গাইবান্ধার চরাঞ্চলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি জীবনমানের

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বেষ্টিত উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধার ভৌগোলিক এলাকার অন্তত পক্ষে ৩৫ শতাংশ নদী ও চরাঞ্চল। জেলার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষের বসবাস চরাঞ্চলে যার অন্ততপক্ষে ৮৫ শতাংশই দারিদ্র সীমার নীচে। বন্যা, নদীভাঙন, শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে এসব মানুষ বসবাস করে জীবনযাপন করে আসছে। তবে, গত তিন দশকে এনজিও’র পক্ষ থেকে অন্ততপক্ষে হাজারও কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও দৃশ্যত মানুষনের জীবনমানের তেমন উন্নয়ন হয়নি। কৃষিতে কিছুটা সফলতা আসলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারী উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু রোধ, অপুষ্টি, শিশু বিয়ে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে চরাঞ্চলের মানুষজন।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি, সদর, সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ১৭০ টি চর-গ্রাম রয়েছে। প্রতিবছর ছোটবড় বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। আর নদীভাঙনে বছরে গড়ে ৪ হাজার পরিবার বসতভিটা ও জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়। আবার নদীর নাব্য সঙ্কটে নৌকা কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সীমিত হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বেসরকারি উদ্যোগে মাধ্যমিক পর্র্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে মাত্র চারটি। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন কলেজ গড়ে না ওঠায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের ছেলে-মেয়েরা।

ইউনিসেফ এর একটি তথ্য অনুযায়ী চরাঞ্চলে স্যানিটেশন, অপুষ্টি, বাল্যবিয়ে, ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এদিকে, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো-এনজিওসমূহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এক থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী চরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে নানা নামে প্রকল্প গ্রহণ করলেও এলাকা নির্বাচন ও উপকারভোগীর তালিকার বৈশিষ্ট্য অনেকটাই পূরণ না হওয়ায় যাদের নিয়ে প্রকল্প তারা সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একারে দৃশ্যত খুব বেশি উন্নয়ন হয়নি এসব মানুষজনের।

তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম-জিবি, কেয়ার, ডিএফআইডি, আইসিসিও-কো অপারেশন, ইউএসআইডি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, খ্রিস্টিয়ান এইড, ইউকে-এইড, ইউএনএফপিএ, ওয়াল্ড ভিশন, নেটজ-জার্মানি, মুসলিম এইড, এওডব্লিউ, রেডক্রিসেন্ট, এমএটিডব্লিউ-অস্ট্রেলিয়া, কারিতাস, কনসার্ন ওয়াল্ড এইড, ইসলামিক রিলিফসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থার অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার দেশীয় সংস্থা ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) ফ্রেন্ডশিপ, আশা,আইইডি, এসকেএস ফাউন্ডেশন, উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থা, একতা, ছিন্নমূল মহিলা সমিতি, আরডিআরএস, ইএসডিওসহ অন্ততপক্ষে শতাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে ২০টির অধিক প্রকল্প চালু রয়েছে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

সাঘাটার উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহাদৎ হোসেন মন্ডল জানান, চরাঞ্চলের শিক্ষার করুন অবস্থা, মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ না থাকায় প্রাথমিকব শেষ করেই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে বাল্যবিয়ের ও শিশুশ্রমে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।

ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামানিক জানান, বন্যা ও নদীভাঙনে স্থায়ী পদেক্ষপ না নিলে চরের সমস্যা সমাধান করা কঠিন। তিনি বলেন, চরের মানুষের জন্য চরের বসতবাড়ি উচু করে বন্যাকালীন থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর প্রধান নির্বাহী এম. আবদুস্্ সালাম চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে প্রয়োজন গবেষণার আলোকে প্রকল্পগ্রহণ করা। কেননা, চরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে লিংক করতে হবে। তিনি দাবি করেন, চরের মানুষজনের দুর্যোগ মোকাবেলা, নারী উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা, স্যানিটেশন, কৃষি ও গবাদি পশুপালনভিত্তিক পারিবারিক আয় উপার্জন বেড়েছে। তিনি আরো জানান, চরের মানুষের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও সরকারি- বেসরকারিভাবে নাগরিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করলে চরে সমউন্নয়ন সম্ভব বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী আবু রায়হান দোলন জানান, যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বশর্ত হলো এলাকার পরিস্থিতি জানা, একারনে জিও এনজিও মিলে ফুলছড়ি উপজেলা প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ডাটা বেইজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য উপকারভোগী নির্বাচনে কোন ডুপ্লিকেট হওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, চরাঞ্চলের মানুষজন এখন উন্নয়নের পথেই হাটছে। সরকারও এখন চর নিয়ে টেকসই পরিকল্পনা করেছে-এজন্য বিদ্যুৎ সংযোগ, হাটবাজার গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মান বৃদ্ধি, কৃষিতে বিশেষ ভর্তুকি, গবাদি পশুপালনে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও চরাঞ্চলে ১০টি আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও শতাধিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন চরের ভুট্টা ও মরিচ এখন দেশের বিভিন্ন জেলা যাচ্ছে। তবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনিও জানান, চরের জন্য পৃথক বোর্ড থাকলে উন্নয়ন দ্রুত হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে উত্তরের চরের সমস্যা ও সম্ভাবা নিয়ে আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার চর নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং মহাপরিকল্পনা রয়েছে। নদীভাঙন প্রতিরোধ করে চরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে করে চরের সাথে মেইনল্যান্ডের কোন ব্যবধান না থাকে। তিনি আরও বলেন. চরের মানুষজনের জন্য সবধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

চর গবেষক মাহমুদুর রশিদ জানান, চরের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে নদীভাঙন প্রতিরোধ করে কৃষি, গবাদিপশু ও শিল্পকারখানা ভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি ও কর্মসংস্থানভিত্তিক অর্থপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজশর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিশেষ নজর দেয়ার কথাও জানান তিনি।

বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি জীবনমানের

আফতাব হোসেন, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় ঘোড়ার গাড়িতে চলে মালামাল আনানেয়ার কাজ -সংবাদ

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বেষ্টিত উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধার ভৌগোলিক এলাকার অন্তত পক্ষে ৩৫ শতাংশ নদী ও চরাঞ্চল। জেলার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষের বসবাস চরাঞ্চলে যার অন্ততপক্ষে ৮৫ শতাংশই দারিদ্র সীমার নীচে। বন্যা, নদীভাঙন, শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে এসব মানুষ বসবাস করে জীবনযাপন করে আসছে। তবে, গত তিন দশকে এনজিও’র পক্ষ থেকে অন্ততপক্ষে হাজারও কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও দৃশ্যত মানুষনের জীবনমানের তেমন উন্নয়ন হয়নি। কৃষিতে কিছুটা সফলতা আসলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারী উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু রোধ, অপুষ্টি, শিশু বিয়ে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে চরাঞ্চলের মানুষজন।

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি, সদর, সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ১৭০ টি চর-গ্রাম রয়েছে। প্রতিবছর ছোটবড় বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। আর নদীভাঙনে বছরে গড়ে ৪ হাজার পরিবার বসতভিটা ও জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়। আবার নদীর নাব্য সঙ্কটে নৌকা কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সীমিত হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বেসরকারি উদ্যোগে মাধ্যমিক পর্র্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে মাত্র চারটি। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন কলেজ গড়ে না ওঠায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের ছেলে-মেয়েরা।

ইউনিসেফ এর একটি তথ্য অনুযায়ী চরাঞ্চলে স্যানিটেশন, অপুষ্টি, বাল্যবিয়ে, ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এদিকে, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো-এনজিওসমূহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এক থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী চরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে নানা নামে প্রকল্প গ্রহণ করলেও এলাকা নির্বাচন ও উপকারভোগীর তালিকার বৈশিষ্ট্য অনেকটাই পূরণ না হওয়ায় যাদের নিয়ে প্রকল্প তারা সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একারে দৃশ্যত খুব বেশি উন্নয়ন হয়নি এসব মানুষজনের।

তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম-জিবি, কেয়ার, ডিএফআইডি, আইসিসিও-কো অপারেশন, ইউএসআইডি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, খ্রিস্টিয়ান এইড, ইউকে-এইড, ইউএনএফপিএ, ওয়াল্ড ভিশন, নেটজ-জার্মানি, মুসলিম এইড, এওডব্লিউ, রেডক্রিসেন্ট, এমএটিডব্লিউ-অস্ট্রেলিয়া, কারিতাস, কনসার্ন ওয়াল্ড এইড, ইসলামিক রিলিফসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থার অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার দেশীয় সংস্থা ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) ফ্রেন্ডশিপ, আশা,আইইডি, এসকেএস ফাউন্ডেশন, উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থা, একতা, ছিন্নমূল মহিলা সমিতি, আরডিআরএস, ইএসডিওসহ অন্ততপক্ষে শতাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে ২০টির অধিক প্রকল্প চালু রয়েছে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

সাঘাটার উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহাদৎ হোসেন মন্ডল জানান, চরাঞ্চলের শিক্ষার করুন অবস্থা, মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ না থাকায় প্রাথমিকব শেষ করেই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে বাল্যবিয়ের ও শিশুশ্রমে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।

ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামানিক জানান, বন্যা ও নদীভাঙনে স্থায়ী পদেক্ষপ না নিলে চরের সমস্যা সমাধান করা কঠিন। তিনি বলেন, চরের মানুষের জন্য চরের বসতবাড়ি উচু করে বন্যাকালীন থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর প্রধান নির্বাহী এম. আবদুস্্ সালাম চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে প্রয়োজন গবেষণার আলোকে প্রকল্পগ্রহণ করা। কেননা, চরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে লিংক করতে হবে। তিনি দাবি করেন, চরের মানুষজনের দুর্যোগ মোকাবেলা, নারী উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা, স্যানিটেশন, কৃষি ও গবাদি পশুপালনভিত্তিক পারিবারিক আয় উপার্জন বেড়েছে। তিনি আরো জানান, চরের মানুষের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও সরকারি- বেসরকারিভাবে নাগরিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করলে চরে সমউন্নয়ন সম্ভব বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী আবু রায়হান দোলন জানান, যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বশর্ত হলো এলাকার পরিস্থিতি জানা, একারনে জিও এনজিও মিলে ফুলছড়ি উপজেলা প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ডাটা বেইজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য উপকারভোগী নির্বাচনে কোন ডুপ্লিকেট হওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, চরাঞ্চলের মানুষজন এখন উন্নয়নের পথেই হাটছে। সরকারও এখন চর নিয়ে টেকসই পরিকল্পনা করেছে-এজন্য বিদ্যুৎ সংযোগ, হাটবাজার গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মান বৃদ্ধি, কৃষিতে বিশেষ ভর্তুকি, গবাদি পশুপালনে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও চরাঞ্চলে ১০টি আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও শতাধিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন চরের ভুট্টা ও মরিচ এখন দেশের বিভিন্ন জেলা যাচ্ছে। তবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনিও জানান, চরের জন্য পৃথক বোর্ড থাকলে উন্নয়ন দ্রুত হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে উত্তরের চরের সমস্যা ও সম্ভাবা নিয়ে আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার চর নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং মহাপরিকল্পনা রয়েছে। নদীভাঙন প্রতিরোধ করে চরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে করে চরের সাথে মেইনল্যান্ডের কোন ব্যবধান না থাকে। তিনি আরও বলেন. চরের মানুষজনের জন্য সবধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

চর গবেষক মাহমুদুর রশিদ জানান, চরের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে নদীভাঙন প্রতিরোধ করে কৃষি, গবাদিপশু ও শিল্পকারখানা ভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি ও কর্মসংস্থানভিত্তিক অর্থপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজশর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিশেষ নজর দেয়ার কথাও জানান তিনি।