বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ

তৈরি হচ্ছে নীতিমালা

বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত পণ্য পাচার এবং খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ করতে আজ থেকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের গ্রেড-১-এর মেম্বর সুলতান মো. ইকবাল গতকাল সংবাদকে একথা জানান। তিনি বলেন, বন্ড সুবিধা অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং এ প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ৬ থেকে ৭টি সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর ডিসেম্বরের মধ্যেই ‘বন্ড অটোমেশন বিজনেস প্রসেস’-র নীতিমালা ঠিক করা হবে। তবে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে ২০২০ লেগে যেতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিমুখী এ শিল্পকারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, এসিডিটিক এসিড, পেডিং (বেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউজে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কখনও চালান না দিয়ে, কখনও ভুয়া চালান দিয়ে বা কখনও একই চালান একাধিকবার ব্যবহার করে এবং বন্ডের আওতায় অবৈধভাবে পণ্য খালাস করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তৎপরতায় এখন বন্ডের অপব্যবহার কিছুটা কমে এসেছে। যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে এনবিআর।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের এ অবৈধ কাজ বন্ধের লক্ষ্যে বন্ড সুবিধার ব্যবহারে সব কার্যক্রম ডিজিটাল করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআর-এর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আজ থেকে পর্যায়ক্রমে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কী করণীয় সে বিষয়ে আলোচনাসহ স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে।

সুলতান মো. ইকবাল বলেন, এ লক্ষ্যে আমাদের নিয়োগকৃত গবেষণা ফার্ম সাউনেসিস একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বর্তমানে বন্ড ব্যবসা কী রকম আছে তা পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, সেমিনার শেষে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী টেকসই ভিজিলেন্স প্রসেস চূড়ান্ত করা হবে। এরপর তা অর্থমন্ত্রণালয়, শিল্পমন্ত্রণালয়, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। সবাই অনুমোদন দিলে বন্ড অটোমেশন ভিজিলেন্স প্রসেস বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ভিজিলেন্স প্রসেস চালু হবে ডিসেম্বরে। তবে বন্ড অটোমেশন চালু হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বন্ড অটোমেশন ভিজিলেন্স প্রসেস চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন করতে একটি ডিজাইন তৈরি করতে হবে। যার সঙ্গে আমাদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বয় ঘটাতে হবে। এই কাজ সম্পন্ন করতে সময় প্রয়োজন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য বন্ড সুবিধায় আনা কাগজ ও কাগজ বোর্ডে এখন খোলাবাজার ভরে গেছে। পোশাকশিল্পের নামে নিম্ন গ্রামের কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি করে খোলাবাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বৈধ পথে সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আমদানি করা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন।

অ্যাসোসিয়েশন সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালে তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য বন্ড সুবিধায় কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে শুধু ৩০০ গ্রাম বা তদূর্ধ্ব গ্রামের কাগজ আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পে তেমন চাহিদা না থাকলেও ১০০ গ্রাম বা ১৫০ গ্রামের আর্ট পেপার বন্ডেড সুবিধাভুক্ত করা হয়। সুবিধার আড়ালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করায় সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। আর উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি ও বিনা শুল্কে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করায় বৈধ আমদানিকারকরা সংকটে পড়েছে।

সরেজমিনে কাগজের সবচেয়ে বড় খোলাবাজার নয়াবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুল্ক সুবিধায় আনা কাগজ প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং পেপার। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এলসির মাধ্যমে আমদানি করলেও খোলাবাজারে বন্ডের মাধ্যমে শুল্ক সুবিধা নিয়ে আমদানি করা কাগজের কারণে লোকসান গুনতে হয়। কারণ আমদানি করা এক রিম আর্ট কার্ড বিক্রি হয় ২৫০০ টাকা আর বিশেষ সুবিধায় আমদানি করা পণ্য বিক্রি হয় ১৮০০ টাকায়। ফলে ক্রেতারা কম দামের পণ্য নেয়। তবে কে বা কারা এ পণ্য আনে তা বলতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারবে। তারা জানান, সাধারণত রাত ১১টার পর থেকে বন্ডের মাধ্যমে আনা পণ্য লোড আনলোড হয়ে থাকে।

সম্প্রতি নয়াবাজারে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে অভিযান পরিচালনাকালে কাস্টমস বন্ড কমিশনারদের ওপর চোরাকারবারিরা হামলা চালায়। এতে প্রায় ১৮ জন পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্যবোঝাই তিনটি কাভার্ড ভ্যান আটক করেছে। যার মূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেপার ইমপোর্টার্সদের দাবি, দেশি কাগজ শিল্পে ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিস্যু পেপার বোর্ড উৎপাদিত হয়। কিন্তু মুদ্রণশিল্পের পাশাপাশি দেশে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, সুইডিশ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ও অ্যাডহেসিভ পেপারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্যের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা ৬০ শতাংশের বেশি শুল্ক দিয়ে আমদানি করেন। কিন্তু পোশাকশিল্পের জন্য বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাগজ ও কাগজ বোর্ড কৌশলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

এক হিসাবে দেখা যায়, বৈধ পথে কোটেড ও গ্রাফিক পেপার, ডুপেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড ও ফোল্ডিং বক্স ও সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একই সময়ে বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কোটেড পেপার, ক্রাফট পেপার ও গ্রাফিক পেপার আমদানিতে সরকার রাজস্ব পায়নি। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিন বছরে তিন হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার পেপার আমদানি করা হয়। এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা শুল্ক সুবিধা পান দুই হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর সরকার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। বন্ড সুবিধার বাইরে বৈধ পথে এই কাগজ আমদানি করা হলে সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পেপার ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ , ১৩ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২১ রমজান ১৪৪০

বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ

তৈরি হচ্ছে নীতিমালা

ওয়ালিদ খান

বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত পণ্য পাচার এবং খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ করতে আজ থেকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের গ্রেড-১-এর মেম্বর সুলতান মো. ইকবাল গতকাল সংবাদকে একথা জানান। তিনি বলেন, বন্ড সুবিধা অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং এ প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ৬ থেকে ৭টি সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর ডিসেম্বরের মধ্যেই ‘বন্ড অটোমেশন বিজনেস প্রসেস’-র নীতিমালা ঠিক করা হবে। তবে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে ২০২০ লেগে যেতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিমুখী এ শিল্পকারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, এসিডিটিক এসিড, পেডিং (বেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউজে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কখনও চালান না দিয়ে, কখনও ভুয়া চালান দিয়ে বা কখনও একই চালান একাধিকবার ব্যবহার করে এবং বন্ডের আওতায় অবৈধভাবে পণ্য খালাস করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তৎপরতায় এখন বন্ডের অপব্যবহার কিছুটা কমে এসেছে। যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে এনবিআর।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের এ অবৈধ কাজ বন্ধের লক্ষ্যে বন্ড সুবিধার ব্যবহারে সব কার্যক্রম ডিজিটাল করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআর-এর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আজ থেকে পর্যায়ক্রমে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কী করণীয় সে বিষয়ে আলোচনাসহ স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে।

সুলতান মো. ইকবাল বলেন, এ লক্ষ্যে আমাদের নিয়োগকৃত গবেষণা ফার্ম সাউনেসিস একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বর্তমানে বন্ড ব্যবসা কী রকম আছে তা পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, সেমিনার শেষে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী টেকসই ভিজিলেন্স প্রসেস চূড়ান্ত করা হবে। এরপর তা অর্থমন্ত্রণালয়, শিল্পমন্ত্রণালয়, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। সবাই অনুমোদন দিলে বন্ড অটোমেশন ভিজিলেন্স প্রসেস বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ভিজিলেন্স প্রসেস চালু হবে ডিসেম্বরে। তবে বন্ড অটোমেশন চালু হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বন্ড অটোমেশন ভিজিলেন্স প্রসেস চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন করতে একটি ডিজাইন তৈরি করতে হবে। যার সঙ্গে আমাদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বয় ঘটাতে হবে। এই কাজ সম্পন্ন করতে সময় প্রয়োজন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য বন্ড সুবিধায় আনা কাগজ ও কাগজ বোর্ডে এখন খোলাবাজার ভরে গেছে। পোশাকশিল্পের নামে নিম্ন গ্রামের কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি করে খোলাবাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বৈধ পথে সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আমদানি করা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছেন।

অ্যাসোসিয়েশন সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালে তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য বন্ড সুবিধায় কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে শুধু ৩০০ গ্রাম বা তদূর্ধ্ব গ্রামের কাগজ আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পে তেমন চাহিদা না থাকলেও ১০০ গ্রাম বা ১৫০ গ্রামের আর্ট পেপার বন্ডেড সুবিধাভুক্ত করা হয়। সুবিধার আড়ালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করায় সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। আর উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি ও বিনা শুল্কে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করায় বৈধ আমদানিকারকরা সংকটে পড়েছে।

সরেজমিনে কাগজের সবচেয়ে বড় খোলাবাজার নয়াবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুল্ক সুবিধায় আনা কাগজ প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং পেপার। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এলসির মাধ্যমে আমদানি করলেও খোলাবাজারে বন্ডের মাধ্যমে শুল্ক সুবিধা নিয়ে আমদানি করা কাগজের কারণে লোকসান গুনতে হয়। কারণ আমদানি করা এক রিম আর্ট কার্ড বিক্রি হয় ২৫০০ টাকা আর বিশেষ সুবিধায় আমদানি করা পণ্য বিক্রি হয় ১৮০০ টাকায়। ফলে ক্রেতারা কম দামের পণ্য নেয়। তবে কে বা কারা এ পণ্য আনে তা বলতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারবে। তারা জানান, সাধারণত রাত ১১টার পর থেকে বন্ডের মাধ্যমে আনা পণ্য লোড আনলোড হয়ে থাকে।

সম্প্রতি নয়াবাজারে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে অভিযান পরিচালনাকালে কাস্টমস বন্ড কমিশনারদের ওপর চোরাকারবারিরা হামলা চালায়। এতে প্রায় ১৮ জন পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্যবোঝাই তিনটি কাভার্ড ভ্যান আটক করেছে। যার মূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেপার ইমপোর্টার্সদের দাবি, দেশি কাগজ শিল্পে ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিস্যু পেপার বোর্ড উৎপাদিত হয়। কিন্তু মুদ্রণশিল্পের পাশাপাশি দেশে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, সুইডিশ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ও অ্যাডহেসিভ পেপারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্যের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা ৬০ শতাংশের বেশি শুল্ক দিয়ে আমদানি করেন। কিন্তু পোশাকশিল্পের জন্য বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাগজ ও কাগজ বোর্ড কৌশলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

এক হিসাবে দেখা যায়, বৈধ পথে কোটেড ও গ্রাফিক পেপার, ডুপেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড ও ফোল্ডিং বক্স ও সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একই সময়ে বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কোটেড পেপার, ক্রাফট পেপার ও গ্রাফিক পেপার আমদানিতে সরকার রাজস্ব পায়নি। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিন বছরে তিন হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার পেপার আমদানি করা হয়। এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা শুল্ক সুবিধা পান দুই হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর সরকার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। বন্ড সুবিধার বাইরে বৈধ পথে এই কাগজ আমদানি করা হলে সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পেপার ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন।