পেশায় চিকিৎসক হলেও তার কাজ ছিল মোবাইলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তরুণ-তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা। এরপর কথিত প্রেমিকাদের সঙ্গে দেখা করার সুবাদে ছবি তুলত। এসব ছবি এডিটিং করে তৈরি করে ভিডিও ও আপত্তিকর ছবি প্রেমিকাদের জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতো। এভাবে নিজেকে অবিবাহিত বলে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্র্কে বাধ্য করতেন। এভাবে একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডা. জোবায়ের বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি এক চাকরিজীবী তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিশ্ব প্রেমিক চিকিৎসক জোবায়ের আহমেদ। ওই তরুণীর বেশকিছু ছবি তুলে রেখে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরে তরুণী চিকিৎসক জুবায়েরের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সুরঞ্জনা সাহা তদন্তের দায়িত্ব পান। গত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর একাধিক তরুণী ওই চিকিৎসকের প্রতারণায় নিজেদের সম্মান হারানোর বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করতে শুরু করেন।
এসি সুরঞ্জনা সাহা জানান, ২০০৯ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন জোবায়ের আহমেদ। এরপর কুমিল্লার বড়ুরা উপজেলায় নিজেই একটি চেম্বার দিয়ে সেখানে রোগী দেখতেন। মূলত রোগী হিসেবে আসা তরুণী ও মধ্য বয়সী নারীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে প্রথমে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। একপর্যায়ে তার এমন রুচিহীন কর্মকান্ডের পরিধি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বয়সী নারীদের সঙ্গে অবিবাহিত ও চিসিৎসক পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব গড়তেন। এরপর দেখা করতে যাওয়া, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে নারীদের ফাঁদে ফেলতেন।
সাইবার টিমের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রোফাইল ঘেঁটে জোবায়ের আহমেদের ডজন খানেক প্রেমিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের কাছে তিনি বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে যেসব তরুণীরা তার ফাঁদে পড়েছেন অনেকেই তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মূলত মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই মামলা করেননি। গত কয়েক বছরে তিনি কমপক্ষে শতাধিক তরুণী ও নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সব এলাকায় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তরুণী বা চাকুরিজীবী অবিবাহিতদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতেন। এরপর নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব করতেন। পরে নানা কথাবার্তায় ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এক সময় বিয়ে করার প্রস্তাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। আর এভাবেই তিনি তার টার্গেট শেষ করতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে শতাধিক নারী ও তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সম্মানহানী করেছে চিকিৎসক জোবায়ের। তিনি বেশি টার্গেট করতেন চাকরিজীবী নারীদের। এরমধ্যে অনেক নারীর সংসারও ভেঙেছেন। অনেক অবিবাহিত তরুণী তার কারণে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।
সিটিটিসি জানিয়েছে, এমন কর্মকা-ের কারণে সম্প্রতি তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। সংসারে তার সন্তান রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিলেন। মূলত বিভিন্ন বয়সী নারী ও তরুণীদের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে সেগুলো মোবাইলে ধারণ করতেন। এসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। অনেক সময় টার্গেট তরুণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিতেন।
সিটিসিটি জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফি আইনে জোবায়েরের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড হেফাজতে আনার আবেদন করা হয়েছিল। আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী একাধিক তরুণী সাইবার টিমের কাছে অভিযোগ করেছে। আরও তরুণী যাদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করা হয়েছিল তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ডা. জোবায়েরের মোবাইলে একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে। এগুলো উদ্ধার করে সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম চলছে।
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
সাইফ বাবলু
পেশায় চিকিৎসক হলেও তার কাজ ছিল মোবাইলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তরুণ-তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা। এরপর কথিত প্রেমিকাদের সঙ্গে দেখা করার সুবাদে ছবি তুলত। এসব ছবি এডিটিং করে তৈরি করে ভিডিও ও আপত্তিকর ছবি প্রেমিকাদের জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতো। এভাবে নিজেকে অবিবাহিত বলে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্র্কে বাধ্য করতেন। এভাবে একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডা. জোবায়ের বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি এক চাকরিজীবী তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিশ্ব প্রেমিক চিকিৎসক জোবায়ের আহমেদ। ওই তরুণীর বেশকিছু ছবি তুলে রেখে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরে তরুণী চিকিৎসক জুবায়েরের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সুরঞ্জনা সাহা তদন্তের দায়িত্ব পান। গত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর একাধিক তরুণী ওই চিকিৎসকের প্রতারণায় নিজেদের সম্মান হারানোর বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করতে শুরু করেন।
এসি সুরঞ্জনা সাহা জানান, ২০০৯ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন জোবায়ের আহমেদ। এরপর কুমিল্লার বড়ুরা উপজেলায় নিজেই একটি চেম্বার দিয়ে সেখানে রোগী দেখতেন। মূলত রোগী হিসেবে আসা তরুণী ও মধ্য বয়সী নারীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে প্রথমে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। একপর্যায়ে তার এমন রুচিহীন কর্মকান্ডের পরিধি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বয়সী নারীদের সঙ্গে অবিবাহিত ও চিসিৎসক পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব গড়তেন। এরপর দেখা করতে যাওয়া, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে নারীদের ফাঁদে ফেলতেন।
সাইবার টিমের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রোফাইল ঘেঁটে জোবায়ের আহমেদের ডজন খানেক প্রেমিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের কাছে তিনি বিশ্ব প্রেমিক হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে যেসব তরুণীরা তার ফাঁদে পড়েছেন অনেকেই তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মূলত মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই মামলা করেননি। গত কয়েক বছরে তিনি কমপক্ষে শতাধিক তরুণী ও নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সব এলাকায় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তরুণী বা চাকুরিজীবী অবিবাহিতদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতেন। এরপর নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব করতেন। পরে নানা কথাবার্তায় ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এক সময় বিয়ে করার প্রস্তাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। আর এভাবেই তিনি তার টার্গেট শেষ করতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে শতাধিক নারী ও তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সম্মানহানী করেছে চিকিৎসক জোবায়ের। তিনি বেশি টার্গেট করতেন চাকরিজীবী নারীদের। এরমধ্যে অনেক নারীর সংসারও ভেঙেছেন। অনেক অবিবাহিত তরুণী তার কারণে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।
সিটিটিসি জানিয়েছে, এমন কর্মকা-ের কারণে সম্প্রতি তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। সংসারে তার সন্তান রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিলেন। মূলত বিভিন্ন বয়সী নারী ও তরুণীদের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে সেগুলো মোবাইলে ধারণ করতেন। এসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। অনেক সময় টার্গেট তরুণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিতেন।
সিটিসিটি জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফি আইনে জোবায়েরের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড হেফাজতে আনার আবেদন করা হয়েছিল। আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী একাধিক তরুণী সাইবার টিমের কাছে অভিযোগ করেছে। আরও তরুণী যাদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করা হয়েছিল তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ডা. জোবায়েরের মোবাইলে একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে। এগুলো উদ্ধার করে সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম চলছে।