করোনাকালীন সহায়তা প্রকল্প তালিকায় অমৎস্যজীবীর নাম

যশোরের কেশবপুরে মৎস্য নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রকৃত মৎস্যচাষিদের বঞ্চিত রেখে সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে (করোনা সহায়তা তালিকা) অধিকাংশ অমৎস্যচাষির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মৎস্যচাষিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা থেকে ভুয়া নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রণোয়নের দাবি জানিয়েছেন।

কোভিড-১৯ এ কর্ম না থাকায় প্রকৃত মৎস্যচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কথা বিবেচনা করে সরকার প্রকৃত মৎস্যচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পে যেসব মৎস্যচাষীর ২ একরের কম ও ২ একর থেকে ৩ একর পর্যন্ত মাছের ঘের রয়েছে তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এসব মাছচাষিদের চিংড়ির খাদ্য ও চিংড়ি পোনা ক্রয় সহায়তা বাবদ এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোপূর্বে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৮টি চিংড়িচাষী সুফলভোগী গ্রুপ বা ক্লাস্টারচাষী গঠন করা হয়। এগুলো হলো, সানতলা, কালিচরণপুর, আড়–য়া, কাঁকবাধাল, বাগডাঙ্গা, গৃধরনগর, কানাইডাঙ্গা ও ডহুরী চিংড়িচাষী সুফল গ্রুপ। প্রকৃতপক্ষে, চিংড়ি চাষীরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা সহায়তার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস এ ৮টি দলের মধ্যে শুধুমাত্র কালিচরণপুর চিংড়িচাষী সুফল গ্রুপকে সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অদৃশ্য কারণে বাকিদের নাম অন্তুর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ উপজেলার ৭৮০ জন উপকারভোগীদের ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করে কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস। অভিযোগ উঠেছে, যে তালিকা করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ ভুয়া । এরা কেউ চিংড়ি চাষি নয়। ফলে প্রকৃত মৎস্যচাষিরা বঞ্চিত হয়েছেন। মৎস্যচাষিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা থেকে ভুয়া নাম বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

মধ্যকুল গ্রামের মৎস্যজীবী অতুল সরকার জানান, তিনি নিজেই কার্ডধারী মৎস্যজীবী। একটি ছোট মাছের ঘের রয়েছে তার। তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ তার গ্রামের ইমরান হেসেন, শরিফুল ইসলাম, জুয়েল হোসেন ও রবিউল ইসলাম মৎস্যচাষি না হয়েও তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সরেজমিনে জানা গেছে, মাদারডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হালিম, রাজনগর বাকাবর্শি গ্রামের মজিদ খা, মোকবুল হোসেন, হারুন আর রশিদ, আবু হানিফ শাহীনের চিংড়ি চাষতো দূরের কথা মাছের ঘেরও নেই। শুধু এরা নয় যে তালিকা করা হয়েছে তার অধিকাংশ ভুয়া। আড়–য়া গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন বড় ঘের মালিক হয়েও তিনি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে আড়–য়া চিংড়ি চাষি সুফল গ্রুপকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা বলেন, তালিকা তৈরিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির সদস্য সচিব আমি নিজেই। এই কমিটি যাচাই বাছাই করেই তালিকা করেছে। তাছাড়া ক্লাস্টার চাষি পাবেন এমন কোন নীতিমালা নেই। বড় চাষি ঢুকেছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তালিকা প্রণোয়ন করে আমার দপ্তরে পাঠালে তা যাচাই বাচাই করে প্রায় ২০ শতাংশ অমৎস্যচাষির নাম বাদ দিয়ে তালিকা করা হয়েছে। এরপরও যদি অমৎস্যচাষির নাম তালিকায় থেকে থাকে, অভিযোগ পেলেই বাদ দিয়ে প্রকৃত মৎস্যচাষির নাম অন্তর্ভুক্ত করার এখনো সুযোগ রয়েছে।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনাকালীন সহায়তা প্রকল্প তালিকায় অমৎস্যজীবীর নাম

শামসুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে মৎস্য নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রকৃত মৎস্যচাষিদের বঞ্চিত রেখে সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে (করোনা সহায়তা তালিকা) অধিকাংশ অমৎস্যচাষির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মৎস্যচাষিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা থেকে ভুয়া নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রণোয়নের দাবি জানিয়েছেন।

কোভিড-১৯ এ কর্ম না থাকায় প্রকৃত মৎস্যচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কথা বিবেচনা করে সরকার প্রকৃত মৎস্যচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পে যেসব মৎস্যচাষীর ২ একরের কম ও ২ একর থেকে ৩ একর পর্যন্ত মাছের ঘের রয়েছে তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এসব মাছচাষিদের চিংড়ির খাদ্য ও চিংড়ি পোনা ক্রয় সহায়তা বাবদ এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোপূর্বে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৮টি চিংড়িচাষী সুফলভোগী গ্রুপ বা ক্লাস্টারচাষী গঠন করা হয়। এগুলো হলো, সানতলা, কালিচরণপুর, আড়–য়া, কাঁকবাধাল, বাগডাঙ্গা, গৃধরনগর, কানাইডাঙ্গা ও ডহুরী চিংড়িচাষী সুফল গ্রুপ। প্রকৃতপক্ষে, চিংড়ি চাষীরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা সহায়তার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস এ ৮টি দলের মধ্যে শুধুমাত্র কালিচরণপুর চিংড়িচাষী সুফল গ্রুপকে সাসটেইনেবল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অদৃশ্য কারণে বাকিদের নাম অন্তুর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ উপজেলার ৭৮০ জন উপকারভোগীদের ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করে কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস। অভিযোগ উঠেছে, যে তালিকা করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ ভুয়া । এরা কেউ চিংড়ি চাষি নয়। ফলে প্রকৃত মৎস্যচাষিরা বঞ্চিত হয়েছেন। মৎস্যচাষিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা থেকে ভুয়া নাম বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

মধ্যকুল গ্রামের মৎস্যজীবী অতুল সরকার জানান, তিনি নিজেই কার্ডধারী মৎস্যজীবী। একটি ছোট মাছের ঘের রয়েছে তার। তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ তার গ্রামের ইমরান হেসেন, শরিফুল ইসলাম, জুয়েল হোসেন ও রবিউল ইসলাম মৎস্যচাষি না হয়েও তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সরেজমিনে জানা গেছে, মাদারডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হালিম, রাজনগর বাকাবর্শি গ্রামের মজিদ খা, মোকবুল হোসেন, হারুন আর রশিদ, আবু হানিফ শাহীনের চিংড়ি চাষতো দূরের কথা মাছের ঘেরও নেই। শুধু এরা নয় যে তালিকা করা হয়েছে তার অধিকাংশ ভুয়া। আড়–য়া গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন বড় ঘের মালিক হয়েও তিনি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে আড়–য়া চিংড়ি চাষি সুফল গ্রুপকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা বলেন, তালিকা তৈরিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির সদস্য সচিব আমি নিজেই। এই কমিটি যাচাই বাছাই করেই তালিকা করেছে। তাছাড়া ক্লাস্টার চাষি পাবেন এমন কোন নীতিমালা নেই। বড় চাষি ঢুকেছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তালিকা প্রণোয়ন করে আমার দপ্তরে পাঠালে তা যাচাই বাচাই করে প্রায় ২০ শতাংশ অমৎস্যচাষির নাম বাদ দিয়ে তালিকা করা হয়েছে। এরপরও যদি অমৎস্যচাষির নাম তালিকায় থেকে থাকে, অভিযোগ পেলেই বাদ দিয়ে প্রকৃত মৎস্যচাষির নাম অন্তর্ভুক্ত করার এখনো সুযোগ রয়েছে।