মোহাম্মদপুরে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি বাসা থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন-সৌদি প্রবাসী নোমান (২৮) এবং তার স্ত্রী শামীমা (২০)। গত রোববার রাতে বাসার দরজা ভেঙে ফ্লোরে শায়িত অবস্থায় শামীমা এবং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নোমানের মরদেহ দেখতে পায় স্বজনরা। পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করলে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।

নোমান স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্ত্রীর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে এই হত্যাকা-ের কারণ সম্পর্কে পরিবার ও পুলিশ নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারছে না। কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

নিহতের পরিবার জানায়, মৃত নোমান ও শামীমার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। নোমান সৌদি আরব প্রবাসী। পারিবারিকভাবে প্রায় বছর খানেক আগে শামীমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আবার সৌদি আরব চলে যান। শামীমা আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাই পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শামীমাকে বাবার বাড়িতে নেয়ার কথা ছিল নোমানের। তবে চলতি মাসের ৯ তারিখে দেশে বেড়াতে আসেন নোমান। আশা ছিল, ২/১ মাস থেকে আবার সৌদি যাবেন। তাই ১৫ তারিখে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। যেই বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ওই বাসার ৫ম তলায় নোমানের বন্ধু থাকেন। সেই সুবাধে বাড়িটির ৩য় তলায় সাবলেট রুম ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু এরই মধ্যে যেকোন কারণে তারা এ ঘটনা ঘটান।

পুলিশ ও বাড়ির দারোয়ান জানান, নোমান তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাসায় উঠার সময় ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি চান বাড়িওয়ালা। কিন্তু নোমান দিবো, দিচ্ছি করে আর দেয়নি। গত রোববার সকালে বাড়িওয়ালা দারোয়ানকে নোমান ও তার স্ত্রীর আইডি কার্ডের কপি নিয়ে যেতে বলেন। দারোয়ান সকাল থেকে একাধিকবার তৃতীয় তলায় গিয়ে নোমানদের রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পান। কয়েকবার ডাকাডাকি করলেও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। সন্ধ্যার পর আরেক বার গেলে তখনও দরজা বন্ধ পান। তখন ৫ম তলায় গিয়ে নোমানের বন্ধুকে বলেন, ওদের দুজনের জুতা দরজার বাইরে। কিন্তু সকাল থেকে ডাকাডাকি করা সত্ত্বেও দরজা খুলছে না।

পরে নোমানের বন্ধু ও আশপাশের অন্য বাসিন্দারা দরজা ভেঙে ভেতরে লাইট অফ দেখতে পান। লাইট জ্বালালে ফ্লোরে শায়িত অবস্থায় শামীমাকে আর তার ওড়না গলায় পেঁচানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে নোমানকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শামীমার পাশে একটি বালিশ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বালিশ দিয়ে আগে শামীমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নোমান। এরপর স্ত্রীর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেন নোমান। তার পায়ের পাশে একটি চেয়ার ছিল। চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন তিনি। রাতেই সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

নিহত নোমানের ফুফা কামাল হোসেন বলেন, নোমান গত ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। এসে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি থেকে শামীমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। গত রোববার রাতে তাদের মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। তবে কি কারণে তারা এমনটি করলো তা নিশ্চিত নন তিনি।

নিহত শামীমার ভাই শামীম হোসেন বলেন, বোনজামাই বিদেশ থাকাকালীন বোনের সঙ্গে কোন ধরনের মনোমালিন্য হয়নি। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছি না। পারিবারিক ভাবেই দুইজনের বিয়ে হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে কি কারণে তিনি দেশে এসে আমার বোনকে ঢাকায় নিয়ে গেলেন বুঝতে পারলাম না। যদি জানতাম তার সঙ্গে কোন মনোমালিন্য বা ঝগড়া হয়েছে, তাহলে কিছু আঁচ করতে পারতাম। কিন্তু তেমন কিছুও শুনিনি।

বাড়ির দারোয়ান জানান, নোমান তার স্ত্রীকে নিয়ে ১৫ তারিখে ওই ভবনে ওঠেন। তারা ওইদিন ঘুরতে বের হন। প্রতিদিনই তারা ঘুরতে বের হতেন। বের হওয়ার সময় একে অন্যের হাত ধরাধরি করে বের হতেন। তাদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য তিনি দেখতে পাননি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মুজিব পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে নোমান স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের বাসার দরজা বন্ধ ছিল। গ্রিলও কাটা ছিল না। বাসায় নোমানের ল্যাপটপ, টাকা-পয়সা, তার স্ত্রীর হাতে স্বর্ণের চুড়ি ও গলার চেইন-এর সবই ছিল। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা ও একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১ আশ্বিন ১৪২৯ ২৯ সফর ১৪৪৪

মোহাম্মদপুরে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি বাসা থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন-সৌদি প্রবাসী নোমান (২৮) এবং তার স্ত্রী শামীমা (২০)। গত রোববার রাতে বাসার দরজা ভেঙে ফ্লোরে শায়িত অবস্থায় শামীমা এবং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নোমানের মরদেহ দেখতে পায় স্বজনরা। পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করলে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।

নোমান স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্ত্রীর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে এই হত্যাকা-ের কারণ সম্পর্কে পরিবার ও পুলিশ নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারছে না। কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

নিহতের পরিবার জানায়, মৃত নোমান ও শামীমার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। নোমান সৌদি আরব প্রবাসী। পারিবারিকভাবে প্রায় বছর খানেক আগে শামীমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আবার সৌদি আরব চলে যান। শামীমা আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাই পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শামীমাকে বাবার বাড়িতে নেয়ার কথা ছিল নোমানের। তবে চলতি মাসের ৯ তারিখে দেশে বেড়াতে আসেন নোমান। আশা ছিল, ২/১ মাস থেকে আবার সৌদি যাবেন। তাই ১৫ তারিখে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। যেই বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ওই বাসার ৫ম তলায় নোমানের বন্ধু থাকেন। সেই সুবাধে বাড়িটির ৩য় তলায় সাবলেট রুম ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু এরই মধ্যে যেকোন কারণে তারা এ ঘটনা ঘটান।

পুলিশ ও বাড়ির দারোয়ান জানান, নোমান তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাসায় উঠার সময় ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি চান বাড়িওয়ালা। কিন্তু নোমান দিবো, দিচ্ছি করে আর দেয়নি। গত রোববার সকালে বাড়িওয়ালা দারোয়ানকে নোমান ও তার স্ত্রীর আইডি কার্ডের কপি নিয়ে যেতে বলেন। দারোয়ান সকাল থেকে একাধিকবার তৃতীয় তলায় গিয়ে নোমানদের রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পান। কয়েকবার ডাকাডাকি করলেও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। সন্ধ্যার পর আরেক বার গেলে তখনও দরজা বন্ধ পান। তখন ৫ম তলায় গিয়ে নোমানের বন্ধুকে বলেন, ওদের দুজনের জুতা দরজার বাইরে। কিন্তু সকাল থেকে ডাকাডাকি করা সত্ত্বেও দরজা খুলছে না।

পরে নোমানের বন্ধু ও আশপাশের অন্য বাসিন্দারা দরজা ভেঙে ভেতরে লাইট অফ দেখতে পান। লাইট জ্বালালে ফ্লোরে শায়িত অবস্থায় শামীমাকে আর তার ওড়না গলায় পেঁচানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে নোমানকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শামীমার পাশে একটি বালিশ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বালিশ দিয়ে আগে শামীমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নোমান। এরপর স্ত্রীর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেন নোমান। তার পায়ের পাশে একটি চেয়ার ছিল। চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন তিনি। রাতেই সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

নিহত নোমানের ফুফা কামাল হোসেন বলেন, নোমান গত ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। এসে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি থেকে শামীমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। গত রোববার রাতে তাদের মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। তবে কি কারণে তারা এমনটি করলো তা নিশ্চিত নন তিনি।

নিহত শামীমার ভাই শামীম হোসেন বলেন, বোনজামাই বিদেশ থাকাকালীন বোনের সঙ্গে কোন ধরনের মনোমালিন্য হয়নি। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছি না। পারিবারিক ভাবেই দুইজনের বিয়ে হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে কি কারণে তিনি দেশে এসে আমার বোনকে ঢাকায় নিয়ে গেলেন বুঝতে পারলাম না। যদি জানতাম তার সঙ্গে কোন মনোমালিন্য বা ঝগড়া হয়েছে, তাহলে কিছু আঁচ করতে পারতাম। কিন্তু তেমন কিছুও শুনিনি।

বাড়ির দারোয়ান জানান, নোমান তার স্ত্রীকে নিয়ে ১৫ তারিখে ওই ভবনে ওঠেন। তারা ওইদিন ঘুরতে বের হন। প্রতিদিনই তারা ঘুরতে বের হতেন। বের হওয়ার সময় একে অন্যের হাত ধরাধরি করে বের হতেন। তাদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য তিনি দেখতে পাননি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মুজিব পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে নোমান স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের বাসার দরজা বন্ধ ছিল। গ্রিলও কাটা ছিল না। বাসায় নোমানের ল্যাপটপ, টাকা-পয়সা, তার স্ত্রীর হাতে স্বর্ণের চুড়ি ও গলার চেইন-এর সবই ছিল। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা ও একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তিনি।