আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে চীনে

মৃতের সংখ্যা ১৭০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তিব্বতসহ চীনের সব অঞ্চলেই। দেশটিতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও লাফিয়ে বাড়ছে। বুধবার ১৩২ জনের মৃত্যুর খবরের পর এক দিনের ব্যবধানে গতকাল তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে এবং বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৯০০ তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পুরো বিশ্বকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিবিসি, আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইল। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (ন্যাশনাল হেলথ কমিশন) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনেই ১৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭০। দেশটিতে নতুন করে দুই হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, কেবল চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জনে। যার মধ্যে হুবেই প্রদেশেই ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী তিব্বতেও শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে চীনের প্রতিটি অঞ্চলেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে নিজ দেশের জনসাধারণকে বাঁচাতে রাশিয়া গতকাল চীনের সঙ্গে তার পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে গতকাল। এদিকে বুধবার চীন থেকে টোকিওতে ফেরা ২৬০ জাপানির মধ্যে তিনজনের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বেইজিংয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাতে সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ রাখার কথাও ভাবতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থা ইতোমধ্যেই চীনের পথে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোও তাদের কর্মীদের চীনে যাতায়াতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশটির প্রায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল। ইতোমধ্যেই কমপক্ষে ২১টি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায়-৮ জন, কম্বোডিয়ায়-১ জন, কানাডায়-৩ জন, ফ্রান্সে- ৫ জন, জার্মানিতে- ৪ জন, জাপানে-১১ জন, মালয়েশিয়ায়-৭, নেপালে-১ জন, সিঙ্গাপুরে-১০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায়- ৪ জন, শ্রীলঙ্কায়-১, থাইল্যান্ডে-১৪ জন, তাইওয়ানে-৮ জন, যুক্তরাষ্ট্রে- ৫ জন, ফ্রান্সে- ৫ জন, ম্যাকাও’এ- ৭ জন, হংকংয়ে-১০ জন, ভিয়েতনামে- ২ জন , সংযুক্ত আরব আমিরাতে -৪ জন, ফিনল্যান্ডে-১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আজ এ রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক বিদেশি নারীর মৃত্যুও হয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কোন রোগী এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে বিদেশফেরত এক যাত্রীকে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভারতে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত

ভারতে প্রথমবারের মতো একজনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা বলেন, ‘কেরালায় উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, হাসপাতালে আক্রান্ত ওই রোগীকে অন্য রোগীদের থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ এদিকে, আক্রান্ত ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছিল বলে ধারণা করা ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে কেরালায় তাদের বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

বিশ্বকে সতর্ক থাকতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বান : এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলায় বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক এ স্বাস্থ্য সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. মাইক রায়ান। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বৈঠকে ভাইরাস মোকাবিলায় চীন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে ডা. মাইক রায়ান জানান, এ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় এবং এর প্রতিষেধক কী হবে তা নির্ণয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা চীনে গিয়ে চীনা বিষেশজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। মাইক রায়ান আরও বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জটি প্রকট, তবে এর প্রতিক্রিয়া বিশাল। এই ঘটনায় আমরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছি। তবে আমরা বিশ্বাস করি এই মহামারী দমন করা সম্ভব।’

চলতি সপ্তাহে চীন সফর শেষে ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেয়িসাস জানান, ভাইরাস আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হালকা কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। তবে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নিউমোনিয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘চীনের এখন সমগ্র বিশ্বের সংহতি ও সমর্থন প্রয়োজন। এই মহামারী থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি এর প্রাদুর্ভাবের অবসান ঘটাতে পুরো বিশ্ব একত্রিত হচ্ছে।’

চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করছে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স

এদিকে করোনা আতঙ্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সগুলো চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করা এবং কমিয়ে আনাসহ সব ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধও করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চীন থেকে আসা-যাওয়ার সরাসরি সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে। তবে এয়ারলাইন্সটি এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। এ সময় তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখবে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের আগে চীনের সঙ্গে বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে আমেরিকান ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। এরপরই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চীনে তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে।

একই পদক্ষেপ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এয়ার সিউল এয়ারলাইন্সও, তাইওয়ানের চীনা এয়ারলাইন্স এবং তাইওয়ানের ইভা এয়ারওয়েজও চীনে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং কিছু ফ্লাইটের সময়সূচিও পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার আগামী শনিবার থেকে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। হংকংয়ের ক্যাথাই প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সও চীনের মূল ভূখ-ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়াও এয়ার কানাডা বলেছে, তারা চীনের সঙ্গে তাদের সাপ্তাহিক ৩৩টি ফ্লাইট বাতিল করছে এবং জার্মানির লুফথানসাও ফ্লাইট বাতিল করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা ফিন এয়ার চীনের সঙ্গে বেশকিছু ফ্লাইট ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এয়ার ফ্রান্স উহানের সঙ্গে তিনটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে। এছাড়াও রাশিয়ার উরালস এয়ারলাইন্সও এরই মধ্যে চীনের বেশ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। চীনাদের কাছে জনপ্রিয় কয়েকটি গন্তব্যেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় বিমান চলাচল সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে চীনে

মৃতের সংখ্যা ১৭০

সংবাদ ডেস্ক |

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তিব্বতসহ চীনের সব অঞ্চলেই। দেশটিতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও লাফিয়ে বাড়ছে। বুধবার ১৩২ জনের মৃত্যুর খবরের পর এক দিনের ব্যবধানে গতকাল তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে এবং বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৯০০ তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পুরো বিশ্বকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিবিসি, আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইল। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (ন্যাশনাল হেলথ কমিশন) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনেই ১৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭০। দেশটিতে নতুন করে দুই হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, কেবল চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জনে। যার মধ্যে হুবেই প্রদেশেই ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী তিব্বতেও শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে চীনের প্রতিটি অঞ্চলেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে নিজ দেশের জনসাধারণকে বাঁচাতে রাশিয়া গতকাল চীনের সঙ্গে তার পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে গতকাল। এদিকে বুধবার চীন থেকে টোকিওতে ফেরা ২৬০ জাপানির মধ্যে তিনজনের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বেইজিংয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাতে সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ রাখার কথাও ভাবতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থা ইতোমধ্যেই চীনের পথে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোও তাদের কর্মীদের চীনে যাতায়াতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশটির প্রায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল। ইতোমধ্যেই কমপক্ষে ২১টি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায়-৮ জন, কম্বোডিয়ায়-১ জন, কানাডায়-৩ জন, ফ্রান্সে- ৫ জন, জার্মানিতে- ৪ জন, জাপানে-১১ জন, মালয়েশিয়ায়-৭, নেপালে-১ জন, সিঙ্গাপুরে-১০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায়- ৪ জন, শ্রীলঙ্কায়-১, থাইল্যান্ডে-১৪ জন, তাইওয়ানে-৮ জন, যুক্তরাষ্ট্রে- ৫ জন, ফ্রান্সে- ৫ জন, ম্যাকাও’এ- ৭ জন, হংকংয়ে-১০ জন, ভিয়েতনামে- ২ জন , সংযুক্ত আরব আমিরাতে -৪ জন, ফিনল্যান্ডে-১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আজ এ রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক বিদেশি নারীর মৃত্যুও হয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কোন রোগী এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে বিদেশফেরত এক যাত্রীকে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভারতে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত

ভারতে প্রথমবারের মতো একজনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা বলেন, ‘কেরালায় উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, হাসপাতালে আক্রান্ত ওই রোগীকে অন্য রোগীদের থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ এদিকে, আক্রান্ত ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছিল বলে ধারণা করা ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে কেরালায় তাদের বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

বিশ্বকে সতর্ক থাকতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বান : এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলায় বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক এ স্বাস্থ্য সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. মাইক রায়ান। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বৈঠকে ভাইরাস মোকাবিলায় চীন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে ডা. মাইক রায়ান জানান, এ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় এবং এর প্রতিষেধক কী হবে তা নির্ণয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা চীনে গিয়ে চীনা বিষেশজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। মাইক রায়ান আরও বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জটি প্রকট, তবে এর প্রতিক্রিয়া বিশাল। এই ঘটনায় আমরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছি। তবে আমরা বিশ্বাস করি এই মহামারী দমন করা সম্ভব।’

চলতি সপ্তাহে চীন সফর শেষে ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেয়িসাস জানান, ভাইরাস আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হালকা কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। তবে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নিউমোনিয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘চীনের এখন সমগ্র বিশ্বের সংহতি ও সমর্থন প্রয়োজন। এই মহামারী থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি এর প্রাদুর্ভাবের অবসান ঘটাতে পুরো বিশ্ব একত্রিত হচ্ছে।’

চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করছে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স

এদিকে করোনা আতঙ্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সগুলো চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করা এবং কমিয়ে আনাসহ সব ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধও করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চীন থেকে আসা-যাওয়ার সরাসরি সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে। তবে এয়ারলাইন্সটি এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। এ সময় তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখবে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের আগে চীনের সঙ্গে বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে আমেরিকান ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। এরপরই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চীনে তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে।

একই পদক্ষেপ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এয়ার সিউল এয়ারলাইন্সও, তাইওয়ানের চীনা এয়ারলাইন্স এবং তাইওয়ানের ইভা এয়ারওয়েজও চীনে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং কিছু ফ্লাইটের সময়সূচিও পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার আগামী শনিবার থেকে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। হংকংয়ের ক্যাথাই প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সও চীনের মূল ভূখ-ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়াও এয়ার কানাডা বলেছে, তারা চীনের সঙ্গে তাদের সাপ্তাহিক ৩৩টি ফ্লাইট বাতিল করছে এবং জার্মানির লুফথানসাও ফ্লাইট বাতিল করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা ফিন এয়ার চীনের সঙ্গে বেশকিছু ফ্লাইট ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এয়ার ফ্রান্স উহানের সঙ্গে তিনটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে। এছাড়াও রাশিয়ার উরালস এয়ারলাইন্সও এরই মধ্যে চীনের বেশ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। চীনাদের কাছে জনপ্রিয় কয়েকটি গন্তব্যেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় বিমান চলাচল সীমিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।