চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, সমস্যা সমাধানে ৮ দফা পদক্ষেপ

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বর্তমানে বাংলাদেশের ভয়াবহ সমস্যা উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘চলতি বছরে গত ৯ মাসে চলন্ত ট্রেনে ১১০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি এবং আহত হয়েছেন ২৯ জন রেলযাত্রী ও কর্মী।’ তাই সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা তৈরিসহ ৮ দফা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল রেলভবনের যমুনা সম্মেলন কক্ষে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় রেল সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহদাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘উন্নত বিশ্বেও এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোতেও এই সমস্যা রয়েছে। সেখানে ট্রেনের জানালায় নিক্ষেপ করা বড় পাথর দ্বারা যাত্রী এবং ট্রেনের কর্মীরা আহত হয়েছেন।’

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল উপমহাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে কোন না কোন স্থানে শিশু ও দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং ক্রমেই তা ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের হার বেড়েছে এবং এতে ট্রেনের গার্ড, কর্মচারীসহ যাত্রীরা আহত হয়েছেন। এতে কেউ চোখ হারিয়েছেন, এমনকি মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটেছে।’

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের চারটি জেলার পাঁচটি চিহ্নিত এলাকা হলোÑ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকু-ের বাড়বকু-, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ এবং নরসিংদী জেলার নরসিংদী, জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকা।’

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার ১৫টি এলাকা হলো- চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা আউটার, নাটোরের আবদুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া, পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার বড়ালব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এবং খুলনার ফুলতালা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে জানান রেলমন্ত্রী।

পাথর নিক্ষেপ রোধে প্রচারণা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি গঠন, পাথর নিক্ষেপের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে তথ্য চিত্র প্রকাশ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আধা-সরকারি পত্র প্রেরণ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, সমস্যা সমাধানে ৮ দফা পদক্ষেপ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বর্তমানে বাংলাদেশের ভয়াবহ সমস্যা উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘চলতি বছরে গত ৯ মাসে চলন্ত ট্রেনে ১১০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি এবং আহত হয়েছেন ২৯ জন রেলযাত্রী ও কর্মী।’ তাই সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা তৈরিসহ ৮ দফা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল রেলভবনের যমুনা সম্মেলন কক্ষে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় রেল সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহদাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘উন্নত বিশ্বেও এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোতেও এই সমস্যা রয়েছে। সেখানে ট্রেনের জানালায় নিক্ষেপ করা বড় পাথর দ্বারা যাত্রী এবং ট্রেনের কর্মীরা আহত হয়েছেন।’

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল উপমহাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে কোন না কোন স্থানে শিশু ও দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং ক্রমেই তা ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের হার বেড়েছে এবং এতে ট্রেনের গার্ড, কর্মচারীসহ যাত্রীরা আহত হয়েছেন। এতে কেউ চোখ হারিয়েছেন, এমনকি মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটেছে।’

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের চারটি জেলার পাঁচটি চিহ্নিত এলাকা হলোÑ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকু-ের বাড়বকু-, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ এবং নরসিংদী জেলার নরসিংদী, জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকা।’

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার ১৫টি এলাকা হলো- চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা আউটার, নাটোরের আবদুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া, পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার বড়ালব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এবং খুলনার ফুলতালা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে জানান রেলমন্ত্রী।

পাথর নিক্ষেপ রোধে প্রচারণা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি গঠন, পাথর নিক্ষেপের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে তথ্য চিত্র প্রকাশ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আধা-সরকারি পত্র প্রেরণ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।