বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমতে পারে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবায়ন হয় না। ফেরত যায় বরাদ্দ। আবার নতুন বরাদ্দ দেয়া হয়। আবারও ফেরত যায়। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য স্বাস্থ্যখাতের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকার ছাপ পড়েছে বাজেটে, কমেছে এডিপি বরাদ্দ।

আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্যখাতে এডিপিতে বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে ১২ হাজার ২০৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় চার শতাংশ কম। চলতি অর্থ বছরে সংশোধিত এডিপির পরিমাণ ১২ হাজার ৭৪৫ কোটি ৩৩ লাখা টাকা।

আগামী ২০২৩-৩৪ অর্থ বছরের বাজেটে অনুমোদনকৃত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৮ হাজার ৮৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা রয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তথ্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সূত্র।

সূত্র বলছে, বরাদ্দ যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বরাদ্দ কমছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়েও আগামী বছরের এডিপি কমে যাচ্ছে। একক মন্ত্রণালয় হিসেবেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এর প্রভাব পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে এডিপির খরচ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির মাত্র ৩৩ শতাংশ। অব্যয়িত পড়ে আছে এডিপির দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়ছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে।

এমনিতেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম। বিশেষ করে উন্নয়ন খাতের যে বরাদ্দ তার তুলনায় স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ কম। অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বরাদ্দ কম বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের। তারপরেও এ বরাদ্দ কেন খরচ হয় না তা অস্পষ্ট। বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতার অভাব নাকি, দক্ষতা নিরূপণের অনুসন্ধানে সাহসের অভাব, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারী স্বাস্থ্য খাতের অন্তঃসারশূন্য অবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাড়াহুড়া করে ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ নেয়া হয়। খরচের উদ্যোগ নেয়া হয়। অতীতের ব্যর্থতাগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ থেকে বাজেট বাস্তবায়নের তাগিদ বাড়ার কথা থাকলেও তা বাড়েনি। করোনা পূর্ব সময়, করোনাকালীন সময়ে এবং করোনা পরবর্তী সময়ের বাজেট বাস্তবায়নের চিত্রই সে কথা মনে করিয়ে দেয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, আগের ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দের ২৯ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। এ অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।

করোনা মহামারীর আঘাতের পরও স্বাস্থ্যখাত খরচ করতে পারেনি। করোনার সময় ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্দ খরচ আরও কমে। এ সময় বরাদ্দের প্রায় ৪২ শতাংশ ফেরত যায়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। সে সময় ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের মধ্যে ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা খরচ হয়। বরাদ্দের ২৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দের পরিমাণ কম ছিল, খরচও কম ছিল। তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ব্যয় করা যায় ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে অব্যবহৃত অর্থের হার ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।

সোমবার, ২২ মে ২০২৩ , ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ০২ জিলক্বদ শাওয়াল ১৪৪৪

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমতে পারে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবায়ন হয় না। ফেরত যায় বরাদ্দ। আবার নতুন বরাদ্দ দেয়া হয়। আবারও ফেরত যায়। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য স্বাস্থ্যখাতের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকার ছাপ পড়েছে বাজেটে, কমেছে এডিপি বরাদ্দ।

আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্যখাতে এডিপিতে বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে ১২ হাজার ২০৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় চার শতাংশ কম। চলতি অর্থ বছরে সংশোধিত এডিপির পরিমাণ ১২ হাজার ৭৪৫ কোটি ৩৩ লাখা টাকা।

আগামী ২০২৩-৩৪ অর্থ বছরের বাজেটে অনুমোদনকৃত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৮ হাজার ৮৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা রয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তথ্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সূত্র।

সূত্র বলছে, বরাদ্দ যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বরাদ্দ কমছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়েও আগামী বছরের এডিপি কমে যাচ্ছে। একক মন্ত্রণালয় হিসেবেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এর প্রভাব পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে এডিপির খরচ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির মাত্র ৩৩ শতাংশ। অব্যয়িত পড়ে আছে এডিপির দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়ছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে।

এমনিতেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম। বিশেষ করে উন্নয়ন খাতের যে বরাদ্দ তার তুলনায় স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ কম। অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বরাদ্দ কম বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের। তারপরেও এ বরাদ্দ কেন খরচ হয় না তা অস্পষ্ট। বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতার অভাব নাকি, দক্ষতা নিরূপণের অনুসন্ধানে সাহসের অভাব, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারী স্বাস্থ্য খাতের অন্তঃসারশূন্য অবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাড়াহুড়া করে ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ নেয়া হয়। খরচের উদ্যোগ নেয়া হয়। অতীতের ব্যর্থতাগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ থেকে বাজেট বাস্তবায়নের তাগিদ বাড়ার কথা থাকলেও তা বাড়েনি। করোনা পূর্ব সময়, করোনাকালীন সময়ে এবং করোনা পরবর্তী সময়ের বাজেট বাস্তবায়নের চিত্রই সে কথা মনে করিয়ে দেয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, আগের ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দের ২৯ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। এ অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।

করোনা মহামারীর আঘাতের পরও স্বাস্থ্যখাত খরচ করতে পারেনি। করোনার সময় ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্দ খরচ আরও কমে। এ সময় বরাদ্দের প্রায় ৪২ শতাংশ ফেরত যায়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। সে সময় ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের মধ্যে ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা খরচ হয়। বরাদ্দের ২৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দের পরিমাণ কম ছিল, খরচও কম ছিল। তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ব্যয় করা যায় ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে অব্যবহৃত অর্থের হার ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।