আল্লাহর দলের ৯ সদস্য গ্রেফতার

সিলেটের শাহপরান এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক আমীরসহ ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট। গত বুধবার রাত ১০টায় শাহপরান থানার আরামবাগ এলাকার ১ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর আলেয়া নীড় বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসান (৩২), মো. জহির উদ্দিন বাবর (২০), মো. রাশেল আহমেদ (২৪), মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম (২০), মো. কামাল আহমেদ (২৫), তমি উদ্দিন সুমন (৩০), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), মো. জুয়েল আহমেদ (২৪), মো. স্বপন আহমেদ (২৯)। গ্রেফতারকৃতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর সক্রিয় সদ্য বলে জানায়। আটককৃতদের কাছ থেকে মোবইল ফোন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও অন্য উগ্রপন্থি কাগজপত্র, বই উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সিলেটে সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিট সদর দফতরের পুলিশ সুপার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম) মো. মাহিদুজ্জামান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্ত্বিতে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ইউনিট সিলেটের শাহপরান থানার ওই বাড়িতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল্লাহার দলের কতিপয় সদস্যদের গোপন অবস্থানের কথা জানতে পারেন। ঢাকা থেকে একটি টিম সিলেটে গিয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। তাদের অবস্থান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে আরও তথ্য নেয়ার পর গোপন বৈঠকের খবর জেনে বুধবার রাতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ফ্লাটে একসঙ্গে ৯ জনকে পাওয়া যায়। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে সিলেটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী/২০১৩) এর ৬(২)/৮/৯(১)/১০/১১/১২ ধারায় শাহপরাণ থানার মামলা হয়েছে (নং-১৭, তারিখ : ৩০/০১/২০২০)। ওই মামলায় তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের সিলেট থেকে এন্টি টেরোরিজমের সদর দফতরে আনা হয়েছে। সদর দফতরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর তাদের সিলেটের আদালতে হাজির করা হবে। এদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলার আসামি আছে কিনা তাও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, বাংলাদেশের অখ-তা, সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য এবং জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ও নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক ও বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়ে গোপন মিটিং করছিল।

এসপি মাহিদুজ্জামান জানান, ওই গ্রুপটির দলনেতা মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসানের বাড়ি বগুড়া জেলায়। সে ৩ থেকে ৪ বছর আগে বগুড়া থেকে সিলেটে এসে অবস্থান নেয়। শাহপড়ান এলাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনৈক এক নারীর কাছ থেকে ওই বাড়ির একটি ফ্লাট ভাড়া নেয়। সে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও তার মূল কাজ ছিল আল্লাহর দলের জন্য সিলেট অঞ্চলের সদস্য সংগ্রহ করা। মানিক মাসিক বেতনভুক্ত হিসেবে আল্লাহার দলের সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিল। তার কাজ ছিল সিলেট অঞ্চলে আল্লাহার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। অভিযানের সময় ওই বাসায় একটি ম্যাপ পাওয়া যায় সেখানে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা তৈরি করা ছিল। ওই ম্যাপের আলোকে তাদের কার্যক্রম চলত।

সূত্র জানায়, আল্লাহার দল দেশের সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না। এ দলটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত দেশব্যাপী তাদের মতাদর্শ প্রচার করে আসছিল। এ দলের টার্গেট হলে নিম্মবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন পেশার লোক। এরা সারাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে বেশি টার্গেট করে। পাশাপাশি বেকার যুবকদের এরা মজুরিভিত্তিত্বে তাদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। কোরআন হাদিসের প্রচারক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও তারা রাষ্ট্রীয় ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কৌশলে প্রচার প্রচারণা করে।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সিলেটে

আল্লাহর দলের ৯ সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট

সিলেটের শাহপরান এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক আমীরসহ ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট। গত বুধবার রাত ১০টায় শাহপরান থানার আরামবাগ এলাকার ১ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর আলেয়া নীড় বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসান (৩২), মো. জহির উদ্দিন বাবর (২০), মো. রাশেল আহমেদ (২৪), মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম (২০), মো. কামাল আহমেদ (২৫), তমি উদ্দিন সুমন (৩০), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), মো. জুয়েল আহমেদ (২৪), মো. স্বপন আহমেদ (২৯)। গ্রেফতারকৃতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর সক্রিয় সদ্য বলে জানায়। আটককৃতদের কাছ থেকে মোবইল ফোন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও অন্য উগ্রপন্থি কাগজপত্র, বই উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সিলেটে সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিট সদর দফতরের পুলিশ সুপার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম) মো. মাহিদুজ্জামান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্ত্বিতে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ইউনিট সিলেটের শাহপরান থানার ওই বাড়িতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল্লাহার দলের কতিপয় সদস্যদের গোপন অবস্থানের কথা জানতে পারেন। ঢাকা থেকে একটি টিম সিলেটে গিয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। তাদের অবস্থান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে আরও তথ্য নেয়ার পর গোপন বৈঠকের খবর জেনে বুধবার রাতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ফ্লাটে একসঙ্গে ৯ জনকে পাওয়া যায়। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে সিলেটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী/২০১৩) এর ৬(২)/৮/৯(১)/১০/১১/১২ ধারায় শাহপরাণ থানার মামলা হয়েছে (নং-১৭, তারিখ : ৩০/০১/২০২০)। ওই মামলায় তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের সিলেট থেকে এন্টি টেরোরিজমের সদর দফতরে আনা হয়েছে। সদর দফতরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর তাদের সিলেটের আদালতে হাজির করা হবে। এদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলার আসামি আছে কিনা তাও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, বাংলাদেশের অখ-তা, সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য এবং জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ও নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক ও বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়ে গোপন মিটিং করছিল।

এসপি মাহিদুজ্জামান জানান, ওই গ্রুপটির দলনেতা মানিক আকন্দ ওরফে মেহেদী হাসানের বাড়ি বগুড়া জেলায়। সে ৩ থেকে ৪ বছর আগে বগুড়া থেকে সিলেটে এসে অবস্থান নেয়। শাহপড়ান এলাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনৈক এক নারীর কাছ থেকে ওই বাড়ির একটি ফ্লাট ভাড়া নেয়। সে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও তার মূল কাজ ছিল আল্লাহর দলের জন্য সিলেট অঞ্চলের সদস্য সংগ্রহ করা। মানিক মাসিক বেতনভুক্ত হিসেবে আল্লাহার দলের সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিল। তার কাজ ছিল সিলেট অঞ্চলে আল্লাহার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। অভিযানের সময় ওই বাসায় একটি ম্যাপ পাওয়া যায় সেখানে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা তৈরি করা ছিল। ওই ম্যাপের আলোকে তাদের কার্যক্রম চলত।

সূত্র জানায়, আল্লাহার দল দেশের সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না। এ দলটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত দেশব্যাপী তাদের মতাদর্শ প্রচার করে আসছিল। এ দলের টার্গেট হলে নিম্মবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন পেশার লোক। এরা সারাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে বেশি টার্গেট করে। পাশাপাশি বেকার যুবকদের এরা মজুরিভিত্তিত্বে তাদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। কোরআন হাদিসের প্রচারক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও তারা রাষ্ট্রীয় ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কৌশলে প্রচার প্রচারণা করে।