করোনাভাইরাস

এখনও অপ্রতিরোধ্য

ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে আক্রান্ত ৮০ হাজার

চীনে মহামারী আকারে তাণ্ডব চালিয়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার চীন থেকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা ছাড়িয়ে সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে লেবানন, ইসরায়েল, ইরান, রাশিয়া, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউক্রেন, মিসর, সুইডেন, নেপাল, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডে। এর জেরে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮০ হাজারের কাছাকাছি। বিশ্বের ৩১টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৮ হাজার ৭২৪ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্সসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। গত শনিবার পর্যন্ত চীনসহ সারাবিশ্বে মারা গেছেন ২ হাজার ৪৬১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৯৩০ জন। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আক্রান্ত হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪২ জনে। নতুন ৬৪৮ জন মিলিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৯৩৬ জন। তবে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনাভাইরানে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই চীনের মূল খণ্ডের, ৭৬ হাজার ৯৩৬ জন। এর বাইরে ৩১টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২১ জন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাপানে আক্রান্ত ৭৩৮ ও মৃত্যু ৩, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত ৪৩৩ ও মৃত্যু ৩, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ৮৬, হংকংয়ে আক্রান্ত ৬৮ ও মৃত্যু ২, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৩৫ জন করে, ইরানে আক্রান্ত ২৮ ও মৃত্যু ৬, তাইওয়ানে আক্রান্ত ২৬ ও মৃত্যু ১, মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত ২২, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ২১, ইতালিতে আক্রান্ত ৫৫ ও মৃত্যু ২, ভিয়েতনাম ও জার্মানিতে আক্রান্ত ১৬ জন করে, ফ্রান্সে আক্রান্ত ১২ ও মৃত্যু ১, মাকাওয়ে আক্রান্ত ১০, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৯ জন করে, ফিলিপিনসে আক্রান্ত ৩ ও মৃত্যু ১, ভারতে আক্রান্ত ৩, রাশিয়া ও স্পেনে আক্রান্ত ২ জন করে এবং বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, ফিনল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, মিশর, লেবানন ও ইসরায়েলে একজন করে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে নতুন এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।

আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে পরিষ্কার যোগসূত্র না থাকা রোগী বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবার তারা বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর প্রধান ডা. টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। শনিবার তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডব্লিউএইচও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষজ্ঞ দল শনিবার চীনের উহানে পৌঁছেছে। ওই দলে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নাইজেরিয়া, জার্মানি ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। নতুন এই করোনাভাইরাস যেভাবে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তার মতে, ভ্রমণজনিত কারণে চীনের বাইরে এই ভাইরাস এসে এখন মানুষ থেকে মানুষে এবং তার থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে। তাই আপনি যখন দেখছেন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে এই ঘটনা ঘটছে, মানুষ থেকে মানুষে এবং তার থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে এবং কোথা থেকে আসছে তা ধরাও যাচ্ছে না। এভাবেই সব দেশ বা মহাদেশব্যাপী রোগ সংক্রমণের বিস্তার ঘটে।

চীন

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জন। শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। তাতে চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৪৫ জনে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে শনিবার পর্যন্ত এ ভাইরাসের সংক্রমণে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬১ জনে, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু ঘটেছে চীনে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ২৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িড়ে পড়ে ভাইরাসটি শনিবার পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। এদের মধ্যে ইরানে পাঁচ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চার জন, জাপানে তিনজন, হংকং ও ইতালিতে দু’জন করে এবং ফিলিপিনস, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে চীনসহ ৩০টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৮ হাজার ৭২৪ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এর মধ্যে শুধু চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৩৬ জনে। চীনের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩০ জন এবং মারা গেছেন ৯৬ জন। হুবেইয়ের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১৮ জন। দেশটির ২১টি প্রদেশে এখনও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানানো হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায়

চীনের পর এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন ৩৫০ জন মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে; এক কর্মীর দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স তাদের মোবাইল ফোন তৈরির একটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ২২০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৩ জনে। আরও একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনজনে। হঠাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় শুক্রবারই দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। ওই শহরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের একটি চার্চ থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ভাইরোসের ব্যাপক বিস্তার শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই চার্চে একটি বিশেষ প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিলেন হাজারখানেক মানুষ। তাদের সবার মধ্যেই সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। দায়েগু শহরের কাছে গুমিতে স্যামসাংয়ের একটি মোবাইল সেট তৈরির কারাখানায় এক কর্মীর দেহে শনিবার করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এরপর ওই কারখানা সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ।

জাপান

জাপানের উপকূলে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৩৯ জনসহ দেশটিতে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

ইতালি

ইতালিতে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’জন মারা যাওয়ার ঘটনায় জরুরি সতর্কাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। এতে দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরকে কার্যত কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হবে। সেসব শহরের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে রাস্তাঘাট ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। ইউরোপে নতুন করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি। উত্তর ইতালির লমবারদি ও ভেনেতো অঞ্চলের ১২টির মতো শহর কার্যকরভাবে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ওই শহরগুলোর প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে কর্তৃপক্ষ বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ওই এলাকাগুলোর সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব ধরনের ক্রীড়া কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা শীর্ষ ফুটবল লীগ সিরি আ’র তিনটি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইরান

ইরানে করোনাভাইরাসে শনিবার নতুন করে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সরকারিভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৯ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ। মৃতদের সবাই ইরানি নাগরিক। গত শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপুর জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এদিন আরও ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তবে এ অঞ্চলে ইরানেই প্রথম এ ভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও লেবানন ও ইসরাইল একজন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে।

সিঙ্গাপুর

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে এ যাবৎ ৮৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি ১১০৮ জনের, পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষমান ৬৭ জন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪৭ জন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউতে আছেন। কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদের সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে বিশ্ব, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও আরব আমিরাতের পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে চীনের বাইরে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে চীন ভ্রমণ কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শের ইতিহাস নেই। অজানা উৎস থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জটিল পরিস্থিতি বলে আখ্যায়িত করেছে। করোনাভাইরাসের এর সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর উৎসকে চিহ্নিত করে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়। চীনের হুবেই প্রদেশে বিশেষ করে উহান শহরকে বিচ্ছিন্ন করে তার কিছু সুফল দেখা যাচ্ছে, এখন হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। সিঙ্গাপুরেও এ ধরনের পদেক্ষেপের সুফল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চীনের বাইরে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ও কয়েকটি দেশে সংক্রমণের উৎস খুঁজে না পাওয়াটা করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছে। এমতাবস্থায় এ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপদেশ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। অত্যাবশ্যক নয় এমন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যে কোন জিজ্ঞাসা আইইডিসিআর-এ স্থাপিত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইনে ফোন করে জেনে নেয়া যাবে।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি : আইইডিসিআর-এর ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে সন্দেহজনক করোনাভাইরাস আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে এ যাবত কারও নমুনাতে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। চীনের উহান ফেরত ৩১২ জন যাত্রীরা কোয়ারন্টাইন পরবর্তী ৯ম দিনে সবাই সুস্থ আছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি : স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৯১ হাজার ১২৬। বিমানবন্দরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট) বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কোন কোন বন্দর থেকে প্রতিবেদন সময়মতো না পেলে তা পরের দিনের সংখ্যার সঙ্গে যোগ করে মোট সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর এ যোগাযোগ করুন। ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় : নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না, ইতোমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, কাশি-শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি, কাশির সময় বাহু, টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন। মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং এ সময় অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ব্যতীত বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন । অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

এখনও অপ্রতিরোধ্য

ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে আক্রান্ত ৮০ হাজার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

চীনে মহামারী আকারে তাণ্ডব চালিয়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার চীন থেকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা ছাড়িয়ে সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে লেবানন, ইসরায়েল, ইরান, রাশিয়া, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউক্রেন, মিসর, সুইডেন, নেপাল, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডে। এর জেরে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮০ হাজারের কাছাকাছি। বিশ্বের ৩১টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৮ হাজার ৭২৪ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্সসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। গত শনিবার পর্যন্ত চীনসহ সারাবিশ্বে মারা গেছেন ২ হাজার ৪৬১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৯৩০ জন। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আক্রান্ত হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪২ জনে। নতুন ৬৪৮ জন মিলিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৯৩৬ জন। তবে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনাভাইরানে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই চীনের মূল খণ্ডের, ৭৬ হাজার ৯৩৬ জন। এর বাইরে ৩১টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২১ জন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাপানে আক্রান্ত ৭৩৮ ও মৃত্যু ৩, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত ৪৩৩ ও মৃত্যু ৩, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ৮৬, হংকংয়ে আক্রান্ত ৬৮ ও মৃত্যু ২, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৩৫ জন করে, ইরানে আক্রান্ত ২৮ ও মৃত্যু ৬, তাইওয়ানে আক্রান্ত ২৬ ও মৃত্যু ১, মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত ২২, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ২১, ইতালিতে আক্রান্ত ৫৫ ও মৃত্যু ২, ভিয়েতনাম ও জার্মানিতে আক্রান্ত ১৬ জন করে, ফ্রান্সে আক্রান্ত ১২ ও মৃত্যু ১, মাকাওয়ে আক্রান্ত ১০, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৯ জন করে, ফিলিপিনসে আক্রান্ত ৩ ও মৃত্যু ১, ভারতে আক্রান্ত ৩, রাশিয়া ও স্পেনে আক্রান্ত ২ জন করে এবং বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, ফিনল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, মিশর, লেবানন ও ইসরায়েলে একজন করে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে নতুন এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।

আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে পরিষ্কার যোগসূত্র না থাকা রোগী বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবার তারা বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর প্রধান ডা. টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। শনিবার তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডব্লিউএইচও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষজ্ঞ দল শনিবার চীনের উহানে পৌঁছেছে। ওই দলে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নাইজেরিয়া, জার্মানি ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। নতুন এই করোনাভাইরাস যেভাবে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তার মতে, ভ্রমণজনিত কারণে চীনের বাইরে এই ভাইরাস এসে এখন মানুষ থেকে মানুষে এবং তার থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে। তাই আপনি যখন দেখছেন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে এই ঘটনা ঘটছে, মানুষ থেকে মানুষে এবং তার থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে এবং কোথা থেকে আসছে তা ধরাও যাচ্ছে না। এভাবেই সব দেশ বা মহাদেশব্যাপী রোগ সংক্রমণের বিস্তার ঘটে।

চীন

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জন। শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। তাতে চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৪৫ জনে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে শনিবার পর্যন্ত এ ভাইরাসের সংক্রমণে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬১ জনে, যাদের মধ্যে ১৯ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু ঘটেছে চীনে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ২৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িড়ে পড়ে ভাইরাসটি শনিবার পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। এদের মধ্যে ইরানে পাঁচ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চার জন, জাপানে তিনজন, হংকং ও ইতালিতে দু’জন করে এবং ফিলিপিনস, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে চীনসহ ৩০টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৮ হাজার ৭২৪ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এর মধ্যে শুধু চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৩৬ জনে। চীনের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩০ জন এবং মারা গেছেন ৯৬ জন। হুবেইয়ের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১৮ জন। দেশটির ২১টি প্রদেশে এখনও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানানো হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায়

চীনের পর এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন ৩৫০ জন মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে; এক কর্মীর দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স তাদের মোবাইল ফোন তৈরির একটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ২২০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৩ জনে। আরও একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনজনে। হঠাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় শুক্রবারই দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। ওই শহরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের একটি চার্চ থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ভাইরোসের ব্যাপক বিস্তার শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই চার্চে একটি বিশেষ প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিলেন হাজারখানেক মানুষ। তাদের সবার মধ্যেই সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। দায়েগু শহরের কাছে গুমিতে স্যামসাংয়ের একটি মোবাইল সেট তৈরির কারাখানায় এক কর্মীর দেহে শনিবার করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এরপর ওই কারখানা সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ।

জাপান

জাপানের উপকূলে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৩৯ জনসহ দেশটিতে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

ইতালি

ইতালিতে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’জন মারা যাওয়ার ঘটনায় জরুরি সতর্কাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। এতে দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরকে কার্যত কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হবে। সেসব শহরের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে রাস্তাঘাট ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। ইউরোপে নতুন করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি। উত্তর ইতালির লমবারদি ও ভেনেতো অঞ্চলের ১২টির মতো শহর কার্যকরভাবে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ওই শহরগুলোর প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে কর্তৃপক্ষ বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ওই এলাকাগুলোর সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব ধরনের ক্রীড়া কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা শীর্ষ ফুটবল লীগ সিরি আ’র তিনটি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইরান

ইরানে করোনাভাইরাসে শনিবার নতুন করে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সরকারিভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৯ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ। মৃতদের সবাই ইরানি নাগরিক। গত শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপুর জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এদিন আরও ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তবে এ অঞ্চলে ইরানেই প্রথম এ ভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও লেবানন ও ইসরাইল একজন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে।

সিঙ্গাপুর

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে এ যাবৎ ৮৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি ১১০৮ জনের, পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষমান ৬৭ জন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪৭ জন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউতে আছেন। কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদের সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে বিশ্ব, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও আরব আমিরাতের পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে চীনের বাইরে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে চীন ভ্রমণ কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শের ইতিহাস নেই। অজানা উৎস থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জটিল পরিস্থিতি বলে আখ্যায়িত করেছে। করোনাভাইরাসের এর সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর উৎসকে চিহ্নিত করে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়। চীনের হুবেই প্রদেশে বিশেষ করে উহান শহরকে বিচ্ছিন্ন করে তার কিছু সুফল দেখা যাচ্ছে, এখন হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। সিঙ্গাপুরেও এ ধরনের পদেক্ষেপের সুফল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চীনের বাইরে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ও কয়েকটি দেশে সংক্রমণের উৎস খুঁজে না পাওয়াটা করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছে। এমতাবস্থায় এ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপদেশ অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। অত্যাবশ্যক নয় এমন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যে কোন জিজ্ঞাসা আইইডিসিআর-এ স্থাপিত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইনে ফোন করে জেনে নেয়া যাবে।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি : আইইডিসিআর-এর ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে সন্দেহজনক করোনাভাইরাস আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে এ যাবত কারও নমুনাতে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। চীনের উহান ফেরত ৩১২ জন যাত্রীরা কোয়ারন্টাইন পরবর্তী ৯ম দিনে সবাই সুস্থ আছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি : স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৯১ হাজার ১২৬। বিমানবন্দরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট) বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কোন কোন বন্দর থেকে প্রতিবেদন সময়মতো না পেলে তা পরের দিনের সংখ্যার সঙ্গে যোগ করে মোট সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর এ যোগাযোগ করুন। ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় : নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না, ইতোমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, কাশি-শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি, কাশির সময় বাহু, টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন। মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং এ সময় অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ব্যতীত বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন । অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।