সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সার পেলেন রংপুরের কৃষকরা

প্রশ্ন, বাকি কৃষকের কী হবে?

আমন মৌসুমে সারাদেশে কৃষকেরা ‘প্রয়োজনমতো’ সার দিতে না পারায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবরোধও হয়েছে। এ নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার ‘সংবাদ’ পত্রিকায় ‘হিসেবের গরমিলে সারের কৃত্রিম সংকট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কৃষি কর্মকর্তারা, তারা ইউনিয়ন কৃষি অফিসারের সহায়তায় প্রতিবেদনে বক্তব্য দেয়া কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে নিয়ে সার দিয়েছেন।

গতকাল ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে। সেখানকার বড় ভগবান পুর গ্রামের কৃষক সুইট মার্ডি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গতকাল থেকে কৃষি অফিসের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়েছে পত্রিকায় নাকি খবর ছাপা ইইছে। এখন তো সকালে আমার বাড়ি চলে আসছে। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে ডিলারের দোকানে গিয়ে ৫ বস্তা সার দিলেন।’

গত ১৫ দিন আগে সারের সংকট নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুইট মার্ডির। তিনি বলেন, ‘এই ১৫ দিনে অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারি নাই।’ তবে, আজকের অবস্থা পুরোটাই ভিন্ন বলে জানালেন সুইট।

একই গ্রামের লোকনাথের বাড়িতে সকালে গিয়ে হাজির ইউনিয়ন কৃষি অফিসার। লোকনাথ বলেন, ‘কৃষি অফিসার এসে জিজ্ঞেস করল ‘আপনিই লোকনাথ?’ আমি বললাম; হ্যাঁ। আপনি সারের কথা বলবেন না? আমি বললাম : আপনাকে অনেক বার ফোন দিছি, নিজে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্ত পাওয়া যায় নাই। দোকানদারেরা বস্তায় বস্তায় সার পায় আর আমরা জেনুইন কৃষক হয়ে সার পাই না। উল্টো ১১০ টাকা ঠড়ার (৫ কেজি) সার ১৪০ টাকা কেজিতে কিনে ভিওত (জমি) দেয়া নাগে (লাগে)।’

সার দিতে চাইলে আমি বলি এখন আমার প্রয়োজন নেই কয়েকদিন পরে লাগবে। তবে, ওই কৃষি অফিসার ওই দুই কুষকের নিকট সার পেয়েছে বলে কাগজে স্বাক্ষর নেন।

লোকনাথের আক্ষেপ; ‘পর্যাপ্ত’ সারের মজুদ থাকলে কেন আমাকে অতিরিক্ত টাকায় সার কিনতে হলো! এই অতিরিক্ত টাকার ক্ষতিপূরুণ কে দেবে প্রশ্ন তার।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেসব কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে এনে সার দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চতরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফারুক সংবাদকে বলেন, ‘এই বিষয়টি বলতে পারবো না, আমার যে বস আছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেন।’

তিনি জানান, এবার ডিলাররা কৃষকের তালিকার ‘সিøপ’ দিয়েছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এই মৌসুমে চতরা ইউনিয়নে ধানের আবাদ বেশি হলেও বরাদ্দ কম থাকার কারণে কৃষকদের সার পেতে ‘কিছুটা’ সমস্যা পেতে হয়। তবে, সেটা ‘সাময়িক’ ছিল, এখন কোন ‘সমস্যা’ নেই।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, চলতি মৌসুমে ১৩০ হেক্টর কম জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলছেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে কৃষক ধান লাগায় নাই, অন্য ফসলে চলে গেছে।’

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১ আশ্বিন ১৪২৯ ২৯ সফর ১৪৪৪

সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সার পেলেন রংপুরের কৃষকরা

প্রশ্ন, বাকি কৃষকের কী হবে?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আমন মৌসুমে সারাদেশে কৃষকেরা ‘প্রয়োজনমতো’ সার দিতে না পারায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবরোধও হয়েছে। এ নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার ‘সংবাদ’ পত্রিকায় ‘হিসেবের গরমিলে সারের কৃত্রিম সংকট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কৃষি কর্মকর্তারা, তারা ইউনিয়ন কৃষি অফিসারের সহায়তায় প্রতিবেদনে বক্তব্য দেয়া কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে নিয়ে সার দিয়েছেন।

গতকাল ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে। সেখানকার বড় ভগবান পুর গ্রামের কৃষক সুইট মার্ডি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গতকাল থেকে কৃষি অফিসের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়েছে পত্রিকায় নাকি খবর ছাপা ইইছে। এখন তো সকালে আমার বাড়ি চলে আসছে। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে ডিলারের দোকানে গিয়ে ৫ বস্তা সার দিলেন।’

গত ১৫ দিন আগে সারের সংকট নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুইট মার্ডির। তিনি বলেন, ‘এই ১৫ দিনে অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারি নাই।’ তবে, আজকের অবস্থা পুরোটাই ভিন্ন বলে জানালেন সুইট।

একই গ্রামের লোকনাথের বাড়িতে সকালে গিয়ে হাজির ইউনিয়ন কৃষি অফিসার। লোকনাথ বলেন, ‘কৃষি অফিসার এসে জিজ্ঞেস করল ‘আপনিই লোকনাথ?’ আমি বললাম; হ্যাঁ। আপনি সারের কথা বলবেন না? আমি বললাম : আপনাকে অনেক বার ফোন দিছি, নিজে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্ত পাওয়া যায় নাই। দোকানদারেরা বস্তায় বস্তায় সার পায় আর আমরা জেনুইন কৃষক হয়ে সার পাই না। উল্টো ১১০ টাকা ঠড়ার (৫ কেজি) সার ১৪০ টাকা কেজিতে কিনে ভিওত (জমি) দেয়া নাগে (লাগে)।’

সার দিতে চাইলে আমি বলি এখন আমার প্রয়োজন নেই কয়েকদিন পরে লাগবে। তবে, ওই কৃষি অফিসার ওই দুই কুষকের নিকট সার পেয়েছে বলে কাগজে স্বাক্ষর নেন।

লোকনাথের আক্ষেপ; ‘পর্যাপ্ত’ সারের মজুদ থাকলে কেন আমাকে অতিরিক্ত টাকায় সার কিনতে হলো! এই অতিরিক্ত টাকার ক্ষতিপূরুণ কে দেবে প্রশ্ন তার।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেসব কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে এনে সার দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চতরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফারুক সংবাদকে বলেন, ‘এই বিষয়টি বলতে পারবো না, আমার যে বস আছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেন।’

তিনি জানান, এবার ডিলাররা কৃষকের তালিকার ‘সিøপ’ দিয়েছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এই মৌসুমে চতরা ইউনিয়নে ধানের আবাদ বেশি হলেও বরাদ্দ কম থাকার কারণে কৃষকদের সার পেতে ‘কিছুটা’ সমস্যা পেতে হয়। তবে, সেটা ‘সাময়িক’ ছিল, এখন কোন ‘সমস্যা’ নেই।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, চলতি মৌসুমে ১৩০ হেক্টর কম জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলছেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে কৃষক ধান লাগায় নাই, অন্য ফসলে চলে গেছে।’