ইপিজেড স্থাপনের প্রতিবাদে সাঁওতাল-বাঙালিদের বিক্ষোভ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবিতে উপজেলার কাটামোড় এলাকায় গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত এ সমাবেশ চলে। এর আগে কয়েকশ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপজেলার মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে কাটামোড় এলাকায় সমবেত হয়। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বাঙালিরাও এতে অংশ নেয়। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সহকারী কোষাধ্যক্ষ প্রিসিলা মুরমু ও সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক সুফল হেমব্রম, গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ স¤পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির, আইনজীবী পলাশ কান্তি বর্মণ, বাবুল রবিদাস, মানবাধিকার কর্মী সন্ধ্যা মালো, আদিবাসি নেতা মৃণাল কান্তি, সাঁওতাল নেতা শ্যামল মাড্ডি, মানিক সরেন, বাবলু টুডু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ইপিজেড নির্মাণে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটিকে (বেপজা) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে ইপিজেড নির্মাণ করা হলে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি থাকবে না। তাই এখানে ইপেজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে। সরকার এখানে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া কোন জাতিকে পেছনে ফেলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু একটি কিছু কুচক্রিমহল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা করে তিন ফসলির জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পাঁয়তারা করছে। এ জমি এক সময় সাঁওতাল বাঙালিদের বাপ-দাদার জমি ছিল। সেখানে আখের চাষাবাদ হতো। চিনিকল যে শর্তে জমি অধিগ্রহণ করেছিল তা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে ওই জমি পৈত্রিকসূত্রে সাঁওতাল বাঙালিরা মালিক।

বক্তারা বলেন, জমির জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে জীবন দিতে হয়েছে। বর্তমানে জমিতে তারা ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদী চাষাবাদ করছেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনেক জায়গা সরকারের পতিত রয়েছে। সেখানেও ইপিজেড হতে পারে। কিন্তু সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে ইপিজেড নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় এক হাজার ৮৩২ একর জমি রয়েছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। কিন্তু ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর এসব জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংর্ঘষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। এরপর থেকে সাঁওতালরা এ জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

জমি উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এ দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছে।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

গোবিন্দগঞ্জে

ইপিজেড স্থাপনের প্রতিবাদে সাঁওতাল-বাঙালিদের বিক্ষোভ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবিতে উপজেলার কাটামোড় এলাকায় গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত এ সমাবেশ চলে। এর আগে কয়েকশ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপজেলার মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে কাটামোড় এলাকায় সমবেত হয়। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বাঙালিরাও এতে অংশ নেয়। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সহকারী কোষাধ্যক্ষ প্রিসিলা মুরমু ও সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক সুফল হেমব্রম, গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ স¤পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির, আইনজীবী পলাশ কান্তি বর্মণ, বাবুল রবিদাস, মানবাধিকার কর্মী সন্ধ্যা মালো, আদিবাসি নেতা মৃণাল কান্তি, সাঁওতাল নেতা শ্যামল মাড্ডি, মানিক সরেন, বাবলু টুডু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ইপিজেড নির্মাণে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটিকে (বেপজা) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে ইপিজেড নির্মাণ করা হলে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি থাকবে না। তাই এখানে ইপেজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে। সরকার এখানে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া কোন জাতিকে পেছনে ফেলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু একটি কিছু কুচক্রিমহল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা করে তিন ফসলির জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পাঁয়তারা করছে। এ জমি এক সময় সাঁওতাল বাঙালিদের বাপ-দাদার জমি ছিল। সেখানে আখের চাষাবাদ হতো। চিনিকল যে শর্তে জমি অধিগ্রহণ করেছিল তা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে ওই জমি পৈত্রিকসূত্রে সাঁওতাল বাঙালিরা মালিক।

বক্তারা বলেন, জমির জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে জীবন দিতে হয়েছে। বর্তমানে জমিতে তারা ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদী চাষাবাদ করছেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনেক জায়গা সরকারের পতিত রয়েছে। সেখানেও ইপিজেড হতে পারে। কিন্তু সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে ইপিজেড নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় এক হাজার ৮৩২ একর জমি রয়েছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। কিন্তু ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর এসব জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংর্ঘষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। এরপর থেকে সাঁওতালরা এ জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

জমি উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এ দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) সাহেবগঞ্জ বাগদা র্ফাম এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছে।