খুলনায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি, আইসিইউ সংকট

রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তার নার্স হিমশিমে

খুলনা বিভাগের করোনা হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে প্রতিদিন সুস্থ হওয়া রোগীর চেয়ে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসাধীন রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষকরে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলোয় চাপ অনেক বেশি। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সূচকেও এই তিন জেলা বিভাগের শীর্ষে আছে।

গত কয়েকদিন খুলনার চার করোনা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মীরা হিমশিমে। ভর্তির জন্য রোগী আর স্বজনরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছেন। ঘুরছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। শয্যা না পেয়ে অনেকের ঠাঁই হচ্ছে মেঝেতে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিভাগের ১০ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৫৮৭টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে এইচডিইউ শয্যা আছে ৬৫টি। আর আইসিইউ শয্যা আছে ৬৪টি।

খুলনার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার কু-ু বলেন, আগের চেয়ে রোগীরা এখন বেশি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। আইসিইউ প্রয়োজন, এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর বাইরেও রোগীদের জন্য প্রচুর অক্সিজেন লাগছে। হাসপাতালের নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্টটিও চালু না হওয়ায় সিলিন্ডারের ওপর ভরসা বাড়ছে।

দিলীপ বলেন, খুলনার সরকারি দুটি হাসপাতালের আইসিইউ কখনোই খালি থাকছে না। এখন অবস্থা এমন হয়েছে, সব সময় ৩০৪০ জন রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষায় থাকছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকছে না। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলেই তবে আইসিইউ শয্যা খালি হচ্ছে।

এদিকে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনার সরকারি- বেসরকারি চারটি হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারশ করোনা রোগী থাকছে। তাদের একজনের সঙ্গে একাধিক স্বজন থাকছেন; যারা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়া করছেন। অবাধে হাটবাজারসহ সব জায়গায় যাচ্ছেন।

করোনা রোগীর সংস্পর্শে থাকার পরেও তারা আইসোলেশনে থাকছেন না। নেই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা, নেই নজরদারি। যে কারণে সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা কঠোরভাবে নিষেধ করছি। কেন করোনা ইউনিটে দর্শনার্থী বা স্বজনরা প্রবেশ করতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা তাদের ফোন করব। কিন্তু অনেকে আবেগে এই শর্ত মানছে না। তাছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন যদি কেউ সচেতন না হয়- তাহলে তো সংক্রমণ বাড়বে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মুনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাসপাতালগুলোতে যেন রোগীর স্বজনরা অবাধে ঘোরাঘুরি করতে না পারেন- সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, করোনা অক্রান্ত রোগীর পাশে কোন স্বজন থাকবে না। এই নির্দেশ কেউ না মানলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৬ জন। এর আগে মঙ্গলবার বিভাগে ৪৮ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজার ৫৮৮ জনের শনাক্ত হয়েছিল। বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাশেদা বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৪০১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৭২৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ হাজার ৮২৭ জন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায়। এছাড়া খুলনায় ৯ জন, ঝিনাইদহে সাতজন, যশোরে পাঁচজন, মেহেরপুরে দুজন, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় একজন করে মারা গেছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৭৫ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৮২৩ জনের। মারা গেছেন ৪৫২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৫৯ জন।

এরমধ্যে খুলনার চার করোনা হাসপাতালে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২ জন, করোনায় মারা গেছেন ১০ জন। এর আগে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়। বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১ , ৩১ আষাঢ় ১৪২৮ ৪ জিলহজ ১৪৪২

খুলনায় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি, আইসিইউ সংকট

রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তার নার্স হিমশিমে

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

image

খুলনা : করোনা রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে -সংবাদ

খুলনা বিভাগের করোনা হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে প্রতিদিন সুস্থ হওয়া রোগীর চেয়ে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসাধীন রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষকরে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলোয় চাপ অনেক বেশি। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সূচকেও এই তিন জেলা বিভাগের শীর্ষে আছে।

গত কয়েকদিন খুলনার চার করোনা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মীরা হিমশিমে। ভর্তির জন্য রোগী আর স্বজনরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছেন। ঘুরছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। শয্যা না পেয়ে অনেকের ঠাঁই হচ্ছে মেঝেতে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিভাগের ১০ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৫৮৭টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে এইচডিইউ শয্যা আছে ৬৫টি। আর আইসিইউ শয্যা আছে ৬৪টি।

খুলনার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার কু-ু বলেন, আগের চেয়ে রোগীরা এখন বেশি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। আইসিইউ প্রয়োজন, এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর বাইরেও রোগীদের জন্য প্রচুর অক্সিজেন লাগছে। হাসপাতালের নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্টটিও চালু না হওয়ায় সিলিন্ডারের ওপর ভরসা বাড়ছে।

দিলীপ বলেন, খুলনার সরকারি দুটি হাসপাতালের আইসিইউ কখনোই খালি থাকছে না। এখন অবস্থা এমন হয়েছে, সব সময় ৩০৪০ জন রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষায় থাকছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকছে না। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলেই তবে আইসিইউ শয্যা খালি হচ্ছে।

এদিকে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনার সরকারি- বেসরকারি চারটি হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারশ করোনা রোগী থাকছে। তাদের একজনের সঙ্গে একাধিক স্বজন থাকছেন; যারা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়া করছেন। অবাধে হাটবাজারসহ সব জায়গায় যাচ্ছেন।

করোনা রোগীর সংস্পর্শে থাকার পরেও তারা আইসোলেশনে থাকছেন না। নেই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা, নেই নজরদারি। যে কারণে সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা কঠোরভাবে নিষেধ করছি। কেন করোনা ইউনিটে দর্শনার্থী বা স্বজনরা প্রবেশ করতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা তাদের ফোন করব। কিন্তু অনেকে আবেগে এই শর্ত মানছে না। তাছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন যদি কেউ সচেতন না হয়- তাহলে তো সংক্রমণ বাড়বে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মুনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাসপাতালগুলোতে যেন রোগীর স্বজনরা অবাধে ঘোরাঘুরি করতে না পারেন- সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, করোনা অক্রান্ত রোগীর পাশে কোন স্বজন থাকবে না। এই নির্দেশ কেউ না মানলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৬ জন। এর আগে মঙ্গলবার বিভাগে ৪৮ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজার ৫৮৮ জনের শনাক্ত হয়েছিল। বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাশেদা বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৪০১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৭২৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ হাজার ৮২৭ জন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায়। এছাড়া খুলনায় ৯ জন, ঝিনাইদহে সাতজন, যশোরে পাঁচজন, মেহেরপুরে দুজন, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় একজন করে মারা গেছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৭৫ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৮২৩ জনের। মারা গেছেন ৪৫২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৫৯ জন।

এরমধ্যে খুলনার চার করোনা হাসপাতালে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২ জন, করোনায় মারা গেছেন ১০ জন। এর আগে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়। বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।