সিদ্দিক বাজারে ভবন বিস্ফোরণ : পঞ্চম দিন

বার্ন ইউনিট ও মর্গের সামনে অপেক্ষায় স্বজনরা

রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি থামছে না। স্বজনদের শোকে ভারি হয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের পরিবেশ। হাসপাতালে তিনদিন ধরে অপেক্ষারত স্বজনদের কারও চোখে জল, কারও বোবা কান্না, কেউ আছেন অপলক তাকিয়ে। আহত ও দগ্ধ ব্যক্তিদের বাবা-মা ও ভাই-বোনরা হাসপাতালে দিগ-বিদিক ছোটাছুটি করছেন। এদিকে মর্গের সামনে এখনও অপেক্ষারত নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা।

গতকাল সরেজমিন ঢামেক ও বার্ন ইউনিটে গেলে এমন হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের দেখা মেলে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বজরা বাজার এলাকার মেহেদী হাসান স্বপন ২০ বছরে ধরে সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনে ‘বাংলা স্যানেটারি’ নামের দোকানে কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দোকানের সহকর্মীদের সঙ্গে পশ্চিম রামপুরায় বসবাস করে আসছেন। ওই দোকানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণের সময় দোকানেই ছিলেন স্বপন। হিসাব-নিকাশ শেষে দোকান থেকে বের হবেন, এমন সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ঘটনার দুই দিন পর সকালে মার্কেটের বেসমেন্ট থেকে স্বপনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বিকেলে স্বপনের মরদেহ বুঝে নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। সেখানে নিহত স্বপনের বড় বোন মাকসুদা লিপি, ভাই তানভির হাসান ও ভাগনে মাহফুজ শোকে কাতর হয়ে আছেন।

স্বপনের বড় ভাই তানভির হাসান বাকরুদ্ধ। জানতে চাইলে নিজেকে কিছুটা সামলে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমার ভাই অর্ধেক জীবন কাটিয়ে দিয়েছে সিদ্দিক বাজারে। এমন দুর্ঘটনায় ভাইয়ের মৃত্যু হলো। আমরা এমন শোক সহ্য করবো কী করে? স্বপনের ছোট্ট দুটি ছেলেমেয়ে আছে। তারা তাদের বাবাকে খুঁজবে। বাচ্চাদের কাছে এখন আমরা কী উত্তর দেবো বলেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন তানভির।

চট্টগ্রামের পল্লব চক্রবর্তী বিভিন্ন গিফট সামগ্রীর ব্যবসা করেন রাজধানীর ফকিরাপুলে। ঘটনার দিন সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের পাশের ভবনের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অর্ডারের মাল বুকিং দিতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ ওই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন পল্লব। ঢামেক ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের আরবিএক্স ২ নম্বর বেডে এখন কাতরাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় পল্লবের এক পায়ের হাড় দুই ভাগ হয়ে গেছে। সারা শরীরে দেখা গেছে আঘাতের চিহ্ন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিস্ফোরণের দুর্বিষহ মুহূর্ত নিয়ে পল্লব বর্ণনা দেন।

আহত পল্লব বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, এর পাশের একটি ভবনে ছিলাম আমি। একটা বিকট শব্দে সারা মার্কেট সেকেন্ডের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায়। আমার শরীরে ভারী ভারী জিনিসপত্র বৃষ্টির মতো এসে লাগতে থাকে। তারপর আর কিছুই মনে নেই আমার। শুনেছি স্থানীয়রা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। একমাত্র ছেলে জাহান সরদার সেলিমের অবস্থা দেখে হাসপাতালের মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন মা সেলিনা বেগম। বাবা জাহাঙ্গীর আলম চাপাকান্না বুকে নিয়ে একবার নিচে নামছেন আবার ওপরে উঠছেন। যেন বুঝে উঠতে পারছেন কী করবেন।

জানা গেছে, রাজধানীর নবাবগঞ্জের ডিএন কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহান সরদার সেলিম। সহপাঠীদের ফোন পেয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে কলেজে গিয়েছিলেন পরীক্ষার খোঁজ নিতে। কাজ শেষে ক্যাফে কুইন ভবনের সামনে দিয়ে ফিরছিলেন বাসায়। মুহূর্তের ওই দুর্ঘটনায় তিনিও আহত হন। বিস্ফোরণে তার শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে তিনি ঢামেকের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

আহত জাহানের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। ভালোভাবে পড়ালেখা করার জন্য অর বোনের বাসায় যাত্রাবাড়িতে থাকতো। বন্ধুদের ফোন পেয়ে সকালে কলেজে যায়। আর আমরা তাকে হাসপাতালে এসে খুঁজে পাই। ডাক্তাররা বলছে ৫০ শতাংশ আগুনে পুড়েছে। আমার ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমাকে আসল কথা বলেন না ডাক্তাররা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ছেলের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে পড়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার। আমার ছেলের ইচ্ছে কি পূরণ হবে? বলেই চাপা কান্না শুরু করেন তিনি।

সিদ্দিক বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনের কয়েকটি ভবন পরেই স্যানিটারি দোকান রয়েছে আমিনুল ইসলামের। দোকান খুলেই বের হন নামাজ আদায় করতে। নামাজ শেষে আসার পথেই ভবনের দেয়াল ভেঙে টুকরো এসে পড়ে তার শরীরে। গুরুতর আহত হয়ে তিনি এখন ঢামেকে ভর্তি। দুর্ঘটনায় তার হাত, মাথা, পিঠে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বেডের চারপাশ ঘিরে রেখেছেন স্বজনরা। আমিনুলের ভাই, বোন অস্থির হয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। বোন রোকশনা পাশেই বসে যতœ নিচ্ছেন ভাইয়ের।

গত বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণে আহত ও দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করা হয়। চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিট ভর্তি দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা দিতে ২০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢামেক হাসপাতালে। তাদের মধ্যে একজন আইসিইউতে, বাকি ১৪ জন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের উন্নত চিকিৎসা দিতে আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। চিকিৎসাধীন রোগীদের মাথাসহ শরীরে মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে, এখানে কয়েক বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. শামন্ত লাল সেন বলেন, বার্ন ইউনিটে বর্তমানে ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনজন। বাকিদের কেবিনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবস্থা বুঝে পরবর্তী চিকিৎসা দেয়া হবে। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা একটু ভালো, তবে শঙ্কামুক্ত নয়।

image

ঢাকা মেডিকেল ও বার্ন ইউনিটে শয্যা না থাকায় ফ্লোরে দগ্ধদের চিকিৎসা চলছে -সংবাদ

আরও খবর
২৭ ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান
পঞ্চগড়ে আহমদিয়ার ওপর হামলা চালায় প্রশিক্ষিত দল
সিনিয়র সিটিজেনদের চিকিৎসায় ভোগান্তি দেখার কেউ নেই, লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ
যশোরে যুদ্ধদিনের দুঃসাহসিকতার গল্প শোনালেন তিন মুক্তিযোদ্ধা
জীবনধর্মী ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন : প্রধানমন্ত্রী
তত্ত্বাবধায়কের হুঙ্কার দিয়ে লাভ নেই
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে চুক্তি ‘দেশবিরোধী’
দেশে রিজার্ভ এখন ৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম
নারীরা সর্বক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে : তথ্যমন্ত্রী
সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় নাশকতার আলামত পাওয়া যায়নি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রমজান উপলক্ষে রংপুরে টিসিবির পণ্য বিক্রয় শুরু
২০৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ হবে -প্রধানমন্ত্রী
ওয়াশিংটন পোস্টের ‘বিজ্ঞাপনে’ খর্ব হয়েছে ইউনূসের ভাবমূর্তি : তথ্যমন্ত্রী
শালুক সাহিত্য পুরস্কার পেলেন তিন দেশের কথাসাহিত্যিক ও কবি
কিডনি রোগীদের সরকারি-বেসরকারিভাবে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করতে হবে
খাতা চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন ৩১৫ জন
ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা না নিয়ে আলামত নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ
৩২ শিল্পীর চারুকলা প্রদর্শনী
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব
রামপুরায় ৫তলা ভবনে আগুন, নিহত ১

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪

সিদ্দিক বাজারে ভবন বিস্ফোরণ : পঞ্চম দিন

বার্ন ইউনিট ও মর্গের সামনে অপেক্ষায় স্বজনরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকা মেডিকেল ও বার্ন ইউনিটে শয্যা না থাকায় ফ্লোরে দগ্ধদের চিকিৎসা চলছে -সংবাদ

রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি থামছে না। স্বজনদের শোকে ভারি হয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের পরিবেশ। হাসপাতালে তিনদিন ধরে অপেক্ষারত স্বজনদের কারও চোখে জল, কারও বোবা কান্না, কেউ আছেন অপলক তাকিয়ে। আহত ও দগ্ধ ব্যক্তিদের বাবা-মা ও ভাই-বোনরা হাসপাতালে দিগ-বিদিক ছোটাছুটি করছেন। এদিকে মর্গের সামনে এখনও অপেক্ষারত নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা।

গতকাল সরেজমিন ঢামেক ও বার্ন ইউনিটে গেলে এমন হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের দেখা মেলে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বজরা বাজার এলাকার মেহেদী হাসান স্বপন ২০ বছরে ধরে সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনে ‘বাংলা স্যানেটারি’ নামের দোকানে কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দোকানের সহকর্মীদের সঙ্গে পশ্চিম রামপুরায় বসবাস করে আসছেন। ওই দোকানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণের সময় দোকানেই ছিলেন স্বপন। হিসাব-নিকাশ শেষে দোকান থেকে বের হবেন, এমন সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ঘটনার দুই দিন পর সকালে মার্কেটের বেসমেন্ট থেকে স্বপনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বিকেলে স্বপনের মরদেহ বুঝে নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। সেখানে নিহত স্বপনের বড় বোন মাকসুদা লিপি, ভাই তানভির হাসান ও ভাগনে মাহফুজ শোকে কাতর হয়ে আছেন।

স্বপনের বড় ভাই তানভির হাসান বাকরুদ্ধ। জানতে চাইলে নিজেকে কিছুটা সামলে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমার ভাই অর্ধেক জীবন কাটিয়ে দিয়েছে সিদ্দিক বাজারে। এমন দুর্ঘটনায় ভাইয়ের মৃত্যু হলো। আমরা এমন শোক সহ্য করবো কী করে? স্বপনের ছোট্ট দুটি ছেলেমেয়ে আছে। তারা তাদের বাবাকে খুঁজবে। বাচ্চাদের কাছে এখন আমরা কী উত্তর দেবো বলেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন তানভির।

চট্টগ্রামের পল্লব চক্রবর্তী বিভিন্ন গিফট সামগ্রীর ব্যবসা করেন রাজধানীর ফকিরাপুলে। ঘটনার দিন সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের পাশের ভবনের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অর্ডারের মাল বুকিং দিতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ ওই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন পল্লব। ঢামেক ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের আরবিএক্স ২ নম্বর বেডে এখন কাতরাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় পল্লবের এক পায়ের হাড় দুই ভাগ হয়ে গেছে। সারা শরীরে দেখা গেছে আঘাতের চিহ্ন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিস্ফোরণের দুর্বিষহ মুহূর্ত নিয়ে পল্লব বর্ণনা দেন।

আহত পল্লব বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, এর পাশের একটি ভবনে ছিলাম আমি। একটা বিকট শব্দে সারা মার্কেট সেকেন্ডের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায়। আমার শরীরে ভারী ভারী জিনিসপত্র বৃষ্টির মতো এসে লাগতে থাকে। তারপর আর কিছুই মনে নেই আমার। শুনেছি স্থানীয়রা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। একমাত্র ছেলে জাহান সরদার সেলিমের অবস্থা দেখে হাসপাতালের মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন মা সেলিনা বেগম। বাবা জাহাঙ্গীর আলম চাপাকান্না বুকে নিয়ে একবার নিচে নামছেন আবার ওপরে উঠছেন। যেন বুঝে উঠতে পারছেন কী করবেন।

জানা গেছে, রাজধানীর নবাবগঞ্জের ডিএন কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহান সরদার সেলিম। সহপাঠীদের ফোন পেয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে কলেজে গিয়েছিলেন পরীক্ষার খোঁজ নিতে। কাজ শেষে ক্যাফে কুইন ভবনের সামনে দিয়ে ফিরছিলেন বাসায়। মুহূর্তের ওই দুর্ঘটনায় তিনিও আহত হন। বিস্ফোরণে তার শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে তিনি ঢামেকের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

আহত জাহানের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। ভালোভাবে পড়ালেখা করার জন্য অর বোনের বাসায় যাত্রাবাড়িতে থাকতো। বন্ধুদের ফোন পেয়ে সকালে কলেজে যায়। আর আমরা তাকে হাসপাতালে এসে খুঁজে পাই। ডাক্তাররা বলছে ৫০ শতাংশ আগুনে পুড়েছে। আমার ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমাকে আসল কথা বলেন না ডাক্তাররা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ছেলের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে পড়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার। আমার ছেলের ইচ্ছে কি পূরণ হবে? বলেই চাপা কান্না শুরু করেন তিনি।

সিদ্দিক বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনের কয়েকটি ভবন পরেই স্যানিটারি দোকান রয়েছে আমিনুল ইসলামের। দোকান খুলেই বের হন নামাজ আদায় করতে। নামাজ শেষে আসার পথেই ভবনের দেয়াল ভেঙে টুকরো এসে পড়ে তার শরীরে। গুরুতর আহত হয়ে তিনি এখন ঢামেকে ভর্তি। দুর্ঘটনায় তার হাত, মাথা, পিঠে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বেডের চারপাশ ঘিরে রেখেছেন স্বজনরা। আমিনুলের ভাই, বোন অস্থির হয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। বোন রোকশনা পাশেই বসে যতœ নিচ্ছেন ভাইয়ের।

গত বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণে আহত ও দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করা হয়। চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিট ভর্তি দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা দিতে ২০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢামেক হাসপাতালে। তাদের মধ্যে একজন আইসিইউতে, বাকি ১৪ জন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের উন্নত চিকিৎসা দিতে আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। চিকিৎসাধীন রোগীদের মাথাসহ শরীরে মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে, এখানে কয়েক বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. শামন্ত লাল সেন বলেন, বার্ন ইউনিটে বর্তমানে ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনজন। বাকিদের কেবিনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবস্থা বুঝে পরবর্তী চিকিৎসা দেয়া হবে। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা একটু ভালো, তবে শঙ্কামুক্ত নয়।