পীরগাছায় ২ সপ্তাহেও উদ্ধার হয়নি অপহৃতা

রংপুরের পীরগাছায় দুই সন্তানের জনক কর্তৃক স্থানীয় এক স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে অপহরন করায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলাও হয়নি, উদ্ধারও হয়নি অপহৃতা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অপরহরণকারীর অসুস্থ বাবার সালিশের মাধ্যমে জরিমানা করেন । বর্তমান ইউপি সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে একটি চক্র সালিশের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই সালিশি বোর্ডের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের যোগেশ এর ছেলে দুই সন্তানের জনক বাতাসু পাশর্^বর্তী গাইবান্ধা জেলা সদরে দাড়িয়াপুর গ্রামে নারায়ণ এর মেয়েকে ১৬ বছর পূর্বে বিবাহ করেন। তাদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসু দুই সন্তানের জনক গত ১২ সেপ্টেম্বর পাশর্^বর্তী মাঝিপাড়া গ্রামের মাধব দাসের মেয়েকে নিয়ে অজানার উদ্দ্যেশে পাড়ি জমান। পরে মাধব দাস বাদী হয়ে তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসু ও মিন্টু চন্দ্র পালকে আসামী করে থানায় একটি অপহরনের অভিযোগ দেন। অভিযোগের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অপহৃতা উদ্ধার না হওয়ায় এবং অভিযোগের ২নং আসামী মিন্টু চন্দ্র পাল প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেরানোয় হতাশ অভিযোগকারী মাধব দাস।

এ ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হলে দুই সন্তানের জননীর বাবা অর্থাৎ শিবেন্দ্র নাথ পাল (বাতাসু) এর শ্বশুর এলাকায় আসেন এবং ওই গ্রামের স্থানীয়দের নিকট বিচার দাবী করেন। পরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার জগদীশ পাল এর বাহিরাঙ্গনে এক সালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুর গফুর দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন এর সভাপতিত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী, সুচতুর সন্তোষ পাল, আব্দুল বারী, মজিবর দালাল, ইশা মাস্টার ও মহিলা সদস্যার স্বামী হারুনসহ ১২ সদস্য বিশিষ্ট সালিসী বোর্ড গঠন করা হয়। দিনব্যাপী সালিসী বোর্ডের সিন্ধান্ত মতে হতভাগ্য জগদীশ পাল এর মাত্র ৭ শতাংশ জমি জরিমানা হিসেবে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বন্টনের সিন্ধান্ত হয়। এসময় সালিসী বোর্ডে উপস্থিত জগদীশ পাল অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ৭ শতাংশ জমির মধ্যে ২ শতাংশ দেয়া হয় অর্থাৎ বাতাসুর ১ম স্ত্রীর নামে, ২ শতাংশ দেয়া হয় নিজের ছোট ছেলের নামে ও মেয়ের নামে ০২ শতাংশ, শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসুর ছেলের নামে ০১ শতাংশ দেয়ার জন্য সালিশি বোর্ড রায় দেয় । এ ধরনের রায় শুনে অসহায় ও অসুস্থ যোগেশ সেন্সলেস হয়ে পরেন । অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকে বলেন, লোকটাকে এভাবে নিঃস্ব করা ঠিক হয়নি। ওই গ্রামের প্রভাবশালী সন্তোষ পাল প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ছোট খাটো বিষয় নিয়ে একটি পক্ষ নেন এবং কৌশলে সালিসী বৈঠক ডেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তার মূখ্য উদ্দেশ্য বলে স্থানীয়রা সংবাদকে বলেন। তার একাজে সহযোগিতা করেন মজিবর দালাল, আব্দুল বারী, অপহরনকারী বাতাসুসহ ৫/৭ জন ব্যাক্তি । স্থানীয় ইউপি সদস্য আঃ গফুর এলাকায় অবস্থান না করায় তার এমন অনুপস্থিতিকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি চক্র ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সালিসী বৈঠকের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত জগদীশ পাল এর সাথে কথা হলে তিনি জরিমানার বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।

স্থানীয় প্রভাবশালী, সুচতুর ও সালিসী বোর্ডের সদস্য সন্তোষ পাল এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন জমি জরিমানা করা হয়েছে । তিনি যোগেশ অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন । সন্তোষ আরো বলেন একটি শক্ত বিচার করে বাতাসুর ১ম স্ত্রীর একটি শক্ত শর্ত করা হয়েছে ।

পীরগাছায় থানায় অভিযোগকারী মাধব দাস এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমার মেয়ের অপহরনকারীদের মধ্যে ২নং আসামী প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ মামলা রেকর্ড হচ্ছে না বা কাউকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ । সালিশি বোর্ড সদস্য আঃ বাড়ি বলেন, সালিশি বৈঠকের সদস্যরা কিছু সম্মানী নিয়ে ৬ শতাংশ জমি জরিমানা করে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়েছে । পীরগাছা থানার এস আই একরামুল এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, অভিযোগের পর আমি তিনবার এলাকায় গেছিলাম। তিনি আরও বলেন ওসি স্যার আমাকে বলেছেন ছেলে মেয়ে দুইজনই এডাল্ট। অতএব যে কোন একজনকে নিয়ে এসে জিঞ্জাসা করো । আদার ওয়াইজ করা যাবে না ।

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১ আশ্বিন ১৪২৯ ২৯ সফর ১৪৪৪

পীরগাছায় ২ সপ্তাহেও উদ্ধার হয়নি অপহৃতা

প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর)

image

পীরগাছা (রংপুর) : তাম্বুলপুর পালপাড়ায় স্থানীয়দের উদ্যোগে সালিশের দৃশ্য -সংবাদ

রংপুরের পীরগাছায় দুই সন্তানের জনক কর্তৃক স্থানীয় এক স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে অপহরন করায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলাও হয়নি, উদ্ধারও হয়নি অপহৃতা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অপরহরণকারীর অসুস্থ বাবার সালিশের মাধ্যমে জরিমানা করেন । বর্তমান ইউপি সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে একটি চক্র সালিশের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই সালিশি বোর্ডের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের যোগেশ এর ছেলে দুই সন্তানের জনক বাতাসু পাশর্^বর্তী গাইবান্ধা জেলা সদরে দাড়িয়াপুর গ্রামে নারায়ণ এর মেয়েকে ১৬ বছর পূর্বে বিবাহ করেন। তাদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসু দুই সন্তানের জনক গত ১২ সেপ্টেম্বর পাশর্^বর্তী মাঝিপাড়া গ্রামের মাধব দাসের মেয়েকে নিয়ে অজানার উদ্দ্যেশে পাড়ি জমান। পরে মাধব দাস বাদী হয়ে তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসু ও মিন্টু চন্দ্র পালকে আসামী করে থানায় একটি অপহরনের অভিযোগ দেন। অভিযোগের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অপহৃতা উদ্ধার না হওয়ায় এবং অভিযোগের ২নং আসামী মিন্টু চন্দ্র পাল প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেরানোয় হতাশ অভিযোগকারী মাধব দাস।

এ ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হলে দুই সন্তানের জননীর বাবা অর্থাৎ শিবেন্দ্র নাথ পাল (বাতাসু) এর শ্বশুর এলাকায় আসেন এবং ওই গ্রামের স্থানীয়দের নিকট বিচার দাবী করেন। পরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার জগদীশ পাল এর বাহিরাঙ্গনে এক সালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুর গফুর দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন এর সভাপতিত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী, সুচতুর সন্তোষ পাল, আব্দুল বারী, মজিবর দালাল, ইশা মাস্টার ও মহিলা সদস্যার স্বামী হারুনসহ ১২ সদস্য বিশিষ্ট সালিসী বোর্ড গঠন করা হয়। দিনব্যাপী সালিসী বোর্ডের সিন্ধান্ত মতে হতভাগ্য জগদীশ পাল এর মাত্র ৭ শতাংশ জমি জরিমানা হিসেবে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বন্টনের সিন্ধান্ত হয়। এসময় সালিসী বোর্ডে উপস্থিত জগদীশ পাল অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ৭ শতাংশ জমির মধ্যে ২ শতাংশ দেয়া হয় অর্থাৎ বাতাসুর ১ম স্ত্রীর নামে, ২ শতাংশ দেয়া হয় নিজের ছোট ছেলের নামে ও মেয়ের নামে ০২ শতাংশ, শিবেন্দ্র নাথ পাল প্রকাশ বাতাসুর ছেলের নামে ০১ শতাংশ দেয়ার জন্য সালিশি বোর্ড রায় দেয় । এ ধরনের রায় শুনে অসহায় ও অসুস্থ যোগেশ সেন্সলেস হয়ে পরেন । অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকে বলেন, লোকটাকে এভাবে নিঃস্ব করা ঠিক হয়নি। ওই গ্রামের প্রভাবশালী সন্তোষ পাল প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ছোট খাটো বিষয় নিয়ে একটি পক্ষ নেন এবং কৌশলে সালিসী বৈঠক ডেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তার মূখ্য উদ্দেশ্য বলে স্থানীয়রা সংবাদকে বলেন। তার একাজে সহযোগিতা করেন মজিবর দালাল, আব্দুল বারী, অপহরনকারী বাতাসুসহ ৫/৭ জন ব্যাক্তি । স্থানীয় ইউপি সদস্য আঃ গফুর এলাকায় অবস্থান না করায় তার এমন অনুপস্থিতিকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি চক্র ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সালিসী বৈঠকের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত জগদীশ পাল এর সাথে কথা হলে তিনি জরিমানার বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।

স্থানীয় প্রভাবশালী, সুচতুর ও সালিসী বোর্ডের সদস্য সন্তোষ পাল এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন জমি জরিমানা করা হয়েছে । তিনি যোগেশ অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন । সন্তোষ আরো বলেন একটি শক্ত বিচার করে বাতাসুর ১ম স্ত্রীর একটি শক্ত শর্ত করা হয়েছে ।

পীরগাছায় থানায় অভিযোগকারী মাধব দাস এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমার মেয়ের অপহরনকারীদের মধ্যে ২নং আসামী প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ মামলা রেকর্ড হচ্ছে না বা কাউকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ । সালিশি বোর্ড সদস্য আঃ বাড়ি বলেন, সালিশি বৈঠকের সদস্যরা কিছু সম্মানী নিয়ে ৬ শতাংশ জমি জরিমানা করে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়েছে । পীরগাছা থানার এস আই একরামুল এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, অভিযোগের পর আমি তিনবার এলাকায় গেছিলাম। তিনি আরও বলেন ওসি স্যার আমাকে বলেছেন ছেলে মেয়ে দুইজনই এডাল্ট। অতএব যে কোন একজনকে নিয়ে এসে জিঞ্জাসা করো । আদার ওয়াইজ করা যাবে না ।