কিশোরীকে ধর্ষণ, শালিসে ৭০ হাজার টাকায় দফারফা

নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগে আট দিন পর থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৭০ হাজার টাকায় দফারফা করে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়েছে স্থানীয় তিন সালিশদার। এই সুযোগে ধর্ষক পলাতক রয়েছে। অভিযুক্ত জহির উদ্দিন (৩৫) উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের নলেরচর গ্রামের শাহাজান মিয়ার ছেলে। সে হাতিয়া উপজেলার চানন্দী বাজারের একজন ওষুধ দোকানদার এবং পল্লী চিকিৎসক। গতকাল রাত দেড়টার দিকে উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নলেরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা জানান, তারা একটি নদীভাঙা পরিবার। উপজেলার নলচিরা গ্রামে সামান্য জায়গার ওপর তারা ঘর তুলে বসবাস করে আসছে। চরমুজামে তাদের একটি দাগের জমি আছে। ওই জমিতে ধান চাষ করতে এক মেয়ে দুই ছেলেকে বাড়িতে রেখে তিনি চরে যান। গতকাল সকালে তার বড় ছেলে চট্টগ্রাম চলে যায়। এরপর ধর্ষক জহিরুল হক তাকে ফোন দিয়ে জানতে চান তিনি কোনদিন চরে যাবেন। তিনি তাকে জানালে সে কিশোরীর মাকে জানায় সে চরে যাবে তার জমিতে ধান চাষ করতে। এরপর সে আর চরে যায়নি। গতকাল রাতে জহির আগে থেকেই তাদের বসতঘর সংলগ্ন বাগানে ওঁৎ পেতে থাকে। ওই সময় প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে তার মেয়ে ঘর থেকে বের হলে সে মুখ চেপে ধরে ঘরের পাশে থাকা আরেকটি চাড়া-বাড়ির পুকুর পারে নিয়ে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

কিশোরীর মা অভিযোগ করে পরদিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে আমি স্থানীয় সালিশদার তাজুল ইসমাইলকে জানাই। এরপর তাজুল আমাকে জানায়, যা হওয়ার হয়ে গেছে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন। তাজুল বলেন অভিযুক্ত ছেলেকে ডেকে এনে পায়ে ফেলে মাফ নিয়ে দেব। এর থেকে বেশি কিছু তিনি করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমরা ছেলেকে মারধর করতে গেলে বলবে আমরা নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়েছি। জরিমানা করতে গেলে আমাদের নামে অভিযোগ আসবে।

আর ছেলেকে বিয়ে পড়িয়ে কি আমরা মামলা খাব? এরপর স্থানীয় এমপির নাম ভাঙিয়ে আরেক বিচারক মালেক ফরাজীকে এনে আমাদের ছাড়া শুক্রবার উপজেলার চানন্দী বাজারে ইসমাইল নেতার অফিসে রাত ৪টার দিকে সালিশদার তাজুলসহ ৭০ হাজার টাকায় ঘটনা দফারফা করে। এরপর তারা অভিযুক্ত ছেলেকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। এর আগে তারা ছেলে-মেয়ের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বললে ধর্ষক অভিযোগ স্বীকার করলে তার থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। পরে এ ঘটনায় গত বুধবার ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় সালিশদার মালেক ফরাজী ও তাজুলকে আসামি করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে শুধু অভিযুক্ত জহিরকে আসামি রেখে বাকি দু’জনকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ৩ সালিশদারের মুঠোফোনে করা হলেও ফোনে তাদের পাওয়া যায়নি। হাতিয়া থানার ওসি আমির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন সালিশদার টাকার বিনিময়ে প্রথমে বিষয়টি মিটমাট করেছে বলেও তিনি শুনেছেন এবং অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ওসি আরও জানান, ভুক্তভোগী কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২ , ০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২০ জিলহজ ১৪৪৩

কিশোরীকে ধর্ষণ, শালিসে ৭০ হাজার টাকায় দফারফা

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগে আট দিন পর থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৭০ হাজার টাকায় দফারফা করে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়েছে স্থানীয় তিন সালিশদার। এই সুযোগে ধর্ষক পলাতক রয়েছে। অভিযুক্ত জহির উদ্দিন (৩৫) উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের নলেরচর গ্রামের শাহাজান মিয়ার ছেলে। সে হাতিয়া উপজেলার চানন্দী বাজারের একজন ওষুধ দোকানদার এবং পল্লী চিকিৎসক। গতকাল রাত দেড়টার দিকে উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নলেরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা জানান, তারা একটি নদীভাঙা পরিবার। উপজেলার নলচিরা গ্রামে সামান্য জায়গার ওপর তারা ঘর তুলে বসবাস করে আসছে। চরমুজামে তাদের একটি দাগের জমি আছে। ওই জমিতে ধান চাষ করতে এক মেয়ে দুই ছেলেকে বাড়িতে রেখে তিনি চরে যান। গতকাল সকালে তার বড় ছেলে চট্টগ্রাম চলে যায়। এরপর ধর্ষক জহিরুল হক তাকে ফোন দিয়ে জানতে চান তিনি কোনদিন চরে যাবেন। তিনি তাকে জানালে সে কিশোরীর মাকে জানায় সে চরে যাবে তার জমিতে ধান চাষ করতে। এরপর সে আর চরে যায়নি। গতকাল রাতে জহির আগে থেকেই তাদের বসতঘর সংলগ্ন বাগানে ওঁৎ পেতে থাকে। ওই সময় প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে তার মেয়ে ঘর থেকে বের হলে সে মুখ চেপে ধরে ঘরের পাশে থাকা আরেকটি চাড়া-বাড়ির পুকুর পারে নিয়ে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

কিশোরীর মা অভিযোগ করে পরদিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে আমি স্থানীয় সালিশদার তাজুল ইসমাইলকে জানাই। এরপর তাজুল আমাকে জানায়, যা হওয়ার হয়ে গেছে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন। তাজুল বলেন অভিযুক্ত ছেলেকে ডেকে এনে পায়ে ফেলে মাফ নিয়ে দেব। এর থেকে বেশি কিছু তিনি করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমরা ছেলেকে মারধর করতে গেলে বলবে আমরা নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়েছি। জরিমানা করতে গেলে আমাদের নামে অভিযোগ আসবে।

আর ছেলেকে বিয়ে পড়িয়ে কি আমরা মামলা খাব? এরপর স্থানীয় এমপির নাম ভাঙিয়ে আরেক বিচারক মালেক ফরাজীকে এনে আমাদের ছাড়া শুক্রবার উপজেলার চানন্দী বাজারে ইসমাইল নেতার অফিসে রাত ৪টার দিকে সালিশদার তাজুলসহ ৭০ হাজার টাকায় ঘটনা দফারফা করে। এরপর তারা অভিযুক্ত ছেলেকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। এর আগে তারা ছেলে-মেয়ের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বললে ধর্ষক অভিযোগ স্বীকার করলে তার থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। পরে এ ঘটনায় গত বুধবার ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় সালিশদার মালেক ফরাজী ও তাজুলকে আসামি করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে শুধু অভিযুক্ত জহিরকে আসামি রেখে বাকি দু’জনকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ৩ সালিশদারের মুঠোফোনে করা হলেও ফোনে তাদের পাওয়া যায়নি। হাতিয়া থানার ওসি আমির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন সালিশদার টাকার বিনিময়ে প্রথমে বিষয়টি মিটমাট করেছে বলেও তিনি শুনেছেন এবং অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগ সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ওসি আরও জানান, ভুক্তভোগী কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে।