‘এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না’ উদ্বুদ্ধ ফজলুল

এক ক্ষেতে ১২ ফসল ফলিয়ে তাক কৃষকের

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ১ ক্ষেতে ১২টি ফসল উৎপাদন করে কৃষি বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বর্গাচাষি কৃষক মো. ফজলুল হক। তিনি উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মিরাকান্দা গ্রামের মৃত ইসমাহিল হোসেনের পুত্র। টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না’ ঘোষণাটি একদিন শুনতে পান। এ ঘোষণা শুনেই তিনি নিজের হলুদ আর আদা গাছের সারির মাঝে বিকল্প সবজি উৎপাদন শুরু করেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের চারপাশে লাল-সবুজের পতাকা টাঙিয়ে ফসলি জমিকে উৎসবে পরিণত করেছেন তিনি। তার ফসল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক-কৃষাণিরাও ছুটে আসছেন।

এক জমিতে এতো ফসল উৎপাদন দেখে বিস্মিত হন আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মোনায়োম। তিনি বলেন, আমরা একটা জমিতে একটা ফসল উৎপাদন করি। ফজলুল হক এক জমিতে অনেক ফসল উৎপাদন করেছে। পুরো ক্ষেত সবুজ। মাটি দেখা যায় না। ফসলও ভালো হয়েছে। মিরাকান্দা গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ফজলুল হক ভাই এলাকায় সবজি চাষী হিসাবে পরিচিত। তিনি সারাবছর সবজি চাষাবাদ করেন। প্রতিবেশী কৃষক আব্দুস সোবহান জানান, ফজলু ভাই প্রথমে নতুন কিছু করেন, তারপরে তাকে দেখে আমারও সাহস পাই।

কৃষক ফজলুল হক জানান, তার নিজের কোনো ফসলি জমি নেই। এই ১০শতাংশ জমি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চক্ষু চিকিৎসক ডা. একেএমএ মুকতাদিরের নিকট থেকে এক বছরের জন্য ৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন। শুধু উনার নয়। আরও ৫ জনের নিকট থেকে এভাবে ১একর ৩০শতাংশ জমি নিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, মাহমুদনগর মোড়ে একদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখছিলেন। সে সময় খবরে শুনতে পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন ‘এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা রাখা যাবে না।’ এ ঘোষণা শুনে পরদিন তার হলুদ আর আদা গাছের ফাঁকা জায়গা নিড়ানি দেন তিনি। এই ফাঁকা জায়গায় বেগুন, মুলা, মরিচ, লাল শাক, পালংশাক, ধনিয়াপাতা, ডাটা, বেগুন ও কিছু অংশে পাটশাক করেন। এই বাড়তি ফসল করায় আদা আর হলুদের কোন ক্ষতি হয়নি। বরং ক্ষেতের উর্বরতা শক্তি বেড়েছে। তিনি জানান, কৃষি উৎপাদন দিয়ে ২ ছেলে আর ১ কন্যা সন্তানকে নিয়ে সুখেই আছেন। তার স্ত্রী জুলেখা আক্তার জানান, আমরা টাটকা সবকিছু নিজের ক্ষেত থেকে এনে খেতে পারি। বাড়ির চারপাশেও আমরা পরিত্যক্ত জমি ব্যবহার করে ফসল ও ফল উৎপাদন করছি।

এক ক্ষেতে একসঙ্গে এতো ফসল দেখে আশপাশের মানুষ ছুটে আসলেও খবর নেয়নি স্থানীয় কৃষি বিভাগ, এটা এই কৃষকের বড় আক্ষেপ। তিনি বলেন, আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করি। নিজের জমি নেই আমাদের। তাই কৃষি বিভাগের লোকজন বর্গাচাষী বলে আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়না। এবছর অনেক কষ্ট করে ১ কেজি সরিষার বীজ ও ২০ কেজি সার পেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার বলেন, ফজলুল হক অত্যন্ত পরিশ্রমী কৃষক। তিনি একের ভিতরে একাধিক ফসল উৎপাদন করে আশপাশের কৃষকদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসারের পদ বর্তমানে শূণ্য রয়েছে। আমরা কৃষককে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল মতিন বলেন, আমার ব্লকে অনেক কৃষক। আর মিরাকান্দা এলাকা আমার অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। কৃষক ফোন দেন না। দিলে অবশ্য সহযোগিতা করা হবে। তবে ফজলুল হককে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী হিসাবে এবার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

পতাকা উড়ানো প্রসঙ্গে কৃষক ফজলুল হক বলেন, দেশের মানুষ আনন্দে বিদেশের পতাকা উড়াচ্ছে। আর আমি সোনার মাটিতে ফসল ফলানোর মহানন্দে দেশের মাটিতে দেশের পতাকা উড়িয়েছি।

ফসল দেখতে এসে অনেকে ছবি তোলে, এটা দেখতে আমারও খুব ভালো লাগে। তাই সাজিয়েছি পুরো ক্ষেত।

রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২ , ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৪

‘এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না’ উদ্বুদ্ধ ফজলুল

এক ক্ষেতে ১২ ফসল ফলিয়ে তাক কৃষকের

প্রতিনিধি, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

image

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ১ ক্ষেতে ১২টি ফসল উৎপাদন করে কৃষি বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বর্গাচাষি কৃষক মো. ফজলুল হক। তিনি উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মিরাকান্দা গ্রামের মৃত ইসমাহিল হোসেনের পুত্র। টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না’ ঘোষণাটি একদিন শুনতে পান। এ ঘোষণা শুনেই তিনি নিজের হলুদ আর আদা গাছের সারির মাঝে বিকল্প সবজি উৎপাদন শুরু করেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের চারপাশে লাল-সবুজের পতাকা টাঙিয়ে ফসলি জমিকে উৎসবে পরিণত করেছেন তিনি। তার ফসল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক-কৃষাণিরাও ছুটে আসছেন।

এক জমিতে এতো ফসল উৎপাদন দেখে বিস্মিত হন আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মোনায়োম। তিনি বলেন, আমরা একটা জমিতে একটা ফসল উৎপাদন করি। ফজলুল হক এক জমিতে অনেক ফসল উৎপাদন করেছে। পুরো ক্ষেত সবুজ। মাটি দেখা যায় না। ফসলও ভালো হয়েছে। মিরাকান্দা গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ফজলুল হক ভাই এলাকায় সবজি চাষী হিসাবে পরিচিত। তিনি সারাবছর সবজি চাষাবাদ করেন। প্রতিবেশী কৃষক আব্দুস সোবহান জানান, ফজলু ভাই প্রথমে নতুন কিছু করেন, তারপরে তাকে দেখে আমারও সাহস পাই।

কৃষক ফজলুল হক জানান, তার নিজের কোনো ফসলি জমি নেই। এই ১০শতাংশ জমি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চক্ষু চিকিৎসক ডা. একেএমএ মুকতাদিরের নিকট থেকে এক বছরের জন্য ৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন। শুধু উনার নয়। আরও ৫ জনের নিকট থেকে এভাবে ১একর ৩০শতাংশ জমি নিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, মাহমুদনগর মোড়ে একদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখছিলেন। সে সময় খবরে শুনতে পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন ‘এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা রাখা যাবে না।’ এ ঘোষণা শুনে পরদিন তার হলুদ আর আদা গাছের ফাঁকা জায়গা নিড়ানি দেন তিনি। এই ফাঁকা জায়গায় বেগুন, মুলা, মরিচ, লাল শাক, পালংশাক, ধনিয়াপাতা, ডাটা, বেগুন ও কিছু অংশে পাটশাক করেন। এই বাড়তি ফসল করায় আদা আর হলুদের কোন ক্ষতি হয়নি। বরং ক্ষেতের উর্বরতা শক্তি বেড়েছে। তিনি জানান, কৃষি উৎপাদন দিয়ে ২ ছেলে আর ১ কন্যা সন্তানকে নিয়ে সুখেই আছেন। তার স্ত্রী জুলেখা আক্তার জানান, আমরা টাটকা সবকিছু নিজের ক্ষেত থেকে এনে খেতে পারি। বাড়ির চারপাশেও আমরা পরিত্যক্ত জমি ব্যবহার করে ফসল ও ফল উৎপাদন করছি।

এক ক্ষেতে একসঙ্গে এতো ফসল দেখে আশপাশের মানুষ ছুটে আসলেও খবর নেয়নি স্থানীয় কৃষি বিভাগ, এটা এই কৃষকের বড় আক্ষেপ। তিনি বলেন, আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করি। নিজের জমি নেই আমাদের। তাই কৃষি বিভাগের লোকজন বর্গাচাষী বলে আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়না। এবছর অনেক কষ্ট করে ১ কেজি সরিষার বীজ ও ২০ কেজি সার পেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার বলেন, ফজলুল হক অত্যন্ত পরিশ্রমী কৃষক। তিনি একের ভিতরে একাধিক ফসল উৎপাদন করে আশপাশের কৃষকদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসারের পদ বর্তমানে শূণ্য রয়েছে। আমরা কৃষককে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। এ ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল মতিন বলেন, আমার ব্লকে অনেক কৃষক। আর মিরাকান্দা এলাকা আমার অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। কৃষক ফোন দেন না। দিলে অবশ্য সহযোগিতা করা হবে। তবে ফজলুল হককে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী হিসাবে এবার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

পতাকা উড়ানো প্রসঙ্গে কৃষক ফজলুল হক বলেন, দেশের মানুষ আনন্দে বিদেশের পতাকা উড়াচ্ছে। আর আমি সোনার মাটিতে ফসল ফলানোর মহানন্দে দেশের মাটিতে দেশের পতাকা উড়িয়েছি।

ফসল দেখতে এসে অনেকে ছবি তোলে, এটা দেখতে আমারও খুব ভালো লাগে। তাই সাজিয়েছি পুরো ক্ষেত।