ইউপি নির্বাচন : সংঘর্ষ, গুলি, বোমা ৩ জন নিহত

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, বিএনপির বর্জন; এর মধ্যে ইউপি নির্বাচনে ঝরে গেল তিনটি তাজা প্রাণ। সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণে আহত অর্ধশতাধিক।

লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন, দুটি পৌরসভা এবং প্রথম পর্যায়ের দেশের ১৩ জেলার ৪১ উপজেলার ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গতকাল ভোট হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। ভোট শেষে ঢাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব বলেন, দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তি পূর্ণ হয়েছে।

সংবাদের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ইউপিতে নৌকার বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থী না থাকায় বেশিরভাগ চেয়ারম্যান পদে ভোট ছিল নিরুত্তাপ। ২৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় নির্বাচনী উত্তাপ ছিল। তবে নির্দলীয় সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছু এলাকায় সংঘর্ষে রূপ নেয়।

চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ ও গোলাগুলি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও গুলি চালায়। এ সময় মনির নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী ইয়াসিন ও ইউনুস সিকদারের সমর্থকরা বেলা ১১টায় চরফকিরা কো-এড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শুরু হয় গোলাগুলি। এ সংঘাতে আরও তিন জন আহত হন।

নিহত মো. মনির (২৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন বাশাক জানান।

জেলার পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ১২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।’

গৌরনদীতে নিহত দুই : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের পরে সংঘর্ষে আবু বকর ফকির (২৫) নামের এক যুবক নিহত হন। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। পাঙ্গাসিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন ব্রিজের ঢালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু বক্কর ফকির খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের খাঞ্জাপুর গ্রামের আনজু ফকিরের ছেলে। পেশায় তিনি ভ্যানচালক ছিলেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী (টিউবওয়েল) ইউপি সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন মৃধার সমর্থক ছিলেন আবু বক্কর। বোমা হামলায় বিজয়ী প্রার্থীর আরও চার সমর্থক আহত হন।

এর আগে দুপুরে একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমার বিস্ফোরণে এক বৃদ্ধ নিহত হন। বোমা বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষে আহত পাঁচ জনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নিহত মৌজে আলী মৃধা (৬৫) খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মৃধার ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রের বাইরে সদস্য পদপ্রার্থী ফিরোজ মৃধা ও মন্টু হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে।

গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর ভোট দিতে কেন্দ্রে ঢোকে। এ সময় জাল ভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ জানান প্রতিপক্ষ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা। এ নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তর্ক থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়।’

এই সময় একাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে জানিয়ে ওসি বলেন, বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন ভোট দিতে আসা মৌজে আলী মৃধা। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

কমলনগর : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। দুপুর দেড়টায় তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। আহত আটজনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ওই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর (ঘোড়া মার্কা প্রতীক) কর্মী-সমর্থকরা তার গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময়, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রতন ও তার লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

বেতাগী : এদিকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইউসুফ শরীফের বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীসহ ১২ জনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। এ সময় বসত-ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসিুফ শরীফের পরিবারের অভিযোগ, একই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী ইমাম হাসান শিপনের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

একই উপজেলার বেতাগী সদর ও বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নে পৃথক নির্বাচনী সহিংসতায় তিন জনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করার খবর পাওয়া গেছে।

হিজলা : হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের খাগেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জেরে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও ৮টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতার কারণে ঘণ্টাখানেক ভোট বন্ধ থাকে।

একই উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে এক আনসার সদস্য ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানেও ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এখানেও কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়।

বাবুগঞ্জ : বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের আবুল কালার ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় দেড় ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে। নষ্ট হয় ২০ থেকে ২৫টি ব্যালট।

এই জেলার মুলাদী উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন গাছুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোকসেদ মীর ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল মালেক শিকদার।

উজিরপুর : উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেন।

তজুমদ্দিন : ভোলার তজুমদ্দিনের চাচরা ইউনিয়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নান। তিনি সেখানে পুনর্নির্বাচনের দাবিও করেন।

সম্ভুপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তাবিষয়ক উপসচিব আশহাফুল রহমান তিন পোলিং এজেন্টকে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেন।

এছাড়া দেশের আরও কিছু ইউপিতে দুই প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ইসি সচিব : দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় শন্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবীর খন্দকার বলেন, ‘ভোলা ও গৌরনদীতে দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। কোন মৃত্যুই কারও কাছে কাম্য নয়। প্রার্থী ও সমর্থকদের কারণে এটা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তদন্তের পরে বিস্তারিত জানা যাবে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা পর্যালোচনা করা হবে।’

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ , ৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১০ জিলকদ ১৪৪২

ইউপি নির্বাচন : সংঘর্ষ, গুলি, বোমা ৩ জন নিহত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে নারী ভোটারের ব্যাপক অংশগ্রহণ -সংবাদ

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, বিএনপির বর্জন; এর মধ্যে ইউপি নির্বাচনে ঝরে গেল তিনটি তাজা প্রাণ। সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণে আহত অর্ধশতাধিক।

লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন, দুটি পৌরসভা এবং প্রথম পর্যায়ের দেশের ১৩ জেলার ৪১ উপজেলার ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গতকাল ভোট হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। ভোট শেষে ঢাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব বলেন, দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তি পূর্ণ হয়েছে।

সংবাদের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ইউপিতে নৌকার বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থী না থাকায় বেশিরভাগ চেয়ারম্যান পদে ভোট ছিল নিরুত্তাপ। ২৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় নির্বাচনী উত্তাপ ছিল। তবে নির্দলীয় সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছু এলাকায় সংঘর্ষে রূপ নেয়।

চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ ও গোলাগুলি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও গুলি চালায়। এ সময় মনির নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী ইয়াসিন ও ইউনুস সিকদারের সমর্থকরা বেলা ১১টায় চরফকিরা কো-এড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শুরু হয় গোলাগুলি। এ সংঘাতে আরও তিন জন আহত হন।

নিহত মো. মনির (২৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন বাশাক জানান।

জেলার পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ১২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।’

গৌরনদীতে নিহত দুই : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের পরে সংঘর্ষে আবু বকর ফকির (২৫) নামের এক যুবক নিহত হন। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। পাঙ্গাসিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন ব্রিজের ঢালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু বক্কর ফকির খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের খাঞ্জাপুর গ্রামের আনজু ফকিরের ছেলে। পেশায় তিনি ভ্যানচালক ছিলেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী (টিউবওয়েল) ইউপি সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন মৃধার সমর্থক ছিলেন আবু বক্কর। বোমা হামলায় বিজয়ী প্রার্থীর আরও চার সমর্থক আহত হন।

এর আগে দুপুরে একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমার বিস্ফোরণে এক বৃদ্ধ নিহত হন। বোমা বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষে আহত পাঁচ জনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নিহত মৌজে আলী মৃধা (৬৫) খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মৃধার ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রের বাইরে সদস্য পদপ্রার্থী ফিরোজ মৃধা ও মন্টু হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে।

গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর ভোট দিতে কেন্দ্রে ঢোকে। এ সময় জাল ভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ জানান প্রতিপক্ষ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা। এ নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তর্ক থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়।’

এই সময় একাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে জানিয়ে ওসি বলেন, বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন ভোট দিতে আসা মৌজে আলী মৃধা। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

কমলনগর : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। দুপুর দেড়টায় তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। আহত আটজনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ওই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর (ঘোড়া মার্কা প্রতীক) কর্মী-সমর্থকরা তার গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময়, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রতন ও তার লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

বেতাগী : এদিকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইউসুফ শরীফের বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীসহ ১২ জনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। এ সময় বসত-ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসিুফ শরীফের পরিবারের অভিযোগ, একই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী ইমাম হাসান শিপনের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

একই উপজেলার বেতাগী সদর ও বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নে পৃথক নির্বাচনী সহিংসতায় তিন জনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করার খবর পাওয়া গেছে।

হিজলা : হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের খাগেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জেরে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও ৮টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতার কারণে ঘণ্টাখানেক ভোট বন্ধ থাকে।

একই উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে এক আনসার সদস্য ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানেও ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এখানেও কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়।

বাবুগঞ্জ : বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের আবুল কালার ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় দেড় ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে। নষ্ট হয় ২০ থেকে ২৫টি ব্যালট।

এই জেলার মুলাদী উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন গাছুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোকসেদ মীর ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল মালেক শিকদার।

উজিরপুর : উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেন।

তজুমদ্দিন : ভোলার তজুমদ্দিনের চাচরা ইউনিয়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নান। তিনি সেখানে পুনর্নির্বাচনের দাবিও করেন।

সম্ভুপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তাবিষয়ক উপসচিব আশহাফুল রহমান তিন পোলিং এজেন্টকে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেন।

এছাড়া দেশের আরও কিছু ইউপিতে দুই প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ইসি সচিব : দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় শন্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবীর খন্দকার বলেন, ‘ভোলা ও গৌরনদীতে দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। কোন মৃত্যুই কারও কাছে কাম্য নয়। প্রার্থী ও সমর্থকদের কারণে এটা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তদন্তের পরে বিস্তারিত জানা যাবে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা পর্যালোচনা করা হবে।’