মাসের পর মাস ধরে বেতন-ভাতা বকেয়া টাঙ্গাইলের ৪ পৌরসভায়

টাঙ্গাইলে ১১টি পৌরসভার মধ্যে চারটি পৌরসভার ১৪১ জন কর্মচারি দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। এতে পৌরসভার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কর্মচারীরা।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণের মধ্যেও কাজ করছেন টাঙ্গাইলের ১১টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু জেলার ১১টি পৌরসভার মধ্যে কালিহাতী, ভূঞাপুর, গোপালপুর এবং ধনবাড়ী পৌরসভার ১৪১ জন কর্মচারীর প্রায় ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে।

বেতন-ভাতা না পেয়ে এসব কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানবেতর জীবন কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবি জানিয়েছেন তারা। পৌরসভার কর্মচারিদের বঞ্চনার শেষ নেই। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়েও সরকার প্রদত্ত নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন খুবই কম। কিন্তু তাও যদি মাসের পর মাস বকেয়া থাকে, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

কর্মচারীদের অভিযোগ, পৌরসভার রাজস্ব খাতে নিজস্ব আয় রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দও দেয়া হয়। কিন্তু সেই বরাদ্দ বা নিজস্ব তহবিল কোনটাই কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করে না। এ ব্যাপারে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়ী করেন তারা। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে ধসসহ নানা কারণে অধিকাংশ পৌরসভার আয়ের উৎস না থাকায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পৌরসভাগুলো প্রতিষ্ঠা করার কারণে এর কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বিগত ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিহাতী পৌরসভা। এ পৌরসভায় স্থায়ী কর্মচারী ৩৩ জন এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী রয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ঠিকমতো পরিশোধ করলেও স্থায়ী কর্মচারীদের এখনও ৮/৯ মাসের বেতন-বোনাস বকেয়াই রয়ে গেছে। কালিহাতী পৌরসভার কার্য সহকারী ফরিদ মিয়া জানান, তারা গত জুন মাসে বেতন-ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু তাদের এখন পর্যন্ত ৮/৯ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়ে গেছে। এ বেতনে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনমতে চলতে হয়। তাও যদি এভাবে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা বকেয়া থাকে, তাহলে মানবেতর জীবনযাপন ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

এদিকে ভূঞাপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ। এ পৌরসভায় ৪৫ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে রয়েছেন ১৫ জন। তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হলেও স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস বকেয়া রয়ে গেছে। এ কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভূঞাপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সুকমল সরকার জানান, তারা প্রতিমাসে বেতনের অংশটুকু পাচ্ছেন, কিন্তু ভাতাসহ অন্যান্য কিছুই তারা পাচ্ছেন না। এর ফলে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছরের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার টাকা বকেয়া রয়ে গেছে।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

মাসের পর মাস ধরে বেতন-ভাতা বকেয়া টাঙ্গাইলের ৪ পৌরসভায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে ১১টি পৌরসভার মধ্যে চারটি পৌরসভার ১৪১ জন কর্মচারি দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। এতে পৌরসভার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কর্মচারীরা।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণের মধ্যেও কাজ করছেন টাঙ্গাইলের ১১টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু জেলার ১১টি পৌরসভার মধ্যে কালিহাতী, ভূঞাপুর, গোপালপুর এবং ধনবাড়ী পৌরসভার ১৪১ জন কর্মচারীর প্রায় ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে।

বেতন-ভাতা না পেয়ে এসব কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানবেতর জীবন কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবি জানিয়েছেন তারা। পৌরসভার কর্মচারিদের বঞ্চনার শেষ নেই। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়েও সরকার প্রদত্ত নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন খুবই কম। কিন্তু তাও যদি মাসের পর মাস বকেয়া থাকে, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

কর্মচারীদের অভিযোগ, পৌরসভার রাজস্ব খাতে নিজস্ব আয় রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দও দেয়া হয়। কিন্তু সেই বরাদ্দ বা নিজস্ব তহবিল কোনটাই কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করে না। এ ব্যাপারে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়ী করেন তারা। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে ধসসহ নানা কারণে অধিকাংশ পৌরসভার আয়ের উৎস না থাকায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পৌরসভাগুলো প্রতিষ্ঠা করার কারণে এর কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বিগত ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিহাতী পৌরসভা। এ পৌরসভায় স্থায়ী কর্মচারী ৩৩ জন এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী রয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ঠিকমতো পরিশোধ করলেও স্থায়ী কর্মচারীদের এখনও ৮/৯ মাসের বেতন-বোনাস বকেয়াই রয়ে গেছে। কালিহাতী পৌরসভার কার্য সহকারী ফরিদ মিয়া জানান, তারা গত জুন মাসে বেতন-ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু তাদের এখন পর্যন্ত ৮/৯ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়ে গেছে। এ বেতনে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনমতে চলতে হয়। তাও যদি এভাবে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা বকেয়া থাকে, তাহলে মানবেতর জীবনযাপন ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

এদিকে ভূঞাপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ। এ পৌরসভায় ৪৫ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে রয়েছেন ১৫ জন। তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হলেও স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস বকেয়া রয়ে গেছে। এ কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভূঞাপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সুকমল সরকার জানান, তারা প্রতিমাসে বেতনের অংশটুকু পাচ্ছেন, কিন্তু ভাতাসহ অন্যান্য কিছুই তারা পাচ্ছেন না। এর ফলে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছরের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার টাকা বকেয়া রয়ে গেছে।