বান্দরবানে অবাধে পাথর উত্তোলন শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণা

পানির তীব্র সংকট, ন্যাড়া হচ্ছে পাহাড়, ক্ষয় হচ্ছে মাটি

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্মমুখী হয়ে পড়েছে। ফলে পানিরস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে অতি খরার কারণে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।

পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের খাবার পানির অন্যতম প্রধান উৎস ঝিরি-ঝর্ণা, খাল ও নদী। এসব জায়গার পানি পান করে তারা জীবন ধারণ করে। তাই শুষ্ক মৌসুমে ঝিরির্ঝণা শুকিয়ে গেলে তাদের তীব্র পানির সংকটে পড়তে হয়। এসব খাল থেকে পাথর উত্তোলন করায় শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই শুকিয়ে যায় ঝিরি র্ঝণা আর খালের পানি। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

নদীর তীরবর্তী মানুষের পানির কষ্ট আরও দ্বিগুণ। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাহাড়ি এসব মানুষের পানির কষ্ট লাঘবের উদ্দ্যেশে পাথর উত্তোলনে আরও কঠোর হওয়ার দরকার প্রশাসন।

এদিকে চলতি মৌসুমে জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সাধারণ জনগণ চরমভাবে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানান যায়, লামার সাতটি, আলীকদম চারটি, নাইক্ষ্যংছড়ি পাঁচটি, চারটিসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এইসব এলাকায় জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত নলকূপ নেই।

যেসব এলঅকায় রিংওয়েল রয়েছে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে পানি পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় রিংওয়েল এবং টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এসব এলাকার মানুষকে পাহাড়ি ঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর পানি পান করতে হয়।

পানি সংকট নিরসনে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় তৎপর রয়েছে জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবতার সেবায় প্রতিনিয়ত পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় ভুক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে খাবার পানি বিতরণ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া লামা যেসব এলাকা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় নেই বা নি¤œআয়ের জনগোষ্ঠীর মানুষের মাঝে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিদিন সকাল-বিকেল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, যেখানে পানির উৎস রয়েছে এমন এলাকাসমূহ থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন এবং পরিবেশ বিনষ্ট করে বনজ সম্পদ ধ্বংস করে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিবছরই জেলায় শুষ্ক মৌসুমে পানির উৎস হারিয়ে যায়। ফলে দুর্গম ও গ্রামীণ এলাকাসমূহে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

তাদের মতে, পাথর উত্তোলনে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও দুর্গম এলাকার আশ-পাশে পাড়াগুলোতে পানি সংকটসহ বনের জীব-বৈচিত্র্য হুমকিমুখে পড়েছে। পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই পাহাড়ি এলাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিনা পারমিটে ঝিরি ও খাল থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঝিরি-ঝর্ণার সব পাথর আহরিত হওয়ায় এখন পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে পাহাড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে মৃক্তিকা ও পানি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বছর শত শত পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে জুমসহ নানা ফসল চাষাবাদ করা হয়। ফলে একদিকে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যায়, অন্যদিকে মাটি ক্ষয় হয়।

এ ছাড়া মানুষের অপ্রয়োজনে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলন পানি সংকটের অন্যতম কারণ। ঝিরিতে পাথর না থাকায় এবং পাহাড়ে পর্যাপ্ত গাছ না থাকার কারণে পানির উৎসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়তে হয়।শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে পানি সংকটের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্র্যি বলেন, জেলায় পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্মমুখী হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক কারণে প্রতিবছর এ সময় পানিরস্তর নিচে চলে যায়।এ বছর বৃষ্টি অনেক দেরিতে হচ্ছে, অনাবৃষ্টির কারণে টিউবওয়েলের পানিরস্তর নিচে নেমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে রিংওয়েল এর আশ-পাশে পানি পাওয়া যায়না সে খানেও পানিটা বন্ধ হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পানির সংকট নিরসন হবে।

বুধবার, ১২ মে ২০২১ , ২৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমজান ১৪৪২

বান্দরবানে অবাধে পাথর উত্তোলন শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণা

পানির তীব্র সংকট, ন্যাড়া হচ্ছে পাহাড়, ক্ষয় হচ্ছে মাটি

মো.শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

image

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে রাজধানীর নিউমার্কেটে ঈদের কেনা-কাটায় উপচেপড়া ভিড় -সংবাদ

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্মমুখী হয়ে পড়েছে। ফলে পানিরস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে অতি খরার কারণে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।

পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের খাবার পানির অন্যতম প্রধান উৎস ঝিরি-ঝর্ণা, খাল ও নদী। এসব জায়গার পানি পান করে তারা জীবন ধারণ করে। তাই শুষ্ক মৌসুমে ঝিরির্ঝণা শুকিয়ে গেলে তাদের তীব্র পানির সংকটে পড়তে হয়। এসব খাল থেকে পাথর উত্তোলন করায় শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই শুকিয়ে যায় ঝিরি র্ঝণা আর খালের পানি। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

নদীর তীরবর্তী মানুষের পানির কষ্ট আরও দ্বিগুণ। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাহাড়ি এসব মানুষের পানির কষ্ট লাঘবের উদ্দ্যেশে পাথর উত্তোলনে আরও কঠোর হওয়ার দরকার প্রশাসন।

এদিকে চলতি মৌসুমে জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সাধারণ জনগণ চরমভাবে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানান যায়, লামার সাতটি, আলীকদম চারটি, নাইক্ষ্যংছড়ি পাঁচটি, চারটিসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এইসব এলাকায় জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত নলকূপ নেই।

যেসব এলঅকায় রিংওয়েল রয়েছে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে পানি পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় রিংওয়েল এবং টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এসব এলাকার মানুষকে পাহাড়ি ঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর পানি পান করতে হয়।

পানি সংকট নিরসনে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় তৎপর রয়েছে জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবতার সেবায় প্রতিনিয়ত পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় ভুক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে খাবার পানি বিতরণ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া লামা যেসব এলাকা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় নেই বা নি¤œআয়ের জনগোষ্ঠীর মানুষের মাঝে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিদিন সকাল-বিকেল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, যেখানে পানির উৎস রয়েছে এমন এলাকাসমূহ থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন এবং পরিবেশ বিনষ্ট করে বনজ সম্পদ ধ্বংস করে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিবছরই জেলায় শুষ্ক মৌসুমে পানির উৎস হারিয়ে যায়। ফলে দুর্গম ও গ্রামীণ এলাকাসমূহে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

তাদের মতে, পাথর উত্তোলনে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও দুর্গম এলাকার আশ-পাশে পাড়াগুলোতে পানি সংকটসহ বনের জীব-বৈচিত্র্য হুমকিমুখে পড়েছে। পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই পাহাড়ি এলাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিনা পারমিটে ঝিরি ও খাল থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঝিরি-ঝর্ণার সব পাথর আহরিত হওয়ায় এখন পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে পাহাড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে মৃক্তিকা ও পানি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বছর শত শত পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে জুমসহ নানা ফসল চাষাবাদ করা হয়। ফলে একদিকে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যায়, অন্যদিকে মাটি ক্ষয় হয়।

এ ছাড়া মানুষের অপ্রয়োজনে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলন পানি সংকটের অন্যতম কারণ। ঝিরিতে পাথর না থাকায় এবং পাহাড়ে পর্যাপ্ত গাছ না থাকার কারণে পানির উৎসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়তে হয়।শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে পানি সংকটের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্র্যি বলেন, জেলায় পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্মমুখী হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক কারণে প্রতিবছর এ সময় পানিরস্তর নিচে চলে যায়।এ বছর বৃষ্টি অনেক দেরিতে হচ্ছে, অনাবৃষ্টির কারণে টিউবওয়েলের পানিরস্তর নিচে নেমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে রিংওয়েল এর আশ-পাশে পানি পাওয়া যায়না সে খানেও পানিটা বন্ধ হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পানির সংকট নিরসন হবে।