তুমব্রুতে গোলাগুলি : পরিস্থিতি থমথমে

নিহত সামরিক কর্মকর্তার দাফন, গুলিবিদ্ধ র‌্যাব সদস্য শঙ্কামুক্ত

বান্দরবনের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার তুমব্রু এলাকায় ‘মাদক চোরাকারবারিদের’ সঙ্গে যৌথ বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে চোরাকারিদের গুলিতে মারা গেছেন অভিযানে অংশ নেয়া সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এক কর্মকর্তা। রিজওয়াদন রুশদী নামের ওই কর্মকর্তা বিমানবাহিনীর স্কোয়াডন লিডার ছিলেন। ঘটনায় আহত হয়েছেন র‌্যাবের এক সদস্য। এ ঘটনার পর তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদারের পাশাপাশি এলাকায় সর্ব সাধারণের চলাফেরায় সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত চোরকারবারি গ্রুপের সদস্যদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে সোমবার মাদক চোরাচালানকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবান জেলার তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ হয়। মাদক চোরাচালানকারীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ চলাকালে মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা (বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা) দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহীদ হন এবং র‌্যাবের একজন সদস্য আহত হন।

আইএসপিআর থেকে জানা গেছে, নিহত কর্মকর্তার নাম রিজওয়ান রুশদী। তিনি বিমান বাহিনীর স্কোয়াডন লিডার। ২০১১ সালে তিনি কমিশন পান। গতকাল দুপুরে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর গ্রাউন্ডে জানাযা শেষে দাফনের জন্য স্কোয়াডন লিডারের মরদেহ পাঠানো হয়।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘র‌্যাবের একটি দল সেখানে মাদক উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার সময় সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলে গুলিতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা মারা যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত র?্যাব কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়াকে কক্সবাজার সদর এবং পরে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়ে। পরে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ‘রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের’ সঙ্গে। ‘গোয়েন্দা সংস্থার খবরের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছিল। দুর্ঘটনাবশত একজন অফিসার সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন এবং কোন মাদক কারবারিরা তাকে গুলি ছুড়লো এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন করে আমরা পরবর্তীতে জানাব।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অভিযানের জায়গাটি নোম্যান্স ল্যান্ড। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান বলে জানা গেছে। যখন এ ধরনের অভিযানে যাওয়া হয় তখন গোয়েদা সংস্থার পরিকল্পনা মাফিক অভিযান হয়ে থাকে।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দল তুমব্রুর সীমান্তের কোনপাড়ার শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২৮০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে সেখানে।

কোনাপাড়া ক্যাম্পের মাঝি (দলনেতা) দিল মোহাম্মদ গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ক্যাম্পের পাশে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে। ‘এ সময় শত শত রাউন্ড গুলির শব্দ আসে। ক্যাম্পের বাসিন্দা সাজেদা বেগম নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণী মা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মাত্র সাত দিন আগে তার তিনি সন্তান প্রসব করেছেন। নিহত ওই নারীর দাফনের ব্যবস্থা তারা গতকাল করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে রোঙ্গিাদের সবসময় ভয় আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়। কখন কী ঘটে ঠিক নাই। মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে এখানেও তাদের নিরাপত্তা নাই।’

সীমান্তের এপারে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাবের সঙ্গে চোরাচালানিদের সংঘর্ষের কথা তিনি শুনেছেন। তবে রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়টি তার জানা নেই। আইএসপিআর বা র‌্যাবের পক্ষ থেকেও গোলাগুলির সময় রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

নিরাপত্তা জোরদার

এদিকে তুমব্রু সীমান্ত থেকে কোন অপরাধী যাতে তৎসংলগ্ন উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতকর্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-৮) সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ।

তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী আবদুল কাদের, গ্রাম পুলিশ আবদুল জাব্বার ও মেম্বার দীল মোহাম্মদ জানান, তুমব্রু কোনার পাড়ায় গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাতভর স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ, বিজিবি, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনী নিরাপত্তা বলয় জোরদার করেছে। বহিরাগত লোকজনকে সীমান্তে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদককারবারিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘঠিত ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয় পরিষদ ও অন্যান্য বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। সর্তক সীমান্তরক্ষীসহ আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গুলিবিদ্ধ র‌্যাব সদস্য ঢামেকে শঙ্কামুক্ত

এদিকে গোলাগুলিতে আহত র‌্যাবে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটা অপসারণ করা হয়েছে।’ তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।

অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে এলাহী (মিলাদ) বলেন, আমরা ভোর ৫টার দিকে সোহেল বড়য়ার অপারেশন করেছি। তার মাথায় অনেক রক্ত জমাট ছিল। সেটি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা গেছে তার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন এবং কথা বলতে পারছেন। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তাকে দুই একদিনের মধ্যেই ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

সোহেল বড়–য়ার বড় ভাই জীবন বড়ুয়া বলেন, ভোরে আমার ভাইয়ের অপারেশন হয়েছে, এখন সে কথা বলতে পারছে। আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আকবরশাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায়।

নিহত কর্মকতাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন

এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যাওয়া স্কোয়াডন লিডার রিজওয়ান রুশদীর যানাজা গতকাল দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে (পুরাতন বিমানবন্দর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল, সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল হামিদুল হকসহ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সামরিক সালাম প্রদর্শন শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় পাঠানো হয়।

বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ০১ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৪

তুমব্রুতে গোলাগুলি : পরিস্থিতি থমথমে

নিহত সামরিক কর্মকর্তার দাফন, গুলিবিদ্ধ র‌্যাব সদস্য শঙ্কামুক্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ঢাকা ও বান্দরবন জেলা বার্তা পরিবেশক

বান্দরবনের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার তুমব্রু এলাকায় ‘মাদক চোরাকারবারিদের’ সঙ্গে যৌথ বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে চোরাকারিদের গুলিতে মারা গেছেন অভিযানে অংশ নেয়া সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এক কর্মকর্তা। রিজওয়াদন রুশদী নামের ওই কর্মকর্তা বিমানবাহিনীর স্কোয়াডন লিডার ছিলেন। ঘটনায় আহত হয়েছেন র‌্যাবের এক সদস্য। এ ঘটনার পর তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদারের পাশাপাশি এলাকায় সর্ব সাধারণের চলাফেরায় সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত চোরকারবারি গ্রুপের সদস্যদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে সোমবার মাদক চোরাচালানকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবান জেলার তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ হয়। মাদক চোরাচালানকারীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ চলাকালে মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা (বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা) দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহীদ হন এবং র‌্যাবের একজন সদস্য আহত হন।

আইএসপিআর থেকে জানা গেছে, নিহত কর্মকর্তার নাম রিজওয়ান রুশদী। তিনি বিমান বাহিনীর স্কোয়াডন লিডার। ২০১১ সালে তিনি কমিশন পান। গতকাল দুপুরে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর গ্রাউন্ডে জানাযা শেষে দাফনের জন্য স্কোয়াডন লিডারের মরদেহ পাঠানো হয়।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘র‌্যাবের একটি দল সেখানে মাদক উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার সময় সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলে গুলিতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা মারা যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত র?্যাব কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়াকে কক্সবাজার সদর এবং পরে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়ে। পরে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ‘রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের’ সঙ্গে। ‘গোয়েন্দা সংস্থার খবরের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছিল। দুর্ঘটনাবশত একজন অফিসার সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন এবং কোন মাদক কারবারিরা তাকে গুলি ছুড়লো এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন করে আমরা পরবর্তীতে জানাব।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অভিযানের জায়গাটি নোম্যান্স ল্যান্ড। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান বলে জানা গেছে। যখন এ ধরনের অভিযানে যাওয়া হয় তখন গোয়েদা সংস্থার পরিকল্পনা মাফিক অভিযান হয়ে থাকে।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দল তুমব্রুর সীমান্তের কোনপাড়ার শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২৮০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে সেখানে।

কোনাপাড়া ক্যাম্পের মাঝি (দলনেতা) দিল মোহাম্মদ গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ক্যাম্পের পাশে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে। ‘এ সময় শত শত রাউন্ড গুলির শব্দ আসে। ক্যাম্পের বাসিন্দা সাজেদা বেগম নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণী মা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মাত্র সাত দিন আগে তার তিনি সন্তান প্রসব করেছেন। নিহত ওই নারীর দাফনের ব্যবস্থা তারা গতকাল করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এখানে রোঙ্গিাদের সবসময় ভয় আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়। কখন কী ঘটে ঠিক নাই। মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে এখানেও তাদের নিরাপত্তা নাই।’

সীমান্তের এপারে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাবের সঙ্গে চোরাচালানিদের সংঘর্ষের কথা তিনি শুনেছেন। তবে রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়টি তার জানা নেই। আইএসপিআর বা র‌্যাবের পক্ষ থেকেও গোলাগুলির সময় রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

নিরাপত্তা জোরদার

এদিকে তুমব্রু সীমান্ত থেকে কোন অপরাধী যাতে তৎসংলগ্ন উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতকর্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-৮) সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ।

তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী আবদুল কাদের, গ্রাম পুলিশ আবদুল জাব্বার ও মেম্বার দীল মোহাম্মদ জানান, তুমব্রু কোনার পাড়ায় গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাতভর স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ, বিজিবি, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনী নিরাপত্তা বলয় জোরদার করেছে। বহিরাগত লোকজনকে সীমান্তে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদককারবারিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘঠিত ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয় পরিষদ ও অন্যান্য বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। সর্তক সীমান্তরক্ষীসহ আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গুলিবিদ্ধ র‌্যাব সদস্য ঢামেকে শঙ্কামুক্ত

এদিকে গোলাগুলিতে আহত র‌্যাবে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটা অপসারণ করা হয়েছে।’ তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।

অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে এলাহী (মিলাদ) বলেন, আমরা ভোর ৫টার দিকে সোহেল বড়য়ার অপারেশন করেছি। তার মাথায় অনেক রক্ত জমাট ছিল। সেটি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা গেছে তার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন এবং কথা বলতে পারছেন। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তাকে দুই একদিনের মধ্যেই ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

সোহেল বড়–য়ার বড় ভাই জীবন বড়ুয়া বলেন, ভোরে আমার ভাইয়ের অপারেশন হয়েছে, এখন সে কথা বলতে পারছে। আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আকবরশাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায়।

নিহত কর্মকতাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন

এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যাওয়া স্কোয়াডন লিডার রিজওয়ান রুশদীর যানাজা গতকাল দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে (পুরাতন বিমানবন্দর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল, সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল হামিদুল হকসহ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সামরিক সালাম প্রদর্শন শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় পাঠানো হয়।