ফেনাঢেউ
বিমল গুহ
পৃথিবীর উৎসমুখ ঢেউয়ের ফেনায় ভরে গেছে।
গোঙানির শব্দ থেকে উঠছে যে-ঢেউ
তাতেই ভরে গেছে পৃথিবীর ফুসফুস
দূর আমাজন
জমে আছে বুদ্বুদ তিক্ত কটু পুঁতিগন্ধময়;
যতবার চক্ষু মুদি
দেখি ফেনাঢেউ চারদিকে- নিঃশ্বাস প্রশ্বাস কষ্টকর
চাই আরও অক্সিজেন- চাই নলিঘাস
উন্মুক্ত অক্সিজেন আধার।
একবার মরি আর একবার বাঁচি
মরে যেতে-যেতে বেঁচে উঠি,
শত কোটি বছরেও সেসব হিসেব আর রাখেনি মানুষ
আজ তাই ফুসফুসে অক্সিজেন ঘাটতি টের পাই।
ফেনাঢেউ রহস্যের জাল সুবিস্তৃত বুকের ভিতর;
কখন আবার লতাগুল্মে ভরে উঠবে আমার পৃথিবী?
শীত
(উৎস : কালিদাস)
ফারুক মাহমুদ
খসখসে ত্বকের মতো ইতিউতি পাতা ঝরে আছে
জলের সকল উৎস ম্লান- মৃত মাছিদের চোখ...
উড়ু, মৃদুমন্দ নয়- বাতাসের শৈত্যচলাচলে
যথেষ্ট কর্মঠ থাকে ডাঁশ, মধুপোকাদের হুল
অবশ্য, রসিক যারা- তারা চায় অবারিত ওম
বহু পথে মন ঘোরে, তা-ও আজ ঘরে ফেরে দ্রুত
অগুরুচন্দনঘ্রাণ, নারীটির যুক্তবস্ত্রশোভা-
চৌম্বক-শক্তির জাদু, চোখ থেকে সরে না নয়ন
উদগ্রিব উচ্ছল পথে স্বাদমতো ভ্রমণের সাধ
নিশ্বাসে আগুন-ছন্দ, ভেঙে যায় শরীরের ঘুম
জেলাস?
নাসরীন জাহান
কী হয়েছে? জেলাস?
কারণ? শীতের মাস?
পুড়ে থাই থই ঘাস?
জেলাস?
আকাশে আগুন লেগেছে?
বাতাসে ফাগুন ভেগেছে?
বৃষ্টি প্রচুর রেগেছে?
জেলাস?
পুড়ে গেছে রোদের শ্বাস?
চলো একসাথে হাঁটি,
চলো নির্মাণে মাটি,
ভাস্কর?
ভেসেছে প্রাণের চর?
ভেসেছে রাতের আকাশ, ডুবেছে মন,
কিন্তু তাহার সাথে তোমাকে দেখে,
মৃত্যুকে পড়ছে স্মরণ।
জেলাস?
পোড়া পোড়া ঘ্রাণ পাচ্ছি,
তেরো নদীর জল
মাহফুজা অনন্যা
সইপাতানো কপাল! তোমার মতো আমারও
রয়েছে মুখস্থ কোকিল
বাচ্চাদের চোখেও রয়েছে মায়ার বায়োস্কোপ
আমারও আছে রাতভর রিহার্সাল
ফ্যামিলি পিকচারে একখানি সাঁকো সুতা হয়ে যায়
আমার ঘরেও কাফকা আসেন, আসেন মালার্মে
ডিমালোয় চষে বেড়ান আদিম অরণ্য
আমার ঘরেও কাঠের সোফা মাঝেমাঝে দোভাষী হয়ে ওঠে,
সোম্য আয়তনে মাটির জীবন শোয় বহুতল জীবনে
কাঠের নাইটি থেকে উড়ে যায় নীলকণ্ঠ পাখি
সামঞ্জস্য কারকে একই ধুলো ওড়ে তোমার স্বরেও
ব্যক্তিগত লোডশেডিং ডেকে আনে সমুদ্র
রোজ রাতে আমি গাছে জেলিফিশ সামিট
‘তেরো নদীর জল শুকিয়ে যায়’
তুমি ফুলেও কি আঁধারের বাগান ঝরে?
ক্ষত
শেখ সালাহ্উদ্দীন
এক টুকরো জ্বলন্ত অঙ্গার-ধরন
ভালোবাসা বুঝিনি কখন
দিয়েছিলে হাতে
আহা কী উত্তাপ ছিল তাতে!
দীর্ঘ অবহেলা অপরিচর্যায়
আজ তা নিভন্ত প্রায়
জীবন্মৃত সেই ভালোবাসার অঙ্গার
একাকী ফুঁ দিয়ে জ্বালিয়ে রাখার
নেব কত দায়ভাগ? নিভে যাবে
একদিন সবকিছু চললে এভাবে-
রয়ে যাবে এক চিলতে দহন-ক্ষত
অকিঞ্চিৎকর নয়; আজীবন বহনের মতো।
সাদা সিন্দুকের প্রহরী
তানিয়া হাসান
আমাদের জানালার পাশে কোনো সুন্দর ছিলো না আধবয়সী বেল গাছ আর খয়েরি কাকের বক্র ঢঙ দেখেই
ভিজে যেতাম
শোকেসে সাজানো গ্লাসের তৃষ্ণা পাওয়া দ-নীয় ছিলো
আমরা এখন আর নদী চিনি না
হুল্লোড়গুলো ই ০.০০ মাত্রায় মিউট ছিলো
ঘুমিয়ে যেতো আয়নার বায়না
পরদাদা থেকে প্রাপ্ত একটা সাদা সিন্দুকের ঘ্রাণে মগ্ন থেকে
রাতের ঠোঁটে আর চুমু খাওয়া হয়নি
আমি বা আমার আগে কিংবা তার আগেও কেউ উড়াল দেখেনি
আমরা তাই চুল বেঁধে রাখি
সানগ্লাসে ঢেকে রাখি দাঁত
আমাদের বাবার মৌনতায় উর্বর একখণ্ড জমি ছিলো
এখনো আমরা তার চাষাবাদ করি
বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২ , ০৬ মাঘ ১৪২৮ ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
ফেনাঢেউ
বিমল গুহ
পৃথিবীর উৎসমুখ ঢেউয়ের ফেনায় ভরে গেছে।
গোঙানির শব্দ থেকে উঠছে যে-ঢেউ
তাতেই ভরে গেছে পৃথিবীর ফুসফুস
দূর আমাজন
জমে আছে বুদ্বুদ তিক্ত কটু পুঁতিগন্ধময়;
যতবার চক্ষু মুদি
দেখি ফেনাঢেউ চারদিকে- নিঃশ্বাস প্রশ্বাস কষ্টকর
চাই আরও অক্সিজেন- চাই নলিঘাস
উন্মুক্ত অক্সিজেন আধার।
একবার মরি আর একবার বাঁচি
মরে যেতে-যেতে বেঁচে উঠি,
শত কোটি বছরেও সেসব হিসেব আর রাখেনি মানুষ
আজ তাই ফুসফুসে অক্সিজেন ঘাটতি টের পাই।
ফেনাঢেউ রহস্যের জাল সুবিস্তৃত বুকের ভিতর;
কখন আবার লতাগুল্মে ভরে উঠবে আমার পৃথিবী?
শীত
(উৎস : কালিদাস)
ফারুক মাহমুদ
খসখসে ত্বকের মতো ইতিউতি পাতা ঝরে আছে
জলের সকল উৎস ম্লান- মৃত মাছিদের চোখ...
উড়ু, মৃদুমন্দ নয়- বাতাসের শৈত্যচলাচলে
যথেষ্ট কর্মঠ থাকে ডাঁশ, মধুপোকাদের হুল
অবশ্য, রসিক যারা- তারা চায় অবারিত ওম
বহু পথে মন ঘোরে, তা-ও আজ ঘরে ফেরে দ্রুত
অগুরুচন্দনঘ্রাণ, নারীটির যুক্তবস্ত্রশোভা-
চৌম্বক-শক্তির জাদু, চোখ থেকে সরে না নয়ন
উদগ্রিব উচ্ছল পথে স্বাদমতো ভ্রমণের সাধ
নিশ্বাসে আগুন-ছন্দ, ভেঙে যায় শরীরের ঘুম
জেলাস?
নাসরীন জাহান
কী হয়েছে? জেলাস?
কারণ? শীতের মাস?
পুড়ে থাই থই ঘাস?
জেলাস?
আকাশে আগুন লেগেছে?
বাতাসে ফাগুন ভেগেছে?
বৃষ্টি প্রচুর রেগেছে?
জেলাস?
পুড়ে গেছে রোদের শ্বাস?
চলো একসাথে হাঁটি,
চলো নির্মাণে মাটি,
ভাস্কর?
ভেসেছে প্রাণের চর?
ভেসেছে রাতের আকাশ, ডুবেছে মন,
কিন্তু তাহার সাথে তোমাকে দেখে,
মৃত্যুকে পড়ছে স্মরণ।
জেলাস?
পোড়া পোড়া ঘ্রাণ পাচ্ছি,
তেরো নদীর জল
মাহফুজা অনন্যা
সইপাতানো কপাল! তোমার মতো আমারও
রয়েছে মুখস্থ কোকিল
বাচ্চাদের চোখেও রয়েছে মায়ার বায়োস্কোপ
আমারও আছে রাতভর রিহার্সাল
ফ্যামিলি পিকচারে একখানি সাঁকো সুতা হয়ে যায়
আমার ঘরেও কাফকা আসেন, আসেন মালার্মে
ডিমালোয় চষে বেড়ান আদিম অরণ্য
আমার ঘরেও কাঠের সোফা মাঝেমাঝে দোভাষী হয়ে ওঠে,
সোম্য আয়তনে মাটির জীবন শোয় বহুতল জীবনে
কাঠের নাইটি থেকে উড়ে যায় নীলকণ্ঠ পাখি
সামঞ্জস্য কারকে একই ধুলো ওড়ে তোমার স্বরেও
ব্যক্তিগত লোডশেডিং ডেকে আনে সমুদ্র
রোজ রাতে আমি গাছে জেলিফিশ সামিট
‘তেরো নদীর জল শুকিয়ে যায়’
তুমি ফুলেও কি আঁধারের বাগান ঝরে?
ক্ষত
শেখ সালাহ্উদ্দীন
এক টুকরো জ্বলন্ত অঙ্গার-ধরন
ভালোবাসা বুঝিনি কখন
দিয়েছিলে হাতে
আহা কী উত্তাপ ছিল তাতে!
দীর্ঘ অবহেলা অপরিচর্যায়
আজ তা নিভন্ত প্রায়
জীবন্মৃত সেই ভালোবাসার অঙ্গার
একাকী ফুঁ দিয়ে জ্বালিয়ে রাখার
নেব কত দায়ভাগ? নিভে যাবে
একদিন সবকিছু চললে এভাবে-
রয়ে যাবে এক চিলতে দহন-ক্ষত
অকিঞ্চিৎকর নয়; আজীবন বহনের মতো।
সাদা সিন্দুকের প্রহরী
তানিয়া হাসান
আমাদের জানালার পাশে কোনো সুন্দর ছিলো না আধবয়সী বেল গাছ আর খয়েরি কাকের বক্র ঢঙ দেখেই
ভিজে যেতাম
শোকেসে সাজানো গ্লাসের তৃষ্ণা পাওয়া দ-নীয় ছিলো
আমরা এখন আর নদী চিনি না
হুল্লোড়গুলো ই ০.০০ মাত্রায় মিউট ছিলো
ঘুমিয়ে যেতো আয়নার বায়না
পরদাদা থেকে প্রাপ্ত একটা সাদা সিন্দুকের ঘ্রাণে মগ্ন থেকে
রাতের ঠোঁটে আর চুমু খাওয়া হয়নি
আমি বা আমার আগে কিংবা তার আগেও কেউ উড়াল দেখেনি
আমরা তাই চুল বেঁধে রাখি
সানগ্লাসে ঢেকে রাখি দাঁত
আমাদের বাবার মৌনতায় উর্বর একখণ্ড জমি ছিলো
এখনো আমরা তার চাষাবাদ করি