নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে ভেঙে ভেঙে গ্রামে যাচ্ছেন

রাজধানীর শনির আখড়া মোড়। গতকাল দুপুর আড়াইটা। বৃষ্টিতে অর্ধভেজা জামা গায়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন মধ্যবয়সী ‘তারা মিয়া’। কাছে গিয়ে কোথায় যাবেন জানতে বলেন, ‘নীলফামারিতে গ্রামের বাড়িতে যাব। লকডানের কারণে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। প্রথমে ঢাকা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত যাব। সেখান থেকে বড় ট্রাকে করে যাব। আমাদের অনেকেই গেছেন। এতে খরচ একটু বেশি লাগবে। কিন্তু উপায় নেই। ঢাকা থেকে খাব কী? মেস তো বন্ধ।’

তারা মিয়া। রাজধানীর শনির আখড়ায় একটি মেস চালান। তার মেসের বেশিরভাগ সদস্য রিকশাচালক। এদের বেশিরভাগের গ্রামের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। লকডাউন ঘোষণায় অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। দুই-একজন বাকি ছিল তারাও গতকাল চলে গেছেন। তাই মেস বন্ধ করে এখন তিনি গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু সড়কে এসে দেখেন কোন যানবাহন নেই। তাই অপেক্ষা। মোটরসাইকেলে ১০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চন্দ্রা যাবেন। কিন্তু তাও পাচ্ছেন না। এর মধ্যে বৃষ্টি তার অর্ধেক শরীর ভিজে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা। মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই তার।

‘কঠোর লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকার প্রবেশমুখে এভাবে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেকেই। কেউ কেউ মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও অটোকিশায় বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের।

‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণায় গত সপ্তাহ থেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন বহু মানুষ। যারা গ্রামের যাচ্ছেন এদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। যারা দৈনন্দিন আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। লকডাউনে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এদের বেশিরভাগেই স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে কঠোর এই বিধিনিষেধ। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। সড়কে রিকশা চলাচল করলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। এতে হতাশা প্রকাশ করছেন অনেক রিকশাচালক। লকডাউনে তাদের পেট চলে না বলে জানান তারা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়নাল নামের এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনের আগে প্রতিদিন হাজার/বারোশো টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন ২০০ টাকাও রোজগার হয় না। রিকশার জমার টাকাও উঠে না। তাই বড় কষ্টে আছি। গতকাল বৃষ্টির কারণে আরও খারাপ অবস্থা।’ তবে একদিন রিকশা না চালাইলে সংসার চলে না বলে জানান তিনি।

গুলিস্তান এলাকায় মতিন নামের অন্য এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, ‘পেটের দায়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। যাত্রী নেই। গতকাল দুই-একজন পাওয়া গেলেও আজ (শুক্রবার) বৃষ্টির কারণে তাও নেই। ভোরে বের হয়েছি, যাত্রী পাই না। কয়েকবার বৃষ্টিতে ভিজেছি। দুপুর পর্যন্ত তিনজন যাত্রী পেয়েছি। দুপুরে খাবার খেয়ে এখন দেড়শ’ টাকা আছে। দিনশেষে কত টাকা যেতে পারব আল্লাহই ভালো জানেন।’

দয়াগঞ্জ এলাকার রিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘ঢাকায় গত দশ বছর রিকশা চালাই। কোনদিন জটিল কোন রোগ হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজলে হালকা সর্দি-কাশি হয়। দুই-একদিন পর তা এমনেই ভালো হয়ে যায়। কোন রিকশাচালকের করোনা হয় না।’ লকডাউন দিয়ে সরকার আমাদের গরিব মানুষদের আরও বিপদে ফেলেছে বলে জানান তিনি।

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

জীবিকা সংকটের কারণে

নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে ভেঙে ভেঙে গ্রামে যাচ্ছেন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

রাজধানীর শনির আখড়া মোড়। গতকাল দুপুর আড়াইটা। বৃষ্টিতে অর্ধভেজা জামা গায়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন মধ্যবয়সী ‘তারা মিয়া’। কাছে গিয়ে কোথায় যাবেন জানতে বলেন, ‘নীলফামারিতে গ্রামের বাড়িতে যাব। লকডানের কারণে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। প্রথমে ঢাকা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত যাব। সেখান থেকে বড় ট্রাকে করে যাব। আমাদের অনেকেই গেছেন। এতে খরচ একটু বেশি লাগবে। কিন্তু উপায় নেই। ঢাকা থেকে খাব কী? মেস তো বন্ধ।’

তারা মিয়া। রাজধানীর শনির আখড়ায় একটি মেস চালান। তার মেসের বেশিরভাগ সদস্য রিকশাচালক। এদের বেশিরভাগের গ্রামের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। লকডাউন ঘোষণায় অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। দুই-একজন বাকি ছিল তারাও গতকাল চলে গেছেন। তাই মেস বন্ধ করে এখন তিনি গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু সড়কে এসে দেখেন কোন যানবাহন নেই। তাই অপেক্ষা। মোটরসাইকেলে ১০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চন্দ্রা যাবেন। কিন্তু তাও পাচ্ছেন না। এর মধ্যে বৃষ্টি তার অর্ধেক শরীর ভিজে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা। মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই তার।

‘কঠোর লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকার প্রবেশমুখে এভাবে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেকেই। কেউ কেউ মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও অটোকিশায় বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের।

‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণায় গত সপ্তাহ থেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন বহু মানুষ। যারা গ্রামের যাচ্ছেন এদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। যারা দৈনন্দিন আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। লকডাউনে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এদের বেশিরভাগেই স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে কঠোর এই বিধিনিষেধ। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। সড়কে রিকশা চলাচল করলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। এতে হতাশা প্রকাশ করছেন অনেক রিকশাচালক। লকডাউনে তাদের পেট চলে না বলে জানান তারা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়নাল নামের এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউনের আগে প্রতিদিন হাজার/বারোশো টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন ২০০ টাকাও রোজগার হয় না। রিকশার জমার টাকাও উঠে না। তাই বড় কষ্টে আছি। গতকাল বৃষ্টির কারণে আরও খারাপ অবস্থা।’ তবে একদিন রিকশা না চালাইলে সংসার চলে না বলে জানান তিনি।

গুলিস্তান এলাকায় মতিন নামের অন্য এক রিকশাচালক সংবাদকে বলেন, ‘পেটের দায়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। যাত্রী নেই। গতকাল দুই-একজন পাওয়া গেলেও আজ (শুক্রবার) বৃষ্টির কারণে তাও নেই। ভোরে বের হয়েছি, যাত্রী পাই না। কয়েকবার বৃষ্টিতে ভিজেছি। দুপুর পর্যন্ত তিনজন যাত্রী পেয়েছি। দুপুরে খাবার খেয়ে এখন দেড়শ’ টাকা আছে। দিনশেষে কত টাকা যেতে পারব আল্লাহই ভালো জানেন।’

দয়াগঞ্জ এলাকার রিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘ঢাকায় গত দশ বছর রিকশা চালাই। কোনদিন জটিল কোন রোগ হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজলে হালকা সর্দি-কাশি হয়। দুই-একদিন পর তা এমনেই ভালো হয়ে যায়। কোন রিকশাচালকের করোনা হয় না।’ লকডাউন দিয়ে সরকার আমাদের গরিব মানুষদের আরও বিপদে ফেলেছে বলে জানান তিনি।