এলপি গ্যাস : বেধে দেয়া দামে পাচ্ছে না গ্রাহকরা

১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ৯০০ টাকায় বিক্রির কথা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মে মাস জুড়ে বেসরকারি কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ৯০৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাসিন্দা খোরশেদা বেগম সংবাদকে জানান, ঈদের দুই দিন আগে তিনি ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন এক হাজার ৭০টাকা দিয়ে, যা বাসায় পৌঁছে দিয়ে দোকানদার এগারোশ’ টাকা নিয়েছে।

একই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জাহের মিয়ার। সংবাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি দামে কোন দিন মাল পাওয়া যায় নাকি! খবরে দেখলাম, পত্রিকায়ও পড়লাম ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম এখন ৯০৬ টাকা। কিনতে গেলে ‘হাজার পঞ্চাশ’, এগারোশ’র কমে নাই। দোকানদার পারলে আরও বেশি নেয়। ’

রাজধানীর বাসাবো এলাকার আহাম্মদবাগের বাসিন্দা সাঈফ বাবলু। গতকাল সংবাদকে তিনি জানান, ঈদের তিন-চার দিন আগে স্থানীয় বালুর মাঠ সংলগ্ন এক পরিবেশকের কাছ থেকে ‘বসুন্ধরা ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার’ কিনেছেন এক হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে। তবে এই মূল্যে সিলিন্ডারটি বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

গ্যাস সংকটে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বন্ধ। বাসার রান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাসকে সাশ্রয়ী, সুলভ ও জনপ্রিয় করার কথা বলছে সরকার। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলপি গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েছে। চাহিদার বিপরীতে স্বল্প সময়েই গ্রাহকের দোরগোড়ায় সিলিন্ডার পৌঁছে যাচ্ছে। তবে সাশ্রয়ী না হওয়ায় এলপিজি এখনও জনপ্রিয় হয়নি। ভোক্তারা রান্নার কাজে এ গ্যাস ব্যবহার করছেন অনেকটা ঠেকায় পড়ে।

এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ভর করে ‘সৌদি আরামকো’ কর্তৃক নির্ধারিত দামের ওপর। সৌদি আরবের এ তেল কোম্পানি প্রতি মাসে এলজিপির একটি দাম ঘোষণা করে।

‘সৌদি আরামকো’ ঘোষিত দর মূল্যায়ন করে গত ২৯ এপ্রিল দেশে মে মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৬ টাকা পুননির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের আদেশ অনুযায়ী এ দামে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা আমলে না নিয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছেন অধিকাংশ বিক্রেতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্যান্য জেলায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় একই ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এগারোশ’ থেকে সাড়ে এগারোশ’ টাকায়। যা বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোথাও দেড় থেকে দুইশ’, আবার কোথাও প্রায় আড়াইশ’ টাকা বেশি।

এলপি গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে বাজারে সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের দাম বেঁধে দেয় গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। সে সময় ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ওই দামে গ্যাস কিনতে পারেননি অধিকাংশ ভোক্তা।

সে সময় এলপিজি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা পণ্যটি আমদানির নানা খরচ তুলে ধরে কমিশনের কাছে সিলিন্ডার প্রতি আরও প্রায় ৩০০ টাকার মতো মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত (এপ্রিল) মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি’র কাঁচামাল বিউটেন ও প্রোপেনের দাম হ্রাস পায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় পণ্যটির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৬ টাকা পুননির্ধারণ করা হয়। দুই দফায় দাম পুননির্ধারণ করা হলেও খুচরা বাজারে বিইআরসির আদেশ যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি।

বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সব জায়গায় দাম বেশি নিচ্ছে, এমন তথ্য সঠিক নয়। রংপুর, দিনাজপুর, খুলনাসহ অনেক জায়গায় নির্ধারিত মূল্যে, আবার কোথাও এর চেয়ে কমেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঢাকা, বরিশালসহ কয়েকটি জেলায় দাম বেশি রাখা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।’

মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এককভাবে কমিশনের এলপিজি’র মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। নির্ধারিত নতুন দাম সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নে সময় লাগবে। এলপিজি পরিবেশকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। গণমাধ্যম, ভোক্তা অধিকার সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও সরকারি সংস্থাগুলোর পারষ্পরিক সহযোগিতায় এটি করা সম্ভব। কমিশন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে রিটেইল প্রাইস (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) দেখে দোকানির সঙ্গে দর-দাম করা গেলে এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে।’

গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দোকানদার এলপি গ্যাসের দামের সঙ্গে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছানোর খচর জুড়ে দেয়। গ্রাহক ওই খরচটা ধরে সিলিন্ডারের দাম বলে। তবে কোথাও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হলে কমিশনকে লিখিতভাবে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিভিন্ন এলাকার এলপিজি পরিবেশকদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বেশি হচ্ছে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না। লোকসান দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে কিছু টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

দেশের এলপিজি কোম্পানিগুলোর মতে, কমিশন নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বাজারজাতকরণ সম্ভব নয়। কারণ বিইআরসি যে পরিমাণ খরচ ধরে এলপি গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে, সেখানে আরও বেশকিছু খরচ রয়েছে। বিশেষত সিলিন্ডার প্রাইজ, ডিলার ইনভেস্টমেন্ট এবং রিটেইলার পরিবহন খরচ কমিশনের ধারা হিসাবের চেয়ে বেশি। এছাড়া কোম্পানিগুলো সিলিন্ডারে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। এসব খরচ যোগ করলে, এলপি গ্যাস কিনতে ক্রেতাদের খরচ আরও বাড়বে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেডসহ (এলপিজিএল) বর্তমানে দেশে এলপিজি আমদানি, মজুদ, বিতরণের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ এক মিলিয়ন টন যার ৯৮ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে।

অবশিষ্ট দুই শতাংশ এলপিজি সরবরাহ করা হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। বিইআরসি’র আদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় এলপিজিএল সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি করে ৫৯১ টাকায়। তবে সাধারণ ভোক্তারা এ দামে সিলিন্ডার পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে এলপিজিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, এলপিজিএল পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ওয়েলকে এলপি গ্যাস সরবরাহ করে। তারা তাদের পরিবেশকদের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে এ গ্যাস সরবরাহ করে। এখনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হয় কিনা, বিষয়টা বিইআরসি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

এলপিজিএলের প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত কিছু মানুষ এলপি গ্যাস পায়। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয় কিনা, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আবু হানিফ বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি সাত দিন যাবত। এ বিষয়টি আমি কঠোর নজরদারি করব। কোন অনিয়ম পেলে এভাবে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে।’

মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২

এলপি গ্যাস : বেধে দেয়া দামে পাচ্ছে না গ্রাহকরা

১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ৯০০ টাকায় বিক্রির কথা

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মে মাস জুড়ে বেসরকারি কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ৯০৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাসিন্দা খোরশেদা বেগম সংবাদকে জানান, ঈদের দুই দিন আগে তিনি ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন এক হাজার ৭০টাকা দিয়ে, যা বাসায় পৌঁছে দিয়ে দোকানদার এগারোশ’ টাকা নিয়েছে।

একই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জাহের মিয়ার। সংবাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি দামে কোন দিন মাল পাওয়া যায় নাকি! খবরে দেখলাম, পত্রিকায়ও পড়লাম ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম এখন ৯০৬ টাকা। কিনতে গেলে ‘হাজার পঞ্চাশ’, এগারোশ’র কমে নাই। দোকানদার পারলে আরও বেশি নেয়। ’

রাজধানীর বাসাবো এলাকার আহাম্মদবাগের বাসিন্দা সাঈফ বাবলু। গতকাল সংবাদকে তিনি জানান, ঈদের তিন-চার দিন আগে স্থানীয় বালুর মাঠ সংলগ্ন এক পরিবেশকের কাছ থেকে ‘বসুন্ধরা ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার’ কিনেছেন এক হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে। তবে এই মূল্যে সিলিন্ডারটি বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

গ্যাস সংকটে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বন্ধ। বাসার রান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাসকে সাশ্রয়ী, সুলভ ও জনপ্রিয় করার কথা বলছে সরকার। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলপি গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েছে। চাহিদার বিপরীতে স্বল্প সময়েই গ্রাহকের দোরগোড়ায় সিলিন্ডার পৌঁছে যাচ্ছে। তবে সাশ্রয়ী না হওয়ায় এলপিজি এখনও জনপ্রিয় হয়নি। ভোক্তারা রান্নার কাজে এ গ্যাস ব্যবহার করছেন অনেকটা ঠেকায় পড়ে।

এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ভর করে ‘সৌদি আরামকো’ কর্তৃক নির্ধারিত দামের ওপর। সৌদি আরবের এ তেল কোম্পানি প্রতি মাসে এলজিপির একটি দাম ঘোষণা করে।

‘সৌদি আরামকো’ ঘোষিত দর মূল্যায়ন করে গত ২৯ এপ্রিল দেশে মে মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৬ টাকা পুননির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের আদেশ অনুযায়ী এ দামে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা আমলে না নিয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছেন অধিকাংশ বিক্রেতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্যান্য জেলায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় একই ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এগারোশ’ থেকে সাড়ে এগারোশ’ টাকায়। যা বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোথাও দেড় থেকে দুইশ’, আবার কোথাও প্রায় আড়াইশ’ টাকা বেশি।

এলপি গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে বাজারে সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের দাম বেঁধে দেয় গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। সে সময় ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ওই দামে গ্যাস কিনতে পারেননি অধিকাংশ ভোক্তা।

সে সময় এলপিজি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা পণ্যটি আমদানির নানা খরচ তুলে ধরে কমিশনের কাছে সিলিন্ডার প্রতি আরও প্রায় ৩০০ টাকার মতো মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত (এপ্রিল) মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি’র কাঁচামাল বিউটেন ও প্রোপেনের দাম হ্রাস পায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় পণ্যটির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৬ টাকা পুননির্ধারণ করা হয়। দুই দফায় দাম পুননির্ধারণ করা হলেও খুচরা বাজারে বিইআরসির আদেশ যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি।

বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সব জায়গায় দাম বেশি নিচ্ছে, এমন তথ্য সঠিক নয়। রংপুর, দিনাজপুর, খুলনাসহ অনেক জায়গায় নির্ধারিত মূল্যে, আবার কোথাও এর চেয়ে কমেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঢাকা, বরিশালসহ কয়েকটি জেলায় দাম বেশি রাখা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।’

মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এককভাবে কমিশনের এলপিজি’র মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। নির্ধারিত নতুন দাম সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নে সময় লাগবে। এলপিজি পরিবেশকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। গণমাধ্যম, ভোক্তা অধিকার সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও সরকারি সংস্থাগুলোর পারষ্পরিক সহযোগিতায় এটি করা সম্ভব। কমিশন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে রিটেইল প্রাইস (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) দেখে দোকানির সঙ্গে দর-দাম করা গেলে এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে।’

গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দোকানদার এলপি গ্যাসের দামের সঙ্গে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছানোর খচর জুড়ে দেয়। গ্রাহক ওই খরচটা ধরে সিলিন্ডারের দাম বলে। তবে কোথাও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হলে কমিশনকে লিখিতভাবে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিভিন্ন এলাকার এলপিজি পরিবেশকদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বেশি হচ্ছে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না। লোকসান দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে কিছু টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

দেশের এলপিজি কোম্পানিগুলোর মতে, কমিশন নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বাজারজাতকরণ সম্ভব নয়। কারণ বিইআরসি যে পরিমাণ খরচ ধরে এলপি গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে, সেখানে আরও বেশকিছু খরচ রয়েছে। বিশেষত সিলিন্ডার প্রাইজ, ডিলার ইনভেস্টমেন্ট এবং রিটেইলার পরিবহন খরচ কমিশনের ধারা হিসাবের চেয়ে বেশি। এছাড়া কোম্পানিগুলো সিলিন্ডারে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। এসব খরচ যোগ করলে, এলপি গ্যাস কিনতে ক্রেতাদের খরচ আরও বাড়বে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেডসহ (এলপিজিএল) বর্তমানে দেশে এলপিজি আমদানি, মজুদ, বিতরণের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ এক মিলিয়ন টন যার ৯৮ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে।

অবশিষ্ট দুই শতাংশ এলপিজি সরবরাহ করা হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। বিইআরসি’র আদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় এলপিজিএল সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি করে ৫৯১ টাকায়। তবে সাধারণ ভোক্তারা এ দামে সিলিন্ডার পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে এলপিজিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ সংবাদকে বলেন, এলপিজিএল পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ওয়েলকে এলপি গ্যাস সরবরাহ করে। তারা তাদের পরিবেশকদের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে এ গ্যাস সরবরাহ করে। এখনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা হয় কিনা, বিষয়টা বিইআরসি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

এলপিজিএলের প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত কিছু মানুষ এলপি গ্যাস পায়। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয় কিনা, সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আবু হানিফ বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি সাত দিন যাবত। এ বিষয়টি আমি কঠোর নজরদারি করব। কোন অনিয়ম পেলে এভাবে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে।’