তিনবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হাসপাতালে ১৭ ডাক্তার সংকট

৭ বছর ধরে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ

নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ইওসি সেবায় তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেলেও এখন জনবল ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হওয়ায় গরিব অসহায় ও নিম্নœ আয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের নারীদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দীর্ঘ ৭ বছর সার্জনের অভাবে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পর প্রতি মাসে ২ বার করে সিজার অপারেশন করা হবে বলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২টি অপারেশনের মধ্যে দিয়ে চালু করা হলেও কয়েক মাস চলার পর আবারো বন্ধ হয়ে যায় এই কার্যক্রম। এছাড়াও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চোখের চিকিৎসার নেই কোন ইউনিট, দন্ত্য চিকিৎসক থাকলেও যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা সেবা হচ্ছে ব্যাহত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী ধামইরহাট, সাপাহার, বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলার অনেক অসহায় রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি। অথচ সিজিরিয়ান অপারেশন বন্ধসহ নানা সঙ্কটে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী ও সি.এইচ.সি.পি-র ১৮১ জন পদের মধ্যে জনবল আছে ১৩৮ জন। শূন্যপদ রয়েছে ৪৩টি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। শূন্যপদ রয়েছে ১৭ জন। মাঠ পর্যায়ে ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ জন। শূন্যপদ রয়েছে ২টি। স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৪০ জনের পদ থাকলেও রয়েছে ২৭ জন। শূন্যপদ রয়েছে ১৩টি। এছাড়া ডিজিটাল এক্স-রে (সি.আর) মেশিন না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় গুরুতর আহত জখম এবং করোনার সময়ে উপসর্গের রোগীদের জন্য এক্স-রে করা জরুরী হলেও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না।

আবার রোগীদের সেবায় নিয়োজিত দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স চালকের অভাবে পড়ে রয়েছে। অপরদিকে, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সরকারি বাজেট অনুযায়ী চাহিদার ৫ ভাগের ১ ভাগ রোগীর চাহিদা মেটানোও সম্ভব হচ্ছে না।

মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পরিবারের কয়েকজন প্রসূতি মায়েরা জানান, তাদের গর্ভে থাকা ৭, ৮, ৯ মাসের বাচ্চা যদি সিজার অপারেশন করতে হয় তাহলে প্রাইভেট ক্লিনিকে করতে হবে। তাতে করে অনেক টাকা লাগবে এজন্য আমাদের ঋণ করতে হবে। রোগীদের অভিযোগ, উপযুক্ত সেবা না পেয়ে সামান্য সমস্যাতেই রোগীদের নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ রোগীরা জেলা শহরসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর হয়ে পরেছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সদরের বাসিন্দা এরফান বলেন, আমার বোন সন্তান সম্ভবা। হাসপাতালে নিয়ে এসে শুনি এখানে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, এনেস্থেশিয়া ও সার্জনের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই আবার চালু করা হবে। এখানে কোন আই ইউনিট নেই, জনবলসহ যন্ত্রাংশ সঙ্কটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে এই সঙ্কট সমাধান হবে এতে রোগীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।

মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ , ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

তিনবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হাসপাতালে ১৭ ডাক্তার সংকট

৭ বছর ধরে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধ

সানজাদ রয়েল সাগর, বদলগাছী (নওগাঁ)

নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ইওসি সেবায় তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেলেও এখন জনবল ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হওয়ায় গরিব অসহায় ও নিম্নœ আয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের নারীদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দীর্ঘ ৭ বছর সার্জনের অভাবে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পর প্রতি মাসে ২ বার করে সিজার অপারেশন করা হবে বলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২টি অপারেশনের মধ্যে দিয়ে চালু করা হলেও কয়েক মাস চলার পর আবারো বন্ধ হয়ে যায় এই কার্যক্রম। এছাড়াও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চোখের চিকিৎসার নেই কোন ইউনিট, দন্ত্য চিকিৎসক থাকলেও যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা সেবা হচ্ছে ব্যাহত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী ধামইরহাট, সাপাহার, বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলার অনেক অসহায় রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি। অথচ সিজিরিয়ান অপারেশন বন্ধসহ নানা সঙ্কটে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী ও সি.এইচ.সি.পি-র ১৮১ জন পদের মধ্যে জনবল আছে ১৩৮ জন। শূন্যপদ রয়েছে ৪৩টি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। শূন্যপদ রয়েছে ১৭ জন। মাঠ পর্যায়ে ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ জন। শূন্যপদ রয়েছে ২টি। স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৪০ জনের পদ থাকলেও রয়েছে ২৭ জন। শূন্যপদ রয়েছে ১৩টি। এছাড়া ডিজিটাল এক্স-রে (সি.আর) মেশিন না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় গুরুতর আহত জখম এবং করোনার সময়ে উপসর্গের রোগীদের জন্য এক্স-রে করা জরুরী হলেও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না।

আবার রোগীদের সেবায় নিয়োজিত দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স চালকের অভাবে পড়ে রয়েছে। অপরদিকে, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সরকারি বাজেট অনুযায়ী চাহিদার ৫ ভাগের ১ ভাগ রোগীর চাহিদা মেটানোও সম্ভব হচ্ছে না।

মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পরিবারের কয়েকজন প্রসূতি মায়েরা জানান, তাদের গর্ভে থাকা ৭, ৮, ৯ মাসের বাচ্চা যদি সিজার অপারেশন করতে হয় তাহলে প্রাইভেট ক্লিনিকে করতে হবে। তাতে করে অনেক টাকা লাগবে এজন্য আমাদের ঋণ করতে হবে। রোগীদের অভিযোগ, উপযুক্ত সেবা না পেয়ে সামান্য সমস্যাতেই রোগীদের নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ রোগীরা জেলা শহরসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর হয়ে পরেছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সদরের বাসিন্দা এরফান বলেন, আমার বোন সন্তান সম্ভবা। হাসপাতালে নিয়ে এসে শুনি এখানে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, এনেস্থেশিয়া ও সার্জনের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শীঘ্রই আবার চালু করা হবে। এখানে কোন আই ইউনিট নেই, জনবলসহ যন্ত্রাংশ সঙ্কটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে এই সঙ্কট সমাধান হবে এতে রোগীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।