ইট পোড়ানোর অভিযোগে ২৭ ইটভাটা মালিক কারাগারে

দিনাজপুরে হাইকোর্টের ভুয়া রিটের আদেশ সৃষ্টি ও আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে ইট প্রস্তুত করার অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে পার্বতীপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ২৭ ইটভাটা মালিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন না দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুঞার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর মামলার এজাহারনামীয় ৩১ জন আসামির মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২৭ আসামি হাইকোর্ট থেকে ৩ সপ্তাহের আদেশপত্র নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক উভয়পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সময় যুক্তিতর্ক শ্রবণ শেষে ও ২৭ আসামিকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই চাঞ্চল্যকর মামলার এজাহারনামীয় আসামি পার্বতীপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন (৪৫) ১৭ জুলাই পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে জেলহাজতে থেকে তার পক্ষে একই আদালতে জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারক ওই আসামির জামিন নামঞ্জুর করার আদেশ দেন। জামিন বাতিল হওয়া ২৭ আসামিকে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় দিনাজপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জামিন বাতিল হওয়া আসামিরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক (৬৩), ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন (৪৮), ইটভাটা মালিক রবিউল আলম মুন্সি (৪৫), মাসুদ রানা (৪২), নুরে আলম (৫০), ইব্রাহিম আলী মন্ডল (৫২), রবিউল হাসান (৪২), ফখরুল ইসলাম শাহ ওরফে সাজু (৪২), নাজমুল হুদা (৪০), রফিকুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম বেগ (৪২), রেজওয়ানুল হক (৪৫), মাহফুজুল হক আনার (৪৮), তাসরিফুল (৪২), মাসুদুর রহমান চৌধুরী (৪০), আমানুল্লাহ প্রমাণিক (৪৮), শাহরিয়ার ইফতেখারুল আলম চৌধুরী (৩৮), নজরুল ইসলাম (৪২), জিকরুল হক (৪০), এসএম হায়দার (৫০), রেজাউল ইসলাম (৫৫), শ্রী পলাশ কুমার রায় (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৮), আবুল কালাম আজাদ (৫০), পলিন চন্দ্র রায় (৪২), লোকমান হাকিম (৫২) ও মঞ্জুরী-ইশ-শাহাদাৎ মতিন (৪৪)। এ ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় ২৭ আসামি পার্বতীপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেনকে ১৭ জুলাই পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। মামলার অপর ৩ এজাহারনামীয় আসামি হাসান শাহরিয়ার, শফিকুর রহমান, কুদরত-ই-খোদা এখনও পলাতক।

দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, মামলাটি গত ২২ জুন পার্বতীপুর থানায় এসআই আবদুল হামিদ বাদী হয়ে ৩১ ইটভাটা মালিককে আসামি করে হাইকোর্টের নির্দেশে দায়ের করেন। এর পার্বতীপুর থানার মামলা নং ২৩, তারিখ ২২/৬/১৯, ধারা ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৩৪ দ.বি.। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই এমআর সাঈদ।

মামলার অভিযোগে প্রকাশ, গত বছরের ১১ মার্চ পার্বতীপুর উপজেলার হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু ছাত্রী মায়িশা মনাওয়ারা মিশু দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র লেখে। ওইপত্রে সে লেখে, আমাদের স্কুলের পাশে বিপ্লব নামের একজন ইটভাটা দিয়েছেন। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়। চোখ জ্বালা করে। এখন স্কুলের অন্যপাশে মুক্তা নামের একজন আরেকটি ইটভাটা প্রস্তুত করেছেন। তা হলে আমাদের কী হবে? আমরা কীভাবে বাঁচব? আপনি আমাদের বাঁচান। ওই পত্রপ্রাপ্তির পর জেলা প্রশাসক ভাটাগুলোর কী অবস্থা, তা তদারক করে অবগত হন হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে তারা ভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। হাইকোর্টে অনুসন্ধান করে জেলা প্রশাসক জানতে পারে ভুয়া রিট করে ভুয়া হাইকোর্টের আদেশ সৃষ্টি করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি গত ২০ মে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে জেলার ৩১টি ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে পার্বতীপুর থানার এসআই আবদুল হামিদ গত ২২ জুন মামলাটি করেন। মামলার আসামি রয়েছেন ৩১ জন ইটভাটার মালিক।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, আমি পার্বতীপুর উপজেলার দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু মায়িশা মিশুর একটি মানবিক আবেদনমুখী পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয়ের নির্দেশেই এই মামলা করা হয়েছে। অপরাধী ইটভাটা মালিকদের যাতে তাদের অপকর্মের বিচার হয়, এই প্রত্যাশাই তিনি মামলাটি করেন।

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০

হাইকোর্টের ভুয়া আদেশ বানিয়ে

ইট পোড়ানোর অভিযোগে ২৭ ইটভাটা মালিক কারাগারে

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

দিনাজপুরে হাইকোর্টের ভুয়া রিটের আদেশ সৃষ্টি ও আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে ইট প্রস্তুত করার অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে পার্বতীপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ২৭ ইটভাটা মালিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন না দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুঞার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর মামলার এজাহারনামীয় ৩১ জন আসামির মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২৭ আসামি হাইকোর্ট থেকে ৩ সপ্তাহের আদেশপত্র নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক উভয়পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সময় যুক্তিতর্ক শ্রবণ শেষে ও ২৭ আসামিকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই চাঞ্চল্যকর মামলার এজাহারনামীয় আসামি পার্বতীপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন (৪৫) ১৭ জুলাই পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে জেলহাজতে থেকে তার পক্ষে একই আদালতে জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারক ওই আসামির জামিন নামঞ্জুর করার আদেশ দেন। জামিন বাতিল হওয়া ২৭ আসামিকে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় দিনাজপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জামিন বাতিল হওয়া আসামিরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক (৬৩), ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন (৪৮), ইটভাটা মালিক রবিউল আলম মুন্সি (৪৫), মাসুদ রানা (৪২), নুরে আলম (৫০), ইব্রাহিম আলী মন্ডল (৫২), রবিউল হাসান (৪২), ফখরুল ইসলাম শাহ ওরফে সাজু (৪২), নাজমুল হুদা (৪০), রফিকুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম বেগ (৪২), রেজওয়ানুল হক (৪৫), মাহফুজুল হক আনার (৪৮), তাসরিফুল (৪২), মাসুদুর রহমান চৌধুরী (৪০), আমানুল্লাহ প্রমাণিক (৪৮), শাহরিয়ার ইফতেখারুল আলম চৌধুরী (৩৮), নজরুল ইসলাম (৪২), জিকরুল হক (৪০), এসএম হায়দার (৫০), রেজাউল ইসলাম (৫৫), শ্রী পলাশ কুমার রায় (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৮), আবুল কালাম আজাদ (৫০), পলিন চন্দ্র রায় (৪২), লোকমান হাকিম (৫২) ও মঞ্জুরী-ইশ-শাহাদাৎ মতিন (৪৪)। এ ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় ২৭ আসামি পার্বতীপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেনকে ১৭ জুলাই পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। মামলার অপর ৩ এজাহারনামীয় আসামি হাসান শাহরিয়ার, শফিকুর রহমান, কুদরত-ই-খোদা এখনও পলাতক।

দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, মামলাটি গত ২২ জুন পার্বতীপুর থানায় এসআই আবদুল হামিদ বাদী হয়ে ৩১ ইটভাটা মালিককে আসামি করে হাইকোর্টের নির্দেশে দায়ের করেন। এর পার্বতীপুর থানার মামলা নং ২৩, তারিখ ২২/৬/১৯, ধারা ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৩৪ দ.বি.। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই এমআর সাঈদ।

মামলার অভিযোগে প্রকাশ, গত বছরের ১১ মার্চ পার্বতীপুর উপজেলার হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু ছাত্রী মায়িশা মনাওয়ারা মিশু দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র লেখে। ওইপত্রে সে লেখে, আমাদের স্কুলের পাশে বিপ্লব নামের একজন ইটভাটা দিয়েছেন। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়। চোখ জ্বালা করে। এখন স্কুলের অন্যপাশে মুক্তা নামের একজন আরেকটি ইটভাটা প্রস্তুত করেছেন। তা হলে আমাদের কী হবে? আমরা কীভাবে বাঁচব? আপনি আমাদের বাঁচান। ওই পত্রপ্রাপ্তির পর জেলা প্রশাসক ভাটাগুলোর কী অবস্থা, তা তদারক করে অবগত হন হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে তারা ভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। হাইকোর্টে অনুসন্ধান করে জেলা প্রশাসক জানতে পারে ভুয়া রিট করে ভুয়া হাইকোর্টের আদেশ সৃষ্টি করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি গত ২০ মে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে জেলার ৩১টি ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে পার্বতীপুর থানার এসআই আবদুল হামিদ গত ২২ জুন মামলাটি করেন। মামলার আসামি রয়েছেন ৩১ জন ইটভাটার মালিক।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, আমি পার্বতীপুর উপজেলার দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু মায়িশা মিশুর একটি মানবিক আবেদনমুখী পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয়ের নির্দেশেই এই মামলা করা হয়েছে। অপরাধী ইটভাটা মালিকদের যাতে তাদের অপকর্মের বিচার হয়, এই প্রত্যাশাই তিনি মামলাটি করেন।