ইংলিশ পেস-স্পিনে উইন্ডিজ থামল ২১২ রানে

সাউদাম্পটনে বিশ্বকাপের ম্যাচে গতকাল স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের পেস এবং স্পিন ডিপার্টমেন্ট যেন নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। বোলারদের দাপটের দিনে নিকোলাস পুরাণ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকী ব্যাটসম্যানরা ছিলেন খোলসের মধ্যে। হাত খুলে মারতে গিয়েই ধরাশায়ী হয়েছেন তারা। যে কারণে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া ক্যারিবিয়ানদের স্কোরও তেমন বড় হয়নি। নির্ধারিত ৫০ ওভারের পাঁচ ওভার দুই বল বাকী থাকতেই মাত্র ২১২ রানে অল আউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ‘হাইস্কোরিং’ এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই তিনশ’র কোটায় রান তোলাটাকে অভ্যাসে পরিণত করা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের জন্য ২১৩ রানের জয়ের টার্গেট অন্তত কাগজে কলমে ‘সামান্য’ই বলা যায়।

বিশ্বকাপের আলোচিত ইংলিশ পেস বোলার জোফরা আর্চার শুরুতে ক্যারিবিয়ান টপ অর্ডারকে আটকে রাখলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। ফলে তাকে দিয়ে ৫ ওভার বোলিং করানোর পর সরিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান। তবে চল্লিশতম ওভারে আক্রমণে এসে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুটো উইকেটের পতন ঘটিয়ে আর্চার প্রমাণ করেন যে, তাকে নিয়ে এমনি এমনি আলোচনা হয়নি। চল্লিশতম ওভারে হ্যাট্রিক বঞ্চিত আর্চার চুয়াল্লিশতম ওভারেও আরও একটি উইকেটের পতন ঘটান। বলে রাখা ভালো আর্চারের জন্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে।

ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভুত এই ইংলিশ পেসারের আঘাতের আগে বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের শুরুতে সাফল্য এনে দেন ক্রিস ওকস, মার্ক উড ও লিয়াম প্লাংকেট।

শুরুর আঘাতটাই ওকসের। ক্যারিবিয়ান ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসের (২) ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন বেলস।

ইংলিশ পেসারদের সামাল দেয়ার মূল অস্ত্র ক্রিস গেইলও সুবিধা করতে পারেননি। ‘ইউনিভার্স বস’কে ফিরিয়েছেন লিয়াম প্লাংকেট। গত বিশ্বকাপের পর থেকে চলতি বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ১১-৪০ ওভারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট ছিল প্লাংকেটের। শুক্রবারও মাঝের ওভারে নিজের কার্যকারিতা বুঝিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই পেসার। প্রথমে স্লোয়ার বাউন্সারের ফাঁদে ফেলেছেন গেইলকে। পরে মাথা বরাবর তাক করা নিখুঁত এক বাউন্সারে ডিপ স্কয়ার লেগে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন ক্যারিবিয়ান দৈত্যকে। শাই হোপের সঙ্গে গেইলের ৫০ রানের জুটি ভাঙা ডেলিভারিটা ছিলো ত্রয়োদশ ওভারের শেষ বল। পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৬ রানে ফেরার আগে ওকসের বলে ব্যক্তিগত ১৬ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া গেইল সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থতার পরিচয়ই দিয়েছেন বলা যায়। ওকসের বল এই দানবের ব্যাট ছুঁয়ে বল মার্ক উডের তালুবন্দী হলেও ব্যালেন্স হারিয়ে সেটা ফেলে দেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের আরেক ভরসা হয়ে ওঠা শাই হোপ শুক্রবারের ম্যাচে রীতিমত হাঁসফাঁস করেছেন ইংলিশ পেসারদের গতির সামনে। বাউন্ডারি দূরে থাক, প্রান্ত বদলেও সমস্যা হচ্ছিল তার। টানা ডট বল দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গেইল ফেরার এক রান পর ব্যক্তিগত ১১ রানে মার্ক উডের হাতে জীবন দেয়ার আগে হোপ খেলেন ৩০টি বল। অবশ্য শাই হোপকে ফেরাতে রিভিউ নিতে হয় মার্ক উডকে।

দলীয় ৫৫ রানে তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অনেকটা সময় লড়াই করেন নিকোলাস পুরান ও শিমরন হেটমায়ার। দু’জনের ৮৯ রানের জুটি ভাঙে স্পিনার জো রুটের হাতে হেটমায়ার (৩৯) ফিরতি ক্যাচ দিলে।

এই জায়গা থেকে আর প্রতিরোধ গড়া হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। নিকোলাস পুরান একটা প্রান্ত আগলে রেখে ৬৩ রান করলেও টেল এন্ডাররা কুলিয়ে উঠতে পারেননি ইংলিশ বোলারদের সঙ্গে। হেটমায়ারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও (৯) ফিরতি ক্যাচ দেন রুটের হাতে। দুটো ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে ১৬ বলে ২১ রান করা আন্দ্রে রাসেলকে ফেরান মার্ক উড।

পরের অংশটা জোফরা আর্চারের। চল্লিশতম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে পুরাণ (৬৩) ও কার্লেস ব্র্যাথহোয়াইটকে (১৪) সাজঘরের পথ দেখানোর পর শেলডন কটরেলকে রানের খাতাই খুলতে দেননি এই ইংলিশ পেসার। স্কোরারকে কোন কষ্ট না দিয়ে মার্ক উডের বলে শেলডন কটরেল ফিরলে ৩২ বল বাকী থাকতেই ২১২ রানে অল আউট হয় ক্যারিবিয়ানরা।

শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯ , ১ আষাঢ় ১৪২৫, ১১ শাওয়াল ১৪৪০

ইংলিশ পেস-স্পিনে উইন্ডিজ থামল ২১২ রানে

বিশেষ প্রতিনিধি

image

হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসে পুরানের একটি ড্রাইভ

সাউদাম্পটনে বিশ্বকাপের ম্যাচে গতকাল স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের পেস এবং স্পিন ডিপার্টমেন্ট যেন নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। বোলারদের দাপটের দিনে নিকোলাস পুরাণ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকী ব্যাটসম্যানরা ছিলেন খোলসের মধ্যে। হাত খুলে মারতে গিয়েই ধরাশায়ী হয়েছেন তারা। যে কারণে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া ক্যারিবিয়ানদের স্কোরও তেমন বড় হয়নি। নির্ধারিত ৫০ ওভারের পাঁচ ওভার দুই বল বাকী থাকতেই মাত্র ২১২ রানে অল আউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ‘হাইস্কোরিং’ এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই তিনশ’র কোটায় রান তোলাটাকে অভ্যাসে পরিণত করা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের জন্য ২১৩ রানের জয়ের টার্গেট অন্তত কাগজে কলমে ‘সামান্য’ই বলা যায়।

বিশ্বকাপের আলোচিত ইংলিশ পেস বোলার জোফরা আর্চার শুরুতে ক্যারিবিয়ান টপ অর্ডারকে আটকে রাখলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। ফলে তাকে দিয়ে ৫ ওভার বোলিং করানোর পর সরিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান। তবে চল্লিশতম ওভারে আক্রমণে এসে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুটো উইকেটের পতন ঘটিয়ে আর্চার প্রমাণ করেন যে, তাকে নিয়ে এমনি এমনি আলোচনা হয়নি। চল্লিশতম ওভারে হ্যাট্রিক বঞ্চিত আর্চার চুয়াল্লিশতম ওভারেও আরও একটি উইকেটের পতন ঘটান। বলে রাখা ভালো আর্চারের জন্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে।

ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভুত এই ইংলিশ পেসারের আঘাতের আগে বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের শুরুতে সাফল্য এনে দেন ক্রিস ওকস, মার্ক উড ও লিয়াম প্লাংকেট।

শুরুর আঘাতটাই ওকসের। ক্যারিবিয়ান ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসের (২) ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন বেলস।

ইংলিশ পেসারদের সামাল দেয়ার মূল অস্ত্র ক্রিস গেইলও সুবিধা করতে পারেননি। ‘ইউনিভার্স বস’কে ফিরিয়েছেন লিয়াম প্লাংকেট। গত বিশ্বকাপের পর থেকে চলতি বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ১১-৪০ ওভারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট ছিল প্লাংকেটের। শুক্রবারও মাঝের ওভারে নিজের কার্যকারিতা বুঝিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই পেসার। প্রথমে স্লোয়ার বাউন্সারের ফাঁদে ফেলেছেন গেইলকে। পরে মাথা বরাবর তাক করা নিখুঁত এক বাউন্সারে ডিপ স্কয়ার লেগে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন ক্যারিবিয়ান দৈত্যকে। শাই হোপের সঙ্গে গেইলের ৫০ রানের জুটি ভাঙা ডেলিভারিটা ছিলো ত্রয়োদশ ওভারের শেষ বল। পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩৬ রানে ফেরার আগে ওকসের বলে ব্যক্তিগত ১৬ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া গেইল সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থতার পরিচয়ই দিয়েছেন বলা যায়। ওকসের বল এই দানবের ব্যাট ছুঁয়ে বল মার্ক উডের তালুবন্দী হলেও ব্যালেন্স হারিয়ে সেটা ফেলে দেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের আরেক ভরসা হয়ে ওঠা শাই হোপ শুক্রবারের ম্যাচে রীতিমত হাঁসফাঁস করেছেন ইংলিশ পেসারদের গতির সামনে। বাউন্ডারি দূরে থাক, প্রান্ত বদলেও সমস্যা হচ্ছিল তার। টানা ডট বল দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গেইল ফেরার এক রান পর ব্যক্তিগত ১১ রানে মার্ক উডের হাতে জীবন দেয়ার আগে হোপ খেলেন ৩০টি বল। অবশ্য শাই হোপকে ফেরাতে রিভিউ নিতে হয় মার্ক উডকে।

দলীয় ৫৫ রানে তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অনেকটা সময় লড়াই করেন নিকোলাস পুরান ও শিমরন হেটমায়ার। দু’জনের ৮৯ রানের জুটি ভাঙে স্পিনার জো রুটের হাতে হেটমায়ার (৩৯) ফিরতি ক্যাচ দিলে।

এই জায়গা থেকে আর প্রতিরোধ গড়া হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। নিকোলাস পুরান একটা প্রান্ত আগলে রেখে ৬৩ রান করলেও টেল এন্ডাররা কুলিয়ে উঠতে পারেননি ইংলিশ বোলারদের সঙ্গে। হেটমায়ারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও (৯) ফিরতি ক্যাচ দেন রুটের হাতে। দুটো ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে ১৬ বলে ২১ রান করা আন্দ্রে রাসেলকে ফেরান মার্ক উড।

পরের অংশটা জোফরা আর্চারের। চল্লিশতম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে পুরাণ (৬৩) ও কার্লেস ব্র্যাথহোয়াইটকে (১৪) সাজঘরের পথ দেখানোর পর শেলডন কটরেলকে রানের খাতাই খুলতে দেননি এই ইংলিশ পেসার। স্কোরারকে কোন কষ্ট না দিয়ে মার্ক উডের বলে শেলডন কটরেল ফিরলে ৩২ বল বাকী থাকতেই ২১২ রানে অল আউট হয় ক্যারিবিয়ানরা।