কষ্টের যাত্রা চারগুণ ভাড়া : তারপরও ভিড়

রাজধানীর দোলাইরপাড় মোড়। গতকাল দুপুর ২টা। দুই হাতে দু’টি ও কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠতে দেখা গেল মধ্য বয়সী এক লোককে। কাছে গিয়ে কোথায় যাবেন জানতে চাইলে? তিনি জানান, যাবেন বরিশালের বানারীপাড়ায়। থাকেন ঢাকার শনিরআখড়া এলাকায়। কাজ করেন একটি ফার্নিচারের দোকানে।

তার নাম সুরুজ মিয়া। গ্রামে স্ত্রী, ২ সন্তান ও বৃদ্ধ মা রয়েছেন। লকডাউনের কারণে তেমন কাজ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন বাড়িতেও যাওয়া হয় না। তাই ঈদে পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করে বাড়িতে যাচ্ছেন কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় ১০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। তারপর ফেরি পার হয়ে ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে যাবেন বাড়ি। এতে তার খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। লকডাউন না থাকলে ৫০০ টাকায় তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যেতে পারতেন। ‘এই বিধিনিষেধ গরিবের খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে,’ মন্তব্য সুরুজ মিয়ার।

ঈদের এখনও তিন-চার দিন বাকি। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। করোনা সংক্রমণের ভয়ে আছে নানা বিধিনিষেধও। তবে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চালু আছে। করোনার ঝুঁঁকির সঙ্গে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হলেও গ্রামে যাচ্ছেন মানুষ। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করাই তাদের পরম আনন্দের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই দলবেঁধে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বের হওয়ার মুখে ছিল ঘরমুখো মানুষের জটলা। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে তাদের। এই যাত্রাপথে গুনতে হচ্ছে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া। বিশেষ করে বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। অনেককে হেঁটেই গ্রামের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। এই সুযোগে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় শহীদুল ইসলাম নামের শরীয়তপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মার ওপারে আমাদের বাড়ি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। প্রতিবছর ২৭ রমজানের পর বাড়িতে যাই। বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান আছে কিন্তু বাস না থাকায় মাওয়া পর্যন্ত ৮০ টাকার ভাড়া এখন মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা করে দুইজনের জন্য ১০০০ টাকা চাচ্ছে। সিএনজি প্রতিজন ৩০০ টাকা। প্রাইভেকার ৪০০ টাকা। মাইক্রোবাসে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। ফেরি পার হয়ে আবার মোটরসাইকেল না হয় মাইক্রোবাসে বাড়িতে যাব। অন্যান্য সময় বাড়ি যেতে ৩০০ টাকা লাগে। এবার ২-৩ হাজার টাকা খরচ হবে।’

গুলিস্তান এলাকায় মারুফ নামের ফরিদপুরগামী এক যাত্রী বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে জেলার বাস চালু করে লাভ কী? এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মানুষ ঠিকই যাচ্ছে কিন্তু টাকা খরচ হচ্ছে বেশি।’

গতকালও রাজধানীর গাবতলী-আমিনবাজার ব্রিজ, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, সায়দেবাদ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়, কাঁচপুর ব্রিজ, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, বাবুবাজার ব্রিজ, জুরাইন, পোস্তগোলা ব্রিজের ওপরে ছিল গ্রামমুখী মানুষের জটলা। বাস না থাকায় কিছুক্ষণ পর পর পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে এসব মানুষের কিন্তু যাত্রাপথে তাদের মধ্যে ছিল না কোন স্বাস্থ্যবিধি। বেশি ভাড়ায় গাদাগাদি ও গা-ঘেঁষে বসে ছোট যানবাহনে যাতায়াত করতে দেখা গেছে তাদের।

যানবাহনের চাপে মহাসড়কে যানজট

যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকের চাপ বেশি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল ছিল ধীরগতি।

ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যেই ঈদকে সামনে রেখে গত শুক্রবার সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে ফেরিঘাটে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে ফেরিতে যানবাহন পারাপার কঠিন হয়ে পড়ে। গতকালও শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যাত্রীদের চাপের মুখে অবশেষে দিনের বেলাও ফেরি চালুর ঘোষণা দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি)।

শিবচর (মাদারীপুর) থেকে প্রতিনিধি জানান, ঢাকার মাতুয়াইল থেকে কলা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম স্ত্রী রুমা আক্তারকে নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ফেরি, লঞ্চ বন্ধ। তাই ৩ দফা ভেঙে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে দালালের মাধ্যমে জানতে পেরে মাওয়া ট্রলার ঘাটে পৌঁছে ছোট জেলে নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনমতে মূল পদ্মা পার হয়। একেকজনকে গুনতে হয়েছে ৩শ’-৫শ’ টাকা।

এরপর আড়াই কিলোমিটার চর হেঁটে বুড়োর খেয়া ঘাটে ১শ’ টাকায় পার। এরপর ৪শ’ টাকা করে ৩ চাকার যানে বরিশাল রওনা।

ফেরি প্রায় বন্ধ, লঞ্চ-স্পিডবোট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এভাবেই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাচ্ছেন হাজারো দক্ষিণাঞ্চলবাসী। মাঝ চরে নৌ-পুলিশের ২ সদস্য থাকলেও তাদের সামনেই ক্যামেরা দেখে তৎপড়তা বেড়ে তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

শিমুলিয়া ঘাটে আটকেপড়া দীর্ঘ সময় পার করা যাত্রীরা এক শ্রেণীর দালালের সহায়তায় ৫০ টাকা যাত্রীপ্রতি ভ্যানে চড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন মাওয়া ট্রলার ঘাট। সেখানে ছোট বা মাঝারি মাছ ধরা ট্রলারে যাত্রীপ্রতি ৩শ’-৫শ’ টাকা নিয়ে মাঝ পদ্মার চরে (শিবচরের কাঁঠালবাড়ির চরচান্দ্রা ও জাজিরার চরাঞ্চল) নামিয়ে দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। এরপর দুই-আড়াই কিলোমিটার হাঁটা পথ অতিক্রম করে। এরপর শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ও জাজিরার বুড়োর খেয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছেন যাত্রীরা।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালের দিকে ফেরি বন্ধ থাকায় আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে নদী পার হওয়ার জন্য ঘাট এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষা করতে থাকে আবার অনেককে ঘাট এলাকা ও প্রশাসনের নজরদারির বাইরে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকাযোগে নদী পার হতে দেখা গেছে। আবার রোগী ও লাশবাহী গাড়ি পারাপারের জন্য দু’একটি ফেরি চলাচল করলেও এসব ফেরিতে যাত্রীরা হুড়মুড় করে উঠে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন। এসব যাত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুযোগসন্ধানী কিছু লোক বিশেষ ব্যবস্থায় যাত্রীপ্রতি ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে যাত্রী পারাপার করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২

কষ্টের যাত্রা চারগুণ ভাড়া : তারপরও ভিড়

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যেতে হবে গ্রামে। বন্ধ রেল, দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কোন বাহনে যাওয়ার চেষ্টা। গতকাল আমিন বাজার থেকে তোলা ছবি -সোহরাব আলম

রাজধানীর দোলাইরপাড় মোড়। গতকাল দুপুর ২টা। দুই হাতে দু’টি ও কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠতে দেখা গেল মধ্য বয়সী এক লোককে। কাছে গিয়ে কোথায় যাবেন জানতে চাইলে? তিনি জানান, যাবেন বরিশালের বানারীপাড়ায়। থাকেন ঢাকার শনিরআখড়া এলাকায়। কাজ করেন একটি ফার্নিচারের দোকানে।

তার নাম সুরুজ মিয়া। গ্রামে স্ত্রী, ২ সন্তান ও বৃদ্ধ মা রয়েছেন। লকডাউনের কারণে তেমন কাজ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন বাড়িতেও যাওয়া হয় না। তাই ঈদে পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করে বাড়িতে যাচ্ছেন কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় ১০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। তারপর ফেরি পার হয়ে ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে যাবেন বাড়ি। এতে তার খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। লকডাউন না থাকলে ৫০০ টাকায় তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যেতে পারতেন। ‘এই বিধিনিষেধ গরিবের খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে,’ মন্তব্য সুরুজ মিয়ার।

ঈদের এখনও তিন-চার দিন বাকি। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। করোনা সংক্রমণের ভয়ে আছে নানা বিধিনিষেধও। তবে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চালু আছে। করোনার ঝুঁঁকির সঙ্গে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হলেও গ্রামে যাচ্ছেন মানুষ। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করাই তাদের পরম আনন্দের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই দলবেঁধে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বের হওয়ার মুখে ছিল ঘরমুখো মানুষের জটলা। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে তাদের। এই যাত্রাপথে গুনতে হচ্ছে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া। বিশেষ করে বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। অনেককে হেঁটেই গ্রামের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। এই সুযোগে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় শহীদুল ইসলাম নামের শরীয়তপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মার ওপারে আমাদের বাড়ি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। প্রতিবছর ২৭ রমজানের পর বাড়িতে যাই। বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান আছে কিন্তু বাস না থাকায় মাওয়া পর্যন্ত ৮০ টাকার ভাড়া এখন মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা করে দুইজনের জন্য ১০০০ টাকা চাচ্ছে। সিএনজি প্রতিজন ৩০০ টাকা। প্রাইভেকার ৪০০ টাকা। মাইক্রোবাসে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। ফেরি পার হয়ে আবার মোটরসাইকেল না হয় মাইক্রোবাসে বাড়িতে যাব। অন্যান্য সময় বাড়ি যেতে ৩০০ টাকা লাগে। এবার ২-৩ হাজার টাকা খরচ হবে।’

গুলিস্তান এলাকায় মারুফ নামের ফরিদপুরগামী এক যাত্রী বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে জেলার বাস চালু করে লাভ কী? এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মানুষ ঠিকই যাচ্ছে কিন্তু টাকা খরচ হচ্ছে বেশি।’

গতকালও রাজধানীর গাবতলী-আমিনবাজার ব্রিজ, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, সায়দেবাদ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়, কাঁচপুর ব্রিজ, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, বাবুবাজার ব্রিজ, জুরাইন, পোস্তগোলা ব্রিজের ওপরে ছিল গ্রামমুখী মানুষের জটলা। বাস না থাকায় কিছুক্ষণ পর পর পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে এসব মানুষের কিন্তু যাত্রাপথে তাদের মধ্যে ছিল না কোন স্বাস্থ্যবিধি। বেশি ভাড়ায় গাদাগাদি ও গা-ঘেঁষে বসে ছোট যানবাহনে যাতায়াত করতে দেখা গেছে তাদের।

যানবাহনের চাপে মহাসড়কে যানজট

যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকের চাপ বেশি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল ছিল ধীরগতি।

ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যেই ঈদকে সামনে রেখে গত শুক্রবার সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে ফেরিঘাটে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে ফেরিতে যানবাহন পারাপার কঠিন হয়ে পড়ে। গতকালও শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যাত্রীদের চাপের মুখে অবশেষে দিনের বেলাও ফেরি চালুর ঘোষণা দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি)।

শিবচর (মাদারীপুর) থেকে প্রতিনিধি জানান, ঢাকার মাতুয়াইল থেকে কলা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম স্ত্রী রুমা আক্তারকে নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ফেরি, লঞ্চ বন্ধ। তাই ৩ দফা ভেঙে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে দালালের মাধ্যমে জানতে পেরে মাওয়া ট্রলার ঘাটে পৌঁছে ছোট জেলে নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনমতে মূল পদ্মা পার হয়। একেকজনকে গুনতে হয়েছে ৩শ’-৫শ’ টাকা।

এরপর আড়াই কিলোমিটার চর হেঁটে বুড়োর খেয়া ঘাটে ১শ’ টাকায় পার। এরপর ৪শ’ টাকা করে ৩ চাকার যানে বরিশাল রওনা।

ফেরি প্রায় বন্ধ, লঞ্চ-স্পিডবোট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এভাবেই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাচ্ছেন হাজারো দক্ষিণাঞ্চলবাসী। মাঝ চরে নৌ-পুলিশের ২ সদস্য থাকলেও তাদের সামনেই ক্যামেরা দেখে তৎপড়তা বেড়ে তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

শিমুলিয়া ঘাটে আটকেপড়া দীর্ঘ সময় পার করা যাত্রীরা এক শ্রেণীর দালালের সহায়তায় ৫০ টাকা যাত্রীপ্রতি ভ্যানে চড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন মাওয়া ট্রলার ঘাট। সেখানে ছোট বা মাঝারি মাছ ধরা ট্রলারে যাত্রীপ্রতি ৩শ’-৫শ’ টাকা নিয়ে মাঝ পদ্মার চরে (শিবচরের কাঁঠালবাড়ির চরচান্দ্রা ও জাজিরার চরাঞ্চল) নামিয়ে দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। এরপর দুই-আড়াই কিলোমিটার হাঁটা পথ অতিক্রম করে। এরপর শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ও জাজিরার বুড়োর খেয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছেন যাত্রীরা।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালের দিকে ফেরি বন্ধ থাকায় আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে নদী পার হওয়ার জন্য ঘাট এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষা করতে থাকে আবার অনেককে ঘাট এলাকা ও প্রশাসনের নজরদারির বাইরে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকাযোগে নদী পার হতে দেখা গেছে। আবার রোগী ও লাশবাহী গাড়ি পারাপারের জন্য দু’একটি ফেরি চলাচল করলেও এসব ফেরিতে যাত্রীরা হুড়মুড় করে উঠে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন। এসব যাত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুযোগসন্ধানী কিছু লোক বিশেষ ব্যবস্থায় যাত্রীপ্রতি ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে যাত্রী পারাপার করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।