মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ৬ টুকরা লাশ ইমাম গ্রেপ্তার

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার সরদারবাড়ী জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে আজহারুল ইসলাম (৩৭) নামে এক পোশাককর্মীর ৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত থাকায় সরদারবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। র‌্যাব বলছে, ইমাম আবদুর রহমান তার নিজ কক্ষে আজহারুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ ছয় টুকরা করে গুমের উদ্দেশ্যে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আবদুর রহমান প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে ৩৩ বছর ধরে ইমামতি করেন মাওলানা মো. আবদুর রহমান। পাশাপাশি শিশুদের কোরআন শিক্ষাও দেন তিনি। গত বুধবার রাতে সাবেক ছাত্র আজহারকে (৩০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশ গুম করতে ছয় টুকরা করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কারণ নিহত আজহারের ছেলে মো. আরিয়ান (৪) ওই মসজিদের মক্তবে পড়ালেখা করত। শুধু তাই নয়, আজহারও ইমাম আবদুর রহমানের কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম প্রায়ই আজহারের বাসায় যেতেন।

গত ১৯ মে অর্থাৎ বুধবার রাতে আজহার মসজিদে যান। তারপর ইমামের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ইমাম আমাদের বলেছেন, আজহার এসে অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে তিনি নাকি পরকীয়া করেন অথচ এটি মিথ্যা অভিযোগ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারকে কোপ দেন ইমাম আব্দুর রহমান। এতে আজহার ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে ঘটনা লুকাতে তিনি লাশ টুকরা করেন। ইমাম পুরো কাজটি করেন দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে তার শয়ন কক্ষে। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আবদুল মোত্তাকিম বলেন, আবদুর রহমান স্বীকার করেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি একাই আজহারকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরা করেন।

পরকীয়ার কোন ঘটনা ছিল কিনা, জানতে চাইলে লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনায় পরকীয়ার কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে ইমাম আবদুর রহমান বলেছেন, আজহার তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং বলেছে তার স্ত্রীর দিকে আমি (আবদুর রহমান) কু-দৃষ্টি দিয়েছি। এই কারণে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই রাগান্বিত হয়ে হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা আজহারের স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছি। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আর কোন মোটিভ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

র?্যাব জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী জড়িত কিনা, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আছমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যায়। তিনি ঘটনার আগের দিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কিনা এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত সোমবার মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ ও সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এছাড়া আজহার ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এমন ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে র?্যাব ইমামকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনা জানতে পারে। এ সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ধারালো অস্ত্রগুলো কীভাবে এলো জানতে চাইলে লে. কর্নেল আবদুল মুত্তাকিম বলেন, ইমাম দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদে চাকরি করতেন। কোরবানির সময় পশু জবাই করার জন্য তিনি এগুলো রাখতেন। সেই অস্ত্র দিয়েই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ৬ টুকরা লাশ ইমাম গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার সরদারবাড়ী জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে আজহারুল ইসলাম (৩৭) নামে এক পোশাককর্মীর ৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত থাকায় সরদারবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। র‌্যাব বলছে, ইমাম আবদুর রহমান তার নিজ কক্ষে আজহারুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ ছয় টুকরা করে গুমের উদ্দেশ্যে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আবদুর রহমান প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে ৩৩ বছর ধরে ইমামতি করেন মাওলানা মো. আবদুর রহমান। পাশাপাশি শিশুদের কোরআন শিক্ষাও দেন তিনি। গত বুধবার রাতে সাবেক ছাত্র আজহারকে (৩০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশ গুম করতে ছয় টুকরা করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কারণ নিহত আজহারের ছেলে মো. আরিয়ান (৪) ওই মসজিদের মক্তবে পড়ালেখা করত। শুধু তাই নয়, আজহারও ইমাম আবদুর রহমানের কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম প্রায়ই আজহারের বাসায় যেতেন।

গত ১৯ মে অর্থাৎ বুধবার রাতে আজহার মসজিদে যান। তারপর ইমামের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ইমাম আমাদের বলেছেন, আজহার এসে অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে তিনি নাকি পরকীয়া করেন অথচ এটি মিথ্যা অভিযোগ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারকে কোপ দেন ইমাম আব্দুর রহমান। এতে আজহার ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে ঘটনা লুকাতে তিনি লাশ টুকরা করেন। ইমাম পুরো কাজটি করেন দক্ষিণখানের সরদারবাড়ী জামে মসজিদে তার শয়ন কক্ষে। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আবদুল মোত্তাকিম বলেন, আবদুর রহমান স্বীকার করেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি একাই আজহারকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরা করেন।

পরকীয়ার কোন ঘটনা ছিল কিনা, জানতে চাইলে লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনায় পরকীয়ার কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে ইমাম আবদুর রহমান বলেছেন, আজহার তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং বলেছে তার স্ত্রীর দিকে আমি (আবদুর রহমান) কু-দৃষ্টি দিয়েছি। এই কারণে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই রাগান্বিত হয়ে হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা আজহারের স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছি। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আর কোন মোটিভ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

র?্যাব জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী জড়িত কিনা, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আছমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যায়। তিনি ঘটনার আগের দিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কিনা এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত সোমবার মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ ও সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এছাড়া আজহার ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এমন ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে র?্যাব ইমামকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনা জানতে পারে। এ সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ধারালো অস্ত্রগুলো কীভাবে এলো জানতে চাইলে লে. কর্নেল আবদুল মুত্তাকিম বলেন, ইমাম দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদে চাকরি করতেন। কোরবানির সময় পশু জবাই করার জন্য তিনি এগুলো রাখতেন। সেই অস্ত্র দিয়েই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়।