খালেদার বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা যাবে না আইন মন্ত্রণালয়

উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে করা আবেদন ‘মঞ্জুর করা যাবে না’ মর্মে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেয়ার ‘সুযোগ নেই’। আইনমন্ত্রীর এ মতামত পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দারের আবেদনটি গ্রহণ করতে পারলাম না।’

শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন করার পর গত চারদিন ধরে পর্যালোচনা ও দাপ্তরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এপ্রিলের ২৮ তারিখ থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তিনি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছিল তার পরিবার। দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। গত বছর মহামারীর ?শুরুতে পরিবারের আবেদনে সরকার তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেয়। সে সময় শর্ত দেয়া হয়, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসাতেই থাকছিলেন ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন নিয়ে ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিষয়টি ‘ইতিবাচক দৃষ্টিতে’ বিবেচনা করা হবে।

আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে পরদিন বিকেলে ওই আবেদনের ফাইল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে যায়। সে সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির শর্ত শিথিলের সুযোগ আছে কিনা, তা দেখে তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনিও বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখার কথা বলেছিলেন।

এ নিয়ে দিনভর আলোচনার মধ্যেই ৬ মে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদন যেহেতু হয়েছে, নবায়নও ‘হয়ে যাবে’ বলে সেদিন জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি পেরিয়ে খালেদার পরিবারের করা আবেদনের ফাইল আইনমন্ত্রীর ‘মতামতসহ’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায় রোববার সকালে। দুপুরে জানিয়ে দেয়া হয়, খালেদা জিয়া অনুমতি পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া কেন অনুমতি পাচ্ছেন না, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী দুপুরে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ইতোমধ্যে (খালেদার সাময়িক মুক্তির) সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই শর্তগুলো শিথিল করে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।’

ওই মতামতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে জানাবেন। একবার যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ৪০১ ধারার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে, সেজন্য এটাকে আরেকবার ওপেন করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।’

আইনমন্ত্রী তার শেষ কথা জানিয়ে দেয়ার পরপরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার অভিমতসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছেন। আইনগত দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মানবিক দিক’ বিবেচনা করে তাদের নেত্রীকে অনুমতি দেয়ার আহ্বান রেখেছিলেন সরকারের কাছে।

সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন প্রশ্ন আসে কেন? মানবিক দিক বিবেচনায় ছিল বলেই তো আবেদনটি গ্রহণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দিয়েছে, আইনের কারণে...।’ আইন মন্ত্রণালয় অনুমতির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার সংক্ষেপ পাঠানো হতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ‘না’ বলে দেয়ায় এখন আর সেই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে না বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি বলে সবাই জানেন। তিনি তাকে (খালেদা জিয়া) মানবতার তাগিদে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪০১ এর ১ ধারা অনুযায়ী তার দণ্ড স্থগিত করে তার বাসায়, তার সুবিধা মতো চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার নামে একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তার ছোট আবেদন করেছিলেন, তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুরোধ আমাদের কাছে করেছিলেন। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মত এসেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, ৪০১-এ সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ দ্বিতীয়বার নেই।’

‘শর্ত সাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত হয়েছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী, আবেদনটি আমরা মঞ্জুর করতে পারছি না’Ñ বলেন তিনি।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কে কী অভিযোগ করল সেটা প্রশ্ন না। আমাদের আইনানুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা করছি। মানবতার প্রশ্ন এসেছে, সেটাও আমরা বলেছি এবং বিএনপি আবেদন করতেই পারে কিন্তু আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না।’

উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ড স্থগিত করে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। সিআরপিসির ৪০১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন কোন ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়, তখন সরকার যে কোন সময় শর্ত ছাড়াই অথবা শর্তের বিনিময়ে (দণ্ডিত ব্যক্তি গ্রহণ করে) শাস্তি কার্যকর স্থগিত করতে পারে। অথবা তাকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার পুরো বা যে কোন অংশ স্থগিত করতে পারে।’ পরবর্তীতে, খালেদার কারাদণ্ড স্থগিতের মেয়াদ দুইবার বাড়ানো হয় এবং সরকার এ বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।

সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২

খালেদার বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা যাবে না আইন মন্ত্রণালয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে করা আবেদন ‘মঞ্জুর করা যাবে না’ মর্মে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেয়ার ‘সুযোগ নেই’। আইনমন্ত্রীর এ মতামত পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দারের আবেদনটি গ্রহণ করতে পারলাম না।’

শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন করার পর গত চারদিন ধরে পর্যালোচনা ও দাপ্তরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এপ্রিলের ২৮ তারিখ থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তিনি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছিল তার পরিবার। দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। গত বছর মহামারীর ?শুরুতে পরিবারের আবেদনে সরকার তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেয়। সে সময় শর্ত দেয়া হয়, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসাতেই থাকছিলেন ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন নিয়ে ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিষয়টি ‘ইতিবাচক দৃষ্টিতে’ বিবেচনা করা হবে।

আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে পরদিন বিকেলে ওই আবেদনের ফাইল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে যায়। সে সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির শর্ত শিথিলের সুযোগ আছে কিনা, তা দেখে তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনিও বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখার কথা বলেছিলেন।

এ নিয়ে দিনভর আলোচনার মধ্যেই ৬ মে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদন যেহেতু হয়েছে, নবায়নও ‘হয়ে যাবে’ বলে সেদিন জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি পেরিয়ে খালেদার পরিবারের করা আবেদনের ফাইল আইনমন্ত্রীর ‘মতামতসহ’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায় রোববার সকালে। দুপুরে জানিয়ে দেয়া হয়, খালেদা জিয়া অনুমতি পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া কেন অনুমতি পাচ্ছেন না, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী দুপুরে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ইতোমধ্যে (খালেদার সাময়িক মুক্তির) সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই শর্তগুলো শিথিল করে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।’

ওই মতামতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে জানাবেন। একবার যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ৪০১ ধারার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে, সেজন্য এটাকে আরেকবার ওপেন করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।’

আইনমন্ত্রী তার শেষ কথা জানিয়ে দেয়ার পরপরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার অভিমতসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছেন। আইনগত দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মানবিক দিক’ বিবেচনা করে তাদের নেত্রীকে অনুমতি দেয়ার আহ্বান রেখেছিলেন সরকারের কাছে।

সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন প্রশ্ন আসে কেন? মানবিক দিক বিবেচনায় ছিল বলেই তো আবেদনটি গ্রহণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দিয়েছে, আইনের কারণে...।’ আইন মন্ত্রণালয় অনুমতির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার সংক্ষেপ পাঠানো হতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ‘না’ বলে দেয়ায় এখন আর সেই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে না বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি বলে সবাই জানেন। তিনি তাকে (খালেদা জিয়া) মানবতার তাগিদে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪০১ এর ১ ধারা অনুযায়ী তার দণ্ড স্থগিত করে তার বাসায়, তার সুবিধা মতো চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার নামে একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তার ছোট আবেদন করেছিলেন, তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুরোধ আমাদের কাছে করেছিলেন। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মত এসেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, ৪০১-এ সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর অবকাশ দ্বিতীয়বার নেই।’

‘শর্ত সাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত হয়েছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী, আবেদনটি আমরা মঞ্জুর করতে পারছি না’Ñ বলেন তিনি।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কে কী অভিযোগ করল সেটা প্রশ্ন না। আমাদের আইনানুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা করছি। মানবতার প্রশ্ন এসেছে, সেটাও আমরা বলেছি এবং বিএনপি আবেদন করতেই পারে কিন্তু আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না।’

উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ড স্থগিত করে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। সিআরপিসির ৪০১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন কোন ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়, তখন সরকার যে কোন সময় শর্ত ছাড়াই অথবা শর্তের বিনিময়ে (দণ্ডিত ব্যক্তি গ্রহণ করে) শাস্তি কার্যকর স্থগিত করতে পারে। অথবা তাকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার পুরো বা যে কোন অংশ স্থগিত করতে পারে।’ পরবর্তীতে, খালেদার কারাদণ্ড স্থগিতের মেয়াদ দুইবার বাড়ানো হয় এবং সরকার এ বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।