রোজিনা গ্রেপ্তারে সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও দীর্ঘ সময় আটকে রেখে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।

এদিকে, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এছাড়া দেশজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবের প্রতি ধিক্কার জানান এবং মন্ত্রী-সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।

অন্যদিকে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।

তাছাড় দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান ও পেশাগত দায়িত্বপালনে সব সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রশাসনযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্থান হলো সচিবালয়। সেখানে একজন জ্যেষ্ঠ নারী সাংবাদিককে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। প্রশাসনের গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন করে রোজিনা ইসলাম যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তাতে তার তৈরি করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো যে সঠিক ছিল, সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ : সচিবালয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা হেনস্তার পর প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় সোপর্দ, মামলা দায়ের, সারারাত থানায় রাখা, আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন, জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ প্রকাশ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদের পক্ষে, সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম এক বিবৃতিতে বলেন, সম্পাদক পরিষদ গভীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছে, ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই যুগে এই সময়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমলের করা আইনে মামলা দায়ের সংশ্লিষ্টদের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের নেতিবাচক মনোভাব ও অশুভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের জন্য হুমকি।

রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি এডিটরস গিল্ড

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি করেছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড। সোমবার রাতে সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।

এডিটরস গিল্ড মনে করে, দেশের স্বনামখ্যাত একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও কেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে কারা দায়ী সেইসব ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সত্য তুলে ধরা, মিথ্যা উন্মোচন করা, দুর্নীতির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার কাজ। রোজিনা ইসলাম সেই কাজ করছিলেন। যদি কোথাও কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকে তবে আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুরাহাই কাম্য। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।

জাতীয় প্রেসক্লাব

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনা প্রতিবাদ জানান তারা।

নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার এবং রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। তারা জানান, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্টাফদের আচরণে তারা ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। নেতারা অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

বিএসআরএফ-বিএইচআরএফ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি ডিইউজের

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

এক বিবৃতিতে নেতারা বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়র দুষ্টু কর্মকর্তা সিন্ডিক্যাটের আশোভন আচরণের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। প্রশাসনের এখতিয়ার বহির্ভূত এই তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে জড়িত গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আগামী ২০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ডিআরইউ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান গতকাল এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক, মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন।

এইচআরএসএস

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

সিপিজে

রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। সোমবার সিপিজে এক বিবৃতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত বন্ধ ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

ক্রীড়া সাংবাদিক

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারে প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্রীড়া সাংবাদিকরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি সাধারণত উৎসবমুখর থাকে দর্শকদের উপস্থিতিতে। সেই গ্যালারি গতকাল রূপ নেয় প্রতিবাদের মঞ্চে।

বিএনপি মহাসচিব

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ দাবি জানান।

জাতীয় পার্টি

রোজিনা ইসলামকে আটক ও হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাম গণতান্ত্রিক জোট

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিক গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে এই জোট।

১১ বিশিষ্ট নাগরিক

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার মুক্তিলাভে সরকার বিবেচকের ভূমিকা পালন করবেন। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা, সরকারের ঘোষিত এই দুই নীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

বিবৃতি দেয়া ১১ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, আবদুস সেলিম ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

ঐক্য ন্যাপ : ঐক্য ন্যাপ-এর সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভুঁইয়া এক বিবৃতিতে রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানানো হয়।

টিআইবি

রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা এবং রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে যেভাবে নথি চুরির অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছে তাতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই ঘটনাকে ‘দুর্নীতিবাজদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের একটি হুঁশিয়ারি বার্তা’ হিসেবে দেখছে টিআইবি। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

মানবাধিকার কমিশন

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চায় প্রথম আলো

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাকে হেনস্তাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে তারই কর্মস্থল দৈনিক প্রথম আলো। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তাকারীদের বিচার ও তার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে প্রথম আলো।

মানববন্ধনে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, গত কিছুদিন ধরে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন। সেই রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ফুটে উঠেছে। আমরা মনে করি সেসব রিপোর্টের কারণে যারা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন রোজিনা ইসলাম। আমরা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। আমরা আদালতের ওপর আস্থাশীল, আমরা ন্যায়বিচার পাব। রোজিনার সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়েছে, সাংবাদিকতা উপকৃত হয়েছে এবং দেশ উপকৃত হয়েছে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আমরা জামিনের জন্য আবেদন করেছি। আমরা চাই তার মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করা হোক। তাকে মুক্তি দেয়া হোক। এটি আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও হতে পারে। একজন নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি এই মামলা মিথ্যা মামলা। এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।

এছাড়া রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা ও মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির দুই অংশের সদস্যরা, পটুয়াখালী প্রেসক্লাব, বরগুনা প্রেসক্লাব, জামালপুর প্রেসক্লাব, শ্রীপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, রংপুর প্রেসক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, সিলেটে টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা), সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস), যশোরে সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠন, রাঙামাটি প্রেসক্লাব, পাবনা প্রেসক্লাব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা শাখা, বগুড়ার সান্তাহার প্রেসক্লাবে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব, সৈয়দপুরে প্রথম আলো বন্ধুসভা, মেহেরপুরের গাংনী প্রেসক্লাব, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং লালমনিরহাটে কর্মরত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ সব সাংবাদিকরা।

বুধবার, ১৯ মে ২০২১ , ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৬ শাওয়াল ১৪৪২

রোজিনা গ্রেপ্তারে সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও দীর্ঘ সময় আটকে রেখে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।

এদিকে, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এছাড়া দেশজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবের প্রতি ধিক্কার জানান এবং মন্ত্রী-সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।

অন্যদিকে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।

তাছাড় দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান ও পেশাগত দায়িত্বপালনে সব সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রশাসনযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্থান হলো সচিবালয়। সেখানে একজন জ্যেষ্ঠ নারী সাংবাদিককে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। প্রশাসনের গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন করে রোজিনা ইসলাম যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তাতে তার তৈরি করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো যে সঠিক ছিল, সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ : সচিবালয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা হেনস্তার পর প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় সোপর্দ, মামলা দায়ের, সারারাত থানায় রাখা, আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন, জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ প্রকাশ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদের পক্ষে, সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম এক বিবৃতিতে বলেন, সম্পাদক পরিষদ গভীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছে, ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই যুগে এই সময়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমলের করা আইনে মামলা দায়ের সংশ্লিষ্টদের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের নেতিবাচক মনোভাব ও অশুভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের জন্য হুমকি।

রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি এডিটরস গিল্ড

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি করেছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড। সোমবার রাতে সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।

এডিটরস গিল্ড মনে করে, দেশের স্বনামখ্যাত একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও কেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে কারা দায়ী সেইসব ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সত্য তুলে ধরা, মিথ্যা উন্মোচন করা, দুর্নীতির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার কাজ। রোজিনা ইসলাম সেই কাজ করছিলেন। যদি কোথাও কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকে তবে আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুরাহাই কাম্য। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।

জাতীয় প্রেসক্লাব

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনা প্রতিবাদ জানান তারা।

নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার এবং রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। তারা জানান, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্টাফদের আচরণে তারা ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। নেতারা অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

বিএসআরএফ-বিএইচআরএফ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকা সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি ডিইউজের

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

এক বিবৃতিতে নেতারা বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়র দুষ্টু কর্মকর্তা সিন্ডিক্যাটের আশোভন আচরণের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। প্রশাসনের এখতিয়ার বহির্ভূত এই তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে জড়িত গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আগামী ২০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ডিআরইউ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান গতকাল এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক, মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন।

এইচআরএসএস

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

সিপিজে

রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। সোমবার সিপিজে এক বিবৃতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত বন্ধ ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

ক্রীড়া সাংবাদিক

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারে প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্রীড়া সাংবাদিকরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি সাধারণত উৎসবমুখর থাকে দর্শকদের উপস্থিতিতে। সেই গ্যালারি গতকাল রূপ নেয় প্রতিবাদের মঞ্চে।

বিএনপি মহাসচিব

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ দাবি জানান।

জাতীয় পার্টি

রোজিনা ইসলামকে আটক ও হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাম গণতান্ত্রিক জোট

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিক গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে এই জোট।

১১ বিশিষ্ট নাগরিক

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার মুক্তিলাভে সরকার বিবেচকের ভূমিকা পালন করবেন। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা, সরকারের ঘোষিত এই দুই নীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

বিবৃতি দেয়া ১১ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, আবদুস সেলিম ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

ঐক্য ন্যাপ : ঐক্য ন্যাপ-এর সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভুঁইয়া এক বিবৃতিতে রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানানো হয়।

টিআইবি

রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা এবং রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে যেভাবে নথি চুরির অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছে তাতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই ঘটনাকে ‘দুর্নীতিবাজদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের একটি হুঁশিয়ারি বার্তা’ হিসেবে দেখছে টিআইবি। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

মানবাধিকার কমিশন

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চায় প্রথম আলো

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাকে হেনস্তাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে তারই কর্মস্থল দৈনিক প্রথম আলো। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তাকারীদের বিচার ও তার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে প্রথম আলো।

মানববন্ধনে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, গত কিছুদিন ধরে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন। সেই রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ফুটে উঠেছে। আমরা মনে করি সেসব রিপোর্টের কারণে যারা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন রোজিনা ইসলাম। আমরা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। আমরা আদালতের ওপর আস্থাশীল, আমরা ন্যায়বিচার পাব। রোজিনার সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়েছে, সাংবাদিকতা উপকৃত হয়েছে এবং দেশ উপকৃত হয়েছে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আমরা জামিনের জন্য আবেদন করেছি। আমরা চাই তার মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করা হোক। তাকে মুক্তি দেয়া হোক। এটি আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও হতে পারে। একজন নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি এই মামলা মিথ্যা মামলা। এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।

এছাড়া রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা ও মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির দুই অংশের সদস্যরা, পটুয়াখালী প্রেসক্লাব, বরগুনা প্রেসক্লাব, জামালপুর প্রেসক্লাব, শ্রীপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, রংপুর প্রেসক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, সিলেটে টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা), সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস), যশোরে সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠন, রাঙামাটি প্রেসক্লাব, পাবনা প্রেসক্লাব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা শাখা, বগুড়ার সান্তাহার প্রেসক্লাবে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব, সৈয়দপুরে প্রথম আলো বন্ধুসভা, মেহেরপুরের গাংনী প্রেসক্লাব, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং লালমনিরহাটে কর্মরত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ সব সাংবাদিকরা।