির্যাতন করে ভিডিও করেছে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে তিনি বালুখেকোদের নিয়ে খবর তৈরি করেছিলেন। এতে অবৈধ বালু উত্তোলন কিছুটা বন্ধ হয়েছিল। ঘটনার দিন একটি অপরিচিত মোবাইল ফোন থেকে কামালকে ফোন করে বলা হয় আবারও যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। খবর পেয়ে বিষয়টি তিনি বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জকে জানান। ইনচার্জ তাকে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেয়ার অনুরোধ করে। এরপর তিনি খবরের জন্য ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। তখন সেখানে উপস্থিত এই অবৈধ ব্যবসার ‘গডফাদার’ মাহমুদ আলী কোথাও ফোন করে। এরপরই মুশাহিদ ও মাহমুদের নেতৃত্বে কামালের ওপর হামলা চালায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতনের পুরো ঘটনাটিই পূর্বপরিকল্পিত।

সরেজমিন গেলে যাদুকাটা নদীঘেঁষা ঘাগটিয়া গ্রামের মহিলারা ভিড় করে। সেখান থেকে কোন পুরুষ আসেনি। তাদের ভাষ্যে বুঝা যায় কারও শেখানো বুলি প্রচার করছে। পরে গাছে বেঁধে রাখা স্থান চকবাজারে গিয়ে কথা হয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় কারা কিভাবে কোন গাছে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু কেউ গাছ দেখিয়ে দেয়নি। যাদেরই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের বক্তব্য, ঘটনার সময় তারা ছিল না। তাই কারা ঘটিয়েছে তাও দেখেনি। পরে জানা যায়, মোশাররফ পরিবারের ভয়েই কেউ মুখ খুলতে চায়নি। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সখ্যতা। পুলিশও তাদের সমীহ করে। আর এ থেকেই তাদের প্রভাব। এ প্রভাবের কারণেই তার ভাই মুশাহিদ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুঃসাহস দেখিয়েছে সাংবাদিক নির্যাতন করার।

সাংবাদিক কামালের অভিযোগ, তার ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা অনেক দিন ধরেই অবৈধভাবে পাথর ও বালু তোলার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। বাঁধ কাটার মামলাও আছে। প্রতিবছরই তাদের এই অবৈধ কাজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়, কিন্তু কোন কাজ হয় না। কামাল মনে করছেন, নির্যাতনের আগে মাহমুদ মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাকে ফোন করে কে বালু উত্তোলনের তথ্য দিয়েছিল তাদের কললিস্ট বের করলে নির্দেশদাতার নাম বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোশাররফ তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ভাই মুশাহিদ ঘটনার সময় সেখানে ছিল না। আর মনির মেম্বার অকে জনপ্রিয়। সে তিন বারের মেম্বার’। তিনি বলেন, তারা পাঁচ ভাই, মুশাহিদ সবার ছোট। সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। যার যার ব্যবসা স্বাধীনভাবে করে। সে কি করে তিনি জানেন না। তবে বুধবার তার বাড়িতে এ প্রতিবেদককে মোশাররফ বলেছেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এটা খুব নিন্দনীয়। এ ঘটনার তিনি সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন।

যাদুকাটা নদীপাড়ের এজাহারভুক্ত চার আসামি অধরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের ছবি তুলতে গিয়ে সংবাদ প্রতিনিধিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত চার আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। সেইসঙ্গে নির্যাতনের নির্দেশদাতা কে তা জানতে আদালতে রিমান্ডও চায়নি পুলিশ।

তাহিরপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ তরফদার বলেন, এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে চারজন ও এজাহারনামীয় আরও একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল চার আসামি এখনও অধরা থাকায় নির্যাতিত সাংবাদিক ও তার পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। গত সোমবার এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ভোররাতে সন্দেহজনক চারজানকে আটক করে পুলিশ। এর পরদিন বুধবার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে রইস উদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে অধরা রয়েছে মাহমুদ আলী শাহ, দীন ইসলাম, মুশাহিদ তালুকদার ও বহিষ্কৃত মেম্বার মনির উদ্দিন। উল্লিখিত এই চারজন গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত সোমবার দৈনিক সংবাদের তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেন যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে বালুখেকো চক্র তার ওপর অতর্কিত হামলা করে মারাত্মক আহত করে নদীরপাড় থেকে টেনে-হেঁছড়ে ঘাগটিয়া বাজারে নিয়ে যায়। পরে সেখানে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে এবং মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে তার সহকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বিকেলে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২২ মাঘ ১৪২৭, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যাদুকাটা নদীপাড়ের মানুষ বালুখেকোদের কাছে জিম্মি

আকাশ চৌধুরী, যাদুকাটা (তাহিরপুর) সুনামগঞ্জ ঘুরে এসে

যাদুকাটা নদী। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নে এর অবস্থান। এর চারদিকে শুধু বালু আর বালু। বালুখেকোদের তান্ডবে আশপাশের মানুষও শান্তিতে নেই। তবুও যাদুকাটা নদীপাড়ের মানুষকেও যেন কেউ যাদু করে রেখেছে। এমনটিই প্রমাণিত হলো গত বুধবার। তারা বালুখেকোদের কাছে জিম্মি। এর দু’দিন আগেই সেখানে স্থানীয় সাংবাদিক কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন করে বালুখেকোরা। অথচ ঘটনাস্থলের লোকজন বলছেন কারা এটা করেছে তা কেউ দেখেনি। প্রশ্ন হলো কার ইশারায়, কার ভয়ে তারা মুখ খুলছে না? তবে ঘটনাটি যে শ্রমিকরা ঘটায়নি তা বেরিয়ে এসেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে। কারণ, খেটেখাওয়া সাধারণ শ্রমিক কখনও এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন না। সাংবাদিক কামালকে পরিকল্পিতভাবে অপরিচিত একটি মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে বালুখেকোচক্র। তাকে নির্যাতনের আগে মাহমুদ আলী নামক এক বালুখেকো কয়েকবার কোন একজনকে ফোন করছিল। সেখান থেকে নির্দেশ আসার পরই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। কে সেই নির্দেশদাতা, কে সেই গডফাদার, সে ব্যাপারে ঘটনাস্থলের কেউ মুখ না খুললেও পাশেই বাদাঘাট বাজারে বার বার শোনা যায় একটি নাম। মোশাররফ তালুকদার নামের এই প্রভাবশালী ব্যক্তি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি অনেক সময় অদৃশ্য থাকলেও তার ছোট ভাই মুশাহিদ তালুকদারের দাপটে ভয়ে তটস্থ যাদুকাটা এলাকার মানুষ। এই মুশাহিদের নেতৃত্বেই সাংবাদিক কামালের ওপর নির্যাতন হয়। কামাল হোসেন বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মাথা ও কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কথা হয় আহত সাংবাদিক কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত প্রতিশোধ নিতে গিয়েই বালুখেকোরা তাকে নির্যাতন করে ভিডিও করেছে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে তিনি বালুখেকোদের নিয়ে খবর তৈরি করেছিলেন। এতে অবৈধ বালু উত্তোলন কিছুটা বন্ধ হয়েছিল। ঘটনার দিন একটি অপরিচিত মোবাইল ফোন থেকে কামালকে ফোন করে বলা হয় আবারও যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। খবর পেয়ে বিষয়টি তিনি বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জকে জানান। ইনচার্জ তাকে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেয়ার অনুরোধ করে। এরপর তিনি খবরের জন্য ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। তখন সেখানে উপস্থিত এই অবৈধ ব্যবসার ‘গডফাদার’ মাহমুদ আলী কোথাও ফোন করে। এরপরই মুশাহিদ ও মাহমুদের নেতৃত্বে কামালের ওপর হামলা চালায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতনের পুরো ঘটনাটিই পূর্বপরিকল্পিত।

সরেজমিন গেলে যাদুকাটা নদীঘেঁষা ঘাগটিয়া গ্রামের মহিলারা ভিড় করে। সেখান থেকে কোন পুরুষ আসেনি। তাদের ভাষ্যে বুঝা যায় কারও শেখানো বুলি প্রচার করছে। পরে গাছে বেঁধে রাখা স্থান চকবাজারে গিয়ে কথা হয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় কারা কিভাবে কোন গাছে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু কেউ গাছ দেখিয়ে দেয়নি। যাদেরই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের বক্তব্য, ঘটনার সময় তারা ছিল না। তাই কারা ঘটিয়েছে তাও দেখেনি। পরে জানা যায়, মোশাররফ পরিবারের ভয়েই কেউ মুখ খুলতে চায়নি। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সখ্যতা। পুলিশও তাদের সমীহ করে। আর এ থেকেই তাদের প্রভাব। এ প্রভাবের কারণেই তার ভাই মুশাহিদ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুঃসাহস দেখিয়েছে সাংবাদিক নির্যাতন করার।

সাংবাদিক কামালের অভিযোগ, তার ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা অনেক দিন ধরেই অবৈধভাবে পাথর ও বালু তোলার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। বাঁধ কাটার মামলাও আছে। প্রতিবছরই তাদের এই অবৈধ কাজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়, কিন্তু কোন কাজ হয় না। কামাল মনে করছেন, নির্যাতনের আগে মাহমুদ মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাকে ফোন করে কে বালু উত্তোলনের তথ্য দিয়েছিল তাদের কললিস্ট বের করলে নির্দেশদাতার নাম বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোশাররফ তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ভাই মুশাহিদ ঘটনার সময় সেখানে ছিল না। আর মনির মেম্বার অকে জনপ্রিয়। সে তিন বারের মেম্বার’। তিনি বলেন, তারা পাঁচ ভাই, মুশাহিদ সবার ছোট। সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। যার যার ব্যবসা স্বাধীনভাবে করে। সে কি করে তিনি জানেন না। তবে বুধবার তার বাড়িতে এ প্রতিবেদককে মোশাররফ বলেছেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এটা খুব নিন্দনীয়। এ ঘটনার তিনি সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন।

যাদুকাটা নদীপাড়ের এজাহারভুক্ত চার আসামি অধরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের ছবি তুলতে গিয়ে সংবাদ প্রতিনিধিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত চার আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। সেইসঙ্গে নির্যাতনের নির্দেশদাতা কে তা জানতে আদালতে রিমান্ডও চায়নি পুলিশ।

তাহিরপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ তরফদার বলেন, এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে চারজন ও এজাহারনামীয় আরও একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল চার আসামি এখনও অধরা থাকায় নির্যাতিত সাংবাদিক ও তার পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। গত সোমবার এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ভোররাতে সন্দেহজনক চারজানকে আটক করে পুলিশ। এর পরদিন বুধবার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে রইস উদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে অধরা রয়েছে মাহমুদ আলী শাহ, দীন ইসলাম, মুশাহিদ তালুকদার ও বহিষ্কৃত মেম্বার মনির উদ্দিন। উল্লিখিত এই চারজন গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত সোমবার দৈনিক সংবাদের তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেন যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে বালুখেকো চক্র তার ওপর অতর্কিত হামলা করে মারাত্মক আহত করে নদীরপাড় থেকে টেনে-হেঁছড়ে ঘাগটিয়া বাজারে নিয়ে যায়। পরে সেখানে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে এবং মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে তার সহকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বিকেলে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।