ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিন আটকাতে প্রস্তুত রয়েছি

অ্যাটনি জেনারেল

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আগাম জামিন আবেদনের বিরোধিতা করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মাহবুবে আলম বলেন, জামিনের বিরোধিতার ব্যাপারে আমার অফিসের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা) যারা আইনজীবী আছেন, তারা প্রস্তুত। খুব শক্ত হাতে এটির (জামিন আবেদনটি) বিরোধিতা করা হবে। নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট হয়েছে, তা গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। একজন পুলিশ অফিসার (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম), যিনি নাকি এগুলো ভিডিও করেছেন। এটি গর্হিত অপরাধ। তিনি বলেন, ‘নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাকেও (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম) মূল মামলায় আসামি করার জন্য। এটি (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে মামলায় আসামি করা) তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়। সে যাতে জামিন না পায়, আমরা খুব জোরেশোরেই ওই চেষ্টা করব।’

আগামী ১১, ১২ বা ১৩ জুন তিন দিন বিচারপতি হাবিবুল গণির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বসবেন। তখন ওই জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে ২৯ মে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আইসিটি আইনে করা মামলায় আগাম জামিন চেয়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে আবেদন করে। বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী সালমা সুলতানা।

গত সোমবার ওই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। ওইদিন (২৭ মে) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আইসিটি মামলায় ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। পরে ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ এ ব্যাপারে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে মাদ্রাসাটির সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজের সহযোগী দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাত ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত।

এদিকে নুসরাতের আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে গত ১৫ এপ্রিল সাইবার আদালতে এ মামলাটি করেন। নুসরাত হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলেও চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ওসি মোয়াজ্জেম।

শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ , ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ রমজান ১৪৪০

ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিন আটকাতে প্রস্তুত রয়েছি

অ্যাটনি জেনারেল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আগাম জামিন আবেদনের বিরোধিতা করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মাহবুবে আলম বলেন, জামিনের বিরোধিতার ব্যাপারে আমার অফিসের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা) যারা আইনজীবী আছেন, তারা প্রস্তুত। খুব শক্ত হাতে এটির (জামিন আবেদনটি) বিরোধিতা করা হবে। নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট হয়েছে, তা গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। একজন পুলিশ অফিসার (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম), যিনি নাকি এগুলো ভিডিও করেছেন। এটি গর্হিত অপরাধ। তিনি বলেন, ‘নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাকেও (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম) মূল মামলায় আসামি করার জন্য। এটি (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে মামলায় আসামি করা) তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়। সে যাতে জামিন না পায়, আমরা খুব জোরেশোরেই ওই চেষ্টা করব।’

আগামী ১১, ১২ বা ১৩ জুন তিন দিন বিচারপতি হাবিবুল গণির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বসবেন। তখন ওই জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে ২৯ মে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আইসিটি আইনে করা মামলায় আগাম জামিন চেয়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে আবেদন করে। বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী সালমা সুলতানা।

গত সোমবার ওই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। ওইদিন (২৭ মে) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আইসিটি মামলায় ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। পরে ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ এ ব্যাপারে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে মাদ্রাসাটির সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজের সহযোগী দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাত ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত।

এদিকে নুসরাতের আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে গত ১৫ এপ্রিল সাইবার আদালতে এ মামলাটি করেন। নুসরাত হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলেও চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ওসি মোয়াজ্জেম।