বিএনপির সমাবেশের অনুমতি, গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত দেবে ডিএমপি

ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে কি না, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিএনপির ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সমাবেশের অনুমতির জন্য গতকাল ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

গণসমাবেশের অনুমতি ছাড়াও সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশ নিতে যেন বাধা দেয়া না হয়, সে দাবিও তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে তুলে ধরেন। তাদের ওই আবেদনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তারা যে আবেদনটা করেছে সেটা বিবেচনা করা হবে।

ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, আবেদনের পরে ডিএমপির ইন্টারনাল গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছাড়াও সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দেবে থ্রেট অ্যানালাইসিস করে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে যে ১০ তারিখ তাদের পারমিশন দেয়া হবে কী হবে না। তারপর সিদ্ধান্ত হবে যে কোন ভেন্যুতে (স্থানে) তাদের পারমিশন দেয়া হবে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে মিন্টো রোডে ডিএমপি সদর দপ্তরে আসেন বিএনপি নেতারা। এক ঘণ্টার বেশি সময় কমিশনারের দপ্তরে কাটিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য-সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।

আমান উল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করতে চাই। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনা করে তারা আমাদের জানাবেন।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছুটি না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আগেও জ্বালাও-পোড়াওয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে নাশকতার মামলাভুক্ত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে ওইদিন সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যদি কেউ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিংবা গাড়ি ভাঙচুর করে, জনগণের দুর্ভোগ তৈরি করে, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় সভা-মিছিল ও সমাবেশ করছে। আমরা বলেছি, আমাদের কোন আপত্তি নেই। শৃঙ্খলা মেনে তারা (বিএনপি) যদি সবকিছু পরিচালনা করতে পারে, তাহলে আমাদের তো সমস্যা নেই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে কিংবা চলাচলে বিঘœ ঘটে বা জানমালের ক্ষতি করে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজটি করবে।’ পুরনো রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুরনো মামলা তো রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখবো না। তবে নতুন করে কিছু হচ্ছে না।’

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নতুন কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ৬ নভেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে ১০ ডিসেম্বর প্রসঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিস্তর আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা উঠে আসে। ওইদিন ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজধানীতে বেশকিছু বড় বড় সমাবেশ হয়েছিল। সেসব সমাবেশে আগুন-সন্ত্রাস মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা। ওইসময় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহিনীর অনেক সদস্য জীবনোৎসর্গও করেছেন। তিনি বলেন, কেউ যদি সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে, জানমালের ক্ষতি করে, বোমাবাজি করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এগুলো দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে ডিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ০১ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৪

বিএনপির সমাবেশের অনুমতি, গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত দেবে ডিএমপি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে কি না, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিএনপির ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সমাবেশের অনুমতির জন্য গতকাল ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

গণসমাবেশের অনুমতি ছাড়াও সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশ নিতে যেন বাধা দেয়া না হয়, সে দাবিও তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে তুলে ধরেন। তাদের ওই আবেদনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তারা যে আবেদনটা করেছে সেটা বিবেচনা করা হবে।

ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, আবেদনের পরে ডিএমপির ইন্টারনাল গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছাড়াও সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দেবে থ্রেট অ্যানালাইসিস করে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে যে ১০ তারিখ তাদের পারমিশন দেয়া হবে কী হবে না। তারপর সিদ্ধান্ত হবে যে কোন ভেন্যুতে (স্থানে) তাদের পারমিশন দেয়া হবে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে মিন্টো রোডে ডিএমপি সদর দপ্তরে আসেন বিএনপি নেতারা। এক ঘণ্টার বেশি সময় কমিশনারের দপ্তরে কাটিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য-সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।

আমান উল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করতে চাই। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনা করে তারা আমাদের জানাবেন।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছুটি না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আগেও জ্বালাও-পোড়াওয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে নাশকতার মামলাভুক্ত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে ওইদিন সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যদি কেউ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিংবা গাড়ি ভাঙচুর করে, জনগণের দুর্ভোগ তৈরি করে, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় সভা-মিছিল ও সমাবেশ করছে। আমরা বলেছি, আমাদের কোন আপত্তি নেই। শৃঙ্খলা মেনে তারা (বিএনপি) যদি সবকিছু পরিচালনা করতে পারে, তাহলে আমাদের তো সমস্যা নেই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে কিংবা চলাচলে বিঘœ ঘটে বা জানমালের ক্ষতি করে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজটি করবে।’ পুরনো রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুরনো মামলা তো রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখবো না। তবে নতুন করে কিছু হচ্ছে না।’

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নতুন কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ৬ নভেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে ১০ ডিসেম্বর প্রসঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিস্তর আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা উঠে আসে। ওইদিন ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজধানীতে বেশকিছু বড় বড় সমাবেশ হয়েছিল। সেসব সমাবেশে আগুন-সন্ত্রাস মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা। ওইসময় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহিনীর অনেক সদস্য জীবনোৎসর্গও করেছেন। তিনি বলেন, কেউ যদি সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে, জানমালের ক্ষতি করে, বোমাবাজি করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এগুলো দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে ডিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা।