যানজটে ঢাকায়

প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয়

সড়ক রেল ও নৌপথের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী

যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এ সমস্যা দূর করতে সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) ‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাগাজিন মুক্ত আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম এবং মুক্ত আকাশের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রকৌশলী মো. সামসুল আলম প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরবান হ্যাবিট্যান্ট কনসালট্যান্টসের চেয়ারম্যান স্থপতি পরিকল্পনাবিদ তানউইর নেওয়াজ।

সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সিলেটের বিশেষ দায়িত্ব সিলেটেই শেষ করতে হবে, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব রংপুরে করতে হবে। এটি যদি আমরা সাহসের সঙ্গে করতে পারি, তাহলেই এ সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি। আমরা বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করেও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের রেল স্টিমারের অফিস করা হয়েছিল বরিশাল ও চট্টগ্রামে কাজ হয়নি। কর্তা-ব্যক্তিরা সবাই ঢাকায় বসে থেকে কাজ করতে চায়। শুধু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করলে হবে না অফিসের যে মূল বিষয় ফান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই শহরের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আমি মনে করি। প্ল্যানিং বাস্তবায়নে আমরা অনেকটাই দুর্বল। প্ল্যানিং করি কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারি না। এগুলো সবার সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। পাশাপাশি যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) ‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। সামান্য দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় এখন অস্বাভাবিক মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। হাঁটার গতির মতো ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সাম্প্রতিককালের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। রাজধানীতে প্রতিদিন লোকসংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যমান যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নতুন নতুন যানবাহন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশা ও সংখ্যা থেকে যাচ্ছে সেই আগের মতোই। সরকারের ভিশনারি প্রকল্পগুলো বিশেষ করে, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগ অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে যেসব পরিকল্পনা বা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে বা হচ্ছে তার বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদি ও অদূরদর্শী, সমম্বিত পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান নয়। সারাদেশে যাত্রীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই যাত্রীসেবার মানও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনা ও সংখ্যা।

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

যানজটে ঢাকায়

প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয়

সড়ক রেল ও নৌপথের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এ সমস্যা দূর করতে সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) ‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাগাজিন মুক্ত আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম এবং মুক্ত আকাশের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রকৌশলী মো. সামসুল আলম প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরবান হ্যাবিট্যান্ট কনসালট্যান্টসের চেয়ারম্যান স্থপতি পরিকল্পনাবিদ তানউইর নেওয়াজ।

সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সিলেটের বিশেষ দায়িত্ব সিলেটেই শেষ করতে হবে, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব রংপুরে করতে হবে। এটি যদি আমরা সাহসের সঙ্গে করতে পারি, তাহলেই এ সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি। আমরা বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করেও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের রেল স্টিমারের অফিস করা হয়েছিল বরিশাল ও চট্টগ্রামে কাজ হয়নি। কর্তা-ব্যক্তিরা সবাই ঢাকায় বসে থেকে কাজ করতে চায়। শুধু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করলে হবে না অফিসের যে মূল বিষয় ফান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই শহরের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আমি মনে করি। প্ল্যানিং বাস্তবায়নে আমরা অনেকটাই দুর্বল। প্ল্যানিং করি কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারি না। এগুলো সবার সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। পাশাপাশি যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) ‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। সামান্য দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় এখন অস্বাভাবিক মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। হাঁটার গতির মতো ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সাম্প্রতিককালের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। রাজধানীতে প্রতিদিন লোকসংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যমান যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নতুন নতুন যানবাহন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশা ও সংখ্যা থেকে যাচ্ছে সেই আগের মতোই। সরকারের ভিশনারি প্রকল্পগুলো বিশেষ করে, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগ অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে যেসব পরিকল্পনা বা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে বা হচ্ছে তার বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদি ও অদূরদর্শী, সমম্বিত পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান নয়। সারাদেশে যাত্রীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই যাত্রীসেবার মানও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনা ও সংখ্যা।