এরশাদশূন্য জাপার ভবিষ্যৎ কী?

এরশাদ শূন্য জাতীয় পার্টি ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, দলটির নেই কোন সাংগঠনিক কাঠামো। এতদিন এরশাদের নামে দলটি পরিচালিত হলেও তৃণমূল পর্যায় নেই কোন শক্তিশালী অবস্থান। গত সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে দলটির।

সাংগঠনিক কোন ভিত্তি না থাকার কারণে যে কেউ অর্থের বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে থাকে। এছাড়া বতর্মান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অভিযোগ রয়েছে। তাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত বিশিষ্টজনরা। তবে দলীয় নেতারকর্মীদের দাবি এরশাদের অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। এরশাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টিরও মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেল বলে মনে করছেন নব্বইয়ের দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকা সাংবাদিক সাংস্কৃতিক কর্মী কামাল লোহানী। তিনি বলেন, স্বৈরশাসক মারা গেছে, আমরা রেহাই পেয়েছি। একটা বিতর্কিত, সমালোচিত রাজনীতি করা লোক এরশাদ। দেশ জাতি রক্ষা পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দলেরও অবসান ঘটতে পারে। যে দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব, সে দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গত কয়েক বছরে এরশাদ তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। এছাড়া রাজনীতিতেও নানা কারণে সমঝোতা হতে পারে। আওয়ামী লীগের মনে হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে এরশাদ তাদের ভালো মিত্র হবেন। তার ভাষায়, আগামীতে এরশাদের জাতীয় পার্টির টিকে থাকার সবটুকু নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের কৃপার ওপর।

জাতীয় পার্টি থেকে আলাদা হয়ে দুই দশক আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জাতীয় পার্টি-জেপি। এ দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম এক সময় এরশাদের জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি ছিল এরশাদকে ঘিরেই, তার কারণেই দলটি এতদিন টিকে ছিল। এরশাদের জাতীয় পার্টির দুর্বলতা হলো- এটা অন্য দল নির্ভর দল। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো অন্য দলের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনুগ্রহেই সংসদে কিছু আসন পেয়েছে। এরশাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্তু দলের ব্যাপক জনমর্থন নেই। এরশাদবিহীন এ দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ডাকসুর সাবেক জিএস ও বাংলাদেশের জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, এরশাদহীন জাতীয় পার্টি টিকবে কিনা- সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। তিনি বলেন, এজন্য ওয়েট করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ধারা রয়েছে। সে ধারাগুলো নিয়ে কী করবে তারা- এখনও বলা যাচ্ছে না।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল চরম আকার ধারণ করতে পারে। দল ভেঙে যেতে পারে। আবার বিলুপ্তও হতে পারে। তবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এক থাকবে। বিভক্তি হওয়ার প্রশ্নই আসবে না। নেতারা ঐক্যবদ্ধ। আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে জাপা। তবে দলীয় নেতারকর্মীর দাবি এরশাদের অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দলে যারা বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তারা সুবিধা করতে পারবেন না। জিএম কাদের দলকে একতাবদ্ধ রাখবেন। দল ভাঙার কোন প্রশ্নই ওঠে না। জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান কে হবেন, জানতে চাইলে সম্প্রতি দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) তো জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে যদি একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আসে, তাহলে তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে, কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান।’

গত সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, চেয়ারম্যান প্রায় ৩২ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।

গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এফ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজকে এখানে এসেছে। স্যার (এরশাদ) দলকে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। স্যারের আদর্শ নিয়ে দল সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি ঠিক করে দিয়ে গেছেন কার নেতৃত্বে দল চলবে। তাই দল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। দলের মধ্যে কোন বিভাজন নেই। রওশন এরশাদের সহযোগিতায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে।’

এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টিকে কঠিন সময় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে রাজনৈতিক মহলে যে শঙ্কা, সেটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্যার দেশকে অনেক দিয়েছেন। তার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাবো। জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তবে কোন গ্রুপিং নেই। স্যার নিজেই ঠিক করেছেন সবকিছু। তাই আগামীতে কোন অপশক্তি এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘চেয়ারম্যানের পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়ে গেছেন। তার অবর্তমানে তার আদর্শকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। আর কোনো বাধা এলেও আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করবো।’ এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন, তার নেতৃত্বেই জাপা এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বলেন, তার দেখানো পথেই দল এগিয়ে যাবে। এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের একই সূত্রে গাঁথা।

২০১৬ সালের ১৪ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) সর্বশেষ কাউন্সিল। ওই সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। তখন মহাসচিব হয়েছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে ওই পদ থেকে সরিয়ে রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেন এরশাদ। এরপর দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বভার দেয়ার ক্ষেত্রে একাধিকবার সিদ্ধান্ত বদলের পর সর্বশেষ ৪ মে রাতে বারিধারায় নিজের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদ।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

এরশাদশূন্য জাপার ভবিষ্যৎ কী?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

এরশাদ শূন্য জাতীয় পার্টি ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, দলটির নেই কোন সাংগঠনিক কাঠামো। এতদিন এরশাদের নামে দলটি পরিচালিত হলেও তৃণমূল পর্যায় নেই কোন শক্তিশালী অবস্থান। গত সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে দলটির।

সাংগঠনিক কোন ভিত্তি না থাকার কারণে যে কেউ অর্থের বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে থাকে। এছাড়া বতর্মান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অভিযোগ রয়েছে। তাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত বিশিষ্টজনরা। তবে দলীয় নেতারকর্মীদের দাবি এরশাদের অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। এরশাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টিরও মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেল বলে মনে করছেন নব্বইয়ের দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকা সাংবাদিক সাংস্কৃতিক কর্মী কামাল লোহানী। তিনি বলেন, স্বৈরশাসক মারা গেছে, আমরা রেহাই পেয়েছি। একটা বিতর্কিত, সমালোচিত রাজনীতি করা লোক এরশাদ। দেশ জাতি রক্ষা পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দলেরও অবসান ঘটতে পারে। যে দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব, সে দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গত কয়েক বছরে এরশাদ তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। এছাড়া রাজনীতিতেও নানা কারণে সমঝোতা হতে পারে। আওয়ামী লীগের মনে হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে এরশাদ তাদের ভালো মিত্র হবেন। তার ভাষায়, আগামীতে এরশাদের জাতীয় পার্টির টিকে থাকার সবটুকু নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের কৃপার ওপর।

জাতীয় পার্টি থেকে আলাদা হয়ে দুই দশক আগে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জাতীয় পার্টি-জেপি। এ দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম এক সময় এরশাদের জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি ছিল এরশাদকে ঘিরেই, তার কারণেই দলটি এতদিন টিকে ছিল। এরশাদের জাতীয় পার্টির দুর্বলতা হলো- এটা অন্য দল নির্ভর দল। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো অন্য দলের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনুগ্রহেই সংসদে কিছু আসন পেয়েছে। এরশাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্তু দলের ব্যাপক জনমর্থন নেই। এরশাদবিহীন এ দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ডাকসুর সাবেক জিএস ও বাংলাদেশের জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, এরশাদহীন জাতীয় পার্টি টিকবে কিনা- সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। তিনি বলেন, এজন্য ওয়েট করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ধারা রয়েছে। সে ধারাগুলো নিয়ে কী করবে তারা- এখনও বলা যাচ্ছে না।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল চরম আকার ধারণ করতে পারে। দল ভেঙে যেতে পারে। আবার বিলুপ্তও হতে পারে। তবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এক থাকবে। বিভক্তি হওয়ার প্রশ্নই আসবে না। নেতারা ঐক্যবদ্ধ। আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে জাপা। তবে দলীয় নেতারকর্মীর দাবি এরশাদের অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দলে যারা বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তারা সুবিধা করতে পারবেন না। জিএম কাদের দলকে একতাবদ্ধ রাখবেন। দল ভাঙার কোন প্রশ্নই ওঠে না। জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান কে হবেন, জানতে চাইলে সম্প্রতি দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) তো জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে যদি একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আসে, তাহলে তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে, কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান।’

গত সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, চেয়ারম্যান প্রায় ৩২ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।

গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এফ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজকে এখানে এসেছে। স্যার (এরশাদ) দলকে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। স্যারের আদর্শ নিয়ে দল সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি ঠিক করে দিয়ে গেছেন কার নেতৃত্বে দল চলবে। তাই দল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। দলের মধ্যে কোন বিভাজন নেই। রওশন এরশাদের সহযোগিতায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে।’

এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টিকে কঠিন সময় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে রাজনৈতিক মহলে যে শঙ্কা, সেটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্যার দেশকে অনেক দিয়েছেন। তার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাবো। জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তবে কোন গ্রুপিং নেই। স্যার নিজেই ঠিক করেছেন সবকিছু। তাই আগামীতে কোন অপশক্তি এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘চেয়ারম্যানের পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়ে গেছেন। তার অবর্তমানে তার আদর্শকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। আর কোনো বাধা এলেও আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করবো।’ এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন, তার নেতৃত্বেই জাপা এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বলেন, তার দেখানো পথেই দল এগিয়ে যাবে। এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের একই সূত্রে গাঁথা।

২০১৬ সালের ১৪ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) সর্বশেষ কাউন্সিল। ওই সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। তখন মহাসচিব হয়েছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে ওই পদ থেকে সরিয়ে রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেন এরশাদ। এরপর দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বভার দেয়ার ক্ষেত্রে একাধিকবার সিদ্ধান্ত বদলের পর সর্বশেষ ৪ মে রাতে বারিধারায় নিজের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদ।