২২ ঘণ্টার ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষার দুই ফল

দেশে করোনার টেস্ট নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যেমন নতুন নয়, তেমনি ভুল রিপোর্টে দুর্ভোগ পোহানোর নজিরও নেহায়েত কম নয়। এর ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পরিবার। প্রভা হেলথ সেন্টারের করোনা পরীক্ষায় ভুল রিপোর্টের কারণে পরিবারটিকে প্রায় দশ লাখ টাকার মাশুল গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন, ব্যারিস্টার শফিকের স্ত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম। এ ঘটনার জেরে লন্ডনযাত্রা বাতিল হওয়ায় মেয়ের স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ড. মাহফুজ শফিক। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানান তিনি।

জানা যায়, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ছেলের বউ ও দুই নাতনি লন্ডনে যাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টা আগে প্রাভা হেলথে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন। ৭ ঘণ্টা পর পাঠানো ফলাফলে তাদের তিনজনেরই পজেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু নমুনা দেয়া কারোরই কোন উপসর্গ না থাকায় এই রিপোর্টে সন্দেহ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। পরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পরদিন তাদের আবার টেস্ট করালে সবার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।

মাত্র ২২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে দু’রকম ফল আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। মুঠোফোনে তিনি সংবাদকে জানান, ছোট মেয়ে জেইন স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে পড়তে যাবে। তার ভর্তি সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সারতে বড় মেয়ে বায়ানকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী ফারজানা রহমান ৯ জুলাই সেখানে যাবেন বলে বিমান টিকিট নিশ্চিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৭ জুলাই বিকেল ৫টায় তারা তিনজনই রাজধানীর বনানীস্থ প্রাভা হেলথ সেন্টারে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে আসেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাদের মোবাইল ফোনে পজেটিভ ফলাফলের মেসেজ আসে। কিন্তু নমুনা দেয়া করোই কোন উপসর্গ না থাকায় এ ফলাফলে সন্দেহ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। পরে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর গ্রিন ডেল্টা হাসপাতালে নিজের নমুনা দিয়ে আসেন তিনি। এতে পরদিন সকালে নেগেটিভ রিপোর্ট এলে স্ত্রী-সন্তানদের রিপোর্টের বিষয়ে তার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান মাহফুজ।

বয়স্ক বাবা-মার সুরক্ষা চিন্তা করে ৮ জুলাই রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের অনুরোধ জানান তিনি। এতে প্রাভা হেলথের পরীক্ষায় পজেটিভ হওয়া স্ত্রী-মেয়েসহ মোট ২০ জনের নমুনা দেয়া হয়। পরদিন ৯ জুলাই রাতে সব কটি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

মাহফুজ বলেন, ‘প্রথমত কারোই কোন উপসর্গ ছিল না। দ্বিতীয়ত, সবাই একসঙ্গে থেকেও আমার নেগেটিভ আর ওদের পজেটিভ রিপোর্ট আসায় আমার সন্দেহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রাভা হেলথের ক্রমাগত তাগাদায় সে সন্দেহ আরও নতুন মাত্রা পায়।’ ড. মাহফুজ আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাভা কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করে কোন সাড়া মেলেনি, উল্টো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন যন্ত্রপাতি সজ্জিত দাবি করে, ভুল ফলাফলের আশঙ্কা উড়িয়ে দেন তারা।

প্রাভা হেলথের ভুল রিপোর্টের কারণে তার পরিবার ৭২ ঘণ্টা অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করল, প্রায় ১০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলো উল্লেখ করে এর প্রতিকার দাবি করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির এমন আচরণ শুধুই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, নাকি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যুদ্ধ বানচালের ষড়যন্ত্র, তাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান ড. মাহফুজ। এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগে যেন আর কোন সাহেদ করিমের জন্ম না হয়, সে বিষয়টিও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তদারকির অনুরোধ করেন তিনি। একই সঙ্গে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা না নিলে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া আচরণে প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান ড. মাহফুজ শফিক।

এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ ব্যারিস্টার শফিকের স্ত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘আমার বা আমার পরিবারের স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই এ ঘটনার বিহিত হওয়া উচিত। করোনা পরীক্ষা নিয়ে যে নানা অভিযোগ-অনুযোগ এতদিন শুনেছি, আজ তা আমার পরিবারের সঙ্গেও ঘটল এ ঘটনায় আমি হতাশ, হতবাক।’

এ সময় দুর্নীতির ভারে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের বাড়িও ভেঙে পড়ছে, উল্লেখ করে, অল্প সংখ্যক অসৎ মানুষের জন্য গোটা সমাজকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এই একুশে পদকপ্রাপ্ত নারী নেত্রী। সরকারের প্রতি তদন্ত সাপেক্ষে এসব দুর্নীতির মূলোৎপাটনের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষকেও এসবের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বার বার চেষ্টা করেও প্রাভা হেলথ কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা যায়নি। প্রাভার কল সেন্টারে যোগাযোগ করে সিনিয়র ল্যাব পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরিচয় জানার পর তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১ জিলহজ্জ ১৪৪২

২২ ঘণ্টার ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষার দুই ফল

জাহিদা পারভেজ

দেশে করোনার টেস্ট নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যেমন নতুন নয়, তেমনি ভুল রিপোর্টে দুর্ভোগ পোহানোর নজিরও নেহায়েত কম নয়। এর ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পরিবার। প্রভা হেলথ সেন্টারের করোনা পরীক্ষায় ভুল রিপোর্টের কারণে পরিবারটিকে প্রায় দশ লাখ টাকার মাশুল গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন, ব্যারিস্টার শফিকের স্ত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম। এ ঘটনার জেরে লন্ডনযাত্রা বাতিল হওয়ায় মেয়ের স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ড. মাহফুজ শফিক। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানান তিনি।

জানা যায়, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ছেলের বউ ও দুই নাতনি লন্ডনে যাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টা আগে প্রাভা হেলথে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন। ৭ ঘণ্টা পর পাঠানো ফলাফলে তাদের তিনজনেরই পজেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু নমুনা দেয়া কারোরই কোন উপসর্গ না থাকায় এই রিপোর্টে সন্দেহ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। পরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পরদিন তাদের আবার টেস্ট করালে সবার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।

মাত্র ২২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে দু’রকম ফল আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। মুঠোফোনে তিনি সংবাদকে জানান, ছোট মেয়ে জেইন স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে পড়তে যাবে। তার ভর্তি সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সারতে বড় মেয়ে বায়ানকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী ফারজানা রহমান ৯ জুলাই সেখানে যাবেন বলে বিমান টিকিট নিশ্চিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৭ জুলাই বিকেল ৫টায় তারা তিনজনই রাজধানীর বনানীস্থ প্রাভা হেলথ সেন্টারে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে আসেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাদের মোবাইল ফোনে পজেটিভ ফলাফলের মেসেজ আসে। কিন্তু নমুনা দেয়া করোই কোন উপসর্গ না থাকায় এ ফলাফলে সন্দেহ প্রকাশ করেন ড. মাহফুজ। পরে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর গ্রিন ডেল্টা হাসপাতালে নিজের নমুনা দিয়ে আসেন তিনি। এতে পরদিন সকালে নেগেটিভ রিপোর্ট এলে স্ত্রী-সন্তানদের রিপোর্টের বিষয়ে তার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান মাহফুজ।

বয়স্ক বাবা-মার সুরক্ষা চিন্তা করে ৮ জুলাই রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের অনুরোধ জানান তিনি। এতে প্রাভা হেলথের পরীক্ষায় পজেটিভ হওয়া স্ত্রী-মেয়েসহ মোট ২০ জনের নমুনা দেয়া হয়। পরদিন ৯ জুলাই রাতে সব কটি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

মাহফুজ বলেন, ‘প্রথমত কারোই কোন উপসর্গ ছিল না। দ্বিতীয়ত, সবাই একসঙ্গে থেকেও আমার নেগেটিভ আর ওদের পজেটিভ রিপোর্ট আসায় আমার সন্দেহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রাভা হেলথের ক্রমাগত তাগাদায় সে সন্দেহ আরও নতুন মাত্রা পায়।’ ড. মাহফুজ আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাভা কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করে কোন সাড়া মেলেনি, উল্টো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন যন্ত্রপাতি সজ্জিত দাবি করে, ভুল ফলাফলের আশঙ্কা উড়িয়ে দেন তারা।

প্রাভা হেলথের ভুল রিপোর্টের কারণে তার পরিবার ৭২ ঘণ্টা অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করল, প্রায় ১০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলো উল্লেখ করে এর প্রতিকার দাবি করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির এমন আচরণ শুধুই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, নাকি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যুদ্ধ বানচালের ষড়যন্ত্র, তাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান ড. মাহফুজ। এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগে যেন আর কোন সাহেদ করিমের জন্ম না হয়, সে বিষয়টিও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তদারকির অনুরোধ করেন তিনি। একই সঙ্গে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা না নিলে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া আচরণে প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান ড. মাহফুজ শফিক।

এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ ব্যারিস্টার শফিকের স্ত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘আমার বা আমার পরিবারের স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই এ ঘটনার বিহিত হওয়া উচিত। করোনা পরীক্ষা নিয়ে যে নানা অভিযোগ-অনুযোগ এতদিন শুনেছি, আজ তা আমার পরিবারের সঙ্গেও ঘটল এ ঘটনায় আমি হতাশ, হতবাক।’

এ সময় দুর্নীতির ভারে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের বাড়িও ভেঙে পড়ছে, উল্লেখ করে, অল্প সংখ্যক অসৎ মানুষের জন্য গোটা সমাজকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এই একুশে পদকপ্রাপ্ত নারী নেত্রী। সরকারের প্রতি তদন্ত সাপেক্ষে এসব দুর্নীতির মূলোৎপাটনের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষকেও এসবের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বার বার চেষ্টা করেও প্রাভা হেলথ কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা যায়নি। প্রাভার কল সেন্টারে যোগাযোগ করে সিনিয়র ল্যাব পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরিচয় জানার পর তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।