ইতিহাস

টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে দিনের অর্ধেক বাকি থাকতেই ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল টাইগাররা

কাকডাকা ভোর, তখনও জেগে ওঠেনি পুরো দেশ। কিন্তু সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে অভিনন্দনের জোয়ার। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন আসলো দিনের আলো ফোটার আগেই। নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইতে বিজয় কেতন উড়িয়েছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডে উড়াল দেয়ার আগে সবকিছুই ছিল টাইগারদের বিপক্ষে। পরিস্থিতি পরিসংখ্যান পারফরমেন্স সব।

বিশ্বকাপে ভরাডুবি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হার, আরও নানা ইস্যু নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছিল দেশের ক্রিকেটে। তার মধ্যে এই সিরিজে ছিল না বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খান। নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়খ্যাত সাকিব আল হাসানও। অভিজ্ঞদের মধ্যে একমাত্র মুশফিকুর রহিম।

নিউজিল্যান্ডে উড়াল দেয়ার আগে ঘরের মাঠে আড়াই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া টেস্ট ম্যাচও পাকিস্তানের কাছে হরে বসে টাইগাররা। আর নিউজিল্যান্ড পৌঁছার পর টাইগারদের বাড়তি তিন দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয় নিউজিল্যন্ডের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের ধরা পড়ে কোভিড। আর বাংলাদেশের আট ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডগামী ফ্লাইটে একজন কোভিড পজেটিভ ব্যক্তির সংর্স্পশে এসেছেন বলেই শনাক্ত হয়। আর তাদের তখন আইসোলেশনে থাকতে হয়।

এমনিতেই আজকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সফরে বায়োবাবলে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের, যা বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করে। আর তার ওপর এতসব মানসিক চাপ নিয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল টাইগাররা।

কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বর্তমানের সফলতম টেস্ট দল নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল মোমিনুল হকের অনভজ্ঞি দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে ৩২ ম্যাচে কোন ফরম্যাটেই স্বাগতিকদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। আর টেস্টে তো এশিয়ার কোন দল নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে শেষবার হারিয়েছে ১১ বছর আগে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হ্যামিল্টনে টেস্ট জিতেছিল পাকিস্তান। তারপর যেন এশীয়দের কাছে হারতে ভুলে গেছিল কিউইরা।

পরিসংখ্যান যাই হোক এবার তাদের মাটিতে কিউইদের নামিয়েই ছাড়লেন টাইগাররা। কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের পরিসংখ্যান এতটাই বিব্রত যে, ন্যূনতম লড়াইয়ের আশার ভেলা ভাসাতেও সাহস করতেন না কেউ।

তবুও টেস্ট কাপ্তান মোমিনুল হক গত বছরের শেষ দিন টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘নতুন বছর নিয়ে রোমাঞ্চিত। শুরু ভালো হলে বাকিটাও ভালো যাবে।’ কিউদের মাটিতে ৯ টেস্টের মধ্যে ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার টাইগারদের। বাকি ৪টিতে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটা থাকলেও আশা দেখানোর মতো কিছুই ছিল না। অথচ সেই দলটাই নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকা রেকর্ডে বাদ সাধলো। বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের রাজা নিউজিল্যান্ড। সেই কিউই দুর্গে মোমিনুল হকের সঙ্গী অনভিজ্ঞ এক দল। অধিকাংশই একেবারে নতুন, অনভিজ্ঞ। অথচ পাঁচদিনই দুয়েকটি সেশন বাদে এই টেস্টে ছড়ি ঘুড়িয়েছে বাংলাদেশই। চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেনের বোলিং তোপে দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ১৭ রানে এগিয়েছিল কিউইরা। এবাদত ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। রস টেইলর ৩৭ ও রাচিন রবীন্দ্র ৬ রানে দিন শেষ করেছিলেন।

তবে তীরে এসে তরী ডোবার নজির বাংলাদেশের ক্রিকেটে আছে অনেকগুলোই। আর ক্রিজে তখন অভিজ্ঞ টেইলর থাকায় পঞ্চম ও শেষ দিন নিউজিল্যান্ডের স্কোর বড় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বাংলাদেশের জয়ের পথে টেইলর যে, কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন তেমন আশঙ্কাও ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে চিন্তামুক্ত করে দেন দুর্দান্ত বল করা এবাদত। দিনের অষ্টম বলেই টেইলরকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন এবাদত। ১০৪ বল খেলে দুটি চারে ৪০ রান করেন বিদায়ী টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা টেইলর। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের কোন পেসার এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করলেন। ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম পাঁচ উইকেট নিলেন এবাদত। তিন বছর আগে অভিষেক হয়েও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না ডানহাতি এই পেসার। খরুচে বোলিংয়ের কারণে শিকার হয়েছিলেন সমালোচনার। হয়েছিলেন প্রশ্নবিদ্ধও। তবে দমে যাননি ডানহাতি এই পেসার। নিউজিল্যান্ডের পেসবান্ধব উইকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর রীতিমতো ঘুরিয়েছেন দাপটের ছড়ি।

টেইলেরর বিদায়ের পর কাইল জেমিসনকেও তুলে নেন এবাদত। ৮ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি জেমিসন। এবাদতের তোপে যখন কাঁপছে নিউজিল্যান্ড, তখন বল হাতে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ।

রবীন্দ্রকে ১৬ ও টিম সাউদিকে শূন্য হাতে আউট করেন তাসকিন। ২টি চারে ট্রেন্ট বোল্ট দলকে ৮ রান উপহার দিয়েছিলেন। আর সেখানেই বোল্টকে থামান স্পিনার মিরাজ। এতে ১৬৯ রানে অলআউট নিউজিল্যান্ড। তাই ম্যাচ জিততে বাংলাদেশ টার্গেট পায় ৪০ রানের। কারণ প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ৪৫৮ রান। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১৩০ রানের লিড পেয়েছিল টাইগাররা। গতকাল ২২ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এবাদত ২১ ওভার বল করে ৪৬ রানে নেন ৬ উইকেট। এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এবাদত। তাসকিন ১৪ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন। বাকি একটি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার মিরাজ।

৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করেন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিল্ডিংয়ে আঙুলে চোট পাওয়ায় এই ইনিংসে ব্যাট হাতে নামতে পারেননি প্রথম ইনিংসের দারুণ খেলা অনভজ্ঞি ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।

দ্বিতীয় ওভারেই সাদমানকে বিদায় করেন নিউজিল্যান্ডের সাউদি। ৩ রান করেন তিনি। এরপর শান্তকে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মোমিনুল। জয়ের পথটা সহজ করতেই সর্তকতার সঙ্গে খেলে ৭৫ বল খরচ করেছেন তারা। সমস্যায় না পড়তেই রান তুলতে তাড়াহুড়া করেননি শান্ত ও মোমিনুল। জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে থামেন শান্ত। ৩টি চারে ৪১ বলে ১৭ রান তুলে শান্ত শিকার হন জেমিসনের। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন মোমিনুল। ১৭তম ওভারে জেমিসনের পঞ্চম ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অভিজ্ঞ মুশফিক। ৩টি চারে ৪৪ বলে মোমিনুল অপরাজিত ১৩ ও মুশফিক ৭ বলে অপরাজিত ৫ রান করেন। দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের এবাদত। আগামী ৯ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

image

পঞ্চম ও শেষ দিন সকালের সেশনে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর মাঠ ছাড়ার মুহূর্তে অধিনায়ক মোমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কোচিং স্টাফ। প্রথম টেস্টে কিউইদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশের তিন পেসার। জয়ের নায়ক পেসার এবাদত হোসেন। তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এই প্রথম জয় -সংগৃহীত

আরও খবর
দেশে একমাসে সংক্রমণ বেড়েছে ৪ গুণ
বঙ্গোপসাগরে গ্যাস হাইড্রেটের সন্ধান
নির্বাচন কমিশনের ‘খুব ভালো’ ভোটে নিহত ১১, আহত শতাধিক
সংলাপ : বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে যাচ্ছে না বিএনপি
শিক্ষকের মৃত্যু : ছাত্রলীগের ৪ নেতা কুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ইতিহাস

টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে দিনের অর্ধেক বাকি থাকতেই ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল টাইগাররা

মো. ইমরান হোসেন

image

পঞ্চম ও শেষ দিন সকালের সেশনে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর মাঠ ছাড়ার মুহূর্তে অধিনায়ক মোমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কোচিং স্টাফ। প্রথম টেস্টে কিউইদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশের তিন পেসার। জয়ের নায়ক পেসার এবাদত হোসেন। তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এই প্রথম জয় -সংগৃহীত

কাকডাকা ভোর, তখনও জেগে ওঠেনি পুরো দেশ। কিন্তু সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে অভিনন্দনের জোয়ার। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন আসলো দিনের আলো ফোটার আগেই। নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইতে বিজয় কেতন উড়িয়েছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডে উড়াল দেয়ার আগে সবকিছুই ছিল টাইগারদের বিপক্ষে। পরিস্থিতি পরিসংখ্যান পারফরমেন্স সব।

বিশ্বকাপে ভরাডুবি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হার, আরও নানা ইস্যু নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছিল দেশের ক্রিকেটে। তার মধ্যে এই সিরিজে ছিল না বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খান। নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়খ্যাত সাকিব আল হাসানও। অভিজ্ঞদের মধ্যে একমাত্র মুশফিকুর রহিম।

নিউজিল্যান্ডে উড়াল দেয়ার আগে ঘরের মাঠে আড়াই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া টেস্ট ম্যাচও পাকিস্তানের কাছে হরে বসে টাইগাররা। আর নিউজিল্যান্ড পৌঁছার পর টাইগারদের বাড়তি তিন দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয় নিউজিল্যন্ডের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের ধরা পড়ে কোভিড। আর বাংলাদেশের আট ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডগামী ফ্লাইটে একজন কোভিড পজেটিভ ব্যক্তির সংর্স্পশে এসেছেন বলেই শনাক্ত হয়। আর তাদের তখন আইসোলেশনে থাকতে হয়।

এমনিতেই আজকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সফরে বায়োবাবলে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের, যা বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করে। আর তার ওপর এতসব মানসিক চাপ নিয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল টাইগাররা।

কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বর্তমানের সফলতম টেস্ট দল নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল মোমিনুল হকের অনভজ্ঞি দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে ৩২ ম্যাচে কোন ফরম্যাটেই স্বাগতিকদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। আর টেস্টে তো এশিয়ার কোন দল নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে শেষবার হারিয়েছে ১১ বছর আগে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হ্যামিল্টনে টেস্ট জিতেছিল পাকিস্তান। তারপর যেন এশীয়দের কাছে হারতে ভুলে গেছিল কিউইরা।

পরিসংখ্যান যাই হোক এবার তাদের মাটিতে কিউইদের নামিয়েই ছাড়লেন টাইগাররা। কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের পরিসংখ্যান এতটাই বিব্রত যে, ন্যূনতম লড়াইয়ের আশার ভেলা ভাসাতেও সাহস করতেন না কেউ।

তবুও টেস্ট কাপ্তান মোমিনুল হক গত বছরের শেষ দিন টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘নতুন বছর নিয়ে রোমাঞ্চিত। শুরু ভালো হলে বাকিটাও ভালো যাবে।’ কিউদের মাটিতে ৯ টেস্টের মধ্যে ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার টাইগারদের। বাকি ৪টিতে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটা থাকলেও আশা দেখানোর মতো কিছুই ছিল না। অথচ সেই দলটাই নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকা রেকর্ডে বাদ সাধলো। বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের রাজা নিউজিল্যান্ড। সেই কিউই দুর্গে মোমিনুল হকের সঙ্গী অনভিজ্ঞ এক দল। অধিকাংশই একেবারে নতুন, অনভিজ্ঞ। অথচ পাঁচদিনই দুয়েকটি সেশন বাদে এই টেস্টে ছড়ি ঘুড়িয়েছে বাংলাদেশই। চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেনের বোলিং তোপে দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ১৭ রানে এগিয়েছিল কিউইরা। এবাদত ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। রস টেইলর ৩৭ ও রাচিন রবীন্দ্র ৬ রানে দিন শেষ করেছিলেন।

তবে তীরে এসে তরী ডোবার নজির বাংলাদেশের ক্রিকেটে আছে অনেকগুলোই। আর ক্রিজে তখন অভিজ্ঞ টেইলর থাকায় পঞ্চম ও শেষ দিন নিউজিল্যান্ডের স্কোর বড় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বাংলাদেশের জয়ের পথে টেইলর যে, কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন তেমন আশঙ্কাও ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে চিন্তামুক্ত করে দেন দুর্দান্ত বল করা এবাদত। দিনের অষ্টম বলেই টেইলরকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন এবাদত। ১০৪ বল খেলে দুটি চারে ৪০ রান করেন বিদায়ী টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা টেইলর। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের কোন পেসার এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করলেন। ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম পাঁচ উইকেট নিলেন এবাদত। তিন বছর আগে অভিষেক হয়েও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না ডানহাতি এই পেসার। খরুচে বোলিংয়ের কারণে শিকার হয়েছিলেন সমালোচনার। হয়েছিলেন প্রশ্নবিদ্ধও। তবে দমে যাননি ডানহাতি এই পেসার। নিউজিল্যান্ডের পেসবান্ধব উইকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর রীতিমতো ঘুরিয়েছেন দাপটের ছড়ি।

টেইলেরর বিদায়ের পর কাইল জেমিসনকেও তুলে নেন এবাদত। ৮ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি জেমিসন। এবাদতের তোপে যখন কাঁপছে নিউজিল্যান্ড, তখন বল হাতে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ।

রবীন্দ্রকে ১৬ ও টিম সাউদিকে শূন্য হাতে আউট করেন তাসকিন। ২টি চারে ট্রেন্ট বোল্ট দলকে ৮ রান উপহার দিয়েছিলেন। আর সেখানেই বোল্টকে থামান স্পিনার মিরাজ। এতে ১৬৯ রানে অলআউট নিউজিল্যান্ড। তাই ম্যাচ জিততে বাংলাদেশ টার্গেট পায় ৪০ রানের। কারণ প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ৪৫৮ রান। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১৩০ রানের লিড পেয়েছিল টাইগাররা। গতকাল ২২ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এবাদত ২১ ওভার বল করে ৪৬ রানে নেন ৬ উইকেট। এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এবাদত। তাসকিন ১৪ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন। বাকি একটি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার মিরাজ।

৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করেন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিল্ডিংয়ে আঙুলে চোট পাওয়ায় এই ইনিংসে ব্যাট হাতে নামতে পারেননি প্রথম ইনিংসের দারুণ খেলা অনভজ্ঞি ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।

দ্বিতীয় ওভারেই সাদমানকে বিদায় করেন নিউজিল্যান্ডের সাউদি। ৩ রান করেন তিনি। এরপর শান্তকে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মোমিনুল। জয়ের পথটা সহজ করতেই সর্তকতার সঙ্গে খেলে ৭৫ বল খরচ করেছেন তারা। সমস্যায় না পড়তেই রান তুলতে তাড়াহুড়া করেননি শান্ত ও মোমিনুল। জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে থামেন শান্ত। ৩টি চারে ৪১ বলে ১৭ রান তুলে শান্ত শিকার হন জেমিসনের। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন মোমিনুল। ১৭তম ওভারে জেমিসনের পঞ্চম ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অভিজ্ঞ মুশফিক। ৩টি চারে ৪৪ বলে মোমিনুল অপরাজিত ১৩ ও মুশফিক ৭ বলে অপরাজিত ৫ রান করেন। দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের এবাদত। আগামী ৯ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।