বাংলার শস্য ভাণ্ডার খ্যাত ধান-নদী-খালের বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন ধানের ছড়া যথেষ্ট আশা জাগালেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে কৃষকের কপালে ভাজ পড়েছে। সারাবছরের আশার সম্পদ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ অর্থাৎ ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ থেকে দাবি করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টন চাল।
এ পর্যন্ত আমনের খরিপ-২ মৌসুমে এই অঞ্চলে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি না হলেও থোর অবস্থা থেকে ধান বেরিয়ে পাকা শুরু হতেই মেঘলা আকাশসহ হালকা বৃষ্টি পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। ভাটির এলাকা বিধায় বরিশাল অঞ্চলের অনেক জমিতে এখনো কিছুটা পানিও রয়েছে। কিন্তু ধানের সবুজ ছড়া যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে পেকে উঠছে সেসময়েই এ ধরনের আবহাওয়ায় ঝড় হলে সব ধানের গোছা মাটিতে মিশে যাওয়া এমনকি ঝড় বৃষ্টি না হলেও মাজরা পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।
দেশে চলতি আমন মৌসুমে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। সে লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সারাদেশের প্রায় ৬৫ ভাগ জমির আমন কাটা সম্পন্ন হলেও বরিশাল অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২২ ভাগের মতো। ফলে মাঠে প্রায় ৭৮ ভাগ আমন কাটা বাকি থাকার মধ্যেই প্রকৃতিক দুর্যোগ এখন কৃষকের দরজায় কড়া নাড়ছে। দুশ্চিন্তায় এই অঞ্চলের কৃষকরা।
গতবছর প্রকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টরে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয়। যা আগের বছরের চেয়ে বেশি হলেও বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং ভাদ্র মাসের বড় অমাবস্যায় এই অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে প্রকৃতি নির্ভর ধান উৎপাদনে।
এদিকে বরিশাল অঞ্চল এখনো হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আমন আবাদে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছেনি। সারাদেশে ২.৪৫ লাখ হেক্টরের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে এ ধানের আবাদ হচ্ছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মতো। অপরদিকে সারাদেশে মাত্র ১.৫২ টন উৎপাদনক্ষম স্থানীয় সনাতন জাতের যে ধানের আবাদ হচ্ছে ৮ লাখ হেক্টরে তারমধ্যে শুধু এই অঞ্চলেই এককভাবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে কম ফলনশীল ওই ধানের আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে প্রচুর জমিতে আমনের আবাদ হলেও উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হওয়ায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনকি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধানের আবাদও বাড়ছে না। তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা এবার আমনের ভাল ও নির্বিঘœ উৎপাদনের প্রতিক্ষায় ছিল। এমনকি খুব তাড়াতাড়ি আকাশ পরিষ্কার হলে ফলনও ভাল হওয়ার আশা করছে। এ ব্যাপারে ডিএইর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নœচাপটি আঘাত হানার সম্ভবনা কম হলেও তার প্রভাবে বৃষ্টিসহ গত দুদিন বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যা এই মুহূর্তে আমনের জন্য অনুকূল নয়। তারপরেও আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ , ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল
বাংলার শস্য ভাণ্ডার খ্যাত ধান-নদী-খালের বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন ধানের ছড়া যথেষ্ট আশা জাগালেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে কৃষকের কপালে ভাজ পড়েছে। সারাবছরের আশার সম্পদ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ অর্থাৎ ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ থেকে দাবি করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টন চাল।
এ পর্যন্ত আমনের খরিপ-২ মৌসুমে এই অঞ্চলে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি না হলেও থোর অবস্থা থেকে ধান বেরিয়ে পাকা শুরু হতেই মেঘলা আকাশসহ হালকা বৃষ্টি পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। ভাটির এলাকা বিধায় বরিশাল অঞ্চলের অনেক জমিতে এখনো কিছুটা পানিও রয়েছে। কিন্তু ধানের সবুজ ছড়া যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে পেকে উঠছে সেসময়েই এ ধরনের আবহাওয়ায় ঝড় হলে সব ধানের গোছা মাটিতে মিশে যাওয়া এমনকি ঝড় বৃষ্টি না হলেও মাজরা পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।
দেশে চলতি আমন মৌসুমে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। সে লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সারাদেশের প্রায় ৬৫ ভাগ জমির আমন কাটা সম্পন্ন হলেও বরিশাল অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২২ ভাগের মতো। ফলে মাঠে প্রায় ৭৮ ভাগ আমন কাটা বাকি থাকার মধ্যেই প্রকৃতিক দুর্যোগ এখন কৃষকের দরজায় কড়া নাড়ছে। দুশ্চিন্তায় এই অঞ্চলের কৃষকরা।
গতবছর প্রকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টরে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয়। যা আগের বছরের চেয়ে বেশি হলেও বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং ভাদ্র মাসের বড় অমাবস্যায় এই অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে প্রকৃতি নির্ভর ধান উৎপাদনে।
এদিকে বরিশাল অঞ্চল এখনো হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আমন আবাদে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছেনি। সারাদেশে ২.৪৫ লাখ হেক্টরের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে এ ধানের আবাদ হচ্ছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মতো। অপরদিকে সারাদেশে মাত্র ১.৫২ টন উৎপাদনক্ষম স্থানীয় সনাতন জাতের যে ধানের আবাদ হচ্ছে ৮ লাখ হেক্টরে তারমধ্যে শুধু এই অঞ্চলেই এককভাবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে কম ফলনশীল ওই ধানের আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে প্রচুর জমিতে আমনের আবাদ হলেও উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হওয়ায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনকি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধানের আবাদও বাড়ছে না। তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা এবার আমনের ভাল ও নির্বিঘœ উৎপাদনের প্রতিক্ষায় ছিল। এমনকি খুব তাড়াতাড়ি আকাশ পরিষ্কার হলে ফলনও ভাল হওয়ার আশা করছে। এ ব্যাপারে ডিএইর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নœচাপটি আঘাত হানার সম্ভবনা কম হলেও তার প্রভাবে বৃষ্টিসহ গত দুদিন বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যা এই মুহূর্তে আমনের জন্য অনুকূল নয়। তারপরেও আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।