জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটমুক্ত চায় ডিসিসিআই

উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ওপর অগ্রীম কর অব্যাহতি এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর। গতকাল শনিবার ঢাকা সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের সদস্য শাহনাজ পারভীন। ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন খান। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের আয়কর উপদেষ্টা স্নেহাশিষ বড়ুয়া প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগের কথা প্রায়ই শোনা যায় এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। হয়রানির কথাটা অনেকের মুখে আসবে। হয়রানির বিষয়টা ওদের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে, আমাদের বলেন। তখন তাকে আমরা শক্ত হাতে ধরবো। আমি অফিসারদের বলি আপনি ব্যবসায়ীদের বাধ্য করে যেটা নেন, সেটা চুরি, সেটা ময়লা খাবার। তিনি আরও বলেন, এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবেই। যারা মেশিন নষ্ট করবে তাদের দায়ী করা হবে। ব্যবসায়ী এবং আমাদের কর্মচারীদেরও এর জন্য কঠিনভাবে ধরা হবে। মেশিন নষ্ট করা যাবে না, নষ্ট করলে আপনার নিজের পয়সায় আবার সেটা লাগিয়ে দিতে হবে। আর একটা মেশিন কিনে দিতে হবে। অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে একটু সময় লাগবে। আমরা মেশিন ক্রয় করছি। ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে, আবার ব্যবসায়ীর সংখ্যাও একটু বেশি। সবাইকে ইএফডি ডিভাইস দিতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু তাই বলে ভ্যাট আদায় বন্ধ থাকবে না। ভ্যাট আদায় করতেই হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এবার রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায়ের পরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকবে। ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছিল আমাদের লক্ষ্যমাত্রা। এটার জন্য খুব সমালোচনা হচ্ছে। মিডিয়ার লোকজন এবং অনেক থিংক ট্যাংক বলছে রেভিনিউ কেন আদায় হয় না। রেভিনিউ তো আসলে গলায় পাড়া দিয়ে আদায় করা যায় না। রেভিনিউ আদায়ে সবার সহযোগিতা দরকার। কিছু সংশোধনী এনে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রচলিত ভ্যাট আইনে পৃথিবীর সব দেশে একটা রেটই থাকে। আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রেট করেছি। ভ্যাট কাঠামো নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। উন্নত দেশে এর চেয়ে অনেক বেশি ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হয়। ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই সেখানে।

তিনি আরও বলেন, বড় বাজেটের জন্য বড় রাজস্ব দরকার। তাই যাদের জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য তাদের সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনা উচিত। দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অবকাঠামোখাতে উন্নয়ন হচ্ছে। এসব ব্যয় মেটাতে কর অপরিহার্য। দেশে এখন বিদেশি সহায়তার নির্ভরতা অনেক কম।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট ফ্রি লিমিট ৫০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ, ভ্যাট রিফান্ড সিস্টেম এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি ইত্যাদি পদক্ষেপ বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। নতুন আইনের সুফল বাস্তবায়নে অংশীজন, বেসরকারি খাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাঝে অংশগ্রহণমূলক সংলাপের মাধ্যমে রাজস্ব কর্মকর্তার জুডিশিয়াল ক্ষমতা, বিরোধ নিষ্পত্তি আপিলের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান ও ভ্যাট রিটার্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইন করা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য প্রতিবন্ধকতাসহ সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।

রবিবার, ২৮ জুলাই ২০১৯ , ১৩ শ্রাবন ১৪২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪০

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটমুক্ত চায় ডিসিসিআই

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ওপর অগ্রীম কর অব্যাহতি এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর। গতকাল শনিবার ঢাকা সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের সদস্য শাহনাজ পারভীন। ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন খান। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের আয়কর উপদেষ্টা স্নেহাশিষ বড়ুয়া প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগের কথা প্রায়ই শোনা যায় এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। হয়রানির কথাটা অনেকের মুখে আসবে। হয়রানির বিষয়টা ওদের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে, আমাদের বলেন। তখন তাকে আমরা শক্ত হাতে ধরবো। আমি অফিসারদের বলি আপনি ব্যবসায়ীদের বাধ্য করে যেটা নেন, সেটা চুরি, সেটা ময়লা খাবার। তিনি আরও বলেন, এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবেই। যারা মেশিন নষ্ট করবে তাদের দায়ী করা হবে। ব্যবসায়ী এবং আমাদের কর্মচারীদেরও এর জন্য কঠিনভাবে ধরা হবে। মেশিন নষ্ট করা যাবে না, নষ্ট করলে আপনার নিজের পয়সায় আবার সেটা লাগিয়ে দিতে হবে। আর একটা মেশিন কিনে দিতে হবে। অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে একটু সময় লাগবে। আমরা মেশিন ক্রয় করছি। ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে, আবার ব্যবসায়ীর সংখ্যাও একটু বেশি। সবাইকে ইএফডি ডিভাইস দিতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু তাই বলে ভ্যাট আদায় বন্ধ থাকবে না। ভ্যাট আদায় করতেই হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এবার রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায়ের পরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকবে। ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছিল আমাদের লক্ষ্যমাত্রা। এটার জন্য খুব সমালোচনা হচ্ছে। মিডিয়ার লোকজন এবং অনেক থিংক ট্যাংক বলছে রেভিনিউ কেন আদায় হয় না। রেভিনিউ তো আসলে গলায় পাড়া দিয়ে আদায় করা যায় না। রেভিনিউ আদায়ে সবার সহযোগিতা দরকার। কিছু সংশোধনী এনে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রচলিত ভ্যাট আইনে পৃথিবীর সব দেশে একটা রেটই থাকে। আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রেট করেছি। ভ্যাট কাঠামো নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। উন্নত দেশে এর চেয়ে অনেক বেশি ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হয়। ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই সেখানে।

তিনি আরও বলেন, বড় বাজেটের জন্য বড় রাজস্ব দরকার। তাই যাদের জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য তাদের সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনা উচিত। দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অবকাঠামোখাতে উন্নয়ন হচ্ছে। এসব ব্যয় মেটাতে কর অপরিহার্য। দেশে এখন বিদেশি সহায়তার নির্ভরতা অনেক কম।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট ফ্রি লিমিট ৫০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ, ভ্যাট রিফান্ড সিস্টেম এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি ইত্যাদি পদক্ষেপ বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। নতুন আইনের সুফল বাস্তবায়নে অংশীজন, বেসরকারি খাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাঝে অংশগ্রহণমূলক সংলাপের মাধ্যমে রাজস্ব কর্মকর্তার জুডিশিয়াল ক্ষমতা, বিরোধ নিষ্পত্তি আপিলের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান ও ভ্যাট রিটার্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইন করা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য প্রতিবন্ধকতাসহ সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।