পাবনায় কৃষকরা মেতেছে পিয়াজ চাষে : অর্ধেকে নেমেছে দাম

গত দশ দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে এখন প্রচুর নতুন পিয়াজের আমদানি। গম ও ধানের পরিবর্তে পিয়াজ চাষ করেছে কৃষকেরা।

পাবনার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রচুর নতুন পিয়াজ উঠছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেখানে পিয়াজ ছিল সাত থেকে ছয় হাজার টাকা মণ। এখন তা কমে হয়েছে তিন হাজারেরও কম। মূলকাটা পিয়াজ বা মুড়িকাটা পিয়াজ সাধারণত বাজারে ওঠে নভেম্বর মাসে। এবার বৃষ্টিজনিত কারণে আবাদ বিলম্বিত হয়। ভারত পিয়াজ রফতানি বন্ধ করলে আমদানি করা হয় তুরস্ক, মিসর চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, চাটমোহর, ফরিদপুর, বেড়া, পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেল প্রচুর পিয়াজ বিকিকিনি থেকে। হাটে পিয়াজ বিক্রেতা কৃষকের মুখে হাসি লক্ষ্য করার মতো। কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, আতাইকুলা, পুষ্পপাড়া, চিনাখড়া দুলাই, সুজানগর, সাতবড়িয়া, করমজা চতুর হাট, ধুলাউড়ি, বোয়াইলমারি, জোরগাছা হাট এবং নাটোরের গুরুদাসপুর, বনপাড়া হাটসমূহ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল প্রচুর পরিমাণ পিয়াজ এবং পিয়াজ ফুল বিক্রি হচ্ছে। পিয়াজ ফুলের দাম মন প্রতি সত্তর থেকে আশি টাকা। অন্য বছর এই সময়ে পিয়াজ ফুল বিক্রি হয় সাধারণত দশ-পনেরো টাকা মণ দরে। এবার সে তুলনায় অনেক দাম।

সাঁথিয়া উপজেলার কালাইচাড়া গ্রামের মাঝারি কৃষক আবদুল খালেক জানালেন তাদের মাঠে এবার গমের আবাদ নেই বললেই চলে। গমের পরিবর্তে শুধু পিয়াজের আবাদ। ক্ষিদিরগ্রাম, মটকা, এলেঙ্গা, ধোপাদহ, গৌরীগ্রাম, চরপাড়া, ধুলাউড়ি, গোপালপুর, শালঘর, মাছগ্রাম, ক্ষেতুপাড়া, রাজাপুর, কলাগাছি, পাগলা, গোপিনাথপুর, সৈয়দপুর, হুইখালি, মানপুর, নওয়ানি; সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া, উলাট, মাণিকহাট, বিল গাজনার তীরবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে শুধুই পিয়াজ আর পিয়াজ। পাবনা থেকে বাসে ঢাকার পথে মহাসড়ক থেকে তাকালে ডানে বামে সব মাঠে শুধুই পিয়াজ আর পিয়াজ। অপরদিকে নাটোরের বনপাড়া থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত মহাসড়কের দু’দিকের মাঠে চলনবিলের আবাদি জমিতে চলছে পিয়াজ আর রসুন আবাদের কাজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা বহু আগেই অতিক্রম করেছে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে পিয়াজ আবাদ। হাটে হাটে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ চারা। অন্য বছর পিয়াজ চারার সংকট হলেও এবার লক্ষ্যণীয় বিষয় চারা সংকট হয়নি, বরং গত ক’দিনে চারার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বৃহত্তর পাবনা জেলা, রাজশাহী জেলা এবং চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলায় পিয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ছিল ৬২ হাজার হেক্টর। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৮৭ হাজার হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।

পিয়াজ চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি দ্রব্য দরকার, তা হলো ‘পিয়াজ টাঙ্গি’। লোহার তৈরি এটি নিড়ানি বা জমিতে লাইন করে পিয়াজ রোপন কাজে এটি ব্যবহার হয়। গত বছরে একটি ‘পিয়াজ টাঙ্গি’ বিক্রি হয় যেখানে দেড় থেকে দুশ’ টাকায়। এবার তা বিক্রি হয়েছে আড়াই থেকে তিনশ’ টাকায়। লৌহ কর্মকার রমেন চন্দ্র জানালেন তিনি এ পর্যন্ত চারশ’ টাঙ্গি বিক্রি করেছেন। বিপীন কর্মকার বললেন তিনি বিক্রি করেছেন সাড়ে তিনশ’। সাঁথিয়া বাজারের আরও কয়েকটি কর্মশালা ঘুরে দেখলাম কৃষক ‘পিয়াজ টাঙ্গি’ তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কামারশালাগুলোতে বেশ কর্মব্যস্ততা। তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পাঁচ সুত অথবা ছয় সুত লোহা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে টাঙ্গি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তা অতিক্রম করে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে পিয়াজ আবাদ হচ্ছে এবার এই অঞ্চলে। কৃষি মাঠকর্মী আবদুল আজিজ ও পলাশ চন্দ্র পাল জানালেন, ধানের পরিবর্তে বহু কৃষক পিয়াজ চাষ করেছেন এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। ধানের চেয়ে পিয়াজ আবাদ লাভজনক ভেবেই কৃষক এদিকে ঝুঁকেছে। তারা আরও বললেন যদি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হয় তা হলে গত বছরের চেয়ে এবার অত্রাঞ্চলে পিয়াজ উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পাবনায় কৃষকরা মেতেছে পিয়াজ চাষে : অর্ধেকে নেমেছে দাম

হাবিবুর রহমান স্বপন ও রতন দাস সাঁথিয়া (পাবনা) থেকে :

গত দশ দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে এখন প্রচুর নতুন পিয়াজের আমদানি। গম ও ধানের পরিবর্তে পিয়াজ চাষ করেছে কৃষকেরা।

পাবনার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রচুর নতুন পিয়াজ উঠছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেখানে পিয়াজ ছিল সাত থেকে ছয় হাজার টাকা মণ। এখন তা কমে হয়েছে তিন হাজারেরও কম। মূলকাটা পিয়াজ বা মুড়িকাটা পিয়াজ সাধারণত বাজারে ওঠে নভেম্বর মাসে। এবার বৃষ্টিজনিত কারণে আবাদ বিলম্বিত হয়। ভারত পিয়াজ রফতানি বন্ধ করলে আমদানি করা হয় তুরস্ক, মিসর চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, চাটমোহর, ফরিদপুর, বেড়া, পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেল প্রচুর পিয়াজ বিকিকিনি থেকে। হাটে পিয়াজ বিক্রেতা কৃষকের মুখে হাসি লক্ষ্য করার মতো। কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, আতাইকুলা, পুষ্পপাড়া, চিনাখড়া দুলাই, সুজানগর, সাতবড়িয়া, করমজা চতুর হাট, ধুলাউড়ি, বোয়াইলমারি, জোরগাছা হাট এবং নাটোরের গুরুদাসপুর, বনপাড়া হাটসমূহ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল প্রচুর পরিমাণ পিয়াজ এবং পিয়াজ ফুল বিক্রি হচ্ছে। পিয়াজ ফুলের দাম মন প্রতি সত্তর থেকে আশি টাকা। অন্য বছর এই সময়ে পিয়াজ ফুল বিক্রি হয় সাধারণত দশ-পনেরো টাকা মণ দরে। এবার সে তুলনায় অনেক দাম।

সাঁথিয়া উপজেলার কালাইচাড়া গ্রামের মাঝারি কৃষক আবদুল খালেক জানালেন তাদের মাঠে এবার গমের আবাদ নেই বললেই চলে। গমের পরিবর্তে শুধু পিয়াজের আবাদ। ক্ষিদিরগ্রাম, মটকা, এলেঙ্গা, ধোপাদহ, গৌরীগ্রাম, চরপাড়া, ধুলাউড়ি, গোপালপুর, শালঘর, মাছগ্রাম, ক্ষেতুপাড়া, রাজাপুর, কলাগাছি, পাগলা, গোপিনাথপুর, সৈয়দপুর, হুইখালি, মানপুর, নওয়ানি; সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া, উলাট, মাণিকহাট, বিল গাজনার তীরবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে শুধুই পিয়াজ আর পিয়াজ। পাবনা থেকে বাসে ঢাকার পথে মহাসড়ক থেকে তাকালে ডানে বামে সব মাঠে শুধুই পিয়াজ আর পিয়াজ। অপরদিকে নাটোরের বনপাড়া থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত মহাসড়কের দু’দিকের মাঠে চলনবিলের আবাদি জমিতে চলছে পিয়াজ আর রসুন আবাদের কাজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা বহু আগেই অতিক্রম করেছে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে পিয়াজ আবাদ। হাটে হাটে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ চারা। অন্য বছর পিয়াজ চারার সংকট হলেও এবার লক্ষ্যণীয় বিষয় চারা সংকট হয়নি, বরং গত ক’দিনে চারার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বৃহত্তর পাবনা জেলা, রাজশাহী জেলা এবং চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলায় পিয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ছিল ৬২ হাজার হেক্টর। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৮৭ হাজার হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।

পিয়াজ চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি দ্রব্য দরকার, তা হলো ‘পিয়াজ টাঙ্গি’। লোহার তৈরি এটি নিড়ানি বা জমিতে লাইন করে পিয়াজ রোপন কাজে এটি ব্যবহার হয়। গত বছরে একটি ‘পিয়াজ টাঙ্গি’ বিক্রি হয় যেখানে দেড় থেকে দুশ’ টাকায়। এবার তা বিক্রি হয়েছে আড়াই থেকে তিনশ’ টাকায়। লৌহ কর্মকার রমেন চন্দ্র জানালেন তিনি এ পর্যন্ত চারশ’ টাঙ্গি বিক্রি করেছেন। বিপীন কর্মকার বললেন তিনি বিক্রি করেছেন সাড়ে তিনশ’। সাঁথিয়া বাজারের আরও কয়েকটি কর্মশালা ঘুরে দেখলাম কৃষক ‘পিয়াজ টাঙ্গি’ তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কামারশালাগুলোতে বেশ কর্মব্যস্ততা। তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পাঁচ সুত অথবা ছয় সুত লোহা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে টাঙ্গি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তা অতিক্রম করে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে পিয়াজ আবাদ হচ্ছে এবার এই অঞ্চলে। কৃষি মাঠকর্মী আবদুল আজিজ ও পলাশ চন্দ্র পাল জানালেন, ধানের পরিবর্তে বহু কৃষক পিয়াজ চাষ করেছেন এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। ধানের চেয়ে পিয়াজ আবাদ লাভজনক ভেবেই কৃষক এদিকে ঝুঁকেছে। তারা আরও বললেন যদি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হয় তা হলে গত বছরের চেয়ে এবার অত্রাঞ্চলে পিয়াজ উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।