হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নতুন কবিতা

নিয়তি

যে ডালে পাখির বাসা সে ডালেই সাপ

যেই গল্পে পিপীলিকা সেই গল্পে পাপ

যে পাতায় অমাবস্যা সে পাতায় চাঁদ

যেই মূলে মুক্তধারা সেই মূলে ফাঁদ

যে বৃক্ষে নদীর টান সে বৃক্ষেই চর

যেই জলে নিজ স্বত্ব সেই জলে ডর

কাফনে পকেট নেই তবু রাজা জমায় সম্পদ

প্রজার পেয়ালা নেই তবু নাচে ক্ষুধার নারদ

ভাঙা

উদাসীনতায় কতো কী যে ভাঙে

নীল ভাঙে যতো

জলের পাঁজরে

মায়া তার ছায়া অবকাশ মতো

বিকেল ভেঙেছে সন্ধ্যা-কুহকে

রজনীর জের

তারাদের ভাঙে

কুয়াশা-প্রভাতে চায় ক্ষমা ফের

অবহেলা যদি শরতের নামে

ভাঁজ-ভাঙা মাঠে

ফিকে শাদা লেখে

ভাঙা তবে ডাকে খোলা চৌকাঠে

আর ভাঙা যার সৃষ্টি-মন্ত্র

তার দিনকাল

মিলনসূত্রে

অরূপের রূপে নতুন প্রবাল

ইন্দ্রিয়

গোলকের অসামান্য ছায়া-স্তব্ধতায়

মুছে গেলে উৎসবের আলো, তারপরো

হে চক্ষু, মঙ্গলে রাখো স্নিগ্ধ বীজদল

উৎস নিয়ে চূর্ণ হ’লে শব্দের মণ্ডল

হে কর্ণ, শ্রবণসঙ্গ

বায়ুর বিস্তার দিয়ে পূর্ণ করো সীমা

আয়ুর আড়ালে যার সূত্র-পরিচয়

হে নাসিকা, প্রাণনাথ

ঘ্রাণহীন অন্তরালে হও সহচর

উষ্ণ আরো উষ্ণ কিংবা বাক-প্রবণতা

তেজ ও স্বাদের সর্ব-অবস্থানে গেলে

হে জিহ্বা, তোমার নগ্ন উন্মোচিত হোক

স্তরে-স্তরে নিত্য ক্ষরণের সত্যরূপ

হে ত্বক, অপূর্ণ সার

বোধের বিহারে সমূহ উদ্ধার

চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ত্বক

মুক্তিযুদ্ধ

যুদ্ধের জন্য যখন বাঁশ প্রস্তুত হ’লো

তখনও বাগান এলোমেলো

তখনও নদীতে চৈত্রের বালি

তখনও বাতাসে ভায়েরা আমার

বারুদ তো জমা ছিলো চোখে

আগুন তো চুলো থেকে মাঠে নেমেছিলো

অপেক্ষা তো লাল ও সবুজে

ভোর হ’লেই উড়াবে পতাকা

কাঠকয়লা তৈরি ছিলো দাগ দেবে ব’লে

দোয়েল ডাকার জন্য তুলেছিলো গলা

এমনকি লাঙলের ফলা আর কাস্তের দাঁত

পরস্পর পরীক্ষা ক’রেছিলো ধার

মুক্তির জন্য সাড়ে সাত কোটি জেগেছিলো

যুদ্ধের জন্য সাড়ে সাত কোটি নেমেছিলো

একটি মুক্তিযুদ্ধের জন্য আকাশে বিদ্যুতের বাঁশি

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নতুন কবিতা

image

নিয়তি

যে ডালে পাখির বাসা সে ডালেই সাপ

যেই গল্পে পিপীলিকা সেই গল্পে পাপ

যে পাতায় অমাবস্যা সে পাতায় চাঁদ

যেই মূলে মুক্তধারা সেই মূলে ফাঁদ

যে বৃক্ষে নদীর টান সে বৃক্ষেই চর

যেই জলে নিজ স্বত্ব সেই জলে ডর

কাফনে পকেট নেই তবু রাজা জমায় সম্পদ

প্রজার পেয়ালা নেই তবু নাচে ক্ষুধার নারদ

ভাঙা

উদাসীনতায় কতো কী যে ভাঙে

নীল ভাঙে যতো

জলের পাঁজরে

মায়া তার ছায়া অবকাশ মতো

বিকেল ভেঙেছে সন্ধ্যা-কুহকে

রজনীর জের

তারাদের ভাঙে

কুয়াশা-প্রভাতে চায় ক্ষমা ফের

অবহেলা যদি শরতের নামে

ভাঁজ-ভাঙা মাঠে

ফিকে শাদা লেখে

ভাঙা তবে ডাকে খোলা চৌকাঠে

আর ভাঙা যার সৃষ্টি-মন্ত্র

তার দিনকাল

মিলনসূত্রে

অরূপের রূপে নতুন প্রবাল

ইন্দ্রিয়

গোলকের অসামান্য ছায়া-স্তব্ধতায়

মুছে গেলে উৎসবের আলো, তারপরো

হে চক্ষু, মঙ্গলে রাখো স্নিগ্ধ বীজদল

উৎস নিয়ে চূর্ণ হ’লে শব্দের মণ্ডল

হে কর্ণ, শ্রবণসঙ্গ

বায়ুর বিস্তার দিয়ে পূর্ণ করো সীমা

আয়ুর আড়ালে যার সূত্র-পরিচয়

হে নাসিকা, প্রাণনাথ

ঘ্রাণহীন অন্তরালে হও সহচর

উষ্ণ আরো উষ্ণ কিংবা বাক-প্রবণতা

তেজ ও স্বাদের সর্ব-অবস্থানে গেলে

হে জিহ্বা, তোমার নগ্ন উন্মোচিত হোক

স্তরে-স্তরে নিত্য ক্ষরণের সত্যরূপ

হে ত্বক, অপূর্ণ সার

বোধের বিহারে সমূহ উদ্ধার

চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ত্বক

মুক্তিযুদ্ধ

যুদ্ধের জন্য যখন বাঁশ প্রস্তুত হ’লো

তখনও বাগান এলোমেলো

তখনও নদীতে চৈত্রের বালি

তখনও বাতাসে ভায়েরা আমার

বারুদ তো জমা ছিলো চোখে

আগুন তো চুলো থেকে মাঠে নেমেছিলো

অপেক্ষা তো লাল ও সবুজে

ভোর হ’লেই উড়াবে পতাকা

কাঠকয়লা তৈরি ছিলো দাগ দেবে ব’লে

দোয়েল ডাকার জন্য তুলেছিলো গলা

এমনকি লাঙলের ফলা আর কাস্তের দাঁত

পরস্পর পরীক্ষা ক’রেছিলো ধার

মুক্তির জন্য সাড়ে সাত কোটি জেগেছিলো

যুদ্ধের জন্য সাড়ে সাত কোটি নেমেছিলো

একটি মুক্তিযুদ্ধের জন্য আকাশে বিদ্যুতের বাঁশি

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি