নির্বাচন কমিশনের ‘খুব ভালো’ ভোটে নিহত ১১, আহত শতাধিক

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন

নির্বাচন কমিশনের ‘খুব ভালো’ ভোটে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, মানিকগঞ্জ ও নওগাঁয় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘাতে শতাধিক লোক আহত হন।

চলমান ইউপি নির্বাচনে আগের ধাপগুলোতে সহিংসতা আর হতাহতের ঘটনায় এই ধাপে বাড়তি সতর্ক ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে থামানো যায়নি সহিংসতা-প্রাণহানি।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোট হয় দেশের ৪৮ জেলার ৯৫টি উপজেলার ৭০৮টি ইউপিতে। কেন্দ্র সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১৩৭, ভোটকক্ষ প্রায় ৪০ হাজার। ভোটে অনিয়ম ও সহিংসতার আশঙ্কায় ১৬টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

গতকাল ভোট শেষে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট খুব ভালো হয়েছে।’ প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকরা দায় নেবে। কারণ তারা কেন এটি করছেন?’

তিনি আরও বলেন, ৭০ শতাংশের ওপর ভোট পড়ার আশা করছি। ভোটে অনিয়মের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত দুই : দুপুরে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের নয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংর্ঘষে শরীফ হোসেন (৩০) ছুরিকাহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনি। এ ছাড়া, জেলার হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের দুর্গমচরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন মারা যান।

জামালপুরে গুলিবিদ্ধ যুবক : জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আল আমীন (২২) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি মেরুর চরের বাঘাডুবা গ্রামের আচ্ছা মিয়ার ছেলে। গতকাল দুপুরের দিকে মেরুরচর ইউনিয়নের মেরুরচর হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আল আমীন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আহত হন পুলিশসহ আরও ৯ জন।

সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের একটি পিকআপ ও তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। আনসারদের বহন করা একটি গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্রসহ আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামে নিহত এক : ভোটগ্রহণ ঘিরে সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার কয়েকটি ইউনিয়নে। আনোয়ারার চাতুরী ইউনিয়নের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষে অংকুর দত্ত (৩০) নামে এক যুবক আহত হন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ১২টায় তার মৃত্যু হয়। অংকুর দত্ত সিংহরা গ্রামের নেপাল দত্তের ছেলে।

মানিকগঞ্জে নারীর মৃত্যু : বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুরের বিভিন্নি ইউনিয়নে। দৌলতপুরে এক ভোটকেন্দ্রের পাশে দুই মেম্বার সমর্থকদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সমেলা খাতুন (৫০) নামের এক নারী নিহত হন। দুপুরে উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সমেলা ওই এলাকার মাহাতাবের স্ত্রী।

গাইবান্ধায় গলাকেটে হত্যা : গাইবান্ধার সাঘাটায় নির্বাচন চলাকালে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আবু তাহের (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তাকে ধারালো হাঁসুয়া (দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়। বুধবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের জুমারবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু তাহের জুমারবাড়ি গ্রামের ওমর আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, ভোট চলাকালীন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে মেম্বার প্রার্থী আইজল মিয়ার (টিউবওয়েল) সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থী রাসেল আহমেদের (পাখা) কর্মী-সমর্থকদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মী-সমর্থকরা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। গুরুতর আহত রাসেলকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়।

বগুড়ায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা : বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুপুরের দিকে উপজেলার জাইগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাহিরে এই হত্যাকা- ঘটে। নিহত জাকির হোসেন জাইগুলি উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। তিনি ইউপি সদস্য প্রার্থী সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক হিসেবে কাজ করছিলেন।

জানা যায়, ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের উৎসাহিত করার কাজ করছিলেন সাইদুল ইসলামের টিউবওয়েল প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। এ সময় অপর ইউপি সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী মিঠু মিয়ার (ফুটবল প্রতীক) কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে জাকির হোসেনকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বেলা ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত চার : সন্ধ্যায় গাবতলীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এক নারীসহ চারজন নিহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত নারী একজন সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন। উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাই হাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন-গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী (সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট) কুলসুম আক্তার, মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, মৃত ইফাত উল্লাহর ছেলে আবদুর রশিদ ও আবদুর রাজ্জাক। নিহত চারজনই কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার ভোট শেষে গননা ও ফলাফল ঘোষণা না করেই ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নেয়ার উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কেন্দ্রেই ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার দাবি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে গুলি চালায় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। পরে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে ভোট কেন্দ্রেই ব্যালট পেপার গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

নৌকা মার্কার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তাগণ ভোট গণনা নিয়ে তালবাহনা করার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। তাদের হটিয়ে দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং রাজ্জাক নামে একজন গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছেন বলে তিনি তথ্য পেয়েছেন।

গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরাপদে উপজেলা সদরে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

নওগাঁয় পুলিশের গুলিতে নিহত ১, পুলিশের গাড়িতে আগুন : নওগাঁর পতœীতলায় একটি কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়াসহ সহিংসতায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দখলে নিতে চশমা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বেপারীর সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় একের পর এক বোমার বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অবরূদ্ধ হয়ে পড়েন সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাসুদেব ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে জড়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে আহত হন অন্তত ১০ জন।

এছাড়া গাজীপুর, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জায়গায় ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। আহত হন অনেকে। সংঘর্ষের পাশাপাশি জালভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও ওঠে।

সিলেটের জকিগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সালমান সাকিবকে সিলমারা ব্যালট পেপারসহ আটক করে পুলিশ। বাতিল ঘোষণা করা হয় কাজলসার ইউনিয়নের ভোট।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ি, অধিকাংশ ইউপির ভোটকেন্দ্রগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তীব্র শীত উপেক্ষা করে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। বিশেষত নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে সন্তোষ জানান অনেকেই।

জকিগঞ্জে ভোট জালিয়াতি, দুই নির্বাচন কর্মকর্তা আটক : সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির অভিযোগে দুই নির্বাচন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে পুরো একটি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ।

এছাড়া ব্যালট বাক্স ছিনতাইর ঘটনায় আরেক ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

জানা গেছে, বুধবার জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যার চেয়ে কম ব্যালট পাঠান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট না পেয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ব্যালট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। দুপুরের মধ্যে ৩টি কেন্দ্রে অবশিষ্ট ব্যালট পেপার পৌঁছালেও মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১টা পর্যন্ত অবশিষ্ট ব্যালট পেপার পৌঁছায়নি।

এসময় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি নিজে ব্যালট পেপার নিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রে যাওয়ার পর আরিফুল হকের গাড়ি থেকে নৌকায় সিল মারা চেয়ারম্যান পদের ৪শ’ ব্যালট ও সমানসংখ্যাক পুরুষ ও নারী সদস্যের ব্যালটে সিলমারা ব্যালট উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জকিগঞ্জে ছুটে যান। আরিফুল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিবকেও আটক করা হয়। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম জানান, নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জালিয়াতির ঘটনায় বিকেল ৩টার দিকে কাজলসার ইউনিয়নের ভোট স্থগিত করা হয়।

এদিকে, বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা ঢুকে ৩টি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেন। পরে বাক্স ভেঙে কিছু ব্যালট পানিতে ফেলে দেয়া হয় এবং কিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ওই কেন্দ্রের ভোটও স্থগিত ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার।

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২২ , ২২ পৌষ ১৪২৮ ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

নির্বাচন কমিশনের ‘খুব ভালো’ ভোটে নিহত ১১, আহত শতাধিক

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউপি নির্বাচনের দুলুখ- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন নেভানোর চেষ্টা -সংবাদ

নির্বাচন কমিশনের ‘খুব ভালো’ ভোটে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, মানিকগঞ্জ ও নওগাঁয় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘাতে শতাধিক লোক আহত হন।

চলমান ইউপি নির্বাচনে আগের ধাপগুলোতে সহিংসতা আর হতাহতের ঘটনায় এই ধাপে বাড়তি সতর্ক ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে থামানো যায়নি সহিংসতা-প্রাণহানি।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোট হয় দেশের ৪৮ জেলার ৯৫টি উপজেলার ৭০৮টি ইউপিতে। কেন্দ্র সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১৩৭, ভোটকক্ষ প্রায় ৪০ হাজার। ভোটে অনিয়ম ও সহিংসতার আশঙ্কায় ১৬টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

গতকাল ভোট শেষে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট খুব ভালো হয়েছে।’ প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকরা দায় নেবে। কারণ তারা কেন এটি করছেন?’

তিনি আরও বলেন, ৭০ শতাংশের ওপর ভোট পড়ার আশা করছি। ভোটে অনিয়মের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত দুই : দুপুরে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের নয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংর্ঘষে শরীফ হোসেন (৩০) ছুরিকাহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনি। এ ছাড়া, জেলার হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের দুর্গমচরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন মারা যান।

জামালপুরে গুলিবিদ্ধ যুবক : জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আল আমীন (২২) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি মেরুর চরের বাঘাডুবা গ্রামের আচ্ছা মিয়ার ছেলে। গতকাল দুপুরের দিকে মেরুরচর ইউনিয়নের মেরুরচর হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আল আমীন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আহত হন পুলিশসহ আরও ৯ জন।

সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের একটি পিকআপ ও তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। আনসারদের বহন করা একটি গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্রসহ আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামে নিহত এক : ভোটগ্রহণ ঘিরে সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার কয়েকটি ইউনিয়নে। আনোয়ারার চাতুরী ইউনিয়নের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষে অংকুর দত্ত (৩০) নামে এক যুবক আহত হন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ১২টায় তার মৃত্যু হয়। অংকুর দত্ত সিংহরা গ্রামের নেপাল দত্তের ছেলে।

মানিকগঞ্জে নারীর মৃত্যু : বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুরের বিভিন্নি ইউনিয়নে। দৌলতপুরে এক ভোটকেন্দ্রের পাশে দুই মেম্বার সমর্থকদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সমেলা খাতুন (৫০) নামের এক নারী নিহত হন। দুপুরে উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সমেলা ওই এলাকার মাহাতাবের স্ত্রী।

গাইবান্ধায় গলাকেটে হত্যা : গাইবান্ধার সাঘাটায় নির্বাচন চলাকালে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আবু তাহের (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তাকে ধারালো হাঁসুয়া (দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়। বুধবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের জুমারবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু তাহের জুমারবাড়ি গ্রামের ওমর আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, ভোট চলাকালীন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে মেম্বার প্রার্থী আইজল মিয়ার (টিউবওয়েল) সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থী রাসেল আহমেদের (পাখা) কর্মী-সমর্থকদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মী-সমর্থকরা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। গুরুতর আহত রাসেলকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়।

বগুড়ায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা : বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুপুরের দিকে উপজেলার জাইগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাহিরে এই হত্যাকা- ঘটে। নিহত জাকির হোসেন জাইগুলি উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। তিনি ইউপি সদস্য প্রার্থী সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক হিসেবে কাজ করছিলেন।

জানা যায়, ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের উৎসাহিত করার কাজ করছিলেন সাইদুল ইসলামের টিউবওয়েল প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। এ সময় অপর ইউপি সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী মিঠু মিয়ার (ফুটবল প্রতীক) কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে জাকির হোসেনকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বেলা ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত চার : সন্ধ্যায় গাবতলীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এক নারীসহ চারজন নিহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত নারী একজন সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন। উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাই হাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন-গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী (সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট) কুলসুম আক্তার, মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, মৃত ইফাত উল্লাহর ছেলে আবদুর রশিদ ও আবদুর রাজ্জাক। নিহত চারজনই কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার ভোট শেষে গননা ও ফলাফল ঘোষণা না করেই ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যালট বাক্স উপজেলা সদরে নেয়ার উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কেন্দ্রেই ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার দাবি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেখানে গুলি চালায় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। পরে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে ভোট কেন্দ্রেই ব্যালট পেপার গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

নৌকা মার্কার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তাগণ ভোট গণনা নিয়ে তালবাহনা করার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। তাদের হটিয়ে দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং রাজ্জাক নামে একজন গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছেন বলে তিনি তথ্য পেয়েছেন।

গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরাপদে উপজেলা সদরে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

নওগাঁয় পুলিশের গুলিতে নিহত ১, পুলিশের গাড়িতে আগুন : নওগাঁর পতœীতলায় একটি কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়াসহ সহিংসতায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দখলে নিতে চশমা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বেপারীর সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় একের পর এক বোমার বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অবরূদ্ধ হয়ে পড়েন সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাসুদেব ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে জড়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে আহত হন অন্তত ১০ জন।

এছাড়া গাজীপুর, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জায়গায় ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। আহত হন অনেকে। সংঘর্ষের পাশাপাশি জালভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও ওঠে।

সিলেটের জকিগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সালমান সাকিবকে সিলমারা ব্যালট পেপারসহ আটক করে পুলিশ। বাতিল ঘোষণা করা হয় কাজলসার ইউনিয়নের ভোট।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ি, অধিকাংশ ইউপির ভোটকেন্দ্রগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তীব্র শীত উপেক্ষা করে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। বিশেষত নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে সন্তোষ জানান অনেকেই।

জকিগঞ্জে ভোট জালিয়াতি, দুই নির্বাচন কর্মকর্তা আটক : সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির অভিযোগে দুই নির্বাচন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে পুরো একটি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ।

এছাড়া ব্যালট বাক্স ছিনতাইর ঘটনায় আরেক ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

জানা গেছে, বুধবার জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যার চেয়ে কম ব্যালট পাঠান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট না পেয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ব্যালট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। দুপুরের মধ্যে ৩টি কেন্দ্রে অবশিষ্ট ব্যালট পেপার পৌঁছালেও মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১টা পর্যন্ত অবশিষ্ট ব্যালট পেপার পৌঁছায়নি।

এসময় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি নিজে ব্যালট পেপার নিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রে যাওয়ার পর আরিফুল হকের গাড়ি থেকে নৌকায় সিল মারা চেয়ারম্যান পদের ৪শ’ ব্যালট ও সমানসংখ্যাক পুরুষ ও নারী সদস্যের ব্যালটে সিলমারা ব্যালট উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জকিগঞ্জে ছুটে যান। আরিফুল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিবকেও আটক করা হয়। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম জানান, নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জালিয়াতির ঘটনায় বিকেল ৩টার দিকে কাজলসার ইউনিয়নের ভোট স্থগিত করা হয়।

এদিকে, বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা ঢুকে ৩টি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেন। পরে বাক্স ভেঙে কিছু ব্যালট পানিতে ফেলে দেয়া হয় এবং কিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ওই কেন্দ্রের ভোটও স্থগিত ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার।