কালীগঞ্জে

বেগুন ক্ষেত কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

কাঁদছে কৃষক-কৃষাণি

মাঠে চাষযোগ্য জমি বলতেই মাত্র ৯ শতক। এ জমিতে গত আবাদে শসা চাষে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মার খেয়েছি। পরে নতুন উদ্যোম আর নতুন আশায় ধারদেনার মাধ্যমে বেগুনের চাষ করেছিলাম। ক্ষেতে বেগুনের ধরও এসেছিল। বর্তমান দামের বাজারে কয়েক দিন পরেই বেগুন বিক্রি করা যেতো। যার মাধ্যমে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারতাম। সংসারে আসতে স্বচ্ছলতা। কিন্ত ধরন্ত এ গাছগুলো গতকাল ভোরে কে বা কারা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্লা। সমানে ক্ষেতে বসে কাঁদছেন তার স্ত্রী গোলাপী বেগমও। আর নিরীহ মানুষটির এমন ক্ষতি হওয়ায় এলাকার মানুষও ক্ষেতটিতে গিয়ে তাদের সান্ত¡না দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাপ্পি মোল্লা উপজেলার সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার মোল্লার ছেলে।

গতকাল সকালে বাপ্পির মোল্লার ক্ষেতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ক্ষেতের সব বেগুন গাছ ধারালো কিছুর মাধ্যমে মাটির সমান করে কেটে দেয়া হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দম্পতি ওই ক্ষেতের মাঝখানে বসে আহাজারি আর চোখের পানি ফেলছেন। এলাকাবাসী নিরীহ এই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ওই ক্ষেতেই ভিড় করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-কৃষাণীর কষ্ট আর আহাজারিতে ফিরছেন চোখের কনায় পানি নিয়ে। আমার জানা মতে, আমি কারও ক্ষতি করিনি। সারাদিন মাঠে কাজ করি রাতে বাড়ি এসে ঘুমায়। আবার সকালে চলে যায় ক্ষেতের কাজে। এরপরও আমার শত্রু কারা? আর যারা এটা করেছে তাদেরই বা কি লাভ হয়েছে? এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাব আর কি করেই বা এনজিওর টাকাসহ ধারদেনা পরিশোধ করব এ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, সকালে খবর পেয়ে বাপ্পির বেগুন ক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতের মধ্যে বসে বাপ্পি মোল্লাসহ তার স্ত্রী যেভাবে কান্নাকাটি করছে এতে মাঠের বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন। আর গ্রামের সব বয়সী মানুষ তো আছেই।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি বাপ্পি মোল্লার ক্ষেতে গিয়েছিলাম। ধরন্ত গাছগুলো যেভাবে কেটে দেয়া হয়েছে তা কোনভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। তারপরও ওই কৃষকের পাশে থাকবে কৃষি অফিস। তিনি বলেন, একজন মানুষের বিভিন্ন দিকে কোন ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্ত ভরা ক্ষেত কেটে দেয়া এ কেমন শত্রুতা?

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, বাপ্পির মোল্লার বেগুন ক্ষেত কেটে দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ওই এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেন, একজন কৃষকের ভরাক্ষেত কেটে দিলে তার যে ক্ষতি হয় তা তিনি কোনভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারেন না। শুনেছি বাপ্পি একজন হতদরিদ্র নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এমন ক্ষতি অমানবিক। লিখিত অভিযোগ না পেলেও মুঠোফোনে জানার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে। দোষী যেই হোক রেহাই পাবে না।

image

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : দুর্বৃত্তরা বেগুন ক্ষেত কেটে নেয়ায় হতাশ হতদরিদ্র কৃষক দম্পতি -সংবাদ

আরও খবর
তীব্র স্রোত ও নদীভাঙনে বছর বছর নাব্যতা সংকট
সংসদে প্রণব মুখার্জি ও দুই এমপির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত
সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ শতাংশ
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নথি তলব দুদকের
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ডা. জাফরুল্লাহর
রংপুরে রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত
সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
এনজিও কর্মীকে গলা কেটে হত্যা
তদন্ত প্রতিবেদন ২০ অক্টোবর দাখিলের নির্দেশ
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
২ কোটি টাকার অবৈধ পলিথিন জব্দ

সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১৭ মহররম ১৪৪২, ২১ ভাদ্র ১৪২৭

কালীগঞ্জে

বেগুন ক্ষেত কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

কাঁদছে কৃষক-কৃষাণি

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : দুর্বৃত্তরা বেগুন ক্ষেত কেটে নেয়ায় হতাশ হতদরিদ্র কৃষক দম্পতি -সংবাদ

মাঠে চাষযোগ্য জমি বলতেই মাত্র ৯ শতক। এ জমিতে গত আবাদে শসা চাষে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মার খেয়েছি। পরে নতুন উদ্যোম আর নতুন আশায় ধারদেনার মাধ্যমে বেগুনের চাষ করেছিলাম। ক্ষেতে বেগুনের ধরও এসেছিল। বর্তমান দামের বাজারে কয়েক দিন পরেই বেগুন বিক্রি করা যেতো। যার মাধ্যমে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারতাম। সংসারে আসতে স্বচ্ছলতা। কিন্ত ধরন্ত এ গাছগুলো গতকাল ভোরে কে বা কারা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্লা। সমানে ক্ষেতে বসে কাঁদছেন তার স্ত্রী গোলাপী বেগমও। আর নিরীহ মানুষটির এমন ক্ষতি হওয়ায় এলাকার মানুষও ক্ষেতটিতে গিয়ে তাদের সান্ত¡না দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাপ্পি মোল্লা উপজেলার সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার মোল্লার ছেলে।

গতকাল সকালে বাপ্পির মোল্লার ক্ষেতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ক্ষেতের সব বেগুন গাছ ধারালো কিছুর মাধ্যমে মাটির সমান করে কেটে দেয়া হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দম্পতি ওই ক্ষেতের মাঝখানে বসে আহাজারি আর চোখের পানি ফেলছেন। এলাকাবাসী নিরীহ এই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ওই ক্ষেতেই ভিড় করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-কৃষাণীর কষ্ট আর আহাজারিতে ফিরছেন চোখের কনায় পানি নিয়ে। আমার জানা মতে, আমি কারও ক্ষতি করিনি। সারাদিন মাঠে কাজ করি রাতে বাড়ি এসে ঘুমায়। আবার সকালে চলে যায় ক্ষেতের কাজে। এরপরও আমার শত্রু কারা? আর যারা এটা করেছে তাদেরই বা কি লাভ হয়েছে? এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাব আর কি করেই বা এনজিওর টাকাসহ ধারদেনা পরিশোধ করব এ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, সকালে খবর পেয়ে বাপ্পির বেগুন ক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতের মধ্যে বসে বাপ্পি মোল্লাসহ তার স্ত্রী যেভাবে কান্নাকাটি করছে এতে মাঠের বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন। আর গ্রামের সব বয়সী মানুষ তো আছেই।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি বাপ্পি মোল্লার ক্ষেতে গিয়েছিলাম। ধরন্ত গাছগুলো যেভাবে কেটে দেয়া হয়েছে তা কোনভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। তারপরও ওই কৃষকের পাশে থাকবে কৃষি অফিস। তিনি বলেন, একজন মানুষের বিভিন্ন দিকে কোন ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্ত ভরা ক্ষেত কেটে দেয়া এ কেমন শত্রুতা?

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, বাপ্পির মোল্লার বেগুন ক্ষেত কেটে দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ওই এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেন, একজন কৃষকের ভরাক্ষেত কেটে দিলে তার যে ক্ষতি হয় তা তিনি কোনভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারেন না। শুনেছি বাপ্পি একজন হতদরিদ্র নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এমন ক্ষতি অমানবিক। লিখিত অভিযোগ না পেলেও মুঠোফোনে জানার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে। দোষী যেই হোক রেহাই পাবে না।