হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দীর্ঘ ২০ বছর পর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সম্প্রতি আলোচিত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তারা নিজেদের জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জ থেকে অপহৃত এক শিশুকে পাবনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা এসপি অফিস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের জেলা এসপি অফিস থেকে জানা গেছে, ২০০১ সালে ১৫ মার্চ কোটালীপাড়া সিকিব বাজারস্থ বাংলাদেশ মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী প্রভাংশু বিশ্বাসকে দোকানের ভিতরে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা (নং-৬ তারিখ-১৬-৩-২০০১) দায়ের করা হয়। গত প্রায় ২০ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টানা তদন্ত করেন। তদন্তে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ৭ জন তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। কিন্তু কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেননি। অবশেষে জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খানের নিবিড় তদারকিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন অনুসন্ধান তদন্ত চালিয়ে প্রায় ২০ বছর পর দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার রহস্য উদঘাটন ৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের জানা যায়, অভিযুক্ত সুধীর কুমার গৌতম, সুশীল দাস ও দেবাশিষ বিশারদ (সবাই গোপালঞ্জ) ৩ জন মিলে দোকান কর্মচারী প্রভাংশু বিশ্বাসকে মারপিট ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। গত ১৮ নভেম্বর ৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জিশিট দাখিল করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের তদারকিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, মামলাটি বছরের পর বছর ঘুরে তদন্ত পর্যায়ে থাকা এবং ক্লু উদঘাটন করতে না পারায় বাদী ও সাক্ষীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। তারা এখন মামলা চালাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এমনকি আসামিরা মামলার সাক্ষীদের তাদের পক্ষে রাখা এবং মামলার বাদীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে ম্যানেজ করে মামলাটি ধামাচাপা দিতেও চেষ্টা করেছে। এরপর ১৯ বছর ৮ মাস পর গত নভেম্বর মাসে অবশেষে মামলার বাদী, সাক্ষী ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে আলোচনা করে মামলাটির রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ফলে মামলাটি এখন নতুন করে আলোর মুখ দেখছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শিশু অপহরণ ও উদ্ধার : গত ১৪ নভেম্বর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়ার বাড়িওয়ালা মো. নজরুল শেখের ৯ বছরের শিশু হাফিজুর শেখকে বাড়ির ভাড়াটে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর অপরহরণকারীরা পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়। পুলিশ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও পাবনার বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে পাবনার সুজানগর উপজেলার তাতিকান্দা ইউনিয়নের তাতিবন্দ গ্রামে অভিযুক্ত বাবুল হোসেনের বাড়ি থেকে শিশু হাফিজুরকে উদ্ধার করে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানে পুলিশ সদর দফতর, পিবিআই গোপালগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছেন।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ১০ রবিউস সানি ১৪৪২

২০ বছর পর কোটালীপাড়ায়

হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

বাকী বিল্লাহ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দীর্ঘ ২০ বছর পর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সম্প্রতি আলোচিত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তারা নিজেদের জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জ থেকে অপহৃত এক শিশুকে পাবনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা এসপি অফিস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের জেলা এসপি অফিস থেকে জানা গেছে, ২০০১ সালে ১৫ মার্চ কোটালীপাড়া সিকিব বাজারস্থ বাংলাদেশ মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী প্রভাংশু বিশ্বাসকে দোকানের ভিতরে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা (নং-৬ তারিখ-১৬-৩-২০০১) দায়ের করা হয়। গত প্রায় ২০ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টানা তদন্ত করেন। তদন্তে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ৭ জন তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। কিন্তু কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেননি। অবশেষে জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খানের নিবিড় তদারকিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন অনুসন্ধান তদন্ত চালিয়ে প্রায় ২০ বছর পর দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার রহস্য উদঘাটন ৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের জানা যায়, অভিযুক্ত সুধীর কুমার গৌতম, সুশীল দাস ও দেবাশিষ বিশারদ (সবাই গোপালঞ্জ) ৩ জন মিলে দোকান কর্মচারী প্রভাংশু বিশ্বাসকে মারপিট ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। গত ১৮ নভেম্বর ৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জিশিট দাখিল করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের তদারকিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, মামলাটি বছরের পর বছর ঘুরে তদন্ত পর্যায়ে থাকা এবং ক্লু উদঘাটন করতে না পারায় বাদী ও সাক্ষীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। তারা এখন মামলা চালাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এমনকি আসামিরা মামলার সাক্ষীদের তাদের পক্ষে রাখা এবং মামলার বাদীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে ম্যানেজ করে মামলাটি ধামাচাপা দিতেও চেষ্টা করেছে। এরপর ১৯ বছর ৮ মাস পর গত নভেম্বর মাসে অবশেষে মামলার বাদী, সাক্ষী ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে আলোচনা করে মামলাটির রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ফলে মামলাটি এখন নতুন করে আলোর মুখ দেখছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শিশু অপহরণ ও উদ্ধার : গত ১৪ নভেম্বর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়ার বাড়িওয়ালা মো. নজরুল শেখের ৯ বছরের শিশু হাফিজুর শেখকে বাড়ির ভাড়াটে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর অপরহরণকারীরা পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়। পুলিশ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও পাবনার বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে পাবনার সুজানগর উপজেলার তাতিকান্দা ইউনিয়নের তাতিবন্দ গ্রামে অভিযুক্ত বাবুল হোসেনের বাড়ি থেকে শিশু হাফিজুরকে উদ্ধার করে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানে পুলিশ সদর দফতর, পিবিআই গোপালগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছেন।