দেশে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট

দরকার ৫ লাখ, আছে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার চলছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা

রাজধানীসহ সারাদেশের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অক্সিজেনের চরম সংকট বিরাজ করছে। আগে বছরে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার দরকার হতো। এখন করোনা রোগীর জন্য তা বেড়ে ৫ লাখের বেশি মেডিকেল সিলিন্ডার অক্সিজেনের প্রয়োজন। আগের দিনে কমপক্ষে ৫০ মেট্রিন টন অক্সিজেন লাগত। এখন প্রতিদিনেরই চাহিদা বেড়েছে ১৪০ মেট্রিন টনের বেশি। হঠাৎ করে অক্সিজেনের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পরস্পর যোগসাজশে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দাম নিচ্ছে এবং মুনাফা লুটছে। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বাড়ছে ২৬ হাজার টাকা। এরপর এখন ৩০ হাজার টাকারও পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দেশে মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন উৎপাদনক্ষমতা দিনে ৮০ টন। এখন চাহিদা ১৪০ টন। বাড়তি চাহিদার কারণে দুর্নীতিও বাড়ছে। সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার রূপান্তরিত করে এবং রং পরিবর্তন করে অক্সিজেন সিলিন্ডার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

বিশিষ্ট আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, যে সব করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তির পর শ্বাসকষ্ট হয়। তাদের অক্সিজেন লাগে। কিন্তু অক্সিজেন সংকট এখন চরমে। এ সুযোগে একটি মহল অক্সিজেন বাসায় মজুদ করছে। এটা বিপজ্জনক। আর অক্সিজেন নিজে নিজে ব্যবহার করা ঠিক নয়। বুঝে না বুঝে মানুষ অক্সিজেন মজুদ করছে। আবার অনেকেই দুই নম্বর অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। পুরনো কিছু হাসপতালে সেন্টাল অক্সিজেন থাকলেও নতুনসহ অনেক হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন নেই। তারা সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহার করছে। হাসপাতালগুলোতে আগে যে ক্যাপাসিটি ছিল এখন তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন দরকার। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। অক্সিজেন নিজে না জ্বললেও অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। এজন্য এটা বাসাবাড়িতে রাখার মতো নয়। এটা ব্যবহার নিয়মকানুন আছে। তা না জানলে বিপদ হতে পারে।

অক্সিজেন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অক্সিজেন বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। অক্সিজেন দুই ধরনের। তারমধ্যে মেডিকেল অক্সিজেন। দ্বিতীয় হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আগে মেডিকেল অক্সিজেনগুলো পাইপ লাইনের মাধ্যমে হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। এছাড়াও আইসিইউতে পাইপলাইন ছাড়াও সিলিন্ডার অক্সিজেনও রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বসানো অক্সিজেনের বড় ট্যাংকগুলোতে ৫ টন থেকে ২০ টন ধারণক্ষমতা থাকে। পুরনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব ট্যাংক থেকে পাইপলাইনে ওয়ার্ডে বা আইসিইউতে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। আর নতুন করে অনেক সরকারি হাসপাতালে পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহের লাইন নেই। কুর্মিটোলা ও কুয়েত মৈত্রীতে নেই। এভাবে অনেক হাসপাতালে পাইপলাইনে অক্সিজেন নেই।

জানা গেছে, দেশে লিনডে বাংলাদেশসহ ২টি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটে আছে ৭০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। তারমধ্যে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়। আর ৫ হাজার অভিজাত বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আছে। প্রতি সিলিন্ডারের দাম ১৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। জানা গেছে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন আমদানি করলেও অন্য প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে আমদানির ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স রেগুলেটরি ডিউটি ২০ ভাগ ২০১৮ সালের বাজেটে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে তা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়। চলতি বছরও চাহিদা বাড়লেও কমানো হয়নি। এ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ বছর করোনার মধ্যেও দেশে অক্সিজেন আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অক্সিজেন আমদানির ওপর এখনও রহস্যজনক কারণে ১৫ ভাগ শুল্ক নির্ধারণ রয়েছে। কাস্টমস ডিউটিও শতকরা ১০ ভাগ হারে বিদ্যমান রয়েছে বলে জানা গেছে। যার খেসারত রোগীরা এখন বহন করছে। কাস্টমস ডিউটি দেয়াসহ নানা কারণে অক্সিজেন নিয়ে দেশজুড়ে এখন নানা সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকটের সুযোগে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী জালিয়াতি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলিন্ডার জালিয়াতি। কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার রং পরিবর্তন করে অক্সিজেন সিলিন্ডারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি টেস্ট পেশার ২৫০ বার। কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার পেশার এর থেকে অনেক কম। এতে রূপান্তরিত সিলিন্ডার সিলিন্ডার যেকোন সময় বিস্ফোরণ ঘটে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এটা যেকোন সময় লিকেজ হয়ে যেতে পারে। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা গেছে, একটি সিলিন্ডারে ১ পয়েন্ট ৪ কিউভিক মিটার অক্সিজেন ঢুকানো যায়। একজন রোগী এক সিলিন্ডার অক্সিজেন ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এখন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৬ লিটার অক্সিজেন দরকার। যার কারণে করোনা রোগীর জন্য এক সিলিন্ডার অক্সিজেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি নিরুপম দাসগুপ্ত জানান, এখন চট্টগ্রামে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট চলছে। শ্রেণীর ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অক্সিজেন সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে অক্সিজেনের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর কারণে চাহিদা বাড়ায় কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য মিলছে না মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার।

এদিকে অক্সিজেন সংকট খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকলেও সচতুর ব্যবসায়ীরা অক্সিজেন সংকট করে বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে একটি মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় মিললেও এখন সেই সিলিন্ডার কিনতে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বাজারে হঠাৎ এই অস্থিরতার পেছনে ৪টি প্রতিষ্ঠানের কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বড় অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিককে। এই চার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- নগরের কাজীর দেউড়ির হাসান ট্রেডার্স, সদরঘাটের ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস, চকবাজারের বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এবং কর্ণফুলীর জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) তৌহিদুল বলেন, চারটি প্রতিষ্ঠানের মজুদদারির কারণে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে। বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, হাসান ট্রেডার্স, জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড ও মেসার্স ব্রাদার্স- এসব প্রতিষ্ঠান সীতাকুণ্ডের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সংগ্রহ করে। পরে তারা এগুলো মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করে আসছে।

মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিন্ডে বাংলাদেশের’ সিল বসিয়ে সেগুলো হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় এই চার প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে আসছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, যখন অক্সিজেনের তীব্র চাহিদা দেখা দেয়, তখন তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাজারে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট দেখায়। পরে প্রতি সিলিন্ডার ১৫ থেকে এমনকি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছিল।

তৌহিদ বলেন, আমরা মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শন করে জেনেছি অক্সিজেনের কোন সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন উৎপাদন অব্যাহত আছে। সেখানে দেখা গেছে, ১ দশমিক ৬ কিউবিক লিটারের একটি সিলিন্ডার রিফিল করতে খরচ হয় ১২২ টাকা। কিন্তু, এসব প্রতিষ্ঠান ১২২ টাকার পরিবর্তে নিচ্ছে এক হাজার টাকা। এ কারণে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই সময়ে বিক্রি হওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি হওয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার মেডিকেল গ্রেড বলে বিক্রি এবং লিন্ডে, স্পেকট্রাম ও ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের পুরনো অক্সিজেন সিলিন্ডারে রিফুয়েলিং করে করোনার এই সময়ে চড়া দামে বিক্রি করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এই বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি এবং বিপণন করা তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোন ডিলার নেই, তাই বাজারে বিক্রি হওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের মান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমরা চট্টগ্রামভিত্তিক বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন হিসেবে বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলে জানতে পেরেছি। শীঘ্রই সেখানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট নেই। লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। চাহিদা থাকায় ২০ জুনের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে আরও ৪ হাজার মেডিকেল গ্রেড সিলিন্ডার আমদানি করে সাপ্লাই চেইনে যুক্ত করবেন তারা।

এদিকে মেসার্স ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক ইমাম উদ্দিন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট এসে কোন কথা না শুনে জরিমানা করেছে। আমরা প্রতিটি সিলিন্ডার দশ থেকে এগারো হাজার টাকায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কিনি। বিক্রি করি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। আর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে।

তবে, ডিলারদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সীতাকুণ্ড উপজেলার অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘জিরি সুবেদারের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হাকিম বলেন, আমাদের কাছ থেকে কম দামে নিয়ে গিয়ে তারা বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করছে। অক্সিজেনের সর্বোচ্চ বড় সিলিন্ডার ৯ দশমিক ৬ কিউবিক লিটার যা আমরা দশ হাজার টাকায় বিক্রি করি। আর এগুলো তারা এখন কমপক্ষে এক লাখ টাকায় বিক্রি করছে।

এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট ও কোভিড নিরোধক ওষুধ আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য দেশে উৎপাদিত পিপিই ও সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন তিনি। একই সঙ্গে চিকিৎসা সামগ্রী জীবাণুমুক্তকরণে ব্যবহার্য অটোকেলেভ মেশিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চলমান করোনা বিপর্যয়ের কারণে সরকার করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট, মাস্ক ও ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই আমদানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও পিপিই উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ওপর সমুদয় আমদানি শুল্ক মওকুফ করেছে। সেখানে অক্সিজেনের নাম নেই। ফলে অক্সিজেনের আমদানির উপর শুল্ক মওকুফ করলে করোনা রোগীরা উপকৃত হবে।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

দেশে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট

দরকার ৫ লাখ, আছে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার চলছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা

বাকিবিল্লাহ |

রাজধানীসহ সারাদেশের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অক্সিজেনের চরম সংকট বিরাজ করছে। আগে বছরে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার দরকার হতো। এখন করোনা রোগীর জন্য তা বেড়ে ৫ লাখের বেশি মেডিকেল সিলিন্ডার অক্সিজেনের প্রয়োজন। আগের দিনে কমপক্ষে ৫০ মেট্রিন টন অক্সিজেন লাগত। এখন প্রতিদিনেরই চাহিদা বেড়েছে ১৪০ মেট্রিন টনের বেশি। হঠাৎ করে অক্সিজেনের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পরস্পর যোগসাজশে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দাম নিচ্ছে এবং মুনাফা লুটছে। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বাড়ছে ২৬ হাজার টাকা। এরপর এখন ৩০ হাজার টাকারও পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দেশে মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন উৎপাদনক্ষমতা দিনে ৮০ টন। এখন চাহিদা ১৪০ টন। বাড়তি চাহিদার কারণে দুর্নীতিও বাড়ছে। সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার রূপান্তরিত করে এবং রং পরিবর্তন করে অক্সিজেন সিলিন্ডার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

বিশিষ্ট আইসিইউ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, যে সব করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তির পর শ্বাসকষ্ট হয়। তাদের অক্সিজেন লাগে। কিন্তু অক্সিজেন সংকট এখন চরমে। এ সুযোগে একটি মহল অক্সিজেন বাসায় মজুদ করছে। এটা বিপজ্জনক। আর অক্সিজেন নিজে নিজে ব্যবহার করা ঠিক নয়। বুঝে না বুঝে মানুষ অক্সিজেন মজুদ করছে। আবার অনেকেই দুই নম্বর অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। পুরনো কিছু হাসপতালে সেন্টাল অক্সিজেন থাকলেও নতুনসহ অনেক হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন নেই। তারা সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহার করছে। হাসপাতালগুলোতে আগে যে ক্যাপাসিটি ছিল এখন তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন দরকার। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। অক্সিজেন নিজে না জ্বললেও অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। এজন্য এটা বাসাবাড়িতে রাখার মতো নয়। এটা ব্যবহার নিয়মকানুন আছে। তা না জানলে বিপদ হতে পারে।

অক্সিজেন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অক্সিজেন বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। অক্সিজেন দুই ধরনের। তারমধ্যে মেডিকেল অক্সিজেন। দ্বিতীয় হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আগে মেডিকেল অক্সিজেনগুলো পাইপ লাইনের মাধ্যমে হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। এছাড়াও আইসিইউতে পাইপলাইন ছাড়াও সিলিন্ডার অক্সিজেনও রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বসানো অক্সিজেনের বড় ট্যাংকগুলোতে ৫ টন থেকে ২০ টন ধারণক্ষমতা থাকে। পুরনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব ট্যাংক থেকে পাইপলাইনে ওয়ার্ডে বা আইসিইউতে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। আর নতুন করে অনেক সরকারি হাসপাতালে পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহের লাইন নেই। কুর্মিটোলা ও কুয়েত মৈত্রীতে নেই। এভাবে অনেক হাসপাতালে পাইপলাইনে অক্সিজেন নেই।

জানা গেছে, দেশে লিনডে বাংলাদেশসহ ২টি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটে আছে ৭০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। তারমধ্যে ৬৫ হাজার সিলিন্ডার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়। আর ৫ হাজার অভিজাত বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আছে। প্রতি সিলিন্ডারের দাম ১৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। জানা গেছে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন আমদানি করলেও অন্য প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে আমদানির ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স রেগুলেটরি ডিউটি ২০ ভাগ ২০১৮ সালের বাজেটে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে তা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়। চলতি বছরও চাহিদা বাড়লেও কমানো হয়নি। এ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ বছর করোনার মধ্যেও দেশে অক্সিজেন আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অক্সিজেন আমদানির ওপর এখনও রহস্যজনক কারণে ১৫ ভাগ শুল্ক নির্ধারণ রয়েছে। কাস্টমস ডিউটিও শতকরা ১০ ভাগ হারে বিদ্যমান রয়েছে বলে জানা গেছে। যার খেসারত রোগীরা এখন বহন করছে। কাস্টমস ডিউটি দেয়াসহ নানা কারণে অক্সিজেন নিয়ে দেশজুড়ে এখন নানা সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকটের সুযোগে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী জালিয়াতি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলিন্ডার জালিয়াতি। কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার রং পরিবর্তন করে অক্সিজেন সিলিন্ডারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি টেস্ট পেশার ২৫০ বার। কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের সিলিন্ডার পেশার এর থেকে অনেক কম। এতে রূপান্তরিত সিলিন্ডার সিলিন্ডার যেকোন সময় বিস্ফোরণ ঘটে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এটা যেকোন সময় লিকেজ হয়ে যেতে পারে। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা গেছে, একটি সিলিন্ডারে ১ পয়েন্ট ৪ কিউভিক মিটার অক্সিজেন ঢুকানো যায়। একজন রোগী এক সিলিন্ডার অক্সিজেন ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এখন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৬ লিটার অক্সিজেন দরকার। যার কারণে করোনা রোগীর জন্য এক সিলিন্ডার অক্সিজেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি নিরুপম দাসগুপ্ত জানান, এখন চট্টগ্রামে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট চলছে। শ্রেণীর ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অক্সিজেন সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে অক্সিজেনের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর কারণে চাহিদা বাড়ায় কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য মিলছে না মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার।

এদিকে অক্সিজেন সংকট খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকলেও সচতুর ব্যবসায়ীরা অক্সিজেন সংকট করে বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে একটি মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় মিললেও এখন সেই সিলিন্ডার কিনতে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বাজারে হঠাৎ এই অস্থিরতার পেছনে ৪টি প্রতিষ্ঠানের কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বড় অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিককে। এই চার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- নগরের কাজীর দেউড়ির হাসান ট্রেডার্স, সদরঘাটের ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস, চকবাজারের বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এবং কর্ণফুলীর জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) তৌহিদুল বলেন, চারটি প্রতিষ্ঠানের মজুদদারির কারণে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে। বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, হাসান ট্রেডার্স, জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড ও মেসার্স ব্রাদার্স- এসব প্রতিষ্ঠান সীতাকুণ্ডের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সংগ্রহ করে। পরে তারা এগুলো মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করে আসছে।

মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিন্ডে বাংলাদেশের’ সিল বসিয়ে সেগুলো হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় এই চার প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে আসছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, যখন অক্সিজেনের তীব্র চাহিদা দেখা দেয়, তখন তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাজারে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট দেখায়। পরে প্রতি সিলিন্ডার ১৫ থেকে এমনকি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছিল।

তৌহিদ বলেন, আমরা মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শন করে জেনেছি অক্সিজেনের কোন সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন উৎপাদন অব্যাহত আছে। সেখানে দেখা গেছে, ১ দশমিক ৬ কিউবিক লিটারের একটি সিলিন্ডার রিফিল করতে খরচ হয় ১২২ টাকা। কিন্তু, এসব প্রতিষ্ঠান ১২২ টাকার পরিবর্তে নিচ্ছে এক হাজার টাকা। এ কারণে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই সময়ে বিক্রি হওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি হওয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার মেডিকেল গ্রেড বলে বিক্রি এবং লিন্ডে, স্পেকট্রাম ও ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের পুরনো অক্সিজেন সিলিন্ডারে রিফুয়েলিং করে করোনার এই সময়ে চড়া দামে বিক্রি করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এই বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি এবং বিপণন করা তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোন ডিলার নেই, তাই বাজারে বিক্রি হওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের মান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমরা চট্টগ্রামভিত্তিক বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন হিসেবে বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলে জানতে পেরেছি। শীঘ্রই সেখানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট নেই। লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। চাহিদা থাকায় ২০ জুনের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে আরও ৪ হাজার মেডিকেল গ্রেড সিলিন্ডার আমদানি করে সাপ্লাই চেইনে যুক্ত করবেন তারা।

এদিকে মেসার্স ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক ইমাম উদ্দিন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট এসে কোন কথা না শুনে জরিমানা করেছে। আমরা প্রতিটি সিলিন্ডার দশ থেকে এগারো হাজার টাকায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কিনি। বিক্রি করি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। আর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে।

তবে, ডিলারদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সীতাকুণ্ড উপজেলার অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘জিরি সুবেদারের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হাকিম বলেন, আমাদের কাছ থেকে কম দামে নিয়ে গিয়ে তারা বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করছে। অক্সিজেনের সর্বোচ্চ বড় সিলিন্ডার ৯ দশমিক ৬ কিউবিক লিটার যা আমরা দশ হাজার টাকায় বিক্রি করি। আর এগুলো তারা এখন কমপক্ষে এক লাখ টাকায় বিক্রি করছে।

এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট ও কোভিড নিরোধক ওষুধ আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য দেশে উৎপাদিত পিপিই ও সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন তিনি। একই সঙ্গে চিকিৎসা সামগ্রী জীবাণুমুক্তকরণে ব্যবহার্য অটোকেলেভ মেশিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চলমান করোনা বিপর্যয়ের কারণে সরকার করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট, মাস্ক ও ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই আমদানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও পিপিই উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ওপর সমুদয় আমদানি শুল্ক মওকুফ করেছে। সেখানে অক্সিজেনের নাম নেই। ফলে অক্সিজেনের আমদানির উপর শুল্ক মওকুফ করলে করোনা রোগীরা উপকৃত হবে।