মামলা ডিবিতে স্থানান্তর

এ ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কুমিল্লার আদালত কক্ষে খুনের ঘটনায় সোমবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে আসামি হাসান হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক প্রদীপ মন্ডল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছিল। এ সময় জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার আসামি হাসান ফারুক নামে অপর এক আসামিকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার সময় ওই আদালতে একটি মাদক মামলার সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ ঘাতককে রক্তমাখা ছুরিসহ ঝাপটে ধরেছিলেন। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বাদী হয়ে সোমবার রাতে ঘাতক হাসানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক প্রদীপ মন্ডল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হাসান ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। বিকেলে তাকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য নেয়া হয়। সেখানেও সে ফারুক হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘাতক হাসানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট তার নানা আবদুল করিমকে তার ছেলে-সন্তান ও নাতি ফারুকসহ অন্যরা মিলে হত্যা করে। ওই ঘটনায় হাসান জড়িত না থাকলেও তাকে আসামি করা হয়। ওই মামলাটি আপসের জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করা হলেও ফারুক ও তার বাবার কারণে তা হয়নি। এতে তার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে সে আদালতে হাজিরা দিতে আসার সময় ধারালো ছুরি সঙ্গে নিয়ে আসে এবং ফারুককে আদালতের ভেতরে ছুরিকাঘাত করে।

এদিকে এ ঘটনার পর আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার আদালত অঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রধান ফটকসহ প্রতিটি ফটকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান নিয়ে দেহ তল্লাশি করে লোকজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। গতকাল দিনভর এ আদালত এলাকায় আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, এটা খুবই নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা। এজলাসে ছোড়া নিয়ে আসামি ঢুকবে, মানুষ খুন করবে তা মেনে নেয়া যায় না। আদালতের মতো একটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটবে তা কোনভাবেই আশা করা যায় না। আদালত মানুষের বিচার পাওয়ার একমাত্র ঠিকানা, আর সেখানেই মানুষ নিরাপত্তাহীন। এটা কি ভাবা যায়? যদিও ঘটনাটি দুর্ভাগ্যবশত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

আদালত কক্ষে খুন

মামলা ডিবিতে স্থানান্তর

এ ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লার আদালত কক্ষে খুনের ঘটনায় সোমবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে আসামি হাসান হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক প্রদীপ মন্ডল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছিল। এ সময় জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার আসামি হাসান ফারুক নামে অপর এক আসামিকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার সময় ওই আদালতে একটি মাদক মামলার সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ ঘাতককে রক্তমাখা ছুরিসহ ঝাপটে ধরেছিলেন। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বাদী হয়ে সোমবার রাতে ঘাতক হাসানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক প্রদীপ মন্ডল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হাসান ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। বিকেলে তাকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য নেয়া হয়। সেখানেও সে ফারুক হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘাতক হাসানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট তার নানা আবদুল করিমকে তার ছেলে-সন্তান ও নাতি ফারুকসহ অন্যরা মিলে হত্যা করে। ওই ঘটনায় হাসান জড়িত না থাকলেও তাকে আসামি করা হয়। ওই মামলাটি আপসের জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করা হলেও ফারুক ও তার বাবার কারণে তা হয়নি। এতে তার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে সে আদালতে হাজিরা দিতে আসার সময় ধারালো ছুরি সঙ্গে নিয়ে আসে এবং ফারুককে আদালতের ভেতরে ছুরিকাঘাত করে।

এদিকে এ ঘটনার পর আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার আদালত অঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রধান ফটকসহ প্রতিটি ফটকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান নিয়ে দেহ তল্লাশি করে লোকজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। গতকাল দিনভর এ আদালত এলাকায় আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, এটা খুবই নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা। এজলাসে ছোড়া নিয়ে আসামি ঢুকবে, মানুষ খুন করবে তা মেনে নেয়া যায় না। আদালতের মতো একটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটবে তা কোনভাবেই আশা করা যায় না। আদালত মানুষের বিচার পাওয়ার একমাত্র ঠিকানা, আর সেখানেই মানুষ নিরাপত্তাহীন। এটা কি ভাবা যায়? যদিও ঘটনাটি দুর্ভাগ্যবশত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে।