বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে দালালদের ধরতে সহায়তা চাওয়া হয়

ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের ধরার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহযোগিতা চেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। আর ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিসিদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের ৩০ শতাংশ স্বাধীন করা হবে। পাশাপাশি আদালতের আইন কর্মকর্তাদের (পিপি ও জিপি) বেতনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে গতকাল নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনের কার্য অধিবেশক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম কার্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

ডিসিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর কার্য অধিবেশন

এখন যে প্রসিকিউশনস সার্ভিস রয়েছে সেখান থেকে ৩০ শতাংশ ইনডিপেনডেন্ট (স্বাধীন) করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আদালতের আইন কর্মকর্তাদের (পিপি ও জিপি) বেতনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করছি। এই প্রস্তাব আমি অলরেডি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এসবই ডিসিদের জানানো হয়েছে।’

হাইকোর্টের সঙ্গে ডিসিদের যোগাযোগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হবে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টে যে সব মামলা মোকাদ্দমা চলমান আছে, সেগুলোতে ডিসিদের সঙ্গে একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ আছে, সেটা আলোচনায় বেরিয়ে এসেছে। এই কমিউনিকেশন গ্যাপ দূরীকরণে যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে, আমি সেগুলো ডিসিদের বলেছি। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হাইকোর্টে যেসব মামলা হয়, সেসব মামলা সর্ম্পকে যেন ডিসিরা ত্বড়িত জানতে পারেন। আমি এখন বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলব। পাঁচ থেকে সাতজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে দেবো। তারা হাইকোর্টের মামলাগুলো সর্ম্পকে ৬৪ জেলার প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। এতে কমিউনিকেশন বাড়বে এবং মামলা ত্বড়িত নিষ্পত্তি হওয়ার একটি ব্যবস্থা হবে।’

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিদের বৈঠকের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমার জানার কথা না। আমার মনে হয় ডিসিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রথম আলোচনা। প্রধান বিচারপতি সে ধরনের দিক নির্দেশনা দেবেন। এটাই হবে ভবিষ্যতে আলাপ আলোচনার একটি প্রেক্ষিত।’

জেলা প্রশাসকদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি এই ক্ষমতা দেয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। আইন সংশোধন করতে হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেখা হবে প্রয়োজন কি-না।’

ডিসিরা প্রতি বছর সম্মেলনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার চান, বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এটা জেনেও তারা কেন চান- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিসিরা প্রত্যেকবারই জানতে চান, এটা কেন হচ্ছে না। তাই তারা বিষয়টি উত্থাপন করেন। আমরাও বলি এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেক সময় দেখা যায়, গতবার যিনি ডিসি ছিলেন, এবার তিনি নেই। হয়তো এ কারণে তাদের কাছে এ প্রশ্ন উঠে। প্রশ্ন উঠলে আমাদের প্রত্যেকবারই এই জবাব দিতে কোন আপত্তি নেই।’

কুমিল্লার আদালতে এক আসামির ছুরিকাঘাতে আরেক আসামির মৃত্যুর বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এক আসামি আরেক আসামির মামাতো-ফুফাতো ভাই। যে হত্যা মামলায় তারা আসামি, সেটা নিয়ে একজন আরেকজনকে বলেছিল তোমাদের কারণে আমি এই মামলায় জড়িয়েছি। এ ঘটনার পর সারাদেশে আদালতের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

সম্মেলনের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো গতকাল বিকেলে ডিসিরা সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

দালালদের ধরতে সহযোগিতা চাওয়া

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোন নির্দেশনা দিইনি। সাহায্য চেয়েছি। তারা যেন দালালদের ধরেন। দালালরা গরিব মানুষদের লুটেপুটে দেড় লাখ থেকে সাত লাখ টাকা নেয়। এভাবে টাকা দেয়ায় প্রবাসী কর্মীরা টাকা ওঠাতে অবৈধভাবে বিদেশে থেকে যান। এটা দেশের জন্যও খারাপ। তাই গরিব মানুষরা যেন নিরাপদে বিদেশে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

বিদেশগামীদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার কাজে সরকার হাত দিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা বন্ধের ওপরে গুরুত্বারোপ করে বলেন, যারা এভাবে অবৈধভাবে নিয়ে যাবে তাদের ধরতে পারলে ছাড়া হবে না।

ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এবার চার লাখ টন (বোরো) ধান কিনব। অথচ গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে।’

এজন্য তিনি ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহে ডিসিদের কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের এ কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আমাদের লোকরা যাতে আরও বেশি অ্যাকটিভ হয়, ডিসি সাহেবরা যাতে নির্বাহী অফিসারদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারেন, সে জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’

প্রত্যেক জেলায় নিরাপদ খাদ্যের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য তাদের আরও কঠোর হওয়ার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি।’

এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা হচ্ছে। এজন্য আগামীকে কোন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আছে কিনা- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোন সংকট নেই। আমাদের খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। খাদ্যগুদামে শুধু খাদ্যই নয়, ত্রাণও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। যেকোন অবস্থা মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’

প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ হচ্ছে

ডিসিদের সঙ্গে কার্য অধিবেশন শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করার কাজ চলছে। বজ্রপাতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কয়েকটি কোম্পানির সাথে আলোচনাও করেছি। ওয়ার্কশপও আরম্ভ করেছি।’

শিশুশ্রম নিরসনে ডিসিদের সহযোগিতা চান শ্রম প্রতিমন্ত্রী

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সহযোগিতা চান।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডিসিদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের ৪র্থ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। এসডিজিকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে সবধরনের শিশুশ্রম মুক্ত দেশ গড়তে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার ৩৮টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক এবং চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে শিশুশ্রমমুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও ডিসি সম্মেলনের বিভিন্ন কার্য অধিবেশনে গতকাল পানি সম্পদ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য ও শিল্প এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

ডিসিদের সঙ্গে মন্ত্রীদের মতবিনিময়

বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে দালালদের ধরতে সহায়তা চাওয়া হয়

ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের ধরার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহযোগিতা চেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। আর ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিসিদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের ৩০ শতাংশ স্বাধীন করা হবে। পাশাপাশি আদালতের আইন কর্মকর্তাদের (পিপি ও জিপি) বেতনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে গতকাল নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনের কার্য অধিবেশক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম কার্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

ডিসিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর কার্য অধিবেশন

এখন যে প্রসিকিউশনস সার্ভিস রয়েছে সেখান থেকে ৩০ শতাংশ ইনডিপেনডেন্ট (স্বাধীন) করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আদালতের আইন কর্মকর্তাদের (পিপি ও জিপি) বেতনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করছি। এই প্রস্তাব আমি অলরেডি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এসবই ডিসিদের জানানো হয়েছে।’

হাইকোর্টের সঙ্গে ডিসিদের যোগাযোগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হবে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টে যে সব মামলা মোকাদ্দমা চলমান আছে, সেগুলোতে ডিসিদের সঙ্গে একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ আছে, সেটা আলোচনায় বেরিয়ে এসেছে। এই কমিউনিকেশন গ্যাপ দূরীকরণে যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে, আমি সেগুলো ডিসিদের বলেছি। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হাইকোর্টে যেসব মামলা হয়, সেসব মামলা সর্ম্পকে যেন ডিসিরা ত্বড়িত জানতে পারেন। আমি এখন বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলব। পাঁচ থেকে সাতজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে দেবো। তারা হাইকোর্টের মামলাগুলো সর্ম্পকে ৬৪ জেলার প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। এতে কমিউনিকেশন বাড়বে এবং মামলা ত্বড়িত নিষ্পত্তি হওয়ার একটি ব্যবস্থা হবে।’

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিদের বৈঠকের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমার জানার কথা না। আমার মনে হয় ডিসিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রথম আলোচনা। প্রধান বিচারপতি সে ধরনের দিক নির্দেশনা দেবেন। এটাই হবে ভবিষ্যতে আলাপ আলোচনার একটি প্রেক্ষিত।’

জেলা প্রশাসকদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি এই ক্ষমতা দেয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। আইন সংশোধন করতে হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেখা হবে প্রয়োজন কি-না।’

ডিসিরা প্রতি বছর সম্মেলনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার চান, বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এটা জেনেও তারা কেন চান- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিসিরা প্রত্যেকবারই জানতে চান, এটা কেন হচ্ছে না। তাই তারা বিষয়টি উত্থাপন করেন। আমরাও বলি এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেক সময় দেখা যায়, গতবার যিনি ডিসি ছিলেন, এবার তিনি নেই। হয়তো এ কারণে তাদের কাছে এ প্রশ্ন উঠে। প্রশ্ন উঠলে আমাদের প্রত্যেকবারই এই জবাব দিতে কোন আপত্তি নেই।’

কুমিল্লার আদালতে এক আসামির ছুরিকাঘাতে আরেক আসামির মৃত্যুর বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এক আসামি আরেক আসামির মামাতো-ফুফাতো ভাই। যে হত্যা মামলায় তারা আসামি, সেটা নিয়ে একজন আরেকজনকে বলেছিল তোমাদের কারণে আমি এই মামলায় জড়িয়েছি। এ ঘটনার পর সারাদেশে আদালতের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

সম্মেলনের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো গতকাল বিকেলে ডিসিরা সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

দালালদের ধরতে সহযোগিতা চাওয়া

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোন নির্দেশনা দিইনি। সাহায্য চেয়েছি। তারা যেন দালালদের ধরেন। দালালরা গরিব মানুষদের লুটেপুটে দেড় লাখ থেকে সাত লাখ টাকা নেয়। এভাবে টাকা দেয়ায় প্রবাসী কর্মীরা টাকা ওঠাতে অবৈধভাবে বিদেশে থেকে যান। এটা দেশের জন্যও খারাপ। তাই গরিব মানুষরা যেন নিরাপদে বিদেশে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

বিদেশগামীদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার কাজে সরকার হাত দিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা বন্ধের ওপরে গুরুত্বারোপ করে বলেন, যারা এভাবে অবৈধভাবে নিয়ে যাবে তাদের ধরতে পারলে ছাড়া হবে না।

ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এবার চার লাখ টন (বোরো) ধান কিনব। অথচ গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে।’

এজন্য তিনি ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহে ডিসিদের কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের এ কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আমাদের লোকরা যাতে আরও বেশি অ্যাকটিভ হয়, ডিসি সাহেবরা যাতে নির্বাহী অফিসারদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারেন, সে জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’

প্রত্যেক জেলায় নিরাপদ খাদ্যের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য তাদের আরও কঠোর হওয়ার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি।’

এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা হচ্ছে। এজন্য আগামীকে কোন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আছে কিনা- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোন সংকট নেই। আমাদের খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। খাদ্যগুদামে শুধু খাদ্যই নয়, ত্রাণও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। যেকোন অবস্থা মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’

প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ হচ্ছে

ডিসিদের সঙ্গে কার্য অধিবেশন শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করার কাজ চলছে। বজ্রপাতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার নির্মাণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কয়েকটি কোম্পানির সাথে আলোচনাও করেছি। ওয়ার্কশপও আরম্ভ করেছি।’

শিশুশ্রম নিরসনে ডিসিদের সহযোগিতা চান শ্রম প্রতিমন্ত্রী

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সহযোগিতা চান।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডিসিদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের ৪র্থ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। এসডিজিকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে সবধরনের শিশুশ্রম মুক্ত দেশ গড়তে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার ৩৮টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক এবং চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে শিশুশ্রমমুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও ডিসি সম্মেলনের বিভিন্ন কার্য অধিবেশনে গতকাল পানি সম্পদ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য ও শিল্প এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।