রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা

দীর্ঘদিনেও থানা কমিটি গঠন হয়নি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেই

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চলছে চরম স্থবিরতা। দীর্ঘ আড়াই বছরেও থানা কমিটি গঠিত হয়নি। ওয়ার্ড কমিটিগুলোর মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেলেও নতুন করে সম্মেলন করার কোন উদ্যোগ নেই। আর দেড় বছর পর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, অথচ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় নির্বাচনের ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ফলে নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা আর ক্ষোভ।

মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে তারও দেড় বছর পর। অন্যদিকে আড়াই বছরেও থানা কমিটির সম্মেলন কিংবা কমিটি গঠন করা হয়নি। কমিটি না থাকায় দলের কোন কর্মকাণ্ড নেই ফলে সৃষ্টি হয়েছে চরম স্থবিরতা। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের ৩৩টি ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও এখনও সম্মেলন বা কাউন্সিল হয়নি। এর আগে থানা কমিটি গঠন করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও সেই কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ।

মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এ প্রতিনিধিকে জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর রংপুর মহানগরীতে ছয়টি থানা হয়েছে। কিন্তু এর আগে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে তখনও থানা কমিটি গঠন করা হয়নি। কমিটি ছাড়াই জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলেছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী প্রয়াত শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের সবগুলোর ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে দলের নেতা-কর্মীদের। তারপরেও ওয়ার্ড বা থানা কমিটির সম্মেলন বা কাউন্সিল করার কোন উদ্যোগ নেই। এর আগে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল স্বপন মহানগরীর ছয়টি থানা সম্মেলন করার জন্য কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিলেও করোনার কারণে সেই কমিটি সম্মেলন করতে পারেনি। বর্তমানে স্বপনের স্থলে শফিকুল ইসলাম নামে আর একজন নেতাকে রংপুর বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উনি অচিরেই সম্মেলন করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন জানান মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে সম্মেলন করার কোন উদ্যোগ নেই।

একইভাবে থানা কমিটিও হচ্ছে না। দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হলে এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্মেলন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন সাংগঠনিক কাঠামো না থাকলে সামনে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আমাদের তো তেমন কোন প্রস্তুতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলকে শক্তিশালী করতে সব পর্যায়ে সম্মেলন কাউন্সিল করে নতুন করে দলের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনার কথা বলেছেন সেটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট দিলশাদ হোসেন মুকুল বলেছেন, আমরা থানা কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে থানা কমিটি গঠন এবং মেয়াদ শেষ হওয়া ওয়ার্ড কমিটি গঠনের। এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আগামী মাসে মহানগর আওয়ামী লীগে থানা কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য বর্ধিত সভা করা হবে সেখানেই তারিখ ঘোষণা হবে। একই কথা জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান। তিনি বলেন এ মাসেই বর্ধিত সভা করার কথা ছিল, সেটি সামনের মাসের প্রথম দিকে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা

দীর্ঘদিনেও থানা কমিটি গঠন হয়নি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেই

লিয়াকত আলী বাদল রংপুর

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে চলছে চরম স্থবিরতা। দীর্ঘ আড়াই বছরেও থানা কমিটি গঠিত হয়নি। ওয়ার্ড কমিটিগুলোর মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেলেও নতুন করে সম্মেলন করার কোন উদ্যোগ নেই। আর দেড় বছর পর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, অথচ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় নির্বাচনের ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ফলে নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা আর ক্ষোভ।

মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে তারও দেড় বছর পর। অন্যদিকে আড়াই বছরেও থানা কমিটির সম্মেলন কিংবা কমিটি গঠন করা হয়নি। কমিটি না থাকায় দলের কোন কর্মকাণ্ড নেই ফলে সৃষ্টি হয়েছে চরম স্থবিরতা। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের ৩৩টি ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও এখনও সম্মেলন বা কাউন্সিল হয়নি। এর আগে থানা কমিটি গঠন করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও সেই কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ।

মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এ প্রতিনিধিকে জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর রংপুর মহানগরীতে ছয়টি থানা হয়েছে। কিন্তু এর আগে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে তখনও থানা কমিটি গঠন করা হয়নি। কমিটি ছাড়াই জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলেছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী প্রয়াত শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের সবগুলোর ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে দলের নেতা-কর্মীদের। তারপরেও ওয়ার্ড বা থানা কমিটির সম্মেলন বা কাউন্সিল করার কোন উদ্যোগ নেই। এর আগে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল স্বপন মহানগরীর ছয়টি থানা সম্মেলন করার জন্য কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিলেও করোনার কারণে সেই কমিটি সম্মেলন করতে পারেনি। বর্তমানে স্বপনের স্থলে শফিকুল ইসলাম নামে আর একজন নেতাকে রংপুর বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উনি অচিরেই সম্মেলন করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন জানান মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে সম্মেলন করার কোন উদ্যোগ নেই।

একইভাবে থানা কমিটিও হচ্ছে না। দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হলে এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্মেলন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন সাংগঠনিক কাঠামো না থাকলে সামনে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আমাদের তো তেমন কোন প্রস্তুতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলকে শক্তিশালী করতে সব পর্যায়ে সম্মেলন কাউন্সিল করে নতুন করে দলের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনার কথা বলেছেন সেটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট দিলশাদ হোসেন মুকুল বলেছেন, আমরা থানা কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে থানা কমিটি গঠন এবং মেয়াদ শেষ হওয়া ওয়ার্ড কমিটি গঠনের। এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আগামী মাসে মহানগর আওয়ামী লীগে থানা কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য বর্ধিত সভা করা হবে সেখানেই তারিখ ঘোষণা হবে। একই কথা জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান। তিনি বলেন এ মাসেই বর্ধিত সভা করার কথা ছিল, সেটি সামনের মাসের প্রথম দিকে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।