কিশোর অপরাধ রুখতে সামাজিক দায়বদ্ধতা

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে কর্তৃক সংঘটিত দেশীয় আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কর্মকা-কেই কিশোর অপরাধ বলে। কিশোর অপরাধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। সকল সমাজেই রয়েছে এর অনিবার্য উপস্থিতি। তবে প্রকৃতি ও মাত্রাগত দিক থেকে তা বিচিত্র। সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমানহারে কিশোর অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ফলে এটি অল্প সময়ের মধ্যেই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হিসাবে পরিণত হতে পারে। যা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের পক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সুস্থ দেশ, জাতি ও শান্তিময় বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে প্রতিকার করা উচিত। কারণ শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের একটি অংশ কোন কারণে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চর হুমকি ও সুস্থ সমাজ জীবনের প্রতিবন্ধক হোক তা কারো কাম্য নয়।

দেশের সর্বাধিক সংখ্যক কিশোর অপরাধীর উদ্ভব নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। বিশেষত ডিভোর্সে ভাঙা, নেশাগ্রস্ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, বস্তি ও বিবিধ অরক্ষিত ইত্যাদি পরিবার। এসব পরিবারের শিশুরা আদর্শ নিয়ে বড় হয় না। এরূপ পরিবারের শিশুদের ওপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষীণ। এসব শিশু বিকাশমূলক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অরক্ষিত পরিবারের শিশুরা সহজেই অপরাধমূলক তৎপরতায় লিপ্ত এবং অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে বাবা-মা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান; অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবার নিজ সন্তানদের সময় দেয় না। শিশুরা বিভিন্ন ধরনের গেম দেখে, সিনেমা দেখে, একাকিত্বে ভোগে এবং অপরাধী হয়ে ওঠে।

বর্তমানে সমাজেও সব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য যেমন শিক্ষকের বিষয়জ্ঞান, সততা, আন্তরিকতা, ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, ছাত্রছাত্রীর নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চেতনা কার্যত অনুপস্থিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক চিত্তবিনোদন, খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষকদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবও প্রকট।

কোনো চারা শুরু থেকেই যদি বিষক্ত পোকার আক্রমণের ক্ষত নিয়ে বেড়ে ওঠে, তবে সেই চারার গাছ হয়ে ওঠা আমাদের জন্য খুব একটা ফলদায়ক হবে না। তেমনি সমাজের সব শ্রেণির প্রতিটি শিশু-কিশোরের শুরুর জীবনে অনাদর, অবহেলা, অপ্রাপ্তি আর বৈষম্য ভিড় করলে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রাপ্তি আশা করাটা নিরর্থক। তাদের স্বীকৃত সব অধিকার পূরণ করে সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ারর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দায় পরিবার, সমাজ, শিক্ষক, গণমাধ্যম ও সর্বোপরি রাষ্ট্রের। আমাদের সবার যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হলেই সমাজ ও রাষ্ট্র কিশোর অপরাধের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে।

সানজিদা জাহান লোপা

বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ , ১৮ কার্তিক ১৪২৮ ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কিশোর অপরাধ রুখতে সামাজিক দায়বদ্ধতা

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে কর্তৃক সংঘটিত দেশীয় আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কর্মকা-কেই কিশোর অপরাধ বলে। কিশোর অপরাধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। সকল সমাজেই রয়েছে এর অনিবার্য উপস্থিতি। তবে প্রকৃতি ও মাত্রাগত দিক থেকে তা বিচিত্র। সারাবিশ্বে ক্রমবর্ধমানহারে কিশোর অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ফলে এটি অল্প সময়ের মধ্যেই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হিসাবে পরিণত হতে পারে। যা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের পক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সুস্থ দেশ, জাতি ও শান্তিময় বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে প্রতিকার করা উচিত। কারণ শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের একটি অংশ কোন কারণে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চর হুমকি ও সুস্থ সমাজ জীবনের প্রতিবন্ধক হোক তা কারো কাম্য নয়।

দেশের সর্বাধিক সংখ্যক কিশোর অপরাধীর উদ্ভব নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। বিশেষত ডিভোর্সে ভাঙা, নেশাগ্রস্ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, বস্তি ও বিবিধ অরক্ষিত ইত্যাদি পরিবার। এসব পরিবারের শিশুরা আদর্শ নিয়ে বড় হয় না। এরূপ পরিবারের শিশুদের ওপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষীণ। এসব শিশু বিকাশমূলক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অরক্ষিত পরিবারের শিশুরা সহজেই অপরাধমূলক তৎপরতায় লিপ্ত এবং অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে বাবা-মা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান; অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবার নিজ সন্তানদের সময় দেয় না। শিশুরা বিভিন্ন ধরনের গেম দেখে, সিনেমা দেখে, একাকিত্বে ভোগে এবং অপরাধী হয়ে ওঠে।

বর্তমানে সমাজেও সব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য যেমন শিক্ষকের বিষয়জ্ঞান, সততা, আন্তরিকতা, ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, ছাত্রছাত্রীর নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চেতনা কার্যত অনুপস্থিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক চিত্তবিনোদন, খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষকদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবও প্রকট।

কোনো চারা শুরু থেকেই যদি বিষক্ত পোকার আক্রমণের ক্ষত নিয়ে বেড়ে ওঠে, তবে সেই চারার গাছ হয়ে ওঠা আমাদের জন্য খুব একটা ফলদায়ক হবে না। তেমনি সমাজের সব শ্রেণির প্রতিটি শিশু-কিশোরের শুরুর জীবনে অনাদর, অবহেলা, অপ্রাপ্তি আর বৈষম্য ভিড় করলে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রাপ্তি আশা করাটা নিরর্থক। তাদের স্বীকৃত সব অধিকার পূরণ করে সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ারর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দায় পরিবার, সমাজ, শিক্ষক, গণমাধ্যম ও সর্বোপরি রাষ্ট্রের। আমাদের সবার যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হলেই সমাজ ও রাষ্ট্র কিশোর অপরাধের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে।

সানজিদা জাহান লোপা